জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদির ‘পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাকস্বাধীনতার ওপর যে ‘সংগঠিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক ’আক্রমণের ঘটেছে, তার দায় ‘সরকার এড়াতে পারে না’বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর এলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় বিক্ষোভ। এরমধ্যেই একদল লোক মধ্যরাতে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। পরে রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মাঝামাঝি সময়ে ধানমন্ডিতে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়।
এর নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলছে, তারা ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে’ লক্ষ্য করছে, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলকে বিচারের জন্য গ্রেপ্তার করতে সরকার ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তারে সরকারের ব্যর্থতা, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণরোষের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি নিরসনে অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।"
"অন্যদিকে, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার শক্তিসমূহের একাংশের আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা জন্ম দিচ্ছে। এর সরাসরি শিকার হয়ে উঠেছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাকস্বাধীনতা।" রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ঘটে যাওয়া এমনসব ঘটনায়’ নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে’ বলে টিআইবি মনে করে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, "এর ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মত শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ও দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপরে হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে হামলা এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই, বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ। স্বাধীন গণতন্ত্র প্রত্যাশী বাংলাদেশে এধরনের ধংসাত্মক আক্রমণ শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং তা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব পালনে বিব্রতকর ব্যর্থতার সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।"
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ওসমান হাদির হত্যাকারীদের ‘দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার’ ও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায়‘ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি’ এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, "তা না হলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্রসংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, একাত্তরের মূল্যবোধ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের মৌলিক আদর্শ গভীরতর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।"