alt

কোটার হিসাব-নিকাশ, যেভাবে হয় প্রয়োগ

রাকিব উদ্দিন : শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

কোটা বিরোধী আন্দোলন : শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবরোধ

*সরকার বলছে-কোটা বাতিলের পর ৫০ জেলায় কোন নারীর চাকরি হয়নি

*আদালতের মাধ্যমে কোটার সংস্কার চান জনপ্রশাসনমন্ত্রী

প্রায় সব পক্ষই কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায়। সরকারেরও একই চাওয়া। কোটা বাতিল নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিলের পর অন্তত ৫০ জেলায় কোন নারীর চাকরি হয়নি। যদিও ওই সময় আন্দোলনকারীরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়েছিল। এখন কয়েকটি কোটা কমিয়ে নতুন কোটা যুক্ত করার দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাটা সিস্টেম উঠে যাওয়ার কারণে সরকারি চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কমে গেছে। যেমন ৪৩তম বিসিএসে মাত্র ১৭ শতাংশ নারী সুযোগ পেয়েছে। যেখানে ৩৮তম বিসিএসে নারীরা ছিলেন ২৬ শতাংশের ওপরে; সেখানে ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩তম বিসিএসে কমে গিয়ে গড়ে ১৯ শতাংশে নেমেছে।’

দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী-মন্তব্য করে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে সমতার ভিত্তিতে দেশটা এগিয়ে নিতে হবে। ৪০তম বিসিএসে ৫৯টি জেলা থেকে পুলিশে একজন নারীও স্থান পাননি। ১৭টি জেলা থেকে নারী পরুষ কেউ স্থান পায়নি। তাহলে কোটা না থাকলে এরকম একটা অসমতা সৃষ্টি হয়। সব কিছু বুঝেশুনে যদি তারা আইনজীবীদের দিয়ে কোর্টে বিষয়গুলো তুলে ধরে, তাহলে বিষয়টি সুন্দর সমাধান হবে।’

কোটা পদ্ধতি কিভাবে প্রয়োগ হয় তা জানতে পিএসসির দু’জন সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা জানিয়েছেন, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আসে কোটার হিসাব। এই তিন স্তরে উত্তীর্ণ না হলে কেউ কোটা সুবিধার আওতায় পরে না।

পিএসসির একজন সদস্য জানিয়েছেন, প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষেই কোটা পদ্ধতি কার্যকর হয়। সেই হিসেবে ‘ঢালাওভাবে’ মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে তা বলার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তারা।

পিএসসির সদ্য সাবেক একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার নম্বর যোগ করা হয়। এরপর আসে মৌখিক পরীক্ষার বিষয়। এই তিন স্তরে উত্তীর্ণ হলে তখন আসে কোটার হিসাব। এই কোটার হিসেব মেলাতে অন্তত ১৫দিন সময় লাগে।’

তিনি বলেন, ‘মনে করেন-শেরপুর জেলায় লোকসংখ্যা অন্য অনেক জেলার তুলনায় কম। সে কারণে জেলা কোটা বিবেচনায় শেরপুর থেকে বোটানিতে (উদ্ভিদ বিদ্যা) লেখাপড়া করা একজন প্রার্থী সহজেই বিসিএসে প্রশাসন, পররাষ্ট্র বা ভালো ক্যাডারে টিকে যায়। কিন্তু দেখা গেছে, এই প্রার্থীর আগে (মেধায় এগিয়ে) ছিল ২৭৩ জন; তারা সিভিল কোটায় এগিয়ে থেকেও পছন্দের ক্যাডার পান না বা ঠিকতে পারেন না।’

কোটা পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে সাবেক এই আমলা আরো বলেন, দু’একটি কোটা কমিয়ে নতুন কোটা যুক্ত করা যেতে পারে।

২০১৮ সালের আন্দোলন:

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানাড়ে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। কিন্তু আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকার ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে পুরো কোটাই বাতিল করে দেয়।

তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণীতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে। কোটা বাতিল হওয়ায় সরকারি নিয়োগে এর ‘সুফল’ আসেনি বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে কোনা ব্যাখ্যা আসেনি।

কোটা বাতিলের পর:

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত ৯ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠান বলেন, ‘আমরা ঘটনাচক্রে দেখছিলাম, যখন থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে, তখন থেকে দেখা যাচ্ছে ওই সমস্ত জেলার শিক্ষার্থীরা সরকারের যে সকল পদগুলোতে কর্ম সংস্থাদের সুযোগ ছিলো, সেখানে সম্ভব হয়নি।’

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সে সমস্ত জেলা একেবারেই পিছিয়ে ছিলো মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৫০টি জেলা থেকে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছিলো না। এখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেখান থেকেও সম্ভব হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার কারণেই সেটা হয়েছে। আর অনেকেই সেটা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।’

৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত নিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এই ব্যবস্থা বাতিলের পর ৮টি বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে চূড়ান্ত নিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে ৪৪, ৪৫ এবং ৪৬তম বিসিএসের মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা চলমান আছে।

কোটা পদ্ধতি বাতিল নয়, সংস্কার প্রয়োজন:

কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে উল্লেখ করে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান সংবাদকে বলেছেন, ‘সেখানে নিস্পত্তির আগে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমি অনুমান করছি, আপিল বিভাগ হয়তো নির্বাহী বিভাগকে এটি সংশোধন করার একটি আদেশ দেবেন। মামলা থাকা অবস্থায় এক্সিকিউটিভ অথরিটির (সরকার) এটি (কোটা বাতিল পুণর্বহাল) করা ঠিক হবে না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হরতাল (অবরোধ) করার দরকার কী? এটি করার মানে হলো- ইন্ডিরেক্টলি কোর্টের ওপর মানসিক প্রেসার তৈরি করা, সোশাল প্রেসার সৃষ্টি করা। আমার মনে হয়, সরকারের ওপর চাপ দিয়ে....কোর্ট যাতে ভয় পায় বা কোর্ট যাতে প্রভাবিত হয়, সেজন্য এটি (আন্দোলন) হচ্ছে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি মনে করি, স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিতে গেছেন তাদের বিতর্কের মধ্যে ফেলা ঠিক হবে না। আমার মনে হয়, টোটালি সকল কোটা বাতিল করে দেওয়া উচিৎ। অন্যতায় তাদের কমপেন্সিভ (ক্ষতিপূরণ দেওয়া) করা উচিৎ। তার কারণ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যদি একটি জমি দেওয়া হয় সেখান থেকে ইনকাম করতে পারে, ব্যাংক থেকে লোন দেওয়া হলে বিল্ডিং করতে পারে; সুতরাং মুক্তিযোদ্ধা, তার পরিবার ও নাতী-প্রতিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়। গাড়ি দেওয়া যায়; সরকার এখন দিচ্ছে...এটি বাড়িয়ে দিতে পারে।’

সাবেক শিক্ষা সচিব আরো বলেন, ‘যারা নারী, গরিব আছে...হার্ড কোর পুওর তাদের জন্য আগে কোটা করা উচিৎ। রেলওয়েতে ৪০ শতাংশ পৌষ্য (কর্মচারীদের জন্য) কোটা আছে, প্রাথমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ পৌষ্য কোটা আছে, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোটা আছে; তাদের ছেলে-মেয়েরা কম মার্কস পেলেও ভর্তি হতে পারে, এটি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আছে। তারা এটি নিয়ে কথা বলে না। আগে নিজের চড়কায় তেল দেওয়া উচিৎ।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় কোটার সংস্কার থাকা দরকার। আলোচনার ভিত্তিতে যৌক্তিক সমাধান দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে সেটা ঠিক করা দরকার। এই আলোচনা, যুক্তিতর্ক কোর্টে হওয়া দরকার। আগে একটা পক্ষের কথা আদালত শুনেছে, কারণ তখন অন্য পক্ষ ছিল না। এখন কোটা বিরোধীদের কথা আদালত শুনলে অবশ্যই সেটা বিবেচনায় নেবে এবং খুব সহজ সমাধান হওয়া সম্ভব।’

কিছু কোটা রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটা আছে। প্রতিটি গোষ্ঠী, প্রতিটি এলাকার মানুষ যেন সমানভাবে রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক, কোটা আন্দোলনে আমার অনেক শিক্ষার্থী আছে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের একটা সিদ্ধান্ত ছিল যেটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে গেছে। আমরা আদালতকে সম্মান করি, আদালতের বিষয় আদালতেই সমাধান করতে হবে। আমি একজন শিক্ষক হিসাবে বলব, রাস্তায় না থেকে আদালতের বিষয়টি আদালতেই সমাধান করতে হবে। আমরাও চাই, বিষয়টি খুব সহজেই নিষ্পত্তি হয়ে যাক। মহামান্য প্রধান বিচারপতিও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছেন।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা খুবই অনুচিত। আদালতে গিয়ে যৌক্তিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরলে খুব সহজেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পানির মতো সহজ জিনিস জটিল করছে কারা। শিক্ষার্থীরা সহজ বিষয়টা কেন জটিল করছে বুঝে আসছে না।’

যেভাবে বাড়তে থাকে কোটা পদ্ধতি:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা চালু করেন। ওই সময় সরকারি কর্মচারী নিয়োগে ২০ শতাংশ মেধায় (সাধারণ), ৪০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ১০ শতাংশ নেওয়া হতো নারী কোটা। আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘উপহার’ হিসেবে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।

১৯৭৬ সালে জেলা কোটা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয় এবং সাধারণদের জন্য অর্থাৎ মেধা কোটা ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। ওই বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশই বহাল রাখা হয়। আর নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকে।

পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা হয়। ওই বছর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ করা হয়।

তবে আগের মতোই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বহাল থাকে। জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা যুক্ত করা হয়।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা ব্যবস্থার কিছুটা সংস্কার করেন। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলাভিত্তিক কোটা নির্ধারণ করা হয়। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও মেয়ে, নাতি-নাতনি কোটা, জেলা কোটা, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, পোষ্য কোটা ও নারী কোটাসহ বিভিন্ন কোটা রাখা হয়।

সবমিলিয়ে বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল ছিল।

নিয়োগে কোটার বিন্যাস:

বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। বাকি ৪৫ শতাংশ সাধারণদের জন্য বরাদ্দ।

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন এবং দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা পুননির্ধারণ করা হয়। ২০০১ সালের আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা ঠিক করা হয়।

২০১০ সালের মে মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্রে বলা হয়, জেলা কোটার (১০ শতাংশ) সব পদ জেলার প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ সম্ভব না হলে জেলা কোটা জাতীয় মেধা তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

জেলার জন্য বরাদ্দ কোটায় যোগ্য প্রার্থী বিবেচিত না হলে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিশেষ কোটার প্রার্থীদের দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও উপজাতীয়দের জন্য জাতীয় মেধা তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। এরপর বিশেষ কোটার অধীন স্ব-স্ব কোটার প্রার্থীদের তালিকা থেকে তা পূরণের কথা বলা হয়।

এক্ষেত্রে জেলার কোটাও অন্য কোটায় চলে যাওয়ার অভিযোগ করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, এতে নিয়োগে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এসব বিষয় তুলে ধরেই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাচ্ছে।

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭৫৮ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪

ছবি

জুলাই সনদ: দ্বিমত থাকলেও সইয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন

ছবি

অস্ত্র মামলায় সুব্রত বাইনসহ চারজনের বিচার শুরুর আদেশ

ছবি

হাসিনার ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ প্রমাণিত হয়েছে’, এআই নয় যুক্তিতর্কে দাবি তাজুলের

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ বৃহস্পতিবার

ছবি

শোনার মানসিকতা রাজনৈতিক দলেরও থাকতে হবে: আইন উপদেষ্টা

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ছিল কুখ্যাত গডফাদার, বললেন আইন উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

‘আনন্দঘন’ পরিবেশে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের আশা আলী রীয়াজের

ছবি

জুলাই সনদ: সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ট্রাইব্যুনালে তাজুল ইসলাম: হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

ছবি

হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ৮ জানুয়ারি

ছবি

ইতালি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৮৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৫ জনের

ছবি

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত ‘বৈষম্যমূলক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী’: টিআইবি

ছবি

পদ্মায় মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব

ছবি

বুধবার থেকে অনলাইনে জামিননামা, এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে জেলখানায়

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা: ৫ মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: হানিফসহ চারজনকে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনার ‘কমান্ড রেসনসিবিলিটি’ প্রমাণিত হয়েছে দাবি প্রসিকিউশনের

ছবি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৬১ জনকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

এক দিনে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এ বছর প্রাণহানি ২৩৮

ছবি

অনলাইনে বেলবন্ড গ্রহণপ্রক্রিয়া পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে বুধবার

ছবি

বেতনভাতার দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান তৃতীয় দিনে, দুপুরে ‘মার্চ টু সচিবালয়’

ছবি

বাংলাদেশে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে ক্রিকইনফো বন্ধের প্রস্তাব তুললেন তৈয়্যব

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৮৫৭ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩

ছবি

নভেম্বরেই গণভোট চায় জামায়াত, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে বাস্তবায়ন করবে ইসি

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার

ছবি

সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র খসড়া: পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীরা

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করেছে সরকার

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসের ভবনকে ‘অস্থায়ী কারাগার’ ঘোষণা

ছবি

একই দিনে একই প্রশ্নে মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা ১২ ডিসেম্বর

tab

কোটার হিসাব-নিকাশ, যেভাবে হয় প্রয়োগ

রাকিব উদ্দিন

কোটা বিরোধী আন্দোলন : শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবরোধ

শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

*সরকার বলছে-কোটা বাতিলের পর ৫০ জেলায় কোন নারীর চাকরি হয়নি

*আদালতের মাধ্যমে কোটার সংস্কার চান জনপ্রশাসনমন্ত্রী

প্রায় সব পক্ষই কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায়। সরকারেরও একই চাওয়া। কোটা বাতিল নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিলের পর অন্তত ৫০ জেলায় কোন নারীর চাকরি হয়নি। যদিও ওই সময় আন্দোলনকারীরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়েছিল। এখন কয়েকটি কোটা কমিয়ে নতুন কোটা যুক্ত করার দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাটা সিস্টেম উঠে যাওয়ার কারণে সরকারি চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কমে গেছে। যেমন ৪৩তম বিসিএসে মাত্র ১৭ শতাংশ নারী সুযোগ পেয়েছে। যেখানে ৩৮তম বিসিএসে নারীরা ছিলেন ২৬ শতাংশের ওপরে; সেখানে ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩তম বিসিএসে কমে গিয়ে গড়ে ১৯ শতাংশে নেমেছে।’

দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী-মন্তব্য করে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে সমতার ভিত্তিতে দেশটা এগিয়ে নিতে হবে। ৪০তম বিসিএসে ৫৯টি জেলা থেকে পুলিশে একজন নারীও স্থান পাননি। ১৭টি জেলা থেকে নারী পরুষ কেউ স্থান পায়নি। তাহলে কোটা না থাকলে এরকম একটা অসমতা সৃষ্টি হয়। সব কিছু বুঝেশুনে যদি তারা আইনজীবীদের দিয়ে কোর্টে বিষয়গুলো তুলে ধরে, তাহলে বিষয়টি সুন্দর সমাধান হবে।’

কোটা পদ্ধতি কিভাবে প্রয়োগ হয় তা জানতে পিএসসির দু’জন সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা জানিয়েছেন, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আসে কোটার হিসাব। এই তিন স্তরে উত্তীর্ণ না হলে কেউ কোটা সুবিধার আওতায় পরে না।

পিএসসির একজন সদস্য জানিয়েছেন, প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষেই কোটা পদ্ধতি কার্যকর হয়। সেই হিসেবে ‘ঢালাওভাবে’ মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে তা বলার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তারা।

পিএসসির সদ্য সাবেক একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার নম্বর যোগ করা হয়। এরপর আসে মৌখিক পরীক্ষার বিষয়। এই তিন স্তরে উত্তীর্ণ হলে তখন আসে কোটার হিসাব। এই কোটার হিসেব মেলাতে অন্তত ১৫দিন সময় লাগে।’

তিনি বলেন, ‘মনে করেন-শেরপুর জেলায় লোকসংখ্যা অন্য অনেক জেলার তুলনায় কম। সে কারণে জেলা কোটা বিবেচনায় শেরপুর থেকে বোটানিতে (উদ্ভিদ বিদ্যা) লেখাপড়া করা একজন প্রার্থী সহজেই বিসিএসে প্রশাসন, পররাষ্ট্র বা ভালো ক্যাডারে টিকে যায়। কিন্তু দেখা গেছে, এই প্রার্থীর আগে (মেধায় এগিয়ে) ছিল ২৭৩ জন; তারা সিভিল কোটায় এগিয়ে থেকেও পছন্দের ক্যাডার পান না বা ঠিকতে পারেন না।’

কোটা পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে সাবেক এই আমলা আরো বলেন, দু’একটি কোটা কমিয়ে নতুন কোটা যুক্ত করা যেতে পারে।

২০১৮ সালের আন্দোলন:

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানাড়ে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। কিন্তু আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকার ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে পুরো কোটাই বাতিল করে দেয়।

তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণীতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে। কোটা বাতিল হওয়ায় সরকারি নিয়োগে এর ‘সুফল’ আসেনি বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে কোনা ব্যাখ্যা আসেনি।

কোটা বাতিলের পর:

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত ৯ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠান বলেন, ‘আমরা ঘটনাচক্রে দেখছিলাম, যখন থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে, তখন থেকে দেখা যাচ্ছে ওই সমস্ত জেলার শিক্ষার্থীরা সরকারের যে সকল পদগুলোতে কর্ম সংস্থাদের সুযোগ ছিলো, সেখানে সম্ভব হয়নি।’

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সে সমস্ত জেলা একেবারেই পিছিয়ে ছিলো মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৫০টি জেলা থেকে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছিলো না। এখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেখান থেকেও সম্ভব হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার কারণেই সেটা হয়েছে। আর অনেকেই সেটা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।’

৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত নিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এই ব্যবস্থা বাতিলের পর ৮টি বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে চূড়ান্ত নিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে ৪৪, ৪৫ এবং ৪৬তম বিসিএসের মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা চলমান আছে।

কোটা পদ্ধতি বাতিল নয়, সংস্কার প্রয়োজন:

কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে উল্লেখ করে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান সংবাদকে বলেছেন, ‘সেখানে নিস্পত্তির আগে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমি অনুমান করছি, আপিল বিভাগ হয়তো নির্বাহী বিভাগকে এটি সংশোধন করার একটি আদেশ দেবেন। মামলা থাকা অবস্থায় এক্সিকিউটিভ অথরিটির (সরকার) এটি (কোটা বাতিল পুণর্বহাল) করা ঠিক হবে না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হরতাল (অবরোধ) করার দরকার কী? এটি করার মানে হলো- ইন্ডিরেক্টলি কোর্টের ওপর মানসিক প্রেসার তৈরি করা, সোশাল প্রেসার সৃষ্টি করা। আমার মনে হয়, সরকারের ওপর চাপ দিয়ে....কোর্ট যাতে ভয় পায় বা কোর্ট যাতে প্রভাবিত হয়, সেজন্য এটি (আন্দোলন) হচ্ছে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি মনে করি, স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিতে গেছেন তাদের বিতর্কের মধ্যে ফেলা ঠিক হবে না। আমার মনে হয়, টোটালি সকল কোটা বাতিল করে দেওয়া উচিৎ। অন্যতায় তাদের কমপেন্সিভ (ক্ষতিপূরণ দেওয়া) করা উচিৎ। তার কারণ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যদি একটি জমি দেওয়া হয় সেখান থেকে ইনকাম করতে পারে, ব্যাংক থেকে লোন দেওয়া হলে বিল্ডিং করতে পারে; সুতরাং মুক্তিযোদ্ধা, তার পরিবার ও নাতী-প্রতিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়। গাড়ি দেওয়া যায়; সরকার এখন দিচ্ছে...এটি বাড়িয়ে দিতে পারে।’

সাবেক শিক্ষা সচিব আরো বলেন, ‘যারা নারী, গরিব আছে...হার্ড কোর পুওর তাদের জন্য আগে কোটা করা উচিৎ। রেলওয়েতে ৪০ শতাংশ পৌষ্য (কর্মচারীদের জন্য) কোটা আছে, প্রাথমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ পৌষ্য কোটা আছে, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোটা আছে; তাদের ছেলে-মেয়েরা কম মার্কস পেলেও ভর্তি হতে পারে, এটি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আছে। তারা এটি নিয়ে কথা বলে না। আগে নিজের চড়কায় তেল দেওয়া উচিৎ।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় কোটার সংস্কার থাকা দরকার। আলোচনার ভিত্তিতে যৌক্তিক সমাধান দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে সেটা ঠিক করা দরকার। এই আলোচনা, যুক্তিতর্ক কোর্টে হওয়া দরকার। আগে একটা পক্ষের কথা আদালত শুনেছে, কারণ তখন অন্য পক্ষ ছিল না। এখন কোটা বিরোধীদের কথা আদালত শুনলে অবশ্যই সেটা বিবেচনায় নেবে এবং খুব সহজ সমাধান হওয়া সম্ভব।’

কিছু কোটা রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটা আছে। প্রতিটি গোষ্ঠী, প্রতিটি এলাকার মানুষ যেন সমানভাবে রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক, কোটা আন্দোলনে আমার অনেক শিক্ষার্থী আছে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের একটা সিদ্ধান্ত ছিল যেটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে গেছে। আমরা আদালতকে সম্মান করি, আদালতের বিষয় আদালতেই সমাধান করতে হবে। আমি একজন শিক্ষক হিসাবে বলব, রাস্তায় না থেকে আদালতের বিষয়টি আদালতেই সমাধান করতে হবে। আমরাও চাই, বিষয়টি খুব সহজেই নিষ্পত্তি হয়ে যাক। মহামান্য প্রধান বিচারপতিও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছেন।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা খুবই অনুচিত। আদালতে গিয়ে যৌক্তিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরলে খুব সহজেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পানির মতো সহজ জিনিস জটিল করছে কারা। শিক্ষার্থীরা সহজ বিষয়টা কেন জটিল করছে বুঝে আসছে না।’

যেভাবে বাড়তে থাকে কোটা পদ্ধতি:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা চালু করেন। ওই সময় সরকারি কর্মচারী নিয়োগে ২০ শতাংশ মেধায় (সাধারণ), ৪০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ১০ শতাংশ নেওয়া হতো নারী কোটা। আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘উপহার’ হিসেবে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।

১৯৭৬ সালে জেলা কোটা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয় এবং সাধারণদের জন্য অর্থাৎ মেধা কোটা ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। ওই বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশই বহাল রাখা হয়। আর নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকে।

পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা হয়। ওই বছর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ করা হয়।

তবে আগের মতোই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বহাল থাকে। জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা যুক্ত করা হয়।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা ব্যবস্থার কিছুটা সংস্কার করেন। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলাভিত্তিক কোটা নির্ধারণ করা হয়। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও মেয়ে, নাতি-নাতনি কোটা, জেলা কোটা, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, পোষ্য কোটা ও নারী কোটাসহ বিভিন্ন কোটা রাখা হয়।

সবমিলিয়ে বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল ছিল।

নিয়োগে কোটার বিন্যাস:

বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। বাকি ৪৫ শতাংশ সাধারণদের জন্য বরাদ্দ।

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন এবং দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা পুননির্ধারণ করা হয়। ২০০১ সালের আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা ঠিক করা হয়।

২০১০ সালের মে মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্রে বলা হয়, জেলা কোটার (১০ শতাংশ) সব পদ জেলার প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ সম্ভব না হলে জেলা কোটা জাতীয় মেধা তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

জেলার জন্য বরাদ্দ কোটায় যোগ্য প্রার্থী বিবেচিত না হলে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিশেষ কোটার প্রার্থীদের দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও উপজাতীয়দের জন্য জাতীয় মেধা তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। এরপর বিশেষ কোটার অধীন স্ব-স্ব কোটার প্রার্থীদের তালিকা থেকে তা পূরণের কথা বলা হয়।

এক্ষেত্রে জেলার কোটাও অন্য কোটায় চলে যাওয়ার অভিযোগ করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, এতে নিয়োগে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এসব বিষয় তুলে ধরেই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাচ্ছে।

back to top