alt

ওমিক্রন : কতটা মারাত্মক?

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেখে বিজ্ঞানীরা হকচকিয়ে গেছেন। কেননা এখন পর্যন্ত যতগুলো ধরন সম্পর্কে জানা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে ‘আজব’। বিশৃঙ্খল ঝাঁকে এদের একেকটা একেক রকম। কোন কোনটি খুবই সমস্যাজনক, ভাইরাস প্রতিরোধী এন্টিবডি একদম শেষ করে দেয়। এর আগে কোন করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেই এত মিউটেশন বা রূপান্তরশীলতা দেখা যায়নি।

ওমিক্রন নিয়ে নানা ধরনের সংশয় ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। এটা কি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক? এর ফলে অসুস্থতার মাত্রা কি বেশি হবে? এটা কি সংক্রমণে বা টিকায় সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে? ইত্যাদি।

এ বিষয়ে টেক্সাসের এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট বেঞ্জামিন নিউম্যান বলেন, ‘এর আগে করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে বড় জোর দু-তিনটি মিউটেশন দেখেছি। মিউটেশন হলেই ভাইরাসগুলোকে ধ্বংস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে সেগুলো খুব বেশি বিস্তার ঘটাতে পারেনি। কিন্তু এখন যেটা বেরিয়েছে, সেটা ভয়ঙ্কর সবকিছুই ঘটাতে পারে।’

প্রাথমিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে ওমিক্রনের বৈশ্বিক ঝুঁকি অনেক বেশি।

তারা ওমিক্রন শনাক্ত করা এবং তাতে কেউ আক্রান্ত হলে সেই তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দিতে সব দেশের সরকারের প্রতিই আহ্বান রেখেছে।

আগের আলফা বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টগুলো মিউটেশনের মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়িয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল যে, করোনাভাইরাসের আরও মারাত্মক, অধিক সংক্রমণে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব হবে এবং সেগুলো আগের সংক্রমণ বা টিকার মাধ্যমে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আংশিকভাবে হলেও নষ্ট করবে।

এছাড়া টি সেল বলে পরিচিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আরেকটি উপাদান আছে। সেটি ভয়াবহ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।

এখন ঘটনা হচ্ছে, করোনারভাইরাস মানবশরীরের কোষে যে স্পাইক প্রোটিনের কাঁটা দিয়ে সংক্রমণ ঘটায়, তার রকমফের হিসেব করলে ওমিক্রন আছে ৩০ প্রকারের। আমাদের শরীরের এন্টিবডি এই স্পাইক প্রোটিনকে আটকে দিয়েই রোগ প্রতিরোধ করে।

কিন্তু ওমিক্রন অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই কাঁটাগুলোর কাঠামো রাসায়নিকভাবে বদলে ফেলে। ফলে তখন শরীরের এন্টিবডি আর স্পাইক প্রোটিনগুলোকে আটকে ফেলতে পারে না।

এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন খুব সহজে ধরা যায় না এবং এর প্রতিটি গুচ্ছে বহু ধরনের রূপান্তর ঘটতে থাকে। এটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি বিপদজনক হবে কিনা তা এখনই কেউ বলতে পারছে না।

নিউম্যান বলেন, ‘ওমিক্রনের ব্যাপারটা জনি ক্যাশের ‘ওয়ান পিস অ্যাট এ টাইম’ গানের গাড়ির গল্পের মতো। তাতে একেকটা গাড়ির একেকটি পার্টস দিয়ে একটি গাড়ি বানানো হয়। ওমিক্রনেও যেনবা একেকটা ভ্যারিয়েন্টের একেকটা সক্ষমতার সমাহার ঘটেছে।’

‘তবে এ মুহূর্তে ওমিক্রনের বিষয়ে এটুকুই শুধু বলা যায় যে এটা একটা বিদঘুটে ভ্যারিয়েন্ট,’ বলেন তিনি।

বিজ্ঞানীরা জানেন না বাস্তবে এই ভ্যারিয়েন্ট কী করতে পারে। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না তারা। যদি ওমিক্রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে বেশি বিধ্বংসী হয়, তাহলে টিকা নিয়ে আবার ভাবতে হবে। ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। তবে যদি সত্যি সত্যিই ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা কাজ না করে তাহলে তা হবে মহামারী থেকে উত্তরণের পথে বড় এক ধাক্কা।

আরেকটা সম্ভাবনা হচ্ছে ওমিক্রন হয়তো করোনার ভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট- যেমন আলফা, বেটা, ডেল্টা, গামা- এগুলোর মতো অল্প সময় রাজত্ব করবে। তারপর ডেল্টার আবির্ভারের মুখে যেভাবে সেগুলো হারিয়ে গেছে, তেমনি শক্তিশালী আরেক ধরনের ভ্যারিয়েন্টের উত্থানে ওমিক্রনও হয়তো হারিয়ে যাবে।

তুলেন ইউনিভার্সিটির ভাইরাসবিশারদ রবার্ট এফ গ্যারি জুনিয়র বলেন, ‘আমরা এখন ডেল্টা মহামারীর মধ্যে আছি। ওমিক্রন কি ডেল্টাকে পেছনে ফেলে দেবে?

তার মতে, ডেল্টা বেশ শক্তিশালী একটা ভ্যারিয়েন্ট। এটা খুব বেশি ছড়িয়েছে। ডেল্টার চেয়ে বেশি ছড়ানোর জন্য ওমিক্রনকে তার চেয়েও বেশি বিধ্বংসী হতে হবে।

স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান কে এন্ডারসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন পর্যন্ত যে কয়টি ধরন দেখা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণে সক্ষম। তবে আগেভাগে এর বেশি বলা কঠিন। হয় এটা ১০-এ ৩ পাবে, অথবা ১০-এ ১০। বা এর মাঝামাঝি।’

তবে গবেষেণাগারের পরীক্ষা থেকে বলা যাবে এর মিউটেশন কি ধারাবাহিক নাকি সাধারণ পরিবর্তন। তবে পরীক্ষা সেভাবে শুরু হয়নি এখনও।

লস অ্যালমোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী বেট কোরবার বলেন, ‘এটাকে খারাপই মনে হচ্ছে। পরীক্ষা হওয়া দরকার। আমরা তো জানি না এই মিউটেশনগুলো কীভাবে কাজ করবে।’

তাই নিশ্চিত হওয়া যায়নি ওমিক্রন কি ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক কিনা।

ডেল্টা এ বছরের শুরুতে ভারতে দেখা দেয়। এই ভ্যারিয়েন্টটা তার দুই বছর আগে উহানে দেখা দেয়া ভ্যারিয়েন্টটার চেয়ে দ্বিগুণ ভয়াবহ। এরই মধ্যে ডেল্টা মোটামুটি সারা বিশ্বেই ছড়িয়েছে।

এদিকে শনাক্ত হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের বিস্তার সীমিতই ছিল। সেখানে এটি নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়েছে। সেকারণেই সংশয় দেখা দিয়েছে, ওমিক্রনের সংক্রমণের ক্ষমতা নাকি আক্রান্তদের মধ্যে নৈকট্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যারিয়েন্টটা বেশি ছড়িয়েছে।

তবে এন্ডারসন আরেকটি অনুমানকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন সম্ভবত অন্য কোন প্রাণী দেহ থেকে এসেছে। কেননা মানুষের শরীরে এ ধরনের মিউটেশন আগে দেখা যায়নি।’

করোনাভাইরাস মানুষের দেহ থেকে অন্য প্রাণীর দেহে এবং অন্য প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে আসতে পারে।

তা ধারাবাহিকভাবে রূপ বদলে চলেছে। এর মধ্যে কোন কোনটি শক্তিশালী হয়েছে। তাদের স্পাইক প্রোটিন পোক্ত হয়েছে জীবদেহের কোষে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওমিক্রনের সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অত আতঙ্কিত না হওয়ারও বিষয় আছে। কেননা সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা একটি ইউনিভার্সিটির। সেখানে একসঙ্গে যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের সংখ্যা দিয়ে গোটা জনসংখ্যার ঝুঁকি হিসেব করার যৌক্তিকতা এখনও পরীক্ষাসাপেক্ষ।

তথ্যের এই অপ্রতুলতার কারণেই বিজ্ঞানীরা এখনও এর স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা সঠিক নিরূপণ করতে পারছেন না।

আরেকটি আশার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ওমিক্রন সংক্রমিতদের মধ্যে মারাত্মক অসুস্থতার প্রমাণ তারা পাননি।

সেখানে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী দেখা প্রথম ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেন, রোগীদের মধ্যে সামান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকে আছে উপসর্গহীন।

আর আক্রান্তদের মধ্যে কমবয়সী ছেলেমেয়েরাই বেশি। করোনাভাইরাসে যাদের মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ছবি

গাজায় দুই বছরের যুদ্ধে মৃত্যু ছাড়াল ৬৫ হাজার

ছবি

ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করে ‘মুক্ত’ হতে চান নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তেল বিক্রি বন্ধে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

মায়ানমারে ১২১টি আসনে হবে না ভোটগ্রহণ, ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

ছবি

দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্য গেলেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় এবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল, হত্যাযজ্ঞ চলছে

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ায় কেন

ছবি

দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন জি বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে?

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ বাড়ছে: জাতিসংঘ

ছবি

ওএবার ইউরোপকে তাড়িয়ে বেড়ানোর হুমকি রাশিয়ার

ছবি

গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল : জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন

ছবি

মুসলিম বিশ্ব নেটোর আদলে সামরিক বাহিনী গঠনে একমত

ছবি

গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন

ছবি

ভেনেজুয়েলার মাদকবাহী জলযানে মার্কিন হামলা, নিহত ৩

ছবি

ইসরায়েলি আগ্রাসন ঠেকাতে মুসলিম দেশগুলোকে যৌথ সামরিক জোটের আহ্বান ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

ইউরোপকে সতর্ক করল রাশিয়া

ছবি

ওয়াকফ সংশোধনী আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ছবি

তালেবান সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে জার্মানি

ছবি

১০ হাজার ইসরায়লি সেনাকে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে

ছবি

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে বিপুল সমর্থন, নারাজ যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল

ছবি

নেপালে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে আবারও রাস্তায় জেন জি

ছবি

নেপালে বিক্ষোভে সহিংসতা: নিহত ৭২, আহত দুই হাজারের বেশি

ছবি

তেল কেনা বন্ধ করলেই রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে চার্লি কার্কের সমালোচনাকারীদের ওপর ক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতারা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়া ‘খারাপ পরিণতি’ ডেকে আনবে

ছবি

লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে এক লাখের বেশি মানুষ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

গাজা ছেড়েছে আরও আড়াই লাখ মানুষ

ছবি

বিপর্যস্ত নেপালের পর্যটন খাত, ২ দিনে ক্ষতি ২৫০০ কোটি রুপি

ছবি

নেপাল: দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচনের তারিখ জানিয়ে দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান

ছবি

আফগানিস্তানে বন্দি থাকা মার্কিন নাগরিকদের বিষয় নিয়ে কাবুলে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা

ছবি

রাশিয়ার ড্রোন হামলা কোনো ভুল ছিল না: পোল্যান্ড

ছবি

উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি চলচ্চিত্র দেখলেও মৃত্যুদণ্ড

ছবি

ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী

ছবি

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কারকি

ছবি

হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ভোট

ছবি

কেন নেপালের এ সংকট দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

tab

ওমিক্রন : কতটা মারাত্মক?

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেখে বিজ্ঞানীরা হকচকিয়ে গেছেন। কেননা এখন পর্যন্ত যতগুলো ধরন সম্পর্কে জানা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে ‘আজব’। বিশৃঙ্খল ঝাঁকে এদের একেকটা একেক রকম। কোন কোনটি খুবই সমস্যাজনক, ভাইরাস প্রতিরোধী এন্টিবডি একদম শেষ করে দেয়। এর আগে কোন করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেই এত মিউটেশন বা রূপান্তরশীলতা দেখা যায়নি।

ওমিক্রন নিয়ে নানা ধরনের সংশয় ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। এটা কি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক? এর ফলে অসুস্থতার মাত্রা কি বেশি হবে? এটা কি সংক্রমণে বা টিকায় সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে? ইত্যাদি।

এ বিষয়ে টেক্সাসের এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট বেঞ্জামিন নিউম্যান বলেন, ‘এর আগে করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে বড় জোর দু-তিনটি মিউটেশন দেখেছি। মিউটেশন হলেই ভাইরাসগুলোকে ধ্বংস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে সেগুলো খুব বেশি বিস্তার ঘটাতে পারেনি। কিন্তু এখন যেটা বেরিয়েছে, সেটা ভয়ঙ্কর সবকিছুই ঘটাতে পারে।’

প্রাথমিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে ওমিক্রনের বৈশ্বিক ঝুঁকি অনেক বেশি।

তারা ওমিক্রন শনাক্ত করা এবং তাতে কেউ আক্রান্ত হলে সেই তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দিতে সব দেশের সরকারের প্রতিই আহ্বান রেখেছে।

আগের আলফা বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টগুলো মিউটেশনের মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়িয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল যে, করোনাভাইরাসের আরও মারাত্মক, অধিক সংক্রমণে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব হবে এবং সেগুলো আগের সংক্রমণ বা টিকার মাধ্যমে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আংশিকভাবে হলেও নষ্ট করবে।

এছাড়া টি সেল বলে পরিচিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আরেকটি উপাদান আছে। সেটি ভয়াবহ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।

এখন ঘটনা হচ্ছে, করোনারভাইরাস মানবশরীরের কোষে যে স্পাইক প্রোটিনের কাঁটা দিয়ে সংক্রমণ ঘটায়, তার রকমফের হিসেব করলে ওমিক্রন আছে ৩০ প্রকারের। আমাদের শরীরের এন্টিবডি এই স্পাইক প্রোটিনকে আটকে দিয়েই রোগ প্রতিরোধ করে।

কিন্তু ওমিক্রন অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই কাঁটাগুলোর কাঠামো রাসায়নিকভাবে বদলে ফেলে। ফলে তখন শরীরের এন্টিবডি আর স্পাইক প্রোটিনগুলোকে আটকে ফেলতে পারে না।

এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন খুব সহজে ধরা যায় না এবং এর প্রতিটি গুচ্ছে বহু ধরনের রূপান্তর ঘটতে থাকে। এটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি বিপদজনক হবে কিনা তা এখনই কেউ বলতে পারছে না।

নিউম্যান বলেন, ‘ওমিক্রনের ব্যাপারটা জনি ক্যাশের ‘ওয়ান পিস অ্যাট এ টাইম’ গানের গাড়ির গল্পের মতো। তাতে একেকটা গাড়ির একেকটি পার্টস দিয়ে একটি গাড়ি বানানো হয়। ওমিক্রনেও যেনবা একেকটা ভ্যারিয়েন্টের একেকটা সক্ষমতার সমাহার ঘটেছে।’

‘তবে এ মুহূর্তে ওমিক্রনের বিষয়ে এটুকুই শুধু বলা যায় যে এটা একটা বিদঘুটে ভ্যারিয়েন্ট,’ বলেন তিনি।

বিজ্ঞানীরা জানেন না বাস্তবে এই ভ্যারিয়েন্ট কী করতে পারে। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না তারা। যদি ওমিক্রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে বেশি বিধ্বংসী হয়, তাহলে টিকা নিয়ে আবার ভাবতে হবে। ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। তবে যদি সত্যি সত্যিই ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা কাজ না করে তাহলে তা হবে মহামারী থেকে উত্তরণের পথে বড় এক ধাক্কা।

আরেকটা সম্ভাবনা হচ্ছে ওমিক্রন হয়তো করোনার ভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট- যেমন আলফা, বেটা, ডেল্টা, গামা- এগুলোর মতো অল্প সময় রাজত্ব করবে। তারপর ডেল্টার আবির্ভারের মুখে যেভাবে সেগুলো হারিয়ে গেছে, তেমনি শক্তিশালী আরেক ধরনের ভ্যারিয়েন্টের উত্থানে ওমিক্রনও হয়তো হারিয়ে যাবে।

তুলেন ইউনিভার্সিটির ভাইরাসবিশারদ রবার্ট এফ গ্যারি জুনিয়র বলেন, ‘আমরা এখন ডেল্টা মহামারীর মধ্যে আছি। ওমিক্রন কি ডেল্টাকে পেছনে ফেলে দেবে?

তার মতে, ডেল্টা বেশ শক্তিশালী একটা ভ্যারিয়েন্ট। এটা খুব বেশি ছড়িয়েছে। ডেল্টার চেয়ে বেশি ছড়ানোর জন্য ওমিক্রনকে তার চেয়েও বেশি বিধ্বংসী হতে হবে।

স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান কে এন্ডারসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন পর্যন্ত যে কয়টি ধরন দেখা গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণে সক্ষম। তবে আগেভাগে এর বেশি বলা কঠিন। হয় এটা ১০-এ ৩ পাবে, অথবা ১০-এ ১০। বা এর মাঝামাঝি।’

তবে গবেষেণাগারের পরীক্ষা থেকে বলা যাবে এর মিউটেশন কি ধারাবাহিক নাকি সাধারণ পরিবর্তন। তবে পরীক্ষা সেভাবে শুরু হয়নি এখনও।

লস অ্যালমোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী বেট কোরবার বলেন, ‘এটাকে খারাপই মনে হচ্ছে। পরীক্ষা হওয়া দরকার। আমরা তো জানি না এই মিউটেশনগুলো কীভাবে কাজ করবে।’

তাই নিশ্চিত হওয়া যায়নি ওমিক্রন কি ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক কিনা।

ডেল্টা এ বছরের শুরুতে ভারতে দেখা দেয়। এই ভ্যারিয়েন্টটা তার দুই বছর আগে উহানে দেখা দেয়া ভ্যারিয়েন্টটার চেয়ে দ্বিগুণ ভয়াবহ। এরই মধ্যে ডেল্টা মোটামুটি সারা বিশ্বেই ছড়িয়েছে।

এদিকে শনাক্ত হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের বিস্তার সীমিতই ছিল। সেখানে এটি নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়েছে। সেকারণেই সংশয় দেখা দিয়েছে, ওমিক্রনের সংক্রমণের ক্ষমতা নাকি আক্রান্তদের মধ্যে নৈকট্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যারিয়েন্টটা বেশি ছড়িয়েছে।

তবে এন্ডারসন আরেকটি অনুমানকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন সম্ভবত অন্য কোন প্রাণী দেহ থেকে এসেছে। কেননা মানুষের শরীরে এ ধরনের মিউটেশন আগে দেখা যায়নি।’

করোনাভাইরাস মানুষের দেহ থেকে অন্য প্রাণীর দেহে এবং অন্য প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে আসতে পারে।

তা ধারাবাহিকভাবে রূপ বদলে চলেছে। এর মধ্যে কোন কোনটি শক্তিশালী হয়েছে। তাদের স্পাইক প্রোটিন পোক্ত হয়েছে জীবদেহের কোষে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওমিক্রনের সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অত আতঙ্কিত না হওয়ারও বিষয় আছে। কেননা সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা একটি ইউনিভার্সিটির। সেখানে একসঙ্গে যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের সংখ্যা দিয়ে গোটা জনসংখ্যার ঝুঁকি হিসেব করার যৌক্তিকতা এখনও পরীক্ষাসাপেক্ষ।

তথ্যের এই অপ্রতুলতার কারণেই বিজ্ঞানীরা এখনও এর স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা সঠিক নিরূপণ করতে পারছেন না।

আরেকটি আশার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ওমিক্রন সংক্রমিতদের মধ্যে মারাত্মক অসুস্থতার প্রমাণ তারা পাননি।

সেখানে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী দেখা প্রথম ডাক্তার অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেন, রোগীদের মধ্যে সামান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকে আছে উপসর্গহীন।

আর আক্রান্তদের মধ্যে কমবয়সী ছেলেমেয়েরাই বেশি। করোনাভাইরাসে যাদের মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

back to top