সংবাদপত্রশিল্পের সংকট নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতৃবৃন্দ। আজ মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নোয়াবের এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নোয়াবের সভাপতি ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতারা এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নোয়াবের সহ-সভাপতি ও ডেইলি নিউএজ প্রকাশক এ এস এম শহীদুল্লাহ খান, নোয়াবের সদস্য ও প্রথম আলো সম্পাদক এবং প্রকাশক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, নোয়াবের কোষাধ্যক্ষ ও মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান চৌধুরী, ভোরের কাগজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য তারিক সুজাত, ডেইলি ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক ও নোয়াবে ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ এবং বণিক বার্তা সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
মতবিনিময় সভার শুরুতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারমাধ্যম সংক্রান্ত বিবেচনাধীন পাঁচটি আইনের খসড়ার ওপর নোয়াবের মতামত লিখিত আকারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়। এসব আইন চূড়ান্ত করার আগে সংশিম্লষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
পরে সংবাদপত্র শিল্পে বিদ্যমান বিভিন্ন সংকট ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন নোয়াব নেতারা। একইসঙ্গে উল্লিখিত পাঁচটি আইনের খসড়ার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ এই সংক্রান্ত বিদ্যমান বিভিন্ন আইনকে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ল করাসহ সংবাদপত্রের বিকাশের পথে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেন নেতারা। এসব বিষয়ে তাঁরা বাস্লবসম্মত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্তী ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতা কামনা করেন।
ওবায়দুল কাদের নোয়াব নেতাদের বক্তব্য মনযোগ সহকারে শোনেন। তিনি সংবাদপত্রের সংকটগুলো নিরসনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ সংশিম্লষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ গণমাধ্যম নিবর্তনমুলক আইন এবং এগুলোর অপব্যবহারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশিম্লষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
নোয়াব সভাপতি এ.কে. আজাদ স্বাগত বক্তব্যে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরকে সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দুইটি বড় সংকট চলছে।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে কাগজের মূল্য দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে। এতে সংবাদপত্র ছাপানোর কাগজ আমদানি খরচের পাশাপাশি প্রকাশনা ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। স্থানীয় কাগজ মানসম্মত না হওয়ার কারণেই বিদেশ থেকে এই কাগজ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে এক কপি দৈনিক পত্রিকা ছাপাতে ২৬ টাকা ব্যয় হলেও বিক্রি করতে হয় ১২ টাকায়। এর ওপর পত্রিকা বিক্রির কমিশন ও ভ্যাট-ট্যাক্সও থাকায় সংবাদপত্রগুলোকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এছাড়াও বেসরকারি বিজ্ঞাপন কমে যাওয়া এবং সরকারি বিজ্ঞাপনের বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকায় সংবাদপত্রগুলো চালানো দুরুহ হয়ে পড়েছে বলেও জানান এ.কে. আজাদ। সাংবাদিক ও সংবামাধ্যমের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশেষ করে মফস্বল সাংবাদিকদের ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কোন রিপোর্ট করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন ধারায় মামলা না হয়। আইনমন্ত্রী দুই দফায় এই আইনের গণমাধ্যম নিবর্তনমহৃলক ধারাগুলো সংশোধনের কথা বললেও সেটা বাস্লবায়ন হয়নি।
ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে গণমাধ্যমের মধুর সম্পর্ক তুলে ধরে নোয়াব সভাপতি বলেন, ওবায়দুল কাদের নিজেও এক সময় সাংবাদিক ছিলেন। ফলে তিনি সংবাদপত্র শিল্পের সংকটসহ গণমাধ্যমের সমস্যাগুলো ভালো বুঝতে পারবেন। তাই তিনি এসব সংকট নিরসনে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের সংকট আগে থেকেই ছিল। কাগজের মহৃল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে এখন এটা আরো বেড়ে গেছে। এর ওপর আগে থেকে বিদ্যমান গণমাধ্যম সংক্রান্ত আইনগুলোর পাশাপাশি নতুন করে আরও পাঁচটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার সবগুলোই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর নিবর্তনের মাত্রা আরও বাড়াবে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমেও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এত বেশি আইনের বেড়াজালে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলে গণমাধ্যমগুলো ক্ষতিগ্রস্ল হবে, সরকারও ক্ষতিগ্রস্ল হবে।
ডেইলি ষ্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন করা হয়। কিন্তু সেগুলো দিয়ে সরকার কী সত্যি সত্যিই উপকৃত হয় কী-না ভেবে দেখতে হবে। বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি এখন আবার গণমাধ্যম সংক্রান্ত নতুন যেসব আইনের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য নিবর্তনমুলক। প্রস্তাবিত প্রেস কাউন্সিল আইনে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে তিনি কোনো সংবাদ ও ছবি প্রকাশের কারণে সংশিম্লষ্ট সংবাদপত্র বা সংবাদ সংস্থাকে ১০ লাখ টাকার অর্থদন্ড এমনকি সংশিম্লষ্টদের গ্রেপ্তার কিংবা শাস্তি দিতে পারবেন। এই আইনটি ভয়াবহ আইন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম গণতন্ত্র ও দেশের উন্নয়নের পক্ষে। সরকারের মতো তারাও দেশকে ভালোবাসে, দেশপ্রেমিক। কিন্তু কোনো কিছু লিখলেই মামলা করে দেওয়া হয়। মনে করা হয়, সাংবাদিকরা সরকারের পেছনে লেগে আছে। তবে গণমাধ্যম সরকারের গঠনমহৃলক সমালোচনা করে। এরপরও ভুলত্রুটি হয়েছে মনে করলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে ডেকে কথা বলার পরামর্শ দেন মাহফুজ আনাম।
নোয়াবের সহ-সভাপতি ও ডেইলি নিউএজ প্রকাশক এ এস এম শহীদুল্লাহ খান বলেন, গণমাধ্যম সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে চায়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রকৃতপক্ষে কোনো ভুল হলে সেটি যেন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আলোচনার ভিত্তিতে সব কিছুর সমাধান করা যায়। কিন্তু সেই সমাধানের পদক্ষেপ যেন ওয়ান ইলেভেনের সময়কার মত হয়ে না যায়।
নোয়াবের কোষাধ্যক্ষ এবং মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান চৌধুরী সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন সংকট নিরসনে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত। আর একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাও রয়েছে।
ভোরের কাগজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য তারিক সুজাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। সেখানে সরকারের কাছে গণমাধ্যমের প্রত্যাশাও বেশি।
সবশেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গণমাধ্যমের কাছে আওয়ামী লীগ কোনো পক্ষপাতিত্ব চায় না। শতভাগ আওয়ামী লীগের রিপোর্ট দেওয়া হবে- সেটিও সঠিক হবে না। সেখানে বিরোধীদলের খবরও গুরুত্ব অনুযায়ী থাকবে। তবে আওয়ামী লীগ তার ডিউটুকুই চায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বা প্রতিপক্ষ নই। আমরা পরস্পরের সহযোগী। সেখানে সম্পর্কের বৈরিতাও আমাদের কাম্য নয়। সরকার ও গণমাধ্যমের পরস্পরের সহযোগিতায়ই দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন ওবায়দুল কাদের।
বার্ষিক সাধারণ সভা: আজ মঙ্গলবার নিউজপেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (নোয়াব)-এর ২০২২ সনের বার্ষিক সাধারণ সভা সভাপতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২২ সালের অডিট রিপোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এছাড়াও, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে দেশের সংবাদপত্র জগৎকে নিয়ে শিগগির একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ খান বাদল, কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী, সদস্য মতিউর রহমান, মাহফুজ আনাম, এএমএম বাহাউদ্দীন, তারিক সুজাত, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও শামসুল হক জাহিদ।
 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩
সংবাদপত্রশিল্পের সংকট নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতৃবৃন্দ। আজ মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নোয়াবের এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নোয়াবের সভাপতি ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতারা এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নোয়াবের সহ-সভাপতি ও ডেইলি নিউএজ প্রকাশক এ এস এম শহীদুল্লাহ খান, নোয়াবের সদস্য ও প্রথম আলো সম্পাদক এবং প্রকাশক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, নোয়াবের কোষাধ্যক্ষ ও মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান চৌধুরী, ভোরের কাগজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য তারিক সুজাত, ডেইলি ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক ও নোয়াবে ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ এবং বণিক বার্তা সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
মতবিনিময় সভার শুরুতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারমাধ্যম সংক্রান্ত বিবেচনাধীন পাঁচটি আইনের খসড়ার ওপর নোয়াবের মতামত লিখিত আকারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়। এসব আইন চূড়ান্ত করার আগে সংশিম্লষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
পরে সংবাদপত্র শিল্পে বিদ্যমান বিভিন্ন সংকট ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন নোয়াব নেতারা। একইসঙ্গে উল্লিখিত পাঁচটি আইনের খসড়ার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ এই সংক্রান্ত বিদ্যমান বিভিন্ন আইনকে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ল করাসহ সংবাদপত্রের বিকাশের পথে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেন নেতারা। এসব বিষয়ে তাঁরা বাস্লবসম্মত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্তী ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতা কামনা করেন।
ওবায়দুল কাদের নোয়াব নেতাদের বক্তব্য মনযোগ সহকারে শোনেন। তিনি সংবাদপত্রের সংকটগুলো নিরসনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ সংশিম্লষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ গণমাধ্যম নিবর্তনমুলক আইন এবং এগুলোর অপব্যবহারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশিম্লষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
নোয়াব সভাপতি এ.কে. আজাদ স্বাগত বক্তব্যে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরকে সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দুইটি বড় সংকট চলছে।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে কাগজের মূল্য দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে। এতে সংবাদপত্র ছাপানোর কাগজ আমদানি খরচের পাশাপাশি প্রকাশনা ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। স্থানীয় কাগজ মানসম্মত না হওয়ার কারণেই বিদেশ থেকে এই কাগজ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে এক কপি দৈনিক পত্রিকা ছাপাতে ২৬ টাকা ব্যয় হলেও বিক্রি করতে হয় ১২ টাকায়। এর ওপর পত্রিকা বিক্রির কমিশন ও ভ্যাট-ট্যাক্সও থাকায় সংবাদপত্রগুলোকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এছাড়াও বেসরকারি বিজ্ঞাপন কমে যাওয়া এবং সরকারি বিজ্ঞাপনের বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকায় সংবাদপত্রগুলো চালানো দুরুহ হয়ে পড়েছে বলেও জানান এ.কে. আজাদ। সাংবাদিক ও সংবামাধ্যমের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশেষ করে মফস্বল সাংবাদিকদের ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কোন রিপোর্ট করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন ধারায় মামলা না হয়। আইনমন্ত্রী দুই দফায় এই আইনের গণমাধ্যম নিবর্তনমহৃলক ধারাগুলো সংশোধনের কথা বললেও সেটা বাস্লবায়ন হয়নি।
ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে গণমাধ্যমের মধুর সম্পর্ক তুলে ধরে নোয়াব সভাপতি বলেন, ওবায়দুল কাদের নিজেও এক সময় সাংবাদিক ছিলেন। ফলে তিনি সংবাদপত্র শিল্পের সংকটসহ গণমাধ্যমের সমস্যাগুলো ভালো বুঝতে পারবেন। তাই তিনি এসব সংকট নিরসনে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের সংকট আগে থেকেই ছিল। কাগজের মহৃল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে এখন এটা আরো বেড়ে গেছে। এর ওপর আগে থেকে বিদ্যমান গণমাধ্যম সংক্রান্ত আইনগুলোর পাশাপাশি নতুন করে আরও পাঁচটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার সবগুলোই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর নিবর্তনের মাত্রা আরও বাড়াবে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমেও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এত বেশি আইনের বেড়াজালে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলে গণমাধ্যমগুলো ক্ষতিগ্রস্ল হবে, সরকারও ক্ষতিগ্রস্ল হবে।
ডেইলি ষ্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন করা হয়। কিন্তু সেগুলো দিয়ে সরকার কী সত্যি সত্যিই উপকৃত হয় কী-না ভেবে দেখতে হবে। বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি এখন আবার গণমাধ্যম সংক্রান্ত নতুন যেসব আইনের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য নিবর্তনমুলক। প্রস্তাবিত প্রেস কাউন্সিল আইনে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে তিনি কোনো সংবাদ ও ছবি প্রকাশের কারণে সংশিম্লষ্ট সংবাদপত্র বা সংবাদ সংস্থাকে ১০ লাখ টাকার অর্থদন্ড এমনকি সংশিম্লষ্টদের গ্রেপ্তার কিংবা শাস্তি দিতে পারবেন। এই আইনটি ভয়াবহ আইন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম গণতন্ত্র ও দেশের উন্নয়নের পক্ষে। সরকারের মতো তারাও দেশকে ভালোবাসে, দেশপ্রেমিক। কিন্তু কোনো কিছু লিখলেই মামলা করে দেওয়া হয়। মনে করা হয়, সাংবাদিকরা সরকারের পেছনে লেগে আছে। তবে গণমাধ্যম সরকারের গঠনমহৃলক সমালোচনা করে। এরপরও ভুলত্রুটি হয়েছে মনে করলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে ডেকে কথা বলার পরামর্শ দেন মাহফুজ আনাম।
নোয়াবের সহ-সভাপতি ও ডেইলি নিউএজ প্রকাশক এ এস এম শহীদুল্লাহ খান বলেন, গণমাধ্যম সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে চায়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রকৃতপক্ষে কোনো ভুল হলে সেটি যেন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আলোচনার ভিত্তিতে সব কিছুর সমাধান করা যায়। কিন্তু সেই সমাধানের পদক্ষেপ যেন ওয়ান ইলেভেনের সময়কার মত হয়ে না যায়।
নোয়াবের কোষাধ্যক্ষ এবং মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান চৌধুরী সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন সংকট নিরসনে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত। আর একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাও রয়েছে।
ভোরের কাগজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য তারিক সুজাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। সেখানে সরকারের কাছে গণমাধ্যমের প্রত্যাশাও বেশি।
সবশেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গণমাধ্যমের কাছে আওয়ামী লীগ কোনো পক্ষপাতিত্ব চায় না। শতভাগ আওয়ামী লীগের রিপোর্ট দেওয়া হবে- সেটিও সঠিক হবে না। সেখানে বিরোধীদলের খবরও গুরুত্ব অনুযায়ী থাকবে। তবে আওয়ামী লীগ তার ডিউটুকুই চায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বা প্রতিপক্ষ নই। আমরা পরস্পরের সহযোগী। সেখানে সম্পর্কের বৈরিতাও আমাদের কাম্য নয়। সরকার ও গণমাধ্যমের পরস্পরের সহযোগিতায়ই দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন ওবায়দুল কাদের।
বার্ষিক সাধারণ সভা: আজ মঙ্গলবার নিউজপেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (নোয়াব)-এর ২০২২ সনের বার্ষিক সাধারণ সভা সভাপতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২২ সালের অডিট রিপোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এছাড়াও, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে দেশের সংবাদপত্র জগৎকে নিয়ে শিগগির একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ খান বাদল, কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী, সদস্য মতিউর রহমান, মাহফুজ আনাম, এএমএম বাহাউদ্দীন, তারিক সুজাত, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও শামসুল হক জাহিদ।
