ট্যারিফ অর্থাৎ শুল্কের নামে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ইন্টারেনট ব্যান্ডউইডথের কেনাবেচা ও রাজস্ব ভাগাভাগিতে বৈষম্য বাতিল করে গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে মানসম্মত ইন্টারনেট সেবার পরিবেশ সৃষ্টিতে নীতিমালা সংশোধন এবং এক্ষেত্রে রাজস্ব আয়ের চেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) পুরোপুরি স্বাধীন কমিশন হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এই খাতের সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ব্যান্ডউইডথ ও ইন্টারনেটের বৈষম্যমূলক বাজার ব্যবস্থাপনা নিরসনে করণীয় বিষয়ে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ব্যান্ডউইডথ বাজারে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈষম্যের বিষয়টি উপস্থাপন করেন সংগঠনটির গবেষণা সদস্য মো. রানা।
সভায় বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউর রহমান জানান বৈষম্য নিরসনে বিটিআরসি কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমাদের ত্রিমাত্রিকভাবে কাজ করতে হয়। সরকার, অপারেটর ও গ্রাহক এই তিনের সমন্বয় করেই আমরা কাজ করি। সরকারি-বেসরকারি ব্যবসার এপেক্স এবং ক্যাপেক্স এক না থাকায় ব্যান্ডউইডথ মূল্যে ভিন্নতা রয়েছে। আগামী দিনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্যও ট্যারিফ বেঁধে দেওয়া হবে। ব্যান্ডউইডথের দাম পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। তবে এ জন্য সময় লাগবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইআইজিবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে, সেজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবায় আনা হয়। আইটিসি কম দামে ইন্টারনেট দেওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি দাম কমাতে বাধ্য হয়। কিন্তু কোম্পানিটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় থেকেও মুনাফার দিকে বেশি মনোযোগী। ফলে তাদের ব্যান্ডউইডথ পড়ে থাকছে। বাংলাদেশে আইটিসি অপারেট না থাকলে আমি হলফ করে বলতে পারি আগামীকাল থেকে ইন্টারনেটের দাম আরও বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল লিমিটেডর মহাব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) প্রভাষ চন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, আমরাও বৈষম্যের শিকার হয়ে আমাদের আইটিসি থেকে ২ শতাংশ বেশি রাজস্ব শেয়ার করতে হয়। ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেও কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
আইআইজিবি যুগ্ম সচিব মক্তবুর রহমান বলেন, বিটিআরসির নীতিমালা খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ইন্টারনেট যে নেটওয়ার্ক ইকোসিস্টেম আছে, সেখানে মোবাইল অপারেটর ও আইএসপি উভয়েই ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এখানে দ্বৈত নীতিমালা আছে।
নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, কম দাম ও মান অনুযায়ী প্রত্যেকেরই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রেভিনিউ শেয়ার সবার জন্য সমান করলে ইন্টারনেটের দাম কমবে। সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইডথ কেন পড়ে আছে। তাই এর ব্যবহার বাড়তে মূল্য কমানোর সঙ্গে মান বাড়াতে হবে। আমি তো মনে করি, তারা দেশের পাশাপাশি বিদেশে ব্যবসা করবে। আইটিসি থেকে তাদের দাম কেন বেশি হয়, তা বোধগম্য নয়। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে ৩০ শতাংশ ব্যান্ডউইডথের অপচয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেকগুলো স্তর রয়েছে। এটা কমানো দরকার। রেভিনিউ শেয়ার না থাকলে এই খাতে চুরিও কমত।
সভায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, এখনো আমাদের মানুষ ইন্টারনেট বলতে ফেসবুক, টিকটক বুঝি। তাই দেশের মানুষের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। ডেটা সহজলভ্য না হলে ইন্টারনেট বাজার বাড়বে না। ইনফো সরকার থ্রি ব্যর্থ হওয়ায় গ্রামেগঞ্জে সুলভ ইন্টারনেট তথা ব্রডব্যান্ড পৌঁছায়নি। ফলে গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইন্টারনেট সংযোগদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, রাজনৈতিক দল এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আসাদুজ্জামান, আর্থ কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন, বাজারবিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান, মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়েটার রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা শাহ মো. ফজলে খোদা প্রমুখ।
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
ট্যারিফ অর্থাৎ শুল্কের নামে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ইন্টারেনট ব্যান্ডউইডথের কেনাবেচা ও রাজস্ব ভাগাভাগিতে বৈষম্য বাতিল করে গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে মানসম্মত ইন্টারনেট সেবার পরিবেশ সৃষ্টিতে নীতিমালা সংশোধন এবং এক্ষেত্রে রাজস্ব আয়ের চেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) পুরোপুরি স্বাধীন কমিশন হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এই খাতের সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ব্যান্ডউইডথ ও ইন্টারনেটের বৈষম্যমূলক বাজার ব্যবস্থাপনা নিরসনে করণীয় বিষয়ে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ব্যান্ডউইডথ বাজারে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈষম্যের বিষয়টি উপস্থাপন করেন সংগঠনটির গবেষণা সদস্য মো. রানা।
সভায় বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউর রহমান জানান বৈষম্য নিরসনে বিটিআরসি কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমাদের ত্রিমাত্রিকভাবে কাজ করতে হয়। সরকার, অপারেটর ও গ্রাহক এই তিনের সমন্বয় করেই আমরা কাজ করি। সরকারি-বেসরকারি ব্যবসার এপেক্স এবং ক্যাপেক্স এক না থাকায় ব্যান্ডউইডথ মূল্যে ভিন্নতা রয়েছে। আগামী দিনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্যও ট্যারিফ বেঁধে দেওয়া হবে। ব্যান্ডউইডথের দাম পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। তবে এ জন্য সময় লাগবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইআইজিবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে, সেজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবায় আনা হয়। আইটিসি কম দামে ইন্টারনেট দেওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি দাম কমাতে বাধ্য হয়। কিন্তু কোম্পানিটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় থেকেও মুনাফার দিকে বেশি মনোযোগী। ফলে তাদের ব্যান্ডউইডথ পড়ে থাকছে। বাংলাদেশে আইটিসি অপারেট না থাকলে আমি হলফ করে বলতে পারি আগামীকাল থেকে ইন্টারনেটের দাম আরও বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল লিমিটেডর মহাব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) প্রভাষ চন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, আমরাও বৈষম্যের শিকার হয়ে আমাদের আইটিসি থেকে ২ শতাংশ বেশি রাজস্ব শেয়ার করতে হয়। ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেও কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
আইআইজিবি যুগ্ম সচিব মক্তবুর রহমান বলেন, বিটিআরসির নীতিমালা খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ইন্টারনেট যে নেটওয়ার্ক ইকোসিস্টেম আছে, সেখানে মোবাইল অপারেটর ও আইএসপি উভয়েই ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এখানে দ্বৈত নীতিমালা আছে।
নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, কম দাম ও মান অনুযায়ী প্রত্যেকেরই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রেভিনিউ শেয়ার সবার জন্য সমান করলে ইন্টারনেটের দাম কমবে। সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইডথ কেন পড়ে আছে। তাই এর ব্যবহার বাড়তে মূল্য কমানোর সঙ্গে মান বাড়াতে হবে। আমি তো মনে করি, তারা দেশের পাশাপাশি বিদেশে ব্যবসা করবে। আইটিসি থেকে তাদের দাম কেন বেশি হয়, তা বোধগম্য নয়। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে ৩০ শতাংশ ব্যান্ডউইডথের অপচয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেকগুলো স্তর রয়েছে। এটা কমানো দরকার। রেভিনিউ শেয়ার না থাকলে এই খাতে চুরিও কমত।
সভায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, এখনো আমাদের মানুষ ইন্টারনেট বলতে ফেসবুক, টিকটক বুঝি। তাই দেশের মানুষের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। ডেটা সহজলভ্য না হলে ইন্টারনেট বাজার বাড়বে না। ইনফো সরকার থ্রি ব্যর্থ হওয়ায় গ্রামেগঞ্জে সুলভ ইন্টারনেট তথা ব্রডব্যান্ড পৌঁছায়নি। ফলে গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইন্টারনেট সংযোগদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, রাজনৈতিক দল এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আসাদুজ্জামান, আর্থ কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন, বাজারবিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান, মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়েটার রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা শাহ মো. ফজলে খোদা প্রমুখ।