দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল প্রেক্ষাপটে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং তার প্রতিকার বিষয়ক আলোচনার উদ্দেশ্যে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো ‘ডিজিটাল অধিকার নিয়ে জনসংলাপ’। একসেসনাউ এর সহায়তায় এই সংলাপ আয়োজন করে ডিজিটাল অধিকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নাগরিক পরিসর নিয়ে কাজ করা বেসরকারি অধিকারভিত্তিক সংগঠন ভয়েস। এতে নাগরিক সংগঠন, গণমাধ্যম কর্মী, নারী, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং আদিবাসী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত পরিবর্তিত ডিজিটাল বাস্তবতা নিয়ে অভিজ্ঞতা, উদ্বেগ এবং প্রত্যাশা তুলে ধরেন। এছাড়া অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের ডিজিটাল রূপ, ডিজিটাল গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল নজরদারি, সাইবার হয়রানি, সংকুচিত নাগরিক পরিসর, নারী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পন্ন ব্যক্তি ও মানবাধিকারকর্মীদের ডিজিটাল ঝুঁকি সমূহ নিয়েও অনুষ্ঠানে আলোচনা করা হয়।
সংলাপের মূল উপস্থাপনায় ভয়েসের উপ-পরিচালক মুশাররাত মাহেরা উল্লেখ করেন, ডিজিটাল অধিকার ও মানবাধিকার পরস্পর গভীরভাবে সংযুক্ত। তিনি বলেন, ডিজিটাল পরিসর আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে আলাদা নয়। অনলাইনে যখন কণ্ঠস্বর দমন করা হয়, তখন পুরো জনগোষ্ঠীকেই নীরব করে দেওয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
আলোচনায় জেন্ডার এবং গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ আফরোজা সোমা বলেন, মানুষের উচিত অনলাইনে স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করা, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় নিরাপদ থাকার বদলে তারা প্রায়ই নিপীড়ন ও আইন বহির্ভূতভাবে আটক হন।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি আমিনুল এহসান বলেন, ডিজিটাল অধিকার রক্ষা কোনো একক কাজ নয়। উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক ডিজিটাল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজ, নীতি নির্ধারক, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
মানবাধিকার কর্মী আরিফ হাসান উল্লেখ করেন, নিয়মকানুন যেন নাগরিক স্বাধীনতাকে দমন না করে বরং সুরক্ষা দেয়। তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের একে অপরের সঙ্গে সংলাপে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরি, যাতে তারা পরষ্পরের ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ ও সংগ্রামকে বুঝতে পারে।
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ ডিজিটাল স্বাধীনতা, গণমাধ্যম অধিকার এবং অধিকার কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে কাজের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যখন ডিজিটাল দমন-পীড়ন ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের অধিকার রক্ষায় আমাদের একসঙ্গে দাঁড়ানো জরুরি। আজকের এই সংলাপ স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং অধিকারভিত্তিক ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থার পক্ষে আমাদের সমবেত অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করে।