সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা: সাংবাদিক আনিস আলমগীর পাঁচ দিনের রিমান্ডে

সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।

প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই শামীম হোসেন রিমান্ড মঞ্জুরের তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার ইন্সপেক্টর মুনিরুজ্জামান আদালতে আনিস আলমগীরের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আনিস আলমগীর এক মাস আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে মন্তব্য করেন—আওয়ামী লীগের অপ্রকাশিত নেতারা সরকারকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মামলার আরেক আসামি মেহের আফরোজ শাওন চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর লকার উদ্ধারের ঘটনায় কটাক্ষ করে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সরকারবিরোধী পোস্ট দেন এবং একে ‘তেলেসমাতি কারবার’ বলে উল্লেখ করেন। একইভাবে আসামি ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লকার উদ্ধারের ঘটনাকে ‘এটাইসাইন্স’ বলে কটাক্ষ করেন।

আবেদনে বলা হয়, এই চার আসামিসহ অন্যান্য আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন সময় তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট ও বক্তব্য প্রচার করে দেশের জননিরাপত্তা বিপন্ন করেছেন। পাশাপাশি তারা অন্য ব্যক্তিকে হত্যার প্রচেষ্টা গ্রহণ, হত্যা ও গুরুতর জখম করার ষড়যন্ত্র ও সহায়তা করার জন্য প্ররোচিত করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়।

রিমান্ড আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ডিবির লালবাগ বিভাগ ধানমন্ডি এলাকা থেকে আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। সময় স্বল্পতার কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তার সহযোগী অন্যান্য পলাতক আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এছাড়া, ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা উদঘাটনের জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।

রিমান্ড শুনানির সময় আনিস আলমগীরকে আদালতে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। অন্যদিকে আনিস আলমগীরের পক্ষে তার আইনজীবী নাজনীন আক্তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার শাহরিয়ার আলী জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, “মামলা হয়েছে, আনিস আলমগীরকে আমরা গ্রেপ্তার দেখিয়েছি।” উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে এবং এই মামলায় আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য আসামিদের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এই মামলায় আনিস আলমগীর ছাড়াও আরও তিনজন আসামি রয়েছেন। তারা হলেন—অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ফ্যাশন মডেল মারিয়া কিসপট্টা এবং উপস্থাপক ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্ত করছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত ৮টার পর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামের একটি সংগঠনের সদস্য আরিয়ান আহমেদ আনিস আলমগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্র এবং নিষিদ্ধ সংগঠনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় অভিযোগ দাখিল করেন, যা পরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। তবে তার অনুসারীরা দেশে থেকেই বিভিন্ন কৌশলে অবস্থান করে দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রের অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা আগে থেকেই আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ছিলেন এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টকশোতে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।

আরও বলা হয়, রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আরিয়ান আহমেদ উত্তরা পশ্চিম থানার ১১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় বসে মোবাইলে দেখতে পান, আসামিরা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তাদের এসব পোস্টের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা এবং রাষ্ট্রের অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

আনিস আলমগীর দৈনিক আজকের কাগজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। সমসাময়িক রাজনীতি ও নানা বিষয়ে টেলিভিশন টকশোতে তার বক্তব্যের কারণে তিনি সম্প্রতি আলোচনায় ও সমালোচনায় ছিলেন। একই সঙ্গে ফেসবুকে দেওয়া তার বিভিন্ন পোস্ট নিয়েও কয়েকদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

‘মিডিয়া’ : আরও খবর

» সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ

» সাবেক জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি শওকত মাহমুদকে ডিবির হেফাজতে

» রাজধানীতে গণমাধ্যমকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, অফিসের বিবৃতি প্রকাশ

সম্প্রতি