alt

এলপি গ্যাস : আট মাসে ৮ দফা বাড়লো দাম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ০৪ মার্চ ২০২৪

ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম (এলপি গ্যাস) দাম টানা আট মাসে ৮ দফা বেড়েছে। রান্নায় বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজি সিলিন্ডারের জন্য মার্চ মাসে ভোক্তাকে দিতে হবে ১ হাজার ৪৮২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ১ হাজার ৪৭৪ টাকা; বেড়েছে ৮ টাকা। নতুন দর গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে এলপিজির কাঁচামালের দাম বাড়েনি, ডলারের বিনিময় হারও কিছুটা কমেছে; তবে এলপিজি (এলপি গ্যাস) পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

গতকাল বিকেলে ঢাকার কাওরান বাজারে কমিশনের নিজস্ব কার্যালয়ে এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন। নতুন দর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকেই কার্যকর করার কথা জানান তিনি।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসির মার্চের মূল্য ঘোষণা দেখা যায়, সৌদি আরামকোর মূল্য অনুযায়ী এলপিজির মূল কাঁচামাল প্রোপেন ও বিউটেনের গড় মূল্য মার্চের জন্য ধরা হয়েছে ৬৩৬.৫০ মার্কিন ডলার; ফেব্রুয়ারি মাসেও তাই ছিল।

আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দামও হিসাব করে বিইআরসি। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি ডলারের দাম ধরা হয়েছিল ১২০ টাকা ৫২ পয়সা। মার্চে সেটা আরেকটু কমিয়ে ১১৯ টাকা ৮৯ পয়সা ধরা হয়েছে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ডলারের দাম ৬৩ পয়সা কমেছে।

কাঁচামালের দাম বাড়েনি, ডলারের দরও কমেছে। এরপরেও দেশে এলপিজির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এলপিজি অপারেটরা জানিয়েছেন জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। সে কারণে দাম একটু বাড়াতে হয়েছে।’

বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১২৩ টাকা ৫২ পয়সা, যা গত মাসে ছিল ১২২ টাকা ৮৬ পয়সা। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৬৬ পয়সা।

বাজারে সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডার পাওয়া যায়। মার্চে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১২৩ টাকা ৫২ পয়সা ধরে এসব সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।

বহুতল ভবনের জন্য রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা বেসরকারি এলপিজির মূসকসহ দাম প্রতি কেজি ১১৯.৬৯ টাকায় এবং গ্যাসীয় অবস্থায় সরবরাহকৃত এলপিজির মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ০.২৬৬০ টাকায় বা প্রতি ঘনমিটার ২৬৬ টাকায় সমন্বয় করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এই দর ছিল যথাক্রমে- ১১৯.০৪ টাকা, ০.২৬৪৫ টাকা এবং ২৬৪.৫০ টাকা।

সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ৫৯১ টাকা থেকে বাড়িয়ে মূসকসহ ৬৯০ টাকা করা হয়েছে। আর গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার প্রায় ৬৮ টাকা ৫ পয়সা, যা এত দিন ছিল ৬৭ টাকা ৬৮ পয়সা। প্রতি লিটারে বেড়েছে ৩৭ পয়সা।

বেসরকারি খাতের এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারে গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দাম ৪১ টাকা বেড়েছিল। একই পরিমাণ সিলিন্ডারে ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে দাম বেড়েছিল ২৯ টাকা। এরআগে, নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ২৩ টাকা, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ১৮ টাকা, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ৭৯ টাকা, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ১৪৪ টাকা এবং জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে ১৪১ টাকা দাম বেড়েছিল।

এই হিসেবে, ১২ কেজি এলপিজি (এলপি গ্যাস) সিলিন্ডারে গত বছরের জুলাই থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত আট মাসে দাম বেড়েছে ৪৮৩ টাকা। দাম বৃদ্ধির হার ৪৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দর বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বেশিরভাগ সময় দেশে এলপিজির দাম বেড়েছে।

এলপিজির দাম সর্বশেষ কমেছিল গত বছর জুলাইয়ে। ওই বছর জুনে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারে ভোক্তাকে দিতে হতো ১ হাজার ৭৪ টাকা। জুলাইয়ে সমপরিমাণ সিলিন্ডারে ৭৫ টাকা কমে দাম হয় ৯৯৯ টাকা।

এক দশক আগে সরকার যখন আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তারপর থেকে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসাবাড়ি, রেস্তোরাঁ গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করে। ওই সময় সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষণœœ করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত।

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

বর্তমানে এলপিজির চাহিদা অনেক বেড়েছে। বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁয় রান্নার পাশাপাশি পরিবহন, ছোট-বড় শিল্পকারখানায়ও এলপিজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন এলপিজির সরকারি উৎপাদন প্রায় এক শতাংশ, আর প্রায় ৯৯ শতাংশই বেসরকারি খাতের দখলে।

বসুন্ধরা, যমুনা, বেক্সিমকো, ওরিয়নসহ বর্তমানে ২৯টি সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি এলপিজি আমদানি, মজুতকরণ, বিতরণ, সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। এলপিজির ডিলার প্রায় ৩ হাজার, আমদানিকারী অপারেটর ২০টি এবং এলপিজি আমদানি টার্মিনাল রয়েছে ১৪টি।

তবে বাজারে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ অধিকাংশ ভোক্তার।

জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, দীর্ঘদিন ধরে আবাসিকে রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ রাখেছে সরকার। অথচ রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ সক্ষমতা সেভাবে বাড়ানো হয়নি, যা পক্ষান্তরে এলপিজির খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি না পাওয়ার বিষয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিইআরসির বক্তব্য হলো- ভোক্তাদের অভিযোগ খুব একটা তাদের কাছে পৌঁছায় না। লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়। সারাদেশে এই খাতের মূল্য নির্ধারণে লোকবল সক্ষমতা নেই কমিশনের। এরপরও মূল্য নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে নানা সময় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে।

১০ম গ্রেডের দাবিতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের

আইওরিস প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে চট্টগ্রাম বন্দর

করাচিতে সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান

যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকছে

রাজধানীর ৫০ থানার ওসি রদবদল

জাতীয় নির্বাচনের তফশিল আগামী সপ্তাহে

জয়ের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক এখন ‘সংবেদনশীল’ অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে: হাইকমিশনার হামিদুল্লাহ

ছবি

ব্যক্তির জন্য প্রতিষ্ঠান ‘বন্ধ করবে না’ সরকার: গভর্নর

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৩

লিভ টু আপিল খারিজ, অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ

খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ এসএসএফ নিরাপত্তা পাবেন না: রিজওয়ানা

আপত্তির পরও অনুমোদন পেল পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া

আবারও ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ

কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

ছবি

সরকারের ‘কঠোর শাস্তির’ বার্তা, ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ অনড় প্রাথমিক শিক্ষকরা

ছবি

আপত্তি সত্ত্বেও উপদেষ্টা পরিষদে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

ছবি

খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ; পরিবারের অন্য সদস্যরা সুবিধা পাবেন না: রিজওয়ানা হাসান

ছবি

সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছবি

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি: আদালতকে নারী উদ্যোক্তা তনি

ছবি

রাজশাহীর রাজবাড়ী সংরক্ষণে পদক্ষেপ: প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চিঠি

ছবি

মক ভোটিং: দুই ব্যালটে ভোট দিতে জনপ্রতি গড়ে সময় লেগেছে ৩ মিনিট ৫২ সেকেন্ড

ছবি

পোস্টাল ভোট: ১ লাখ ৫৭ হাজার প্রবাসীর নিবন্ধন

ছবি

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় ব্রিটিশ চিকিৎসক ঢাকায়, হাসপাতালে বিজিবি মোতায়েন

ছবি

ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন নাকচ

ছবি

বিটিআরসির সাবেক তিন চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

ট্রাইব্যুনালে ডাকা হলো, ধমক দিলেন চিফ প্রসিকিউটর, ক্ষমা চাইলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পান্না

ছবি

আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

ছবি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ২

ছবি

এলপি গ্যাস: ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো ৩৮ টাকা

ছবি

নির্বাচন: লটারিতে ৫২৭ ওসির বদলি ভাগ্য নির্ধারণ

ছবি

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কর্মশালা হঠাৎ স্থগিত

ছবি

খালেদার শারীরিক অবস্থার ওপর ‘নির্ভর করছে’ তারেকের দেশে ফেরা

ছবি

খালেদা জিয়ার ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা’ কার্যকরের নির্দেশ সরকারের

ছবি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানালেন, তারেক রহমান এখনো ট্রাভেল পাস চাননি

tab

এলপি গ্যাস : আট মাসে ৮ দফা বাড়লো দাম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ০৪ মার্চ ২০২৪

ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম (এলপি গ্যাস) দাম টানা আট মাসে ৮ দফা বেড়েছে। রান্নায় বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজি সিলিন্ডারের জন্য মার্চ মাসে ভোক্তাকে দিতে হবে ১ হাজার ৪৮২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ১ হাজার ৪৭৪ টাকা; বেড়েছে ৮ টাকা। নতুন দর গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে এলপিজির কাঁচামালের দাম বাড়েনি, ডলারের বিনিময় হারও কিছুটা কমেছে; তবে এলপিজি (এলপি গ্যাস) পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

গতকাল বিকেলে ঢাকার কাওরান বাজারে কমিশনের নিজস্ব কার্যালয়ে এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন। নতুন দর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকেই কার্যকর করার কথা জানান তিনি।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসির মার্চের মূল্য ঘোষণা দেখা যায়, সৌদি আরামকোর মূল্য অনুযায়ী এলপিজির মূল কাঁচামাল প্রোপেন ও বিউটেনের গড় মূল্য মার্চের জন্য ধরা হয়েছে ৬৩৬.৫০ মার্কিন ডলার; ফেব্রুয়ারি মাসেও তাই ছিল।

আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দামও হিসাব করে বিইআরসি। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি ডলারের দাম ধরা হয়েছিল ১২০ টাকা ৫২ পয়সা। মার্চে সেটা আরেকটু কমিয়ে ১১৯ টাকা ৮৯ পয়সা ধরা হয়েছে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ডলারের দাম ৬৩ পয়সা কমেছে।

কাঁচামালের দাম বাড়েনি, ডলারের দরও কমেছে। এরপরেও দেশে এলপিজির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এলপিজি অপারেটরা জানিয়েছেন জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। সে কারণে দাম একটু বাড়াতে হয়েছে।’

বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১২৩ টাকা ৫২ পয়সা, যা গত মাসে ছিল ১২২ টাকা ৮৬ পয়সা। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৬৬ পয়সা।

বাজারে সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডার পাওয়া যায়। মার্চে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১২৩ টাকা ৫২ পয়সা ধরে এসব সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।

বহুতল ভবনের জন্য রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা বেসরকারি এলপিজির মূসকসহ দাম প্রতি কেজি ১১৯.৬৯ টাকায় এবং গ্যাসীয় অবস্থায় সরবরাহকৃত এলপিজির মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ০.২৬৬০ টাকায় বা প্রতি ঘনমিটার ২৬৬ টাকায় সমন্বয় করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এই দর ছিল যথাক্রমে- ১১৯.০৪ টাকা, ০.২৬৪৫ টাকা এবং ২৬৪.৫০ টাকা।

সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ৫৯১ টাকা থেকে বাড়িয়ে মূসকসহ ৬৯০ টাকা করা হয়েছে। আর গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার প্রায় ৬৮ টাকা ৫ পয়সা, যা এত দিন ছিল ৬৭ টাকা ৬৮ পয়সা। প্রতি লিটারে বেড়েছে ৩৭ পয়সা।

বেসরকারি খাতের এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারে গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দাম ৪১ টাকা বেড়েছিল। একই পরিমাণ সিলিন্ডারে ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে দাম বেড়েছিল ২৯ টাকা। এরআগে, নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ২৩ টাকা, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ১৮ টাকা, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ৭৯ টাকা, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ১৪৪ টাকা এবং জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে ১৪১ টাকা দাম বেড়েছিল।

এই হিসেবে, ১২ কেজি এলপিজি (এলপি গ্যাস) সিলিন্ডারে গত বছরের জুলাই থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত আট মাসে দাম বেড়েছে ৪৮৩ টাকা। দাম বৃদ্ধির হার ৪৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দর বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বেশিরভাগ সময় দেশে এলপিজির দাম বেড়েছে।

এলপিজির দাম সর্বশেষ কমেছিল গত বছর জুলাইয়ে। ওই বছর জুনে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারে ভোক্তাকে দিতে হতো ১ হাজার ৭৪ টাকা। জুলাইয়ে সমপরিমাণ সিলিন্ডারে ৭৫ টাকা কমে দাম হয় ৯৯৯ টাকা।

এক দশক আগে সরকার যখন আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তারপর থেকে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসাবাড়ি, রেস্তোরাঁ গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করে। ওই সময় সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষণœœ করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত।

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

বর্তমানে এলপিজির চাহিদা অনেক বেড়েছে। বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁয় রান্নার পাশাপাশি পরিবহন, ছোট-বড় শিল্পকারখানায়ও এলপিজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন এলপিজির সরকারি উৎপাদন প্রায় এক শতাংশ, আর প্রায় ৯৯ শতাংশই বেসরকারি খাতের দখলে।

বসুন্ধরা, যমুনা, বেক্সিমকো, ওরিয়নসহ বর্তমানে ২৯টি সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি এলপিজি আমদানি, মজুতকরণ, বিতরণ, সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। এলপিজির ডিলার প্রায় ৩ হাজার, আমদানিকারী অপারেটর ২০টি এবং এলপিজি আমদানি টার্মিনাল রয়েছে ১৪টি।

তবে বাজারে বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ অধিকাংশ ভোক্তার।

জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, দীর্ঘদিন ধরে আবাসিকে রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ রাখেছে সরকার। অথচ রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ সক্ষমতা সেভাবে বাড়ানো হয়নি, যা পক্ষান্তরে এলপিজির খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি না পাওয়ার বিষয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিইআরসির বক্তব্য হলো- ভোক্তাদের অভিযোগ খুব একটা তাদের কাছে পৌঁছায় না। লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়। সারাদেশে এই খাতের মূল্য নির্ধারণে লোকবল সক্ষমতা নেই কমিশনের। এরপরও মূল্য নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে নানা সময় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে।

back to top