চলমান গ্যাস সংকটের প্রভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পড়েছে। শীতে চাহিদা কম থাকার পরও শনিবার (২০ জানুয়ারি) সারাদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি লোডশেডিং হয়েছে। বেশকিছু দিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আবাসিকে রান্না, সিএনজি ও শিল্প-কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার রাতে সাগরে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে এই সংকট তীব্র হয়।
লোডশেডিং
ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শনিবার সকাল ৯টা থেকে (সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য) রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭৬৫ মেগাওয়াট এবং সর্বনিম্ন ১২৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল।
এই সময় গ্যাসের চেয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হয়েছে।
সকাল ৯টায় লোডশেডিং ছিল ২৪৪ মেগাওয়াট। রাত ৮টায় ছিল ৬১৭ মেগাওয়াট। বিকেল ৫টায় লোডশেডিং মুক্ত থাকলেও এক ঘণ্টা পর আবার লোডশেডিং শুরু হয়।
সন্ধ্যা ৭টায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১০৫৬০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ৯৭৫৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্য অনুযায়ী, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন হয়েছে কমবেশি ২৯০০ থেকে ৩১০০ মেগাওয়াট। গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায়ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৪৫৯৮ মেগাওয়াট।
মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ
গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পোস্টে এ সংক্রান্ত এক ঘোষণায় বলা হয়- কারিগরি ত্রুটির কারণে মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। এতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা কমেছে।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘এই পরিস্থিতিতে দেশের কিছু কিছু এলাকাতে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। সম্মানিত গ্রাহকদের অনাকাক্সিক্ষত অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
তবে মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার গ্রামাঞ্চল থেকে লোডশেডিংয়ের খবর খবর আসা শুরু হয়।
গ্যাস সংকটের কারণ
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) চাহিদা রয়েছে। চলতি মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস (এনজি) ও আমদানিকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) মিলিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে ২ হাজার ৫০০ এমএমসিএফ; ঘাটতি প্রায় ১৩শ’ এমএমসিএফ।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে। এগুলোর প্রতিটির ক্ষমতা দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ। একটি পরিচালনা করে সামিট গ্রুপ। অপরটি পরিচালনা করে মার্কিন কোম্পানি এক্সেলারেট এনার্জি।
এক্সেলারেট এনার্জি পরিচালিত টার্মিনালটিতে গত ১ নভেম্বর থেকে আড়াই মাস রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলে। তখন থেকে সামিট পরিচালিত টার্মিনালটি থেকে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত ছিল। তবে, একটি টার্মিণাল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট চলছিল।
রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ করে এক্সেলারেটের এলএনজি টার্মিনাল চালু করার মুহূর্তে এতে কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ে। এতে চালু করা যায়নি গ্যাস সরবরাহ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। চট্টগ্রামে আবাসিকে রান্না, শিল্পোৎপাদন এবং গ্যাস নির্ভর যান চলাচলে অচলাবস্থা তৈরি হয়।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ১০টায় সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি চালু হয়েছে। তবে তা থেকে পূর্ণমাত্রায় গ্যাস সরবরাহ করতে কিছু সময় লাগবে। এর ফলে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু হলেও সংকট পুরোপুরি কাটেনি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
শীতকালে প্রতি বছরই রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকে। এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, শীতে গ্যাসের সঙ্গে থাকা উপজাত (কনডেনসেট) পাইপ লাইনে জমে যায়। তাই গ্যাস সরবরাহের প্রেসার (চাপ) কমে যায়।
সংকট রাজধানীতেও
গ্যাসের ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংকট বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে।
আবাসিকে রান্নার চুলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে এমন অভিযোগ বেশি আসছে।
গ্যাসের প্রেসার (চাপ) কম থাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস নিতে আসা যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর সংবাদকে জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় পাঁচশ সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) ফিলিং স্টেশন রয়েছে। তার দাবি, এর ৯০ শতাংশ স্টেশনে গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকায় তারা ঠিকমত গ্যাস বিক্রি করতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘যানবাহনে সিএনজি রিফুয়েলিং করতে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপ দরকার। আমরা পাচ্ছি এক পিএসআই। তাহলে গ্যাসটা ঢুকবে কীভাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘যে সিএনজি অটোরিকশাটি ৩০০ টাকার গ্যাস নিতো, প্রেসার কম থাকায় সেটিতে ১০০ টাকার গ্যাস দিলেই আর ঢুকতে চায় না। একই অবস্থা অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রেও।’
শীত বেশি থাকায় দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা এখন কম। দিনে-রাতে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ৭ হাজার মেগাওয়াট থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে উঠানাম করছে। যদিও গ্রীষ্মে দেশের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
গ্যাস সংকট চলমান থাকলে বিদ্যুতে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞ মতামত
জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ না থাকা এবং আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধির কারণেই সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু নিজস্ব কয়লা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। তারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে অতিরিক্ত আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মতে, আগামীতে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং আমদানি করে চাহিদা পূরণ করাই হবে দেশের বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ মুহূর্তে যে গ্যাস সংকট চলছে, আগামী মার্চে রোজা শুরুর আগেই তার লাঘব হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আশ্বাস দেন। তবে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরও তিন বছর সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
চলমান গ্যাস সংকটের প্রভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পড়েছে। শীতে চাহিদা কম থাকার পরও শনিবার (২০ জানুয়ারি) সারাদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি লোডশেডিং হয়েছে। বেশকিছু দিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আবাসিকে রান্না, সিএনজি ও শিল্প-কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার রাতে সাগরে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে এই সংকট তীব্র হয়।
লোডশেডিং
ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শনিবার সকাল ৯টা থেকে (সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য) রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭৬৫ মেগাওয়াট এবং সর্বনিম্ন ১২৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল।
এই সময় গ্যাসের চেয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হয়েছে।
সকাল ৯টায় লোডশেডিং ছিল ২৪৪ মেগাওয়াট। রাত ৮টায় ছিল ৬১৭ মেগাওয়াট। বিকেল ৫টায় লোডশেডিং মুক্ত থাকলেও এক ঘণ্টা পর আবার লোডশেডিং শুরু হয়।
সন্ধ্যা ৭টায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১০৫৬০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ৯৭৫৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্য অনুযায়ী, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন হয়েছে কমবেশি ২৯০০ থেকে ৩১০০ মেগাওয়াট। গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায়ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৪৫৯৮ মেগাওয়াট।
মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ
গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পোস্টে এ সংক্রান্ত এক ঘোষণায় বলা হয়- কারিগরি ত্রুটির কারণে মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। এতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা কমেছে।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘এই পরিস্থিতিতে দেশের কিছু কিছু এলাকাতে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। সম্মানিত গ্রাহকদের অনাকাক্সিক্ষত অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
তবে মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার গ্রামাঞ্চল থেকে লোডশেডিংয়ের খবর খবর আসা শুরু হয়।
গ্যাস সংকটের কারণ
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) চাহিদা রয়েছে। চলতি মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস (এনজি) ও আমদানিকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) মিলিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে ২ হাজার ৫০০ এমএমসিএফ; ঘাটতি প্রায় ১৩শ’ এমএমসিএফ।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে। এগুলোর প্রতিটির ক্ষমতা দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ। একটি পরিচালনা করে সামিট গ্রুপ। অপরটি পরিচালনা করে মার্কিন কোম্পানি এক্সেলারেট এনার্জি।
এক্সেলারেট এনার্জি পরিচালিত টার্মিনালটিতে গত ১ নভেম্বর থেকে আড়াই মাস রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলে। তখন থেকে সামিট পরিচালিত টার্মিনালটি থেকে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত ছিল। তবে, একটি টার্মিণাল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট চলছিল।
রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ করে এক্সেলারেটের এলএনজি টার্মিনাল চালু করার মুহূর্তে এতে কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ে। এতে চালু করা যায়নি গ্যাস সরবরাহ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। চট্টগ্রামে আবাসিকে রান্না, শিল্পোৎপাদন এবং গ্যাস নির্ভর যান চলাচলে অচলাবস্থা তৈরি হয়।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ১০টায় সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি চালু হয়েছে। তবে তা থেকে পূর্ণমাত্রায় গ্যাস সরবরাহ করতে কিছু সময় লাগবে। এর ফলে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু হলেও সংকট পুরোপুরি কাটেনি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
শীতকালে প্রতি বছরই রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকে। এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, শীতে গ্যাসের সঙ্গে থাকা উপজাত (কনডেনসেট) পাইপ লাইনে জমে যায়। তাই গ্যাস সরবরাহের প্রেসার (চাপ) কমে যায়।
সংকট রাজধানীতেও
গ্যাসের ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংকট বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে।
আবাসিকে রান্নার চুলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে এমন অভিযোগ বেশি আসছে।
গ্যাসের প্রেসার (চাপ) কম থাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস নিতে আসা যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর সংবাদকে জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় পাঁচশ সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) ফিলিং স্টেশন রয়েছে। তার দাবি, এর ৯০ শতাংশ স্টেশনে গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকায় তারা ঠিকমত গ্যাস বিক্রি করতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘যানবাহনে সিএনজি রিফুয়েলিং করতে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপ দরকার। আমরা পাচ্ছি এক পিএসআই। তাহলে গ্যাসটা ঢুকবে কীভাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘যে সিএনজি অটোরিকশাটি ৩০০ টাকার গ্যাস নিতো, প্রেসার কম থাকায় সেটিতে ১০০ টাকার গ্যাস দিলেই আর ঢুকতে চায় না। একই অবস্থা অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রেও।’
শীত বেশি থাকায় দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা এখন কম। দিনে-রাতে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ৭ হাজার মেগাওয়াট থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে উঠানাম করছে। যদিও গ্রীষ্মে দেশের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
গ্যাস সংকট চলমান থাকলে বিদ্যুতে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞ মতামত
জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ না থাকা এবং আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধির কারণেই সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু নিজস্ব কয়লা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। তারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে অতিরিক্ত আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মতে, আগামীতে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং আমদানি করে চাহিদা পূরণ করাই হবে দেশের বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ মুহূর্তে যে গ্যাস সংকট চলছে, আগামী মার্চে রোজা শুরুর আগেই তার লাঘব হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই আশ্বাস দেন। তবে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরও তিন বছর সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।