alt

সর্বজনীন ঐক্যের ভাবনার প্রসার ঘটাবে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

আগের জি২০ এর ১৭টি প্রেসিডেন্সি অন্যান্য ফলাফলের মধ্যে সামষ্টিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, যৌক্তিক আন্তর্জাতিকীকরণ ও দেশগুলোর ওপর করের বোঝা হ্রাস নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দিয়েছে।

এসব অর্জিত ফল থেকে আমরা লাভবান হবো এবং এগুলোর ওপরে দাঁড়িয়ে নিজেদের আরও গড়ে তুলবো।

যাই হোক না কেন, ভারত যেহেতু এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছি- এখনো কি জি২০ এর আরও অগ্রগতি হতে পারে সামগ্রিকভাবে মানব সভ্যতার উপকার করার জন্য একটি মৌলিক মানসিকতা পরিবর্তনকে অনুঘটক করতে পারি আমি বিশ্বাস করি, আমরা পারি।

আমাদের পরিস্থিতি দ্বারা আমাদের মানসিকতা তৈরি হয়। সমগ্র ইতিহাসজুড়ে মানব সভ্যতা অভাবের মধ্যে বাস করেছিল। আমরা সীমিত সংস্থানের জন্য লড়াই করেছিলাম কারণ আমাদের বেঁচে থাকা নির্ভর করত অন্যদের সেই সংস্থানের অধিকারকে অস্বীকারের দ্বারা। ভাবনা, আদর্শ এবং ব্যক্তি পরিচয়ের মধ্যে সংঘাত এবং প্রতিযোগিতা আদর্শ হয়ে উঠেছিল।

দুর্ভাগ্যবশতঃ আজও আমরা সেই একই শূন্য মানসিকতার ফাঁদে আটকে রয়েছি। যখন দেশগুলো ভূখণ্ড এবং সম্পদ নিয়ে লড়াই করে আমরা তখন এটি দেখি। আমরা এটা লক্ষ্য যখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ অস্ত্রশস্ত্রে পর্যবসিত হয়। আমরা এটা দেখি যখন কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত থাকা সত্ত্বেও মুষ্টিমেয় কয়েকজনের দ্বারা প্রতিষেধকের মজুদারি হয়।

কেউ কেউ এর বিরোধিতা করতে পারেন এই বলে যে, সংঘাত ও লোভ মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য। আমি এর সঙ্গে একমত নই। মানুষ যদি সহজাতভাবেই স্বার্থপর হতো, তাহলে আমাদের মৌলিক এককত্বের প্রচারে এই বিপুল সংখ্যক পারলৌকিক ঐতিহ্যের যে দীর্ঘস্থায়ী আবেদন, সেটার ব্যাখ্যা কী?

পঞ্চতত্ত্ব-ভারতে জনপ্রিয় এমনই একটি মতবাদ যা বিশ্বাস করে যেসব জীবিত সত্ত্বা এমনকি সব নির্জীব পদার্থও মৃত্তিকা (পৃথিবী), জল, আগুন, বায়ু ও স্থান (স্পেইস) – এই পাঁচটি মৌলিক উপাদানে নির্মিত।

আমাদের শারীরিক, সামাজিক ও পরিবেশগত মঙ্গলের জন্য আমাদের প্রত্যেকের অভ্যন্তরে ও সবার মাঝে এই উপাদানগুলোর মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য।

ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি এই বিশ্ব একতার ভাবনাকে প্রচার করার জন্য কাজ করবে। এই কারণে আমাদের মূলভাব হলো-‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’

এটি শুধুমাত্র একটি বুলি বা স্লোগান নয়, মানব পরিস্থিতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনের মধ্যে বিবেচনাধীন যেটি আমরা সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি।

আজ আমাদের কাছে পৃথিবীর সব মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন করার সংস্থান রয়েছে।

আমাদের টিকে থাকার জন্য লড়াই করার দরকার নেই- আমাদের যুগে একটি যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। অবশ্যই কোনো যুদ্ধের প্রয়োজন নেই।

আজ, সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জের আমরা মুখোমুখি হয়েছি তাহলো- জলবায়ুর পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ এবং অতিমারি- যা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করে সমাধান করা সম্ভব নয়। বরং একসঙ্গে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে করা সম্ভব।

সৌভাগ্যবশত, আজকের প্রযুক্তি আমাদের বিস্তৃত আকারে মানবজাতির সমস্যাসমূহ মোকাবিলা করার পথও প্রদর্শন করে থাকে। আমরা আজ যে বিশাল ভার্চ্যুয়াল বিশ্বে বসবাস করি তা ডিজিটাল প্রযুক্তির বিন্যাসকে প্রদর্শন করে। মানবতার ছয় ভাগের এক ভাগ বসতিসহ এবং ভাষাগত, ধর্মগত, প্রথা এবং বিশ্বাসগতভাবে প্রচুর বৈচিত্র্যসহ ভারত হলো বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ।

সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাচীনতম প্রথাসহ গণতন্ত্রের ভিত্তিগত ডিএনএ প্রদানে ভারতে অবদান রয়েছে। গণতন্ত্রের জননী হিসেবে ভারতের জাতীয় সচেতনতা কঠোর নির্দেশ দ্বারা চালিত নয় বরং একই সুরে লাখ-লাখ স্বাধীন কণ্ঠের সমন্বয়ের দ্বারা চালিত।

আজ ভারত একটি দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশ। আমাদের নাগরিক-কেন্দ্রীক শাসনের রূপকল্প আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্যের সৃজনশীল প্রতিভাকে লালন করার পাশাপাশি আমাদের সর্বাধিক প্রান্তিক নাগরিকদেরও খেয়াল রাখে।

আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের জাতীয় বিকাশকে একটি আপাদমস্তক শাসন পরিচালনার অনুশীলন না করে বরং নাগরিক নেতৃত্বাধীন ‘গণ আন্দোলন’ রূপে গড়ে তুলতে।

ডিজিটাল পণ্য তৈরি করার জন্য আমাদের শক্তিশালী প্রযুক্তি রয়েছে যেগুলো উন্মুক্ত, ব্যাপক এবং আন্তঃচালিত। এইগুলো সুরক্ষা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্টের মতো ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নতি দান করেছে।

এসব কারণের জন্য, সম্ভাব্য বৈশ্বিক সমাধানে ভারতের অভিজ্ঞতা অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে।

জি২০ প্রেসিডেন্সি চলাকালে, আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও মডেলসমূহকে অন্যদের জন্য, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য সম্ভাব্য টেমপ্লেট হিসেবে উপস্থাপন করবো।

আমাদের জি২০ অগ্রাধিকারগুলো কেবলমাত্র আমাদের জি২০ শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই গঠিত হবে তা নয়, বিশ্বের দক্ষিণ দিকের আমাদের সহযাত্রীদের সঙ্গেও আলোচনা করে গঠিত হবে।

আমাদের অগ্রাধিকারগুলোর নজর কেন্দ্রীভূত থাকবে ‘এক পৃথিবী’র নিরাময় সাধন, ‘এক পরিবার’র মধ্যে সম্প্রীতি আনয়ন ও ‘এক ভবিষ্যৎ’-এর প্রতি আশা প্রদান করার দিকে।

আমাদের গ্রহের নিরাময়ের জন্য আমরা প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ততার প্রতি ভারতের ঐতিহ্যর ওপরে ভিত্তি করে স্থিতিশীল এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রাকে উৎসাহ জোগাব।

আমাদের মানব পরিবারের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচারের জন্য আমরা খাদ্য, সার এবং ওষুধ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহকে রাজনীতিমুক্ত করতে চাইব, যাতে ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ মানবিক সংকটে পরিণত না হয়। আমাদের নিজেদের পরিবারের মতোই যাদের সবথেকে প্রয়োজন বেশি তারা অবশ্যই সবসময় আমাদের প্রথম চিন্তার কারণ।

আমাদের আগামী প্রজন্মের আশাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমরা সবথেকে ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে সৎ আলোচনার জন্য উৎসাহ জোগাব গণধ্বংসের জন্য অস্ত্রের হুমকিকে প্রশমিত করা এবং বৈশ্বিক শান্তিকে বাড়ানোর জন্য।

ভারতের জি২০ এজেন্ডা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কর্মভিত্তিক এবং সিদ্ধান্তমূলক।

ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সিকে আসুন আমরা একযোগে নিরাময়, সমন্বয় এবং আশার প্রেসিডেন্সি হিসেবে তৈরি করি।

মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে আসুন আমরা একযোগে কাজ করি।

ছবি

সৌদি-পাকিস্তান যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি, একজনের ওপর হামলা হবে ‘উভয়ের ওপর আক্রমণ’

ছবি

গাজায় দুই বছরের যুদ্ধে মৃত্যু ছাড়াল ৬৫ হাজার

ছবি

ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করে ‘মুক্ত’ হতে চান নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তেল বিক্রি বন্ধে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

মায়ানমারে ১২১টি আসনে হবে না ভোটগ্রহণ, ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

ছবি

দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্য গেলেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় এবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল, হত্যাযজ্ঞ চলছে

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ায় কেন

ছবি

দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন জি বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে?

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ বাড়ছে: জাতিসংঘ

ছবি

ওএবার ইউরোপকে তাড়িয়ে বেড়ানোর হুমকি রাশিয়ার

ছবি

গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল : জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন

ছবি

মুসলিম বিশ্ব নেটোর আদলে সামরিক বাহিনী গঠনে একমত

ছবি

গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন

ছবি

ভেনেজুয়েলার মাদকবাহী জলযানে মার্কিন হামলা, নিহত ৩

ছবি

ইসরায়েলি আগ্রাসন ঠেকাতে মুসলিম দেশগুলোকে যৌথ সামরিক জোটের আহ্বান ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

ইউরোপকে সতর্ক করল রাশিয়া

ছবি

ওয়াকফ সংশোধনী আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ছবি

তালেবান সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে জার্মানি

ছবি

১০ হাজার ইসরায়লি সেনাকে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে

ছবি

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে বিপুল সমর্থন, নারাজ যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল

ছবি

নেপালে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে আবারও রাস্তায় জেন জি

ছবি

নেপালে বিক্ষোভে সহিংসতা: নিহত ৭২, আহত দুই হাজারের বেশি

ছবি

তেল কেনা বন্ধ করলেই রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে চার্লি কার্কের সমালোচনাকারীদের ওপর ক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতারা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়া ‘খারাপ পরিণতি’ ডেকে আনবে

ছবি

লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে এক লাখের বেশি মানুষ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

গাজা ছেড়েছে আরও আড়াই লাখ মানুষ

ছবি

বিপর্যস্ত নেপালের পর্যটন খাত, ২ দিনে ক্ষতি ২৫০০ কোটি রুপি

ছবি

নেপাল: দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচনের তারিখ জানিয়ে দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান

ছবি

আফগানিস্তানে বন্দি থাকা মার্কিন নাগরিকদের বিষয় নিয়ে কাবুলে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা

ছবি

রাশিয়ার ড্রোন হামলা কোনো ভুল ছিল না: পোল্যান্ড

ছবি

উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি চলচ্চিত্র দেখলেও মৃত্যুদণ্ড

ছবি

ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী

ছবি

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কারকি

ছবি

হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ভোট

tab

সর্বজনীন ঐক্যের ভাবনার প্রসার ঘটাবে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

আগের জি২০ এর ১৭টি প্রেসিডেন্সি অন্যান্য ফলাফলের মধ্যে সামষ্টিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, যৌক্তিক আন্তর্জাতিকীকরণ ও দেশগুলোর ওপর করের বোঝা হ্রাস নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দিয়েছে।

এসব অর্জিত ফল থেকে আমরা লাভবান হবো এবং এগুলোর ওপরে দাঁড়িয়ে নিজেদের আরও গড়ে তুলবো।

যাই হোক না কেন, ভারত যেহেতু এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছি- এখনো কি জি২০ এর আরও অগ্রগতি হতে পারে সামগ্রিকভাবে মানব সভ্যতার উপকার করার জন্য একটি মৌলিক মানসিকতা পরিবর্তনকে অনুঘটক করতে পারি আমি বিশ্বাস করি, আমরা পারি।

আমাদের পরিস্থিতি দ্বারা আমাদের মানসিকতা তৈরি হয়। সমগ্র ইতিহাসজুড়ে মানব সভ্যতা অভাবের মধ্যে বাস করেছিল। আমরা সীমিত সংস্থানের জন্য লড়াই করেছিলাম কারণ আমাদের বেঁচে থাকা নির্ভর করত অন্যদের সেই সংস্থানের অধিকারকে অস্বীকারের দ্বারা। ভাবনা, আদর্শ এবং ব্যক্তি পরিচয়ের মধ্যে সংঘাত এবং প্রতিযোগিতা আদর্শ হয়ে উঠেছিল।

দুর্ভাগ্যবশতঃ আজও আমরা সেই একই শূন্য মানসিকতার ফাঁদে আটকে রয়েছি। যখন দেশগুলো ভূখণ্ড এবং সম্পদ নিয়ে লড়াই করে আমরা তখন এটি দেখি। আমরা এটা লক্ষ্য যখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ অস্ত্রশস্ত্রে পর্যবসিত হয়। আমরা এটা দেখি যখন কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত থাকা সত্ত্বেও মুষ্টিমেয় কয়েকজনের দ্বারা প্রতিষেধকের মজুদারি হয়।

কেউ কেউ এর বিরোধিতা করতে পারেন এই বলে যে, সংঘাত ও লোভ মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য। আমি এর সঙ্গে একমত নই। মানুষ যদি সহজাতভাবেই স্বার্থপর হতো, তাহলে আমাদের মৌলিক এককত্বের প্রচারে এই বিপুল সংখ্যক পারলৌকিক ঐতিহ্যের যে দীর্ঘস্থায়ী আবেদন, সেটার ব্যাখ্যা কী?

পঞ্চতত্ত্ব-ভারতে জনপ্রিয় এমনই একটি মতবাদ যা বিশ্বাস করে যেসব জীবিত সত্ত্বা এমনকি সব নির্জীব পদার্থও মৃত্তিকা (পৃথিবী), জল, আগুন, বায়ু ও স্থান (স্পেইস) – এই পাঁচটি মৌলিক উপাদানে নির্মিত।

আমাদের শারীরিক, সামাজিক ও পরিবেশগত মঙ্গলের জন্য আমাদের প্রত্যেকের অভ্যন্তরে ও সবার মাঝে এই উপাদানগুলোর মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য।

ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি এই বিশ্ব একতার ভাবনাকে প্রচার করার জন্য কাজ করবে। এই কারণে আমাদের মূলভাব হলো-‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’

এটি শুধুমাত্র একটি বুলি বা স্লোগান নয়, মানব পরিস্থিতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনের মধ্যে বিবেচনাধীন যেটি আমরা সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি।

আজ আমাদের কাছে পৃথিবীর সব মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন করার সংস্থান রয়েছে।

আমাদের টিকে থাকার জন্য লড়াই করার দরকার নেই- আমাদের যুগে একটি যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। অবশ্যই কোনো যুদ্ধের প্রয়োজন নেই।

আজ, সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জের আমরা মুখোমুখি হয়েছি তাহলো- জলবায়ুর পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ এবং অতিমারি- যা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করে সমাধান করা সম্ভব নয়। বরং একসঙ্গে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে করা সম্ভব।

সৌভাগ্যবশত, আজকের প্রযুক্তি আমাদের বিস্তৃত আকারে মানবজাতির সমস্যাসমূহ মোকাবিলা করার পথও প্রদর্শন করে থাকে। আমরা আজ যে বিশাল ভার্চ্যুয়াল বিশ্বে বসবাস করি তা ডিজিটাল প্রযুক্তির বিন্যাসকে প্রদর্শন করে। মানবতার ছয় ভাগের এক ভাগ বসতিসহ এবং ভাষাগত, ধর্মগত, প্রথা এবং বিশ্বাসগতভাবে প্রচুর বৈচিত্র্যসহ ভারত হলো বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ।

সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাচীনতম প্রথাসহ গণতন্ত্রের ভিত্তিগত ডিএনএ প্রদানে ভারতে অবদান রয়েছে। গণতন্ত্রের জননী হিসেবে ভারতের জাতীয় সচেতনতা কঠোর নির্দেশ দ্বারা চালিত নয় বরং একই সুরে লাখ-লাখ স্বাধীন কণ্ঠের সমন্বয়ের দ্বারা চালিত।

আজ ভারত একটি দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশ। আমাদের নাগরিক-কেন্দ্রীক শাসনের রূপকল্প আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্যের সৃজনশীল প্রতিভাকে লালন করার পাশাপাশি আমাদের সর্বাধিক প্রান্তিক নাগরিকদেরও খেয়াল রাখে।

আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের জাতীয় বিকাশকে একটি আপাদমস্তক শাসন পরিচালনার অনুশীলন না করে বরং নাগরিক নেতৃত্বাধীন ‘গণ আন্দোলন’ রূপে গড়ে তুলতে।

ডিজিটাল পণ্য তৈরি করার জন্য আমাদের শক্তিশালী প্রযুক্তি রয়েছে যেগুলো উন্মুক্ত, ব্যাপক এবং আন্তঃচালিত। এইগুলো সুরক্ষা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্টের মতো ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নতি দান করেছে।

এসব কারণের জন্য, সম্ভাব্য বৈশ্বিক সমাধানে ভারতের অভিজ্ঞতা অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে।

জি২০ প্রেসিডেন্সি চলাকালে, আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও মডেলসমূহকে অন্যদের জন্য, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য সম্ভাব্য টেমপ্লেট হিসেবে উপস্থাপন করবো।

আমাদের জি২০ অগ্রাধিকারগুলো কেবলমাত্র আমাদের জি২০ শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই গঠিত হবে তা নয়, বিশ্বের দক্ষিণ দিকের আমাদের সহযাত্রীদের সঙ্গেও আলোচনা করে গঠিত হবে।

আমাদের অগ্রাধিকারগুলোর নজর কেন্দ্রীভূত থাকবে ‘এক পৃথিবী’র নিরাময় সাধন, ‘এক পরিবার’র মধ্যে সম্প্রীতি আনয়ন ও ‘এক ভবিষ্যৎ’-এর প্রতি আশা প্রদান করার দিকে।

আমাদের গ্রহের নিরাময়ের জন্য আমরা প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ততার প্রতি ভারতের ঐতিহ্যর ওপরে ভিত্তি করে স্থিতিশীল এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রাকে উৎসাহ জোগাব।

আমাদের মানব পরিবারের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচারের জন্য আমরা খাদ্য, সার এবং ওষুধ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহকে রাজনীতিমুক্ত করতে চাইব, যাতে ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ মানবিক সংকটে পরিণত না হয়। আমাদের নিজেদের পরিবারের মতোই যাদের সবথেকে প্রয়োজন বেশি তারা অবশ্যই সবসময় আমাদের প্রথম চিন্তার কারণ।

আমাদের আগামী প্রজন্মের আশাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমরা সবথেকে ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে সৎ আলোচনার জন্য উৎসাহ জোগাব গণধ্বংসের জন্য অস্ত্রের হুমকিকে প্রশমিত করা এবং বৈশ্বিক শান্তিকে বাড়ানোর জন্য।

ভারতের জি২০ এজেন্ডা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কর্মভিত্তিক এবং সিদ্ধান্তমূলক।

ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সিকে আসুন আমরা একযোগে নিরাময়, সমন্বয় এবং আশার প্রেসিডেন্সি হিসেবে তৈরি করি।

মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে আসুন আমরা একযোগে কাজ করি।

back to top