alt

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: পুনরাবৃত্তি রোধে যে পদক্ষেপগুলো জরুরি

আরাফাত, সহযোগী অধ্যাপক, বুয়েট : রোববার, ০৩ মার্চ ২০২৪

বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা ৪৬। মস্তিস্কে যতই শুভচিন্তা থাকুক, মনে ভয়। এ ধরনের ঘটনা যে আর ঘটবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?

ধরুন, আপনি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন। খেয়াল করলে দেখবেন যে ক্যাশ কাউন্টারের পেছনে টিন/ভ্যাট/ ট্রেড লাইসেন্স (একত্রে বলা যাক ‘বাণিজ্যিক পারমিট’) টানানো আছে যা হালনাগাদ না হলে কর্তৃপক্ষ ঐ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে বা বন্ধ করে দিতে পারে। এগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সিটি/পৌর/ইউনিয়নের অধীন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এরকম আরও দুইটা পারমিট থাকার কথা; একটা হলো ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট যেটা রাজউক ইস্যু করে। অন্যটা ভবনের অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান সংক্রান্ত যা ফায়ার সার্ভিস ইস্যু করে। এগুলো ছাড়া কিন্তু ভবন মালিক নিজেও ভবন ব্যবহার করতে পারেন না, আবার ভাড়াও দিতে পারবেন না।

ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট এবং অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান কেন কার্যকর ভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না তার নানাবিধ কারণ রয়েছে; কতগুলো কারণ এখানে আলোচনা করা যাক।

বাণিজ্যিক পারমিট’ গুলোর আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংযুক্তির সংখ্যা কম, তাই কমপ্লায়ান্স ইস্যুও কম। অর্থাৎ ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তৃতীয় কোনো পক্ষের সহায়তা ছাড়া কেবল গোটা কয়েক কাগজপত্র চেক করেই উক্ত লাইসেন্স/পারমিট ইস্যু করে দিতে পারে। কিন্তু ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট এবং অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান বিস্তারিত কোড ঘেঁটে চেক না করে লাইসেন্স/পারমিট ইস্যু করা যায় না। এটা করতে পারদর্শী পেশাজীবীর নিদারুণ সংকট রয়েছে। কোনো সরকারি অফিসে বর্তমানে এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় পেশাজীবী জনবল (প্রকৌশলী/স্থপতি) নেই। এই খাতে জনবল নিয়োগের সরকারি কোনো পরিকল্পনা আছে বলে শুনিনি এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলোও জনবল নিয়োগের কোনো দাবি তুলেছেন বলে জানা যায়না। কেন? এই বিষয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন যে মনে করা হয় ‘পেশাজীবী’ রা সরকারি চাকরি পেলে পেশার চর্চা ভুলে ‘ফাইল’ চর্চায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। উন্নত দেশেও এসব কাজ সরকারি অফিসার দিয়ে না করিয়ে প্রাইভেট পেশাজীবী দিয়ে করানো হয়। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশেও সেরকম সিস্টেম গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসুন দেখা যাক সেই কাজের অগ্রগতি কতদূর?

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘বিএনবিসি ২০২০’ গেজেট হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই কোডের প্রশাসনিক অংশে (পার্ট-২, অধ্যায়-২) এর ধারা ১০ এ ‘বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি’ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এই অথরিটি গঠনের দায়িত্ব কার? সুনির্দিষ্ট করে বললে সরকারের গণপূর্ত ও হাউসিং মন্ত্রণালয়ের। তারা অধীনস্থ সংস্থা এইচবিআরআইকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন এটা নিয়ে কাজ করতে। এই অথোরিটি গঠন করে কার্যকর করতে আরও অনেক সময় লাগবে। আশার বিষয় যে অন্তর্বর্তী কালীন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু সেটা কতোটা কার্যকর হয়েছে খতিয়ে দেখা যাক।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রাজউকের ‘আরবান রেসিলিয়েন্স প্রজেক্ট’ চলছিল বিগত কয়েক বছর ধরে। এই প্রজেক্ট থেকে ‘ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পার্মিটেটিং সিস্টেম’ গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে ‘বিএনবিসি ২০২০’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগ্য পেশাজীবীদের (আর্কিটেক্ট, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বিং ইঞ্জিনিয়ার, ফায়ার সেফটি স্পেশালিস্ট) রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং বিল্ডিং মালিক শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড পেশাজীবীদেরকে তার বাড়ির নকশা ও নির্মাণ তদারকির কাজে নিয়োজিত করতে পারবেন। সর্বত্র রেজিস্টার্ড পেশাজীবীদের ডিজিটাল স্বাক্ষর থাকবে এবং নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে এইসব পেশাজীবীদের স্বাক্ষরের ভিত্তিতেই কর্তৃপক্ষ (বর্তমানে ঢাকায় রাজউক, ভবিষ্যতে দেশের সর্বত্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ) ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু করে দেবেন। অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান এখনও ইসিপিএসের অন্তর্ভুক্ত নয়; সেটা এখনও আলাদাভাবে ফায়ার সার্ভিস থেকে ইস্যু করা হয়, তবে এর কপি ইসিপিএস এর মাধ্যেমে রাজউউকে জমা দিতে হয়। ভবিষ্যতে সরকার চাইলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস করা যেতে পারে, যেনো জনগণের ভোগান্তি কম হয়। কিন্তু ইসিপিএস কি পুরোদস্তুর চালু হয়ে গেছে? এর উত্তর হলো ‘না’। কেন হচ্ছে না, নীচের ঘটনা পরিক্রমা ফলো করলে সেটা আন্দাজ করা যাবে।

৬ মার্চ ২০২৩, রাজউক এক নোটিফিকেশনে ১ এপ্রিল থেকে রাজউকের ২টা সাব-জোনে ইসিপিএস এর মাধ্যমে সব প্রকার পারমিট নেয়ার আবেদন করাার জন্য বলে। ১৩ মে রাজউক আরেকটা নোটিশে ১ জুন থেকে সব জোনে ইসিপিএস বাধ্যতামূলক করে। সেপ্টেম্বর মাসে আবারও নোটিশ দিয়ে জানানো হয় যে ইসিপিএস এর মাধ্যেমে ডিজাইন জমা দেয়ার সময় সব ডিজাইন একই সঙ্গে জমা না করলেও চলবে। আর্কিটেকচারাল ডিজাইন অনুমোদন হওয়ার ২ মাসের মধ্যে অন্য ডিজাইন (পূর্বে উল্লেখিত প্রকৌশল ও ফায়ার নিরাপত্তা বিষয়ক) জমা দিতে হবে। ৬ মাস যেতে না যেতেই কেন এরকম পরিবর্তন করা হলো- এবিষয়ে রাজউকের ব্যাখ্যা থাকলে সবার বুঝতে সুবিধা হতো। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় নিয়মটি শিথিল করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ ইসিপিএস বাস্তবায়নে সহায়ক হবে নাকি এটাকে বিলম্বিত করবে সময়ই সেটা বলে দেবে। তবে প্রকৌশল পেশাজীবীদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে । তারা মনে করছেন রাজউক প্রকৌশল পেশাজীবীদের সংগঠনের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা ম্মারক থেকে সরে গিয়ে এই ফ্লেক্সিবিলিটি ক্রিয়েট করেছে, আখেরে যা ইসিপিএস বাস্তবায়নে অন্তর্রায় হয়ে দাাঁড়াবে।

‘যোগ্য পেশাজীবী’ আসলে কারা? কি ধরনের যোগ্যতা থাকলে ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করা যায়? আর্কিটেক্ট দের ক্ষেত্রে আইএবির সদস্য বা ফেলো হলেই ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। কিন্তু প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইইবির সদস্য বা ফেলো হলেই ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না! তাদের এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য ২টি উপায় রয়েছে (ক) অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন কোর বিল্ডিং বা বিল্ডিং সার্ভিস সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাসহ প্রফেশনাল ইনঞ্জিনিয়ার রেজিস্ট্রেশন বোর্ডের ভাইভা কমিটির কাছে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা। মেয়াদ ৩ বছর, এর পর রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। (খ) স্থায়ী রেজিস্ট্রেশন কোর বিল্ডিং বা বিল্ডিং সার্ভিস সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাসহ প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার রেজিস্ট্রেশন বোর্ডের পরীক্ষা কমিটির কাছে লিখিত রচনা জমা দান, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এবং প্রেজেন্টেশন দিয়ে পাশ করে ‘পিইঞ্জ’ সনদ অর্জন; নবায়ন সাপেক্ষে মেয়াদ আজীবন।

প্রকৌশলী ও স্থপতিদের এই ভিন্নতার কারণে ইসিপিএস শুরুর দিকে এই সিস্টেমে যতো স্থপতি রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন তুলনামূলক ভাবে ততো প্রকৌশলী রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। পয়েন্ট ৫ বর্ণীত সমস্যার এটা একটা কারণ হতে পারে। এমন হলে প্রকৌশল পেশাজীবীদের সংগঠনের উচিৎ দ্রুত যোগ্য পেশাজীবী যাচাইয়ের পরীক্ষা নেবার ব্যবস্থা করে পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্যতা সম্পন্ন প্রকৌশলীদেরকে ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরে রাজউকের উপর চাপ প্রয়োগ করা যেন ঐ সার্কুলারটা তুলে নিয়ে স্থাপত্য ও প্রকৌশল নকশা একই সঙ্গে জমাদানের নিয়মে ফিরে যাওয়া যায়।

এখানে আরেকটা বিবেচ্য বিষয় যে সর্বমোট স্থপতিদের যতো শতাংশ বিল্ডিং রিলেটেড পেশায় থাকেন সর্বমোট প্রকৌশলীদের ‘বিল্ডিং রিলেটেড’ পেশায় থাকার রেট তুলনায় অনেক কম (কেননা বহু সংখ্যক প্রকৌশলী বিল্ডিং রিলেটেড নয় এমন পেশায় চলে যান। যেমন ইলেকট্রিক্যালে পাওয়ার সিস্টেম, কমিউনিকেশন, ইলেক্ট্রনিক্স, সিভিলে সড়ক, যন্ত্রকৌশলে অটোমোবাইল, ফ্যাক্টরি ইত্যাদি কাজ করা)। যেহেতু কেবল বিল্ডিং রিলেটেড প্রকৌশলীর এই রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন, তাই এতো বিশাল সংখ্যক প্রকৌশলীদের মধ্য থেকে আগ্রহী প্রকৌশলী খুঁজে বের করে আনাও একটা চ্যালেঞ্জ। প্রফেশনাল ইনঞ্জিনিয়ার রেজিস্ট্রেশন বোর্ড ১ এপ্রিল ২০২৩ এর পরে যোগ্য পেশাজীবী যাচাইয়ের কতো গুলো পরীক্ষা নেবার ব্যবস্থা করেছেন সেই প্রশ্নটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এটাও দেখা দরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রকৌশলী পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কিনা? ইসিপিএস এ নকশা প্রণয়ন, নির্মাণকাজ তদারকি এবং ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট পর্যন্ত পেশাজীবীদের ইনভলমেন্ট থাকে বলে এটা চালু রাখা গেলে বিল্ডিংয়ের যাবতীয় কাজ কোড মেনে করা হবে; পুরাতন বিল্ডিংকেও রেট্রোফিটিং করে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এতে নির্মাণ খরচ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে কিন্তু পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন ব্যতিরেকে যেখানে সেখানে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কারবার শুরু করা যাবে না। ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট এর দায় মালিকের উপরে চাপানো বা উল্টোটা করা কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না। সিস্টেম ডিজিটাল হওয়ায় অসাধু কর্মকর্তাও ট্রাকরেকর্ড (লগ) না রেখে কোন পারমিট ইস্যু করতে পারবে না। ফলে ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানীর মতো ঘটনা কমে যাবে, এটা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা চলে।

আমাদের তৈরি পোশাক সেক্টরের সাফল্যই এই নিশ্চয়তার সাক্ষ্য দেয়। একর্ড/এলায়েন্স এর পরে তাদের সর্বশেষ উত্তরসূরি হিসেবে এখন ওই সেক্টরে কাজ করছে আরএসসি, যেখানে শ্রমিক পক্ষ, বায়ার এবং মালিক পক্ষের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। অন্য সব শিল্পের জন্য রয়েছে ডিআইএফই। এরা পুরো শিল্প ক্ষেত্রকে তৈরি পোশাক সেক্টরের মতো সেফটি লেভেলে নিয়ে যেতে না পারলেও অন্তত একটা প্রচেষ্টা তো রয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ও আবাসিক ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সাকসেস স্টোরি নেই। এখানে সাফল্য চাইলে আপাতত ইসিপিএস বাস্তবায়ন এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি গঠিত হলে সেটাকে কার্যকরী করে যোগ্য পেশাজীবীদের দিয়ে নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ তদারকি এবং বাণিজ্যিক/আবাসিক বিল্ডিং ব্যবহারকারীদের সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে তৈরি পোশাক সেক্টরের মতো বাণিজ্যিক ও আবাসিক ক্ষেত্রেও সাফল্য আসবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

ছবি

১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে: স্বরাষ্ট্র্র উপদেষ্টা

ছবি

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি: বিএনপির আপত্তি আমলে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

নির্বাচন: দেড় লাখের মধ্যে ৪৮ হাজার পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তিনবারেও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন

ছবি

নভেম্বর মাসেও কমছে না ডেঙ্গু, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

ছবি

সনদ, গণভোট: দলগুলোকে দ্রুত ‘সিদ্ধান্ত’ নেয়ার আহ্বান, নইলে পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় মাধবদীতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

ছবি

বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

বিটিআরসির প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে: আইএসপিএবি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪৭ জন

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল চেয়ে আপিল

ছবি

দেশ কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর: সিইসি

ছবি

গুলিবিদ্ধ নাদিমের পেট থেকে রক্ত ঝরছিল: তাবাসুম

ছবি

‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না’

ছবি

গণভোট নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সুপারিশ জানাতে এক সপ্তাহ সময় দিল সরকার

ছবি

বাপা-বেনের মতবিনিময়: তিস্তা প্রকল্পে স্বচ্ছতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও পরিবেশ রক্ষার দাবি

ছবি

কাতারের নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে সংহতি পুনর্ব্যক্ত বাংলাদেশের

ছবি

সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে নেপালের প্রধান বিচারপতি

ছবি

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তির অবসান চায় এমএফসি

ছবি

ঝিলের জায়গায় থানা ভবন নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

ছবি

বিদেশি এয়ারলাইন্স: জিএসএ নিয়োগ বহাল রাখার দাবি

ছবি

জেল হত্যা দিবস আজ

ছবি

তৃতীয় ধাপের হালনাগাদে ১৩ লাখের বেশি নতুন ভোটার: ইসি সচিব

ছবি

‘জাতীয় নির্বাচনে ভুয়া তথ্যের ঝুঁকি ‘নজিরবিহীন’

বেরোবি: চুক্তিভিত্তিক রেজিস্টার পদে অনুমোদনের ২ মাস আগেই নিয়োগদান!

ছবি

বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিশেষ আইন: ‘দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে’

ছবি

‘হ-য-ব-র-ল’ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলায় আনার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের তালিকা হালনাগাদ, নতুন ভোটার ১৩ লাখের বেশি

পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশে ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে একযোগে অভিযান

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ১৬২ জন

ছবি

বেতাগীতে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব

ছবি

যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

নির্বাচন পর্যন্ত ‘অপরিহার্য কারণ’ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ নয়: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

ছবি

মায়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ: বাঁচলেন না বিজিবি সদস্য আক্তার

tab

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: পুনরাবৃত্তি রোধে যে পদক্ষেপগুলো জরুরি

আরাফাত, সহযোগী অধ্যাপক, বুয়েট

রোববার, ০৩ মার্চ ২০২৪

বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা ৪৬। মস্তিস্কে যতই শুভচিন্তা থাকুক, মনে ভয়। এ ধরনের ঘটনা যে আর ঘটবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?

ধরুন, আপনি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন। খেয়াল করলে দেখবেন যে ক্যাশ কাউন্টারের পেছনে টিন/ভ্যাট/ ট্রেড লাইসেন্স (একত্রে বলা যাক ‘বাণিজ্যিক পারমিট’) টানানো আছে যা হালনাগাদ না হলে কর্তৃপক্ষ ঐ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে বা বন্ধ করে দিতে পারে। এগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সিটি/পৌর/ইউনিয়নের অধীন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এরকম আরও দুইটা পারমিট থাকার কথা; একটা হলো ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট যেটা রাজউক ইস্যু করে। অন্যটা ভবনের অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান সংক্রান্ত যা ফায়ার সার্ভিস ইস্যু করে। এগুলো ছাড়া কিন্তু ভবন মালিক নিজেও ভবন ব্যবহার করতে পারেন না, আবার ভাড়াও দিতে পারবেন না।

ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট এবং অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান কেন কার্যকর ভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না তার নানাবিধ কারণ রয়েছে; কতগুলো কারণ এখানে আলোচনা করা যাক।

বাণিজ্যিক পারমিট’ গুলোর আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংযুক্তির সংখ্যা কম, তাই কমপ্লায়ান্স ইস্যুও কম। অর্থাৎ ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তৃতীয় কোনো পক্ষের সহায়তা ছাড়া কেবল গোটা কয়েক কাগজপত্র চেক করেই উক্ত লাইসেন্স/পারমিট ইস্যু করে দিতে পারে। কিন্তু ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট এবং অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান বিস্তারিত কোড ঘেঁটে চেক না করে লাইসেন্স/পারমিট ইস্যু করা যায় না। এটা করতে পারদর্শী পেশাজীবীর নিদারুণ সংকট রয়েছে। কোনো সরকারি অফিসে বর্তমানে এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় পেশাজীবী জনবল (প্রকৌশলী/স্থপতি) নেই। এই খাতে জনবল নিয়োগের সরকারি কোনো পরিকল্পনা আছে বলে শুনিনি এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলোও জনবল নিয়োগের কোনো দাবি তুলেছেন বলে জানা যায়না। কেন? এই বিষয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন যে মনে করা হয় ‘পেশাজীবী’ রা সরকারি চাকরি পেলে পেশার চর্চা ভুলে ‘ফাইল’ চর্চায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। উন্নত দেশেও এসব কাজ সরকারি অফিসার দিয়ে না করিয়ে প্রাইভেট পেশাজীবী দিয়ে করানো হয়। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশেও সেরকম সিস্টেম গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসুন দেখা যাক সেই কাজের অগ্রগতি কতদূর?

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘বিএনবিসি ২০২০’ গেজেট হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই কোডের প্রশাসনিক অংশে (পার্ট-২, অধ্যায়-২) এর ধারা ১০ এ ‘বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি’ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এই অথরিটি গঠনের দায়িত্ব কার? সুনির্দিষ্ট করে বললে সরকারের গণপূর্ত ও হাউসিং মন্ত্রণালয়ের। তারা অধীনস্থ সংস্থা এইচবিআরআইকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন এটা নিয়ে কাজ করতে। এই অথোরিটি গঠন করে কার্যকর করতে আরও অনেক সময় লাগবে। আশার বিষয় যে অন্তর্বর্তী কালীন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু সেটা কতোটা কার্যকর হয়েছে খতিয়ে দেখা যাক।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রাজউকের ‘আরবান রেসিলিয়েন্স প্রজেক্ট’ চলছিল বিগত কয়েক বছর ধরে। এই প্রজেক্ট থেকে ‘ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পার্মিটেটিং সিস্টেম’ গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে ‘বিএনবিসি ২০২০’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগ্য পেশাজীবীদের (আর্কিটেক্ট, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বিং ইঞ্জিনিয়ার, ফায়ার সেফটি স্পেশালিস্ট) রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং বিল্ডিং মালিক শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড পেশাজীবীদেরকে তার বাড়ির নকশা ও নির্মাণ তদারকির কাজে নিয়োজিত করতে পারবেন। সর্বত্র রেজিস্টার্ড পেশাজীবীদের ডিজিটাল স্বাক্ষর থাকবে এবং নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে এইসব পেশাজীবীদের স্বাক্ষরের ভিত্তিতেই কর্তৃপক্ষ (বর্তমানে ঢাকায় রাজউক, ভবিষ্যতে দেশের সর্বত্র সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ) ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু করে দেবেন। অগ্নিনির্বাপণ প্ল্যান এখনও ইসিপিএসের অন্তর্ভুক্ত নয়; সেটা এখনও আলাদাভাবে ফায়ার সার্ভিস থেকে ইস্যু করা হয়, তবে এর কপি ইসিপিএস এর মাধ্যেমে রাজউউকে জমা দিতে হয়। ভবিষ্যতে সরকার চাইলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস করা যেতে পারে, যেনো জনগণের ভোগান্তি কম হয়। কিন্তু ইসিপিএস কি পুরোদস্তুর চালু হয়ে গেছে? এর উত্তর হলো ‘না’। কেন হচ্ছে না, নীচের ঘটনা পরিক্রমা ফলো করলে সেটা আন্দাজ করা যাবে।

৬ মার্চ ২০২৩, রাজউক এক নোটিফিকেশনে ১ এপ্রিল থেকে রাজউকের ২টা সাব-জোনে ইসিপিএস এর মাধ্যমে সব প্রকার পারমিট নেয়ার আবেদন করাার জন্য বলে। ১৩ মে রাজউক আরেকটা নোটিশে ১ জুন থেকে সব জোনে ইসিপিএস বাধ্যতামূলক করে। সেপ্টেম্বর মাসে আবারও নোটিশ দিয়ে জানানো হয় যে ইসিপিএস এর মাধ্যেমে ডিজাইন জমা দেয়ার সময় সব ডিজাইন একই সঙ্গে জমা না করলেও চলবে। আর্কিটেকচারাল ডিজাইন অনুমোদন হওয়ার ২ মাসের মধ্যে অন্য ডিজাইন (পূর্বে উল্লেখিত প্রকৌশল ও ফায়ার নিরাপত্তা বিষয়ক) জমা দিতে হবে। ৬ মাস যেতে না যেতেই কেন এরকম পরিবর্তন করা হলো- এবিষয়ে রাজউকের ব্যাখ্যা থাকলে সবার বুঝতে সুবিধা হতো। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় নিয়মটি শিথিল করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ ইসিপিএস বাস্তবায়নে সহায়ক হবে নাকি এটাকে বিলম্বিত করবে সময়ই সেটা বলে দেবে। তবে প্রকৌশল পেশাজীবীদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে । তারা মনে করছেন রাজউক প্রকৌশল পেশাজীবীদের সংগঠনের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা ম্মারক থেকে সরে গিয়ে এই ফ্লেক্সিবিলিটি ক্রিয়েট করেছে, আখেরে যা ইসিপিএস বাস্তবায়নে অন্তর্রায় হয়ে দাাঁড়াবে।

‘যোগ্য পেশাজীবী’ আসলে কারা? কি ধরনের যোগ্যতা থাকলে ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করা যায়? আর্কিটেক্ট দের ক্ষেত্রে আইএবির সদস্য বা ফেলো হলেই ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। কিন্তু প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইইবির সদস্য বা ফেলো হলেই ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না! তাদের এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য ২টি উপায় রয়েছে (ক) অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন কোর বিল্ডিং বা বিল্ডিং সার্ভিস সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাসহ প্রফেশনাল ইনঞ্জিনিয়ার রেজিস্ট্রেশন বোর্ডের ভাইভা কমিটির কাছে মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা। মেয়াদ ৩ বছর, এর পর রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। (খ) স্থায়ী রেজিস্ট্রেশন কোর বিল্ডিং বা বিল্ডিং সার্ভিস সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাসহ প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার রেজিস্ট্রেশন বোর্ডের পরীক্ষা কমিটির কাছে লিখিত রচনা জমা দান, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এবং প্রেজেন্টেশন দিয়ে পাশ করে ‘পিইঞ্জ’ সনদ অর্জন; নবায়ন সাপেক্ষে মেয়াদ আজীবন।

প্রকৌশলী ও স্থপতিদের এই ভিন্নতার কারণে ইসিপিএস শুরুর দিকে এই সিস্টেমে যতো স্থপতি রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন তুলনামূলক ভাবে ততো প্রকৌশলী রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। পয়েন্ট ৫ বর্ণীত সমস্যার এটা একটা কারণ হতে পারে। এমন হলে প্রকৌশল পেশাজীবীদের সংগঠনের উচিৎ দ্রুত যোগ্য পেশাজীবী যাচাইয়ের পরীক্ষা নেবার ব্যবস্থা করে পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্যতা সম্পন্ন প্রকৌশলীদেরকে ইসিপিএস এ রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরে রাজউকের উপর চাপ প্রয়োগ করা যেন ঐ সার্কুলারটা তুলে নিয়ে স্থাপত্য ও প্রকৌশল নকশা একই সঙ্গে জমাদানের নিয়মে ফিরে যাওয়া যায়।

এখানে আরেকটা বিবেচ্য বিষয় যে সর্বমোট স্থপতিদের যতো শতাংশ বিল্ডিং রিলেটেড পেশায় থাকেন সর্বমোট প্রকৌশলীদের ‘বিল্ডিং রিলেটেড’ পেশায় থাকার রেট তুলনায় অনেক কম (কেননা বহু সংখ্যক প্রকৌশলী বিল্ডিং রিলেটেড নয় এমন পেশায় চলে যান। যেমন ইলেকট্রিক্যালে পাওয়ার সিস্টেম, কমিউনিকেশন, ইলেক্ট্রনিক্স, সিভিলে সড়ক, যন্ত্রকৌশলে অটোমোবাইল, ফ্যাক্টরি ইত্যাদি কাজ করা)। যেহেতু কেবল বিল্ডিং রিলেটেড প্রকৌশলীর এই রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন, তাই এতো বিশাল সংখ্যক প্রকৌশলীদের মধ্য থেকে আগ্রহী প্রকৌশলী খুঁজে বের করে আনাও একটা চ্যালেঞ্জ। প্রফেশনাল ইনঞ্জিনিয়ার রেজিস্ট্রেশন বোর্ড ১ এপ্রিল ২০২৩ এর পরে যোগ্য পেশাজীবী যাচাইয়ের কতো গুলো পরীক্ষা নেবার ব্যবস্থা করেছেন সেই প্রশ্নটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এটাও দেখা দরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রকৌশলী পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কিনা? ইসিপিএস এ নকশা প্রণয়ন, নির্মাণকাজ তদারকি এবং ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট পর্যন্ত পেশাজীবীদের ইনভলমেন্ট থাকে বলে এটা চালু রাখা গেলে বিল্ডিংয়ের যাবতীয় কাজ কোড মেনে করা হবে; পুরাতন বিল্ডিংকেও রেট্রোফিটিং করে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এতে নির্মাণ খরচ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে কিন্তু পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন ব্যতিরেকে যেখানে সেখানে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কারবার শুরু করা যাবে না। ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট এর দায় মালিকের উপরে চাপানো বা উল্টোটা করা কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না। সিস্টেম ডিজিটাল হওয়ায় অসাধু কর্মকর্তাও ট্রাকরেকর্ড (লগ) না রেখে কোন পারমিট ইস্যু করতে পারবে না। ফলে ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানীর মতো ঘটনা কমে যাবে, এটা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা চলে।

আমাদের তৈরি পোশাক সেক্টরের সাফল্যই এই নিশ্চয়তার সাক্ষ্য দেয়। একর্ড/এলায়েন্স এর পরে তাদের সর্বশেষ উত্তরসূরি হিসেবে এখন ওই সেক্টরে কাজ করছে আরএসসি, যেখানে শ্রমিক পক্ষ, বায়ার এবং মালিক পক্ষের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। অন্য সব শিল্পের জন্য রয়েছে ডিআইএফই। এরা পুরো শিল্প ক্ষেত্রকে তৈরি পোশাক সেক্টরের মতো সেফটি লেভেলে নিয়ে যেতে না পারলেও অন্তত একটা প্রচেষ্টা তো রয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ও আবাসিক ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সাকসেস স্টোরি নেই। এখানে সাফল্য চাইলে আপাতত ইসিপিএস বাস্তবায়ন এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি গঠিত হলে সেটাকে কার্যকরী করে যোগ্য পেশাজীবীদের দিয়ে নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ তদারকি এবং বাণিজ্যিক/আবাসিক বিল্ডিং ব্যবহারকারীদের সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে তৈরি পোশাক সেক্টরের মতো বাণিজ্যিক ও আবাসিক ক্ষেত্রেও সাফল্য আসবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

back to top