alt

ওমিক্রন: কতটা মারাত্মক?

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক: : বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেখে বিজ্ঞানীরা হকচকিয়ে গেছেন। কেননা এখন পর্যন্ত যতগুলো ধরন সম্পর্কে জানা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে “আজব”। বিশৃঙ্খল ঝাঁকে এদের একেকটা একেকরকম। কোনো কোনোটি খুবই সমস্যাজনক – ভাইরাস প্রতিরোধী এন্টিবডি একদম শেষ করে দেয়। এর আগে কোনো করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেই এত মিউটেশন বা রূপান্তরশীলতা দেখা যায়নি।

ওমিক্রন নিয়ে নানা ধরনের সংশয় ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। এটা কি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক? এর ফলে অসুস্থতার মাত্রা কি বেশি হবে? এটা কি সংক্রমণে বা টিকায় সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে? ইত্যাদি।

এ বিষয়ে টেক্সাসের এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট বেঞ্জামিন নিউম্যান বলেন, ‘এর আগে করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে বড় জোর দু-তিনটি মিউটেশন দেখেছি। মিউটেশন হলেই ভাইরাসগুলোকে ধ্বংস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে সেগুলো খুব বেশি বিস্তার ঘটাতে পারেনি।কিন্তু এখন যেটা বেরিয়েছে, সেটা ভয়ঙ্কর সবকিছুই ঘটাতে পারে।’

প্রাথমিকভাবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে ওমিক্রনের বৈশ্বিক ঝুঁকি অনেক বেশি।

তারা ওমিক্রন শনাক্ত করা, এবং তাতে কেউ আক্রান্ত হলে সেই তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দিতে সব দেশের সরকারের প্রতিই আহবান রেখেছে।

আগের আলফা বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টগুলো মিউটেশনের মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়িয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল যে, করোনা ভাইরাসের আরো মারাত্মক, অধিক সংক্রমণে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব হবে এবং সেগুলো আগের সংক্রমণ বা টিকার মাধ্যমে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আংশিকভাবে হলেও নষ্ট করবে।

এছাড়া টি সেল বলে পরিচিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আরেকটি উপাদান আছে। সেটি ভয়াবহ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শরীরকে ‍সুরক্ষা দেয়।

এখন ঘটনা হচ্ছে, করোনারভাইরাস মানবশরীরের কোষে যে স্পাইক প্রোটিনের কাঁটা দিয়ে সংক্রমণ ঘটায়,তার রকম ফের হিসেব করলে ওমিক্রন আছে ৩০ প্রকারের। আমাদের শরীরের এন্টিবডি এই স্পাইক প্রোটিনকে আটকে দিয়েই রোগ প্রতিরোধ করে।

কিন্তু ওমিক্রন অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই কাঁটাগুলোর কাঠামো রাসায়নিকভাবে বদলে ফেলে। ফলে তখন শরীরের এন্টিবডি আর স্পাইক প্রোটিনগুলোকে আটকে ফেলতে পারে না।

এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন খুব সহজে ধরা যায় না এবং এর প্রতিটি গুচ্ছে বহু ধরনের রূপান্তর ঘটতে থাকে। এটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি বিপদজনক হবে কিনা তা এখনই কেউ বলতে পারছে না।

নিউম্যান বলেন, ‘ওমিক্রনের ব্যাপারটা জনি ক্যাশের “ওয়ান পিস অ্যাট এ টাইম” গানের গাড়ির গল্পের মতো। তাতে একেকটা গাড়ির একেকটি পার্টস দিয়ে একটি গাড়ি বানানো হয়। ওমিক্রনেও যেনবা একেকটা ভ্যারিয়েন্টের একেকটা সক্ষমতার সমাহার ঘটেছে।’

“তবে এ মুহূর্তে ওমিক্রনের বিষয়ে এটুকুই শুধু বলা যায় যে এটা একটা বিদঘুটে ভ্যারিয়েন্ট,” বলেন তিনি।

বিজ্ঞানীরা জানেন না বাস্তবে এই ভ্যারিয়েন্ট কী করতে পারে। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না তারা। যদি ওমিক্রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে বেশি বিধ্বংসী হয়, তাহলে টিকা নিয়ে আবার ভাবতে হবে। ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। তবে যদি সত্যি সত্যিই ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা কাজ না করে তাহলে তা হবে মহামারি থেকে উত্তরণের পথে বড় এক ধাক্কা।

আরেকটা সম্ভাবনা হচ্ছে ওমিক্রন হয়তো করোনার ভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট - যেমন আলফা, বেটা, ডেল্টা, গামা - এগুলোর মতো অল্প সময় রাজত্ব করবে। তারপর ডেল্টার আবির্ভারের মুখে যেভাবে সেগুলো হারিয়ে গেছে, তেমনি শক্তিশালী আরেক ধরনের ভ্যারিয়েন্টের উত্থানে ওমিক্রনও হয়তো হারিয়ে যাবে।

তুলেন ইউনিভার্সিটির ভাইরাসবিশারদ রবার্ট এফ গ্যারি জুনিয়র বলেন, ‘আমরা এখন ডেল্টা মহামারির মধ্যে আছি। ওমিক্রন কি ডেল্টাকে পেছনে ফেলে দেবে?

তার মতে, ডেল্টা বেশ শক্তিশালী একটা ভ্যারিয়েন্ট। এটা খুব বেশি ছড়িয়েছে। ডেল্টার চেয়ে বেশি ছড়ানোর জন্য ওমিক্রনকে তার চেয়েও বেশি বিধ্বংসী হতে হবে।

স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান কে এন্ডারসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন পর্যন্ত যে কয়টি ধরন দেখা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণে সক্ষম। তবে আগেভাগে এর বেশি বলা কঠিন । হয় এটা ১০-এ ৩ পাবে, অথবা ১০-এ ১০। বা এর মাঝামাঝি।’

তবে গবেষেণাগারের পরীক্ষা থেকে বলা যাবে এর মিউটেশন কি ধারাবাহিক নাকি সাধারণ পরিবর্তন। তবে পরীক্ষা সেভাবে শুরু হয়নি এখনো।

লস অ্যালমোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী বেট কোরবার বলেন, ‘এটাকে খারাপই মনে হচ্ছে। পরীক্ষা হওয়া দরকার। আমরা তো জানি না এই মিউটেশনগুলো কীভাবে কাজ করবে।’

তাই নিশ্চিত হওয়া যায়নি ওমিক্রন কি ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক কিনা।

ডেল্টা এ বছরের শুরেতে ভারতে দেখা দেয়। এই ভ্যারিয়েন্টটা তার দুই বছর আগে উহানে দেখা দেওয়া ভ্যারিয়েন্টটার চেয়ে দ্বিগুণ ভয়াবহ। এরই মধ্যে ডেল্টা মোটামুটি সারা বিশ্বেই ছড়িয়েছে।

এদিকে শনাক্ত হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের বিস্তার সীমিতই ছিল। সেখানে এটি নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়েছে। সেকারণেই সংশয় দেখা দিয়েছে, ওমিক্রনের সংক্রমনের ক্ষমতা নাকি আক্রান্তদের মধ্যে নৈকট্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যারিয়েন্টটা বেশি ছড়িয়েছে।

তবে এন্ডারসন আরেকটি অনুমানকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন সম্ভবত অন্য কোনো প্রানী দেহে থেকে এসেছে। কেননা মানুষের শরীরে এ ধরনের মিউটেশন আগে দেখা যায়নি।’

করোনা ভাইরাস মানুষের দেহ থেকে অন্য প্রানীর দেহে এবং অন্য প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে আসতে পারে।

তা ধারাবাহিকভাবে রূপ বদলে চলেছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি শক্তিশালী হয়েছে। তাদের স্পাইক প্রোটিন পোক্ত হয়েছে জীবদেহের কোষে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওমিক্রনের সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অত আতঙ্কিত না হওয়ারও বিষয় আছে। কেননা সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা একটি ইউনিভার্সিটির। সেখানে একসঙ্গে যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের সংখ্যা দিয়ে গোটা জনসংখ্যার ঝুঁকি হিসেব করার যৌক্তিকতা এখনো পরীক্ষা-সাপেক্ষ।

তথ্যের এই অপ্রতুলতার কারণেই বিজ্ঞানীরা এখনও এর স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা সঠিক নিরূপণ করতে পারছেন না।

আরেকটি আশার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, ওমিক্রন সংক্রমিতদের মধ্যে মারাত্মক অসুস্থতার প্রমাণ তারা পাননি।

সেখানে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী দেখা প্রথম ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেন রোগীদের মধ্যে সামান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকে আছে উপসর্গহীন।

আর আক্রান্তদের মধ্যে কমবয়সী ছেলেমেয়েরাই বেশি। করোনাভাইরাসে যাদের মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ছবি

ভেনেজুয়েলা যেকোনও মার্কিন সামরিক আগ্রাসন মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত: প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ছবি

চীনের কার্বন নিঃসরণ কখনও কম, কখনও স্থিতিশীল

ছবি

মার্কিন হামলার শঙ্কায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত করছে ভেনেজুয়েলা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিভাবান মানুষ নেই, তাই বিদেশি টানতে আগ্রহী ট্রাম্প

ছবি

সম্মেলনস্থলে ঢুকে পড়লেন বিক্ষোভকারীরা, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অস্থিরতা, অপসারণের আশঙ্কায় স্টারমার

ছবি

শান্তিচুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনিশ্চিত, বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে গাজা

ছবি

দিল্লির বিস্ফোরণে দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না: মোদী

ছবি

দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৯ জন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি’ চায় ইরান

ছবি

জোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া দিতে পারেন

শুল্কের বিরোধীরা ‘মূর্খ’, রাজস্ব থেকে মার্কিনদের ২০০০ ডলার ‘লভ্যাংশ’ দেয়া হবে: ট্রাম্প

ছবি

বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি ট্রাম্পের, ক্ষমা চাইলেন সমির শাহ

ছবি

বিবিসি এখন বিশৃঙ্খল, নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠান: সাবেক কর্মকর্তা অলিভার

ছবি

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাদশাহ আব্দুল আজিজ মেডেল পেলেন পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেল

ছবি

সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দেবে না

ছবি

সারকোজিকে মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ফরাসি আদালত

ছবি

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নৌকাডুবিতে মৃত্যু বেড়ে ১১

ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ

ছবি

নয়া দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেইটে দূষণবিরোধী বিক্ষোভ, ডজনের বেশি আটক

ছবি

একুয়েডরে কারাগারে দাঙ্গার মধ্যে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু

ছবি

মামদানির নিউইয়র্ক পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় মৃত্যু ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে, ইসরায়েলি সেনার মৃতদেহ উদ্ধার করলো হামাস

ছবি

পাকিস্তানে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল সিনেটে উপস্থাপন

ছবি

সংবিধান সংশোধনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা বিরোধী জোটের

ছবি

লেবাননে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ছবি

সিরিয়া- যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, ওয়াশিংটনে আল শারা

ছবি

তীব্র দূষণের ঝুঁকিতে গাজার জনস্বাস্থ্য

ছবি

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি ইংল্যান্ড

ছবি

মামদানির প্রচারকৌশলে এগোনোর চেষ্টা ট্রাম্পের

ছবি

২৬ মার্কিন ধনকুবেরের সোয়া দুই কোটি ডলারও মামদানির জয় ঠেকাতে পারেনি

ছবি

আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ, যুদ্ধবিরতি এখনও বহাল

ছবি

পুতিনের সঙ্গে এখনও বৈঠকের সুযোগ আছে : ট্রাম্প

ছবি

ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা

ছবি

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম মুছলো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

অ্যান্টার্কটিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

tab

ওমিক্রন: কতটা মারাত্মক?

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক:

বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেখে বিজ্ঞানীরা হকচকিয়ে গেছেন। কেননা এখন পর্যন্ত যতগুলো ধরন সম্পর্কে জানা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে “আজব”। বিশৃঙ্খল ঝাঁকে এদের একেকটা একেকরকম। কোনো কোনোটি খুবই সমস্যাজনক – ভাইরাস প্রতিরোধী এন্টিবডি একদম শেষ করে দেয়। এর আগে কোনো করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেই এত মিউটেশন বা রূপান্তরশীলতা দেখা যায়নি।

ওমিক্রন নিয়ে নানা ধরনের সংশয় ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। এটা কি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক? এর ফলে অসুস্থতার মাত্রা কি বেশি হবে? এটা কি সংক্রমণে বা টিকায় সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে? ইত্যাদি।

এ বিষয়ে টেক্সাসের এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট বেঞ্জামিন নিউম্যান বলেন, ‘এর আগে করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে বড় জোর দু-তিনটি মিউটেশন দেখেছি। মিউটেশন হলেই ভাইরাসগুলোকে ধ্বংস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে সেগুলো খুব বেশি বিস্তার ঘটাতে পারেনি।কিন্তু এখন যেটা বেরিয়েছে, সেটা ভয়ঙ্কর সবকিছুই ঘটাতে পারে।’

প্রাথমিকভাবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে ওমিক্রনের বৈশ্বিক ঝুঁকি অনেক বেশি।

তারা ওমিক্রন শনাক্ত করা, এবং তাতে কেউ আক্রান্ত হলে সেই তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দিতে সব দেশের সরকারের প্রতিই আহবান রেখেছে।

আগের আলফা বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টগুলো মিউটেশনের মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়িয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল যে, করোনা ভাইরাসের আরো মারাত্মক, অধিক সংক্রমণে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব হবে এবং সেগুলো আগের সংক্রমণ বা টিকার মাধ্যমে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আংশিকভাবে হলেও নষ্ট করবে।

এছাড়া টি সেল বলে পরিচিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আরেকটি উপাদান আছে। সেটি ভয়াবহ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শরীরকে ‍সুরক্ষা দেয়।

এখন ঘটনা হচ্ছে, করোনারভাইরাস মানবশরীরের কোষে যে স্পাইক প্রোটিনের কাঁটা দিয়ে সংক্রমণ ঘটায়,তার রকম ফের হিসেব করলে ওমিক্রন আছে ৩০ প্রকারের। আমাদের শরীরের এন্টিবডি এই স্পাইক প্রোটিনকে আটকে দিয়েই রোগ প্রতিরোধ করে।

কিন্তু ওমিক্রন অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই কাঁটাগুলোর কাঠামো রাসায়নিকভাবে বদলে ফেলে। ফলে তখন শরীরের এন্টিবডি আর স্পাইক প্রোটিনগুলোকে আটকে ফেলতে পারে না।

এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন খুব সহজে ধরা যায় না এবং এর প্রতিটি গুচ্ছে বহু ধরনের রূপান্তর ঘটতে থাকে। এটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি বিপদজনক হবে কিনা তা এখনই কেউ বলতে পারছে না।

নিউম্যান বলেন, ‘ওমিক্রনের ব্যাপারটা জনি ক্যাশের “ওয়ান পিস অ্যাট এ টাইম” গানের গাড়ির গল্পের মতো। তাতে একেকটা গাড়ির একেকটি পার্টস দিয়ে একটি গাড়ি বানানো হয়। ওমিক্রনেও যেনবা একেকটা ভ্যারিয়েন্টের একেকটা সক্ষমতার সমাহার ঘটেছে।’

“তবে এ মুহূর্তে ওমিক্রনের বিষয়ে এটুকুই শুধু বলা যায় যে এটা একটা বিদঘুটে ভ্যারিয়েন্ট,” বলেন তিনি।

বিজ্ঞানীরা জানেন না বাস্তবে এই ভ্যারিয়েন্ট কী করতে পারে। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না তারা। যদি ওমিক্রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে বেশি বিধ্বংসী হয়, তাহলে টিকা নিয়ে আবার ভাবতে হবে। ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। তবে যদি সত্যি সত্যিই ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা কাজ না করে তাহলে তা হবে মহামারি থেকে উত্তরণের পথে বড় এক ধাক্কা।

আরেকটা সম্ভাবনা হচ্ছে ওমিক্রন হয়তো করোনার ভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট - যেমন আলফা, বেটা, ডেল্টা, গামা - এগুলোর মতো অল্প সময় রাজত্ব করবে। তারপর ডেল্টার আবির্ভারের মুখে যেভাবে সেগুলো হারিয়ে গেছে, তেমনি শক্তিশালী আরেক ধরনের ভ্যারিয়েন্টের উত্থানে ওমিক্রনও হয়তো হারিয়ে যাবে।

তুলেন ইউনিভার্সিটির ভাইরাসবিশারদ রবার্ট এফ গ্যারি জুনিয়র বলেন, ‘আমরা এখন ডেল্টা মহামারির মধ্যে আছি। ওমিক্রন কি ডেল্টাকে পেছনে ফেলে দেবে?

তার মতে, ডেল্টা বেশ শক্তিশালী একটা ভ্যারিয়েন্ট। এটা খুব বেশি ছড়িয়েছে। ডেল্টার চেয়ে বেশি ছড়ানোর জন্য ওমিক্রনকে তার চেয়েও বেশি বিধ্বংসী হতে হবে।

স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান কে এন্ডারসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন পর্যন্ত যে কয়টি ধরন দেখা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণে সক্ষম। তবে আগেভাগে এর বেশি বলা কঠিন । হয় এটা ১০-এ ৩ পাবে, অথবা ১০-এ ১০। বা এর মাঝামাঝি।’

তবে গবেষেণাগারের পরীক্ষা থেকে বলা যাবে এর মিউটেশন কি ধারাবাহিক নাকি সাধারণ পরিবর্তন। তবে পরীক্ষা সেভাবে শুরু হয়নি এখনো।

লস অ্যালমোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী বেট কোরবার বলেন, ‘এটাকে খারাপই মনে হচ্ছে। পরীক্ষা হওয়া দরকার। আমরা তো জানি না এই মিউটেশনগুলো কীভাবে কাজ করবে।’

তাই নিশ্চিত হওয়া যায়নি ওমিক্রন কি ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক কিনা।

ডেল্টা এ বছরের শুরেতে ভারতে দেখা দেয়। এই ভ্যারিয়েন্টটা তার দুই বছর আগে উহানে দেখা দেওয়া ভ্যারিয়েন্টটার চেয়ে দ্বিগুণ ভয়াবহ। এরই মধ্যে ডেল্টা মোটামুটি সারা বিশ্বেই ছড়িয়েছে।

এদিকে শনাক্ত হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের বিস্তার সীমিতই ছিল। সেখানে এটি নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়েছে। সেকারণেই সংশয় দেখা দিয়েছে, ওমিক্রনের সংক্রমনের ক্ষমতা নাকি আক্রান্তদের মধ্যে নৈকট্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যারিয়েন্টটা বেশি ছড়িয়েছে।

তবে এন্ডারসন আরেকটি অনুমানকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন সম্ভবত অন্য কোনো প্রানী দেহে থেকে এসেছে। কেননা মানুষের শরীরে এ ধরনের মিউটেশন আগে দেখা যায়নি।’

করোনা ভাইরাস মানুষের দেহ থেকে অন্য প্রানীর দেহে এবং অন্য প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে আসতে পারে।

তা ধারাবাহিকভাবে রূপ বদলে চলেছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি শক্তিশালী হয়েছে। তাদের স্পাইক প্রোটিন পোক্ত হয়েছে জীবদেহের কোষে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওমিক্রনের সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অত আতঙ্কিত না হওয়ারও বিষয় আছে। কেননা সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা একটি ইউনিভার্সিটির। সেখানে একসঙ্গে যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের সংখ্যা দিয়ে গোটা জনসংখ্যার ঝুঁকি হিসেব করার যৌক্তিকতা এখনো পরীক্ষা-সাপেক্ষ।

তথ্যের এই অপ্রতুলতার কারণেই বিজ্ঞানীরা এখনও এর স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা সঠিক নিরূপণ করতে পারছেন না।

আরেকটি আশার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, ওমিক্রন সংক্রমিতদের মধ্যে মারাত্মক অসুস্থতার প্রমাণ তারা পাননি।

সেখানে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী দেখা প্রথম ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেন রোগীদের মধ্যে সামান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকে আছে উপসর্গহীন।

আর আক্রান্তদের মধ্যে কমবয়সী ছেলেমেয়েরাই বেশি। করোনাভাইরাসে যাদের মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

back to top