image

শিশুবিষয়ক খবরে গণমাধ্যমকে বেশী গুরুত্ব দেয়ার আহবান

রোববার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঘরের ভেতরে-বাইরে এবং সাইবার জগতে শিশুরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। শিশুদের সুরক্ষায় অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। গণমাধ্যমকেও শিশুবিষয়ক খবর গুরুত্ব দিয়ে ছাপাতে হবে। তা না হলে ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।

বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স আয়োজিত শিশুবিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দ্য ডেইলি স্টার ভবনের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে ‘ফেলোশিপ ২০২৩: শিশু সুরক্ষায় সাংবাদিকতা’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সদ্য পদত্যাগ করা (নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন) ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘সচেতনতা সৃষ্টি না হলে শিশুদের সুরক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। অনেক অভিভাবক জানেন না অনলাইনে কীভাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অনেকে জানেন না পুলিশের সাইবার ডেস্কে অনলাইন সহিংসতার ক্ষেত্রে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার পাওয়া যায়’।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, আগে শিশুরা নানা ত্রাসের মধ্যে বড়ো হতো এখন কিন্তু পাল্টে গেছে সময়। শিশুদের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে না দেখলে ন্যায়ভিত্তিক ও সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। নৈতিক ও আদর্শিক দিক দিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের আরও শিক্ষিত হতে হবে। পশ্চিমা সাংবাদিকতা অনুকরণ না করে স্বকীয়তা নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হবে।

গবেষক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, দেশে যত গণমাধ্যম আছে, সব মিলিয়েও দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কাছে তা পৌঁছায় না। কোনো গণমাধ্যমের ওপরই নাগরিকদের পূর্ণ আস্থা নেই। নাগরিক সাংবাদিকতা এখন সবচেয়ে সফল’। এ সময়ে নতুন গণমাধ্যম নীতি করা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার সুশাসন বিভাগের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ শিশু অধিকার সনদ অনুসাক্ষর করে। এখনও পর্যন্ত অনেক গণমাধ্যম অনুস্বাক্ষর শব্দ ব্যবহার না করে স্বাক্ষর শব্দ ব্যবহার করেন। স্বাক্ষর-অনুস্বাক্ষরের পার্থক্য অনেক গণমাধ্যমকর্মীরা এখনও পর্যন্ত রপ্ত করতে পারেননি। এখনও গণমাধ্যমে শিশুশ্রম শব্দটি ব্যবহার করছে। যেটি আইননত নিষিদ্ধ। তবে শিশু সুরক্ষা সাংবাদিকতায় বড় পরিবর্তন এসেছে। সমাজ বিনির্মানে শিশুদের নিয়ে প্রচুর কাজ করা দরকার।

দৈনিক সংবাদ এর বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক বলেন, অনেক সময় সাংবাদিকদেরও সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়তে হয়। নারী কিংবা শিশু নির্যাতন নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক সময় ঝামেলার সৃষ্টি হয়। ভিকটিমের অনুরোধে কিংবা হুমকির মুখে তা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। তবে এখন অনেকটাই বেরিয়ে আসছে মানুষ। আর এটা হয়েছে সাংবাদিকদের রিপোর্ট তৈরির মধ্য দিয়ে।

সভাপতির বক্তব্যে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য শিশুদের অধিকারের বিষয়গুলোকে আরও গুরুত্ব দিয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। তাহলে শক্তিশালী ও স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা যাবে।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, গণমাধ্যম কর্মীরা লেখার মাধ্যমে শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা এবং শিশু সুরক্ষায় সংবেদনশীলতা সৃষ্টি ও জবাবদিহি বাড়াতে ভূমিকা পালন করছেন। এই কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার জন্য এই ফেলোশিপ কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।

ফেলোশিপের জন্য দৈনিক সংবাদ, দ্য ডেইলি স্টার, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, কালবেলা, এটিএন বাংলা, বাংলা ভিশন, একাত্তর টেলিভিশন এবং একুশে টেলিভিশন মোট ৮টি গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা আবেদন করেন। এর মধ্যে ফেলোশিপ পেয়েছেন দৈনিক কালবেলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রীতা ভৌমিক এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. শরফুল আলম। তাদের নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিশুবিষয়ক প্রতিবেদন করেন এমন ১৬ জন সাংবাদিককে সম্মাননা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা জানান, আগে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, এ দেশে শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় না। এটা পশ্চিমা সমস্যা। এখন সে মনোভাব পাল্টেছে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সংস্থার পরিচালক জাহিদুল ইসলাম।

‘মিডিয়া’ : আরও খবর

» গণমাধ্যমে হামলার নিন্দা, দ্রুত তদন্তের দাবি : এমএফসি

» সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ

সম্প্রতি