alt

জাতীয়

সরকারের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ : মুহাম্মদ ইউনূস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

*প্রতিটি দল ভয়-ভীতি ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে তেমন ব্যবস্থা করা হবে
*প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য
*সমগ্র বিশ্ব একসঙ্গে ‘তিন-শূন্য-এর ধারণা বিবেচনা করতে পারে। এই তিন শূন্য হলো, শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ

যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত তাদের প্রত্যেকের জবাবদিহিতা যেন নিশ্চিত করা যায়, এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এছাড়া মৌলিক অধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখা, ভয়-ভীতি ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো, সুষ্ঠ নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি যেন নিশ্চিত করা যায় এসব নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এমনটা জানান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিউইর্য়কে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে জাতিসংষের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই-আগস্ট বাংলাদেশের যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববাসীকে তিনি বলেন, ‘এই জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের, অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-জনতা তাদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করেও, বুক পেতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমাদের এই তরুণরা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল আমাদের তরুণীরা। স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যত নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধা বঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন কর্মকা-ে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্ব চেয়েছিল। আমাদের জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল।’

আন্দোলনে প্রায় আটশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের জানা মতে, প্রায় আটশত-এরও বেশি জীবন আমরা হারিয়েছি স্বৈরাচারী শক্তির হাতে।’

এই আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে আমাদের গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল। এ রকম আমরা দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময়েও। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।’

গত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে মুখোমুখিভাবে দেখতে পাচ্ছি কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। কীভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। কীভাবে জনগণের অর্থসম্পদকে নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল। কীভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ রকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের একজন কৃষক বা শ্রমিকের সন্তানও যেন সমাজের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে, সেই লক্ষ্যে বিশালাকার অবকাঠামো নির্মানের বদলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করছি। রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল পর্যায়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনাই আমাদের অভীষ্ট।’

বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে সব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পক্ষভুক্ত, সেগুলো প্রতিপালনে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’

মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের গণআন্দোলনকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান শুরু করেছে। দায়িত্বভার গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা গুম প্রতিরোধে যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন রয়েছে, তাতে যোগদান করেছি। এর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দেশীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নির্মম অতীত যেন আর ফিরে না আসে, সেজন্য আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সেই লক্ষ্যে আমরা বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করেছি। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কোনো বিদেশি ব্যবসা বা বিনিয়োগ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতেও আমরা বদ্ধপরিকর।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিপ্লবকালে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম সময়ে জনগণের মুক্তির আকাঙ্খা পূরণে তাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীসমূহ আরো একবার শান্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রমাণ করেছে।’

এই পৃথিবীতে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারগুলোকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সকলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো জলবায়ু সম্পর্কিত ন্যায়বিচার, যাতে করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, উদাসীন আচরণ কিংবা এর মাধ্যমে সাধিত ক্ষতির বিষয়ে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দায়বদ্ধ করা যায়। সমগ্র বিশ্ব একসাথে ‘তিন-শূন্য’-এর ধারণা বিবেচনা করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা - শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারি। একই ভাবে আমাদের দরকার জীবনরক্ষাকারী প্রযুক্তি, বিশেষতঃ কৃষি, পানি এবং জনস্বাস্থ্য খাতে, যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভাবন এবং সমাধান ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাপ বাড়ছে, ক্রমহ্রাসমান পানিসম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছে আমাদের বাসযোগ্যতাকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে প্রতিনিয়ত। ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও মাত্রা বৃদ্ধির কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ক্ষুদ্র কৃষক এবং প্রান্তিক পর্যায়ে জীবিকা অন্বেষনকারীরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে সবচেয়ে বেশী। আমি আজ যখন এই বিশ্ব সভায় কথা বলছি, তখন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে পঞ্চাশ লাখেরও অধিক মানুষ তাদের জীবদ্দশায় হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে। মহাসচিব গুতেরেস আমাদের দেখিয়েছেন, বিদ্যমান পরিক্রমা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই, বাংলাদেশের মত জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও, উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগ ও অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডকে কার্যকর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে তাই প্রয়োজন উন্নত ও উন্নয়নশীল সকল দেশসমূহ ও বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন মূল্যবোধ এবং নতুন একতা। সামগ্রিকভাবে, এই লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ ব্যবস্থা, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সরকারসমূহ, সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অংশীজন (এনজিওসমূহ) এবং দাতব্য সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে একসাথে। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে সামাজিক ব্যবসাকে স্থান দিলেই নিচের অর্ধেকাংশ মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। এই পদক্ষেপ একই সঙ্গে জলবায়ুর ধ্বংসাত্মক গতিকে সফলভাবে রোধ করতে পারে প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই বিষয়ে আমি মহাসচিব গুতেরেসের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাতের ফলে ব্যাপকভিত্তিতে মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হচ্ছে তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী এবং শিশুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি আনতে পারবে, তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকলকে এর বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। গত আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমরা উভয়পক্ষকেই সংলাপে বসে বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গত সাত বছর যাবত মায়ানমার হতে আগত ১২ (বারো) লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এর ফলে আমরা বিশাল সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। রোহিঙ্গাদের সাথে সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আমাদের সামষ্টিক আকাঙ্খা ও বিশ্বাস অর্পণ করেছি এই সার্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) অর্জনে। এক্ষেত্রে অনেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র আরো পিছিয়ে আছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এসডিজি অর্থায়নে বছরে প্রায় আড়াই থেকে চার ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের সমান ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের ঋণের বোঝা, ক্ষয়িষ্ণু আর্থিক সক্ষমতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের মত দেশগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপুল জনশক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ। এই জনশক্তিকে বর্তমান ও আগামীর জন্য গড়ে তোলা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এজন্য বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হচ্ছে তখন আমরা শিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা লাভের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় বিকাশ এবং এর বহুমাত্রিক প্রয়োগে বাংলাদেশ বিশেষভাবে আগ্রহী। আমাদের তরুণ সমাজ জেনারেটিভ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশের মতো বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগজনিত অর্জিত সুফল থেকে পিছিয়ে না পড়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে তা নিশ্চিত করতে হবে।’

করোনো সংকটের সময় বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বৈশ্বিক অতিমারী চুক্তির চলমান আলোচনায় বাংলাদেশ নেতৃত্ব প্রদান করছে। আমরা চাই কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, গবেষণা ও উন্নয়ন, চিকিৎসা পরীক্ষা-ভ্যাক্সিন-থেরাপিউটিক্সের উৎপাদন বহুমুখীকরণে এবং সকল ভ্যাক্সিনকে মেধাসত্ত্ব-অধিকার মুক্ত ঘোষণা করার ব্যাপারে ঐকমত্য।’

এ বছর জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের বিষয়ে বলেন, ‘গত পঞ্চাশ বছর ছিল আমাদের জন্য একটি পারস্পরিক শিক্ষণীয়, সম্মিলিত যাত্রা। সীমিত উপায়ে বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা, ন্যায়, সমতা, মানবাধিকার, সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে আসছে। আমাদের সমন্বিত প্রয়াস সত্যিকার অর্থে একটি নিয়ম-ভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে আমি স্মরণ করছি ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ক্ষুদ্রঋণের ওপর গৃহীত রেজুল্যুশনের কথা। সেই সময় জাতিসংঘ ২০০৫ সালকে ‘এয়ার অব মাইক্রোক্রেডিট’ ঘোষণা করেছিল। যার ফলে ক্ষুদ্রঋণ বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হবার সুযোগ পেয়েছিল। একই সময়ে বাংলাদেশের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল ‘ফ্রেন্ড অব মাইক্রোক্রেডিট’। ২০০১ সাল থেকে সাধারণ পরিষদের ‘কালচার অব পিশ’ সংক্রান্ত বাৎসরিক যে রেজুল্যুশন গৃহীত হয়ে আসছে বা নিরাপত্তা পরিষদে ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত যে ১৩২৫ (তেরশ পঁচিশ) নম্বর রেজুল্যুশন গৃহীত হয়েছিল, তা বাংলাদেশের বিশ্বজনীন উদ্যোগগুলোর প্রতিফলন ও অবদান। আজ, এই মহান বিশ্বসভায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে সকলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান। সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে আজকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে কীভাবে আমরা নারী, পুরুষ, সবার জন্য আজ ও আগামীর দিনগুলোতে উদ্যোক্তা হবার সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের সবার হাতে যথেষ্ট সক্ষমতা, সম্পদ এবং উপায় রয়েছে। আসুন, আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে সকল প্রকার বৈষম্য ও অসমতার অবসানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। বাংলাদেশের তরুণরা প্রমাণ করেছে, মানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার অভিপ্রায় কোনো উচ্চাভিলাষ নয় বরং এটা সকলের নিশ্চিত প্রাপ্য। আজ এই মহান সমাবেশে আপনাদের উপস্থিতিতে শান্তি, সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ তার ভূমিকাকে ক্রমাগতভাবে জোরদার করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।’

ছবি

কুমিল্লায় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে চেয়ারেই বসে গেলেন ছাত্র

ছবি

নিয়ন্ত্রণে নেই নিত্যপণ্যের বাজার, অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশের অভ্যুত্থান বিশ্বকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যোগাবে : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

খুব দেরি হওয়ার আগেই আমাদের সমাধান করতে হবে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ইউনূস

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আইসিসি প্রধান কৌঁসুলির বৈঠক

ছবি

সকল সিটি করপোরেশন-পৌরসভার কাউন্সিলরদের অপসারণ

ছবি

লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ারের স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ

আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করা হবে

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলেই নির্বাচন : নিউইয়র্কে মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

অতিরিক্ত ডিআইজি হলেন ৪৭ এসপি

ছবি

অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত: ইউনূস

ছবি

সংস্কার উদ্যোগে ৩৫০ কোটি ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক

ছবি

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে শাহবাজ শরিফ ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক

বিদ্যুতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি : ভারত-বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষায় নেপাল

ছবি

সরকার পতনের পর দেড়মাসে শতাধিক খুন রাজধানীতে

ছবি

গুলিতেই মারা গেছে আবু সাইদ ,মাথায় আঘাত উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া ময়না তদন্ত প্রতিবেদনটি ভুয়া

ছবি

নাহিদ ইসলাম এর সাথে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ ও রাব্বির পরিবারের সাক্ষাৎ

ছবি

‘বিরল’ বৈঠকে ইউনূসকে বুকে টেনে নিলেন বাইডেন

ছবি

তরুণদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা, বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা কামনা ইউনূসের

ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৪ জন ভর্তি, ২ জনের মৃত্যু

ছবি

দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চান ইউনূস

ছবি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করলেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পূর্ণ সমর্থন মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে

ছবি

ইউনূস ও জাস্টিন ট্রুডো একান্ত বৈঠক

ছবি

এ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক

ছবি

সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী আর নেই

ছবি

অন্তবর্র্তী সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন

ছবি

রাজধানীর সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের প্রথম ধাপ: সচেতনতা এবং বিকল্পের দিকে উদ্যোগ

ছবি

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৭০৮ জনের তালিকা প্রকাশ করল সরকার

ছবি

শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন হবে, হাজিরা বোনাস বাড়ছে

ছবি

জুলাই-অগাস্টে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণায় রুল জারি

ছবি

১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ : পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

সংস্কারকাজের সময় দীর্ঘায়িত হবে: বদিউল আলম মজুমদার

tab

জাতীয়

সরকারের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ : মুহাম্মদ ইউনূস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

*প্রতিটি দল ভয়-ভীতি ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে তেমন ব্যবস্থা করা হবে
*প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য
*সমগ্র বিশ্ব একসঙ্গে ‘তিন-শূন্য-এর ধারণা বিবেচনা করতে পারে। এই তিন শূন্য হলো, শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ

যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত তাদের প্রত্যেকের জবাবদিহিতা যেন নিশ্চিত করা যায়, এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এছাড়া মৌলিক অধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখা, ভয়-ভীতি ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো, সুষ্ঠ নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি যেন নিশ্চিত করা যায় এসব নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এমনটা জানান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিউইর্য়কে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে জাতিসংষের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই-আগস্ট বাংলাদেশের যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববাসীকে তিনি বলেন, ‘এই জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের, অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-জনতা তাদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করেও, বুক পেতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমাদের এই তরুণরা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল আমাদের তরুণীরা। স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যত নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধা বঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন কর্মকা-ে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্ব চেয়েছিল। আমাদের জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল।’

আন্দোলনে প্রায় আটশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের জানা মতে, প্রায় আটশত-এরও বেশি জীবন আমরা হারিয়েছি স্বৈরাচারী শক্তির হাতে।’

এই আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে আমাদের গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল। এ রকম আমরা দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময়েও। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।’

গত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে মুখোমুখিভাবে দেখতে পাচ্ছি কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। কীভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। কীভাবে জনগণের অর্থসম্পদকে নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল। কীভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ রকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের একজন কৃষক বা শ্রমিকের সন্তানও যেন সমাজের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে, সেই লক্ষ্যে বিশালাকার অবকাঠামো নির্মানের বদলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করছি। রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল পর্যায়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনাই আমাদের অভীষ্ট।’

বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে সব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পক্ষভুক্ত, সেগুলো প্রতিপালনে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’

মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের গণআন্দোলনকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান শুরু করেছে। দায়িত্বভার গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা গুম প্রতিরোধে যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন রয়েছে, তাতে যোগদান করেছি। এর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দেশীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নির্মম অতীত যেন আর ফিরে না আসে, সেজন্য আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সেই লক্ষ্যে আমরা বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করেছি। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কোনো বিদেশি ব্যবসা বা বিনিয়োগ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতেও আমরা বদ্ধপরিকর।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিপ্লবকালে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম সময়ে জনগণের মুক্তির আকাঙ্খা পূরণে তাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীসমূহ আরো একবার শান্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রমাণ করেছে।’

এই পৃথিবীতে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারগুলোকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সকলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো জলবায়ু সম্পর্কিত ন্যায়বিচার, যাতে করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, উদাসীন আচরণ কিংবা এর মাধ্যমে সাধিত ক্ষতির বিষয়ে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দায়বদ্ধ করা যায়। সমগ্র বিশ্ব একসাথে ‘তিন-শূন্য’-এর ধারণা বিবেচনা করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা - শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারি। একই ভাবে আমাদের দরকার জীবনরক্ষাকারী প্রযুক্তি, বিশেষতঃ কৃষি, পানি এবং জনস্বাস্থ্য খাতে, যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভাবন এবং সমাধান ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাপ বাড়ছে, ক্রমহ্রাসমান পানিসম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছে আমাদের বাসযোগ্যতাকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে প্রতিনিয়ত। ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও মাত্রা বৃদ্ধির কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ক্ষুদ্র কৃষক এবং প্রান্তিক পর্যায়ে জীবিকা অন্বেষনকারীরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে সবচেয়ে বেশী। আমি আজ যখন এই বিশ্ব সভায় কথা বলছি, তখন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে পঞ্চাশ লাখেরও অধিক মানুষ তাদের জীবদ্দশায় হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে। মহাসচিব গুতেরেস আমাদের দেখিয়েছেন, বিদ্যমান পরিক্রমা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই, বাংলাদেশের মত জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও, উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগ ও অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডকে কার্যকর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে তাই প্রয়োজন উন্নত ও উন্নয়নশীল সকল দেশসমূহ ও বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন মূল্যবোধ এবং নতুন একতা। সামগ্রিকভাবে, এই লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ ব্যবস্থা, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সরকারসমূহ, সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অংশীজন (এনজিওসমূহ) এবং দাতব্য সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে একসাথে। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে সামাজিক ব্যবসাকে স্থান দিলেই নিচের অর্ধেকাংশ মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। এই পদক্ষেপ একই সঙ্গে জলবায়ুর ধ্বংসাত্মক গতিকে সফলভাবে রোধ করতে পারে প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই বিষয়ে আমি মহাসচিব গুতেরেসের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাতের ফলে ব্যাপকভিত্তিতে মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হচ্ছে তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী এবং শিশুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি আনতে পারবে, তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকলকে এর বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। গত আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমরা উভয়পক্ষকেই সংলাপে বসে বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গত সাত বছর যাবত মায়ানমার হতে আগত ১২ (বারো) লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এর ফলে আমরা বিশাল সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। রোহিঙ্গাদের সাথে সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আমাদের সামষ্টিক আকাঙ্খা ও বিশ্বাস অর্পণ করেছি এই সার্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) অর্জনে। এক্ষেত্রে অনেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র আরো পিছিয়ে আছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এসডিজি অর্থায়নে বছরে প্রায় আড়াই থেকে চার ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের সমান ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের ঋণের বোঝা, ক্ষয়িষ্ণু আর্থিক সক্ষমতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের মত দেশগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপুল জনশক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ। এই জনশক্তিকে বর্তমান ও আগামীর জন্য গড়ে তোলা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এজন্য বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হচ্ছে তখন আমরা শিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা লাভের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় বিকাশ এবং এর বহুমাত্রিক প্রয়োগে বাংলাদেশ বিশেষভাবে আগ্রহী। আমাদের তরুণ সমাজ জেনারেটিভ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশের মতো বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগজনিত অর্জিত সুফল থেকে পিছিয়ে না পড়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে তা নিশ্চিত করতে হবে।’

করোনো সংকটের সময় বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বৈশ্বিক অতিমারী চুক্তির চলমান আলোচনায় বাংলাদেশ নেতৃত্ব প্রদান করছে। আমরা চাই কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, গবেষণা ও উন্নয়ন, চিকিৎসা পরীক্ষা-ভ্যাক্সিন-থেরাপিউটিক্সের উৎপাদন বহুমুখীকরণে এবং সকল ভ্যাক্সিনকে মেধাসত্ত্ব-অধিকার মুক্ত ঘোষণা করার ব্যাপারে ঐকমত্য।’

এ বছর জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের বিষয়ে বলেন, ‘গত পঞ্চাশ বছর ছিল আমাদের জন্য একটি পারস্পরিক শিক্ষণীয়, সম্মিলিত যাত্রা। সীমিত উপায়ে বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা, ন্যায়, সমতা, মানবাধিকার, সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে আসছে। আমাদের সমন্বিত প্রয়াস সত্যিকার অর্থে একটি নিয়ম-ভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে আমি স্মরণ করছি ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ক্ষুদ্রঋণের ওপর গৃহীত রেজুল্যুশনের কথা। সেই সময় জাতিসংঘ ২০০৫ সালকে ‘এয়ার অব মাইক্রোক্রেডিট’ ঘোষণা করেছিল। যার ফলে ক্ষুদ্রঋণ বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হবার সুযোগ পেয়েছিল। একই সময়ে বাংলাদেশের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল ‘ফ্রেন্ড অব মাইক্রোক্রেডিট’। ২০০১ সাল থেকে সাধারণ পরিষদের ‘কালচার অব পিশ’ সংক্রান্ত বাৎসরিক যে রেজুল্যুশন গৃহীত হয়ে আসছে বা নিরাপত্তা পরিষদে ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত যে ১৩২৫ (তেরশ পঁচিশ) নম্বর রেজুল্যুশন গৃহীত হয়েছিল, তা বাংলাদেশের বিশ্বজনীন উদ্যোগগুলোর প্রতিফলন ও অবদান। আজ, এই মহান বিশ্বসভায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে সকলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান। সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে আজকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে কীভাবে আমরা নারী, পুরুষ, সবার জন্য আজ ও আগামীর দিনগুলোতে উদ্যোক্তা হবার সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের সবার হাতে যথেষ্ট সক্ষমতা, সম্পদ এবং উপায় রয়েছে। আসুন, আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে সকল প্রকার বৈষম্য ও অসমতার অবসানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। বাংলাদেশের তরুণরা প্রমাণ করেছে, মানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার অভিপ্রায় কোনো উচ্চাভিলাষ নয় বরং এটা সকলের নিশ্চিত প্রাপ্য। আজ এই মহান সমাবেশে আপনাদের উপস্থিতিতে শান্তি, সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ তার ভূমিকাকে ক্রমাগতভাবে জোরদার করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।’

back to top