নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই নেপাল যাবে বলে জানিয়েছেন এই সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
এক দশক আগে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি না হওয়ায় বিষয়টি আটকে আছে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বহুবার দিপক্ষীয় এবং ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছে। শিগগিরই আসছে নেপালের বিদ্যুৎ, এই আশ্বাসও বিগত সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার দেয়া হয়েছে।
এবার আশার কথা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই নেপাল সফর করবে।’ সেখানে নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে বলে জানান তিনি। তবে ঠিক কবে প্রতিনিধি দল নেপাল সফরে যাবেন, তা জানাননি তিনি।
নেপালের জাতীয় ও সংবিধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি শিগগিরই শেষ হবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপালও আগ্রহী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচনা ছিল বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনবে গরমের দিনে, চাহিদা যখন বেশি থাকে। তবে শীতকালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যায়। তখন সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানি করা হবে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় নেপালে প্রচ- শীত পড়ে। তখন দেশটিতে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যায়। তবে পাহাড় থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ আমদানি নেপালের জন্যও প্রয়োজন।
নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে বলেও আলোচনা ছিল।
বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) সই করেছিল নেপাল ও বাংলাদেশ। তবে এই দুই দেশের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ভারত। কারণ নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই। তবে দুটি দেশের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত আছে। আর বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে স্থলপথে।
ভারতে ভু-খন্ড এবং সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আনতে হলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন; যা এখনও হয়নি।
ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এইচভিডিসি স্টেশন (সাবস্টেশন) ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে ট্রেডিং মার্জিন ও সঞ্চালন চার্জ দিতে হবে প্রতিবেশী দেশটিকে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ি, আগামী পাঁচ বছরে নেপাল থেকে ৬৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতি বছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হবে নেপালের কাছ থেকে।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ বিদ্যুৎ কেনা হবে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৬ দশমিক ৪০ মার্কিন সেন্ট। আর সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের জন্য এনভিভিএন (এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভ্যাপর নিগম) কর্তৃক ট্রেডিং মার্জিন ধরা হয়েছে ০.০৫৯৫ ভারতীয় রুপি (প্রতি কিলোওয়াট)। এর সঙ্গে ভারতীয় সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি অথরিটির হিসাব অনুযায়ী সঞ্চালন চার্জ যুক্ত হবে।
জানতে চাইলে পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ভারতের সঞ্চালন চার্জ এবং ট্রেডিং মার্জিনসহ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় বা ইউনিটে খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৯ টাকা।
নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হলে দেশে মোট আমদানি বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, যা বাংলাদেশের গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১১ শতাংশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে, যার পুরোটাই ভারত থেকে। এর মধ্যে দেশটির সঙ্গে সরকারি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আর বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আদানির ঝাড়খ- বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসছে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে কারিগরি ত্রুটিসহ নানা কারণে ভারত থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানি বা সরবরাহের পরিমাণ মাঝে মধ্যেই কমে যাচ্ছে।
রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই নেপাল যাবে বলে জানিয়েছেন এই সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
এক দশক আগে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি না হওয়ায় বিষয়টি আটকে আছে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বহুবার দিপক্ষীয় এবং ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছে। শিগগিরই আসছে নেপালের বিদ্যুৎ, এই আশ্বাসও বিগত সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার দেয়া হয়েছে।
এবার আশার কথা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই নেপাল সফর করবে।’ সেখানে নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে বলে জানান তিনি। তবে ঠিক কবে প্রতিনিধি দল নেপাল সফরে যাবেন, তা জানাননি তিনি।
নেপালের জাতীয় ও সংবিধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি শিগগিরই শেষ হবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপালও আগ্রহী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচনা ছিল বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনবে গরমের দিনে, চাহিদা যখন বেশি থাকে। তবে শীতকালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যায়। তখন সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানি করা হবে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় নেপালে প্রচ- শীত পড়ে। তখন দেশটিতে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যায়। তবে পাহাড় থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ আমদানি নেপালের জন্যও প্রয়োজন।
নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে বলেও আলোচনা ছিল।
বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) সই করেছিল নেপাল ও বাংলাদেশ। তবে এই দুই দেশের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ভারত। কারণ নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই। তবে দুটি দেশের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত আছে। আর বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে স্থলপথে।
ভারতে ভু-খন্ড এবং সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আনতে হলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন; যা এখনও হয়নি।
ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এইচভিডিসি স্টেশন (সাবস্টেশন) ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে ট্রেডিং মার্জিন ও সঞ্চালন চার্জ দিতে হবে প্রতিবেশী দেশটিকে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ি, আগামী পাঁচ বছরে নেপাল থেকে ৬৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতি বছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হবে নেপালের কাছ থেকে।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ বিদ্যুৎ কেনা হবে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৬ দশমিক ৪০ মার্কিন সেন্ট। আর সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের জন্য এনভিভিএন (এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভ্যাপর নিগম) কর্তৃক ট্রেডিং মার্জিন ধরা হয়েছে ০.০৫৯৫ ভারতীয় রুপি (প্রতি কিলোওয়াট)। এর সঙ্গে ভারতীয় সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি অথরিটির হিসাব অনুযায়ী সঞ্চালন চার্জ যুক্ত হবে।
জানতে চাইলে পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ভারতের সঞ্চালন চার্জ এবং ট্রেডিং মার্জিনসহ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় বা ইউনিটে খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৯ টাকা।
নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হলে দেশে মোট আমদানি বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, যা বাংলাদেশের গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১১ শতাংশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে, যার পুরোটাই ভারত থেকে। এর মধ্যে দেশটির সঙ্গে সরকারি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আর বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আদানির ঝাড়খ- বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসছে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে কারিগরি ত্রুটিসহ নানা কারণে ভারত থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানি বা সরবরাহের পরিমাণ মাঝে মধ্যেই কমে যাচ্ছে।