alt

জাতীয়

বাংলাদেশের অভ্যুত্থান বিশ্বকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যোগাবে : প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ ডেস্ক : শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।’

আজ শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের, অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথমদিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক-যোগাযোগ মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে।”

ইউনূস বলেন, আমাদের ছাত্রজনতা তাদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যত নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধা বঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব চেয়েছিল। আমাদের জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল।

তিনি বলেন, আমাদের এই তরুণরা যে প্রজ্ঞা, সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে তা আমাদের অভিভূত করেছে। সারা বিশ্ববাসীকে অভিভূত করেছে। বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করেও বুক পেতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমাদের এই তরুণরা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধ প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল আমাদের তরুণ-তরুণীরা। স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা। তারা নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তীদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে।

ইউনূস বলেন, তপ্ত রোদ, বৃষ্টি, মৃত্যুভয়কে তোয়াক্কা না করে তারা সত্য ও ন্যায়সঙ্গত আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দীর্ঘকালব্যাপী রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিচালনা করার অশুভ ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করেছিল। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের জানামতে ৮০০ জনেরও বেশি জীবন আমরা হারিয়েছি স্বৈরাচারী শক্তির হাতে।

ইউনূস তার ভাষণে বলেন, উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে আমাদের গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল, সেই মূল্যবোধকে বহু বছর পরে আমাদের ‘জেনারেশন জি’ নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে। এরকমটি আমরা দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময়েও।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন প্রাণের সঞ্চার করে যায় বর্ষ ঋতু; এবারের বর্ষায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, তা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষকে অধিকারের লড়াইয়ে উঠে দাঁড়ানোর সাহস যোগাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে দেখতে পেলাম, কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, কীভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, কীভাবে জনগণের অর্থসম্পদ নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল, কীভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সব ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এককথায়, প্রতিটি পর্যায়ে নীতি ও নৈতিকতার অবক্ষয় ছিল সীমাহীন।’ তিনি বলেন, ‘এ রকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।

বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সব রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত, তাদের সব কটির জবাবদিহি নিশ্চিত করাও তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবেন, ভয়ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবেন, তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন, এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেইনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দি’ করে রাখা হয়েছিল, জনগণের অর্থ সম্পদকে ‘নিদারুণভাবে লুটপাট’ করা হয়েছিল, ‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী’ সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে ‘কুক্ষিগত’ করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এক কথায়, প্রত্যেক পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা ‘অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল’। এরকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।

ইউনূস বলেন, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত, তাদের প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তার সরকারের অগ্রাধিকার। মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবে, ভয়-ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে– এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পক্ষভুক্ত, সেগুলো প্রতিপালনে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক বিশ্বকাঠামোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান অব্যাহত থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের গণ-আন্দোলনকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান এবং এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গঠন এবং তার কাজ শুরু করার জন্য দ্রুত বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি তাঁকে বাংলাতেশের পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দায়িত্বভার গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা গুম প্রতিরোধে যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন রয়েছে, তাতে যোগদান করেছি। এর আশু বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দেশীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে বিগত দেড় দশকে যেসমস্ত গুমের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিশন কাজ করছে। মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নির্মম অতীত যেন আর ফিরে না আসে কোনোদিন, সে জন্য আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সেই লক্ষ্যে আমরা বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করেছি। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরও কয়েকটি বিশেষ বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো বিদেশি ব্যবসা বা বিনিয়োগ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতেও আমরা বদ্ধপরিকর।

ড. ইউনূস বলেন, এসব সংস্কার যেন টেকসই হয়, তা দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চিত করতে এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সমতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে আমি বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।

ছবি

কুমিল্লায় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে চেয়ারেই বসে গেলেন ছাত্র

ছবি

নিয়ন্ত্রণে নেই নিত্যপণ্যের বাজার, অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ

ছবি

সরকারের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ : মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

খুব দেরি হওয়ার আগেই আমাদের সমাধান করতে হবে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ইউনূস

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আইসিসি প্রধান কৌঁসুলির বৈঠক

ছবি

সকল সিটি করপোরেশন-পৌরসভার কাউন্সিলরদের অপসারণ

ছবি

লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ারের স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ

আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করা হবে

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলেই নির্বাচন : নিউইয়র্কে মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

অতিরিক্ত ডিআইজি হলেন ৪৭ এসপি

ছবি

অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত: ইউনূস

ছবি

সংস্কার উদ্যোগে ৩৫০ কোটি ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক

ছবি

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে শাহবাজ শরিফ ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক

বিদ্যুতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি : ভারত-বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষায় নেপাল

ছবি

সরকার পতনের পর দেড়মাসে শতাধিক খুন রাজধানীতে

ছবি

গুলিতেই মারা গেছে আবু সাইদ ,মাথায় আঘাত উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া ময়না তদন্ত প্রতিবেদনটি ভুয়া

ছবি

নাহিদ ইসলাম এর সাথে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ ও রাব্বির পরিবারের সাক্ষাৎ

ছবি

‘বিরল’ বৈঠকে ইউনূসকে বুকে টেনে নিলেন বাইডেন

ছবি

তরুণদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা, বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা কামনা ইউনূসের

ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৪ জন ভর্তি, ২ জনের মৃত্যু

ছবি

দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চান ইউনূস

ছবি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করলেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পূর্ণ সমর্থন মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে

ছবি

ইউনূস ও জাস্টিন ট্রুডো একান্ত বৈঠক

ছবি

এ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক

ছবি

সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী আর নেই

ছবি

অন্তবর্র্তী সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন

ছবি

রাজধানীর সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের প্রথম ধাপ: সচেতনতা এবং বিকল্পের দিকে উদ্যোগ

ছবি

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৭০৮ জনের তালিকা প্রকাশ করল সরকার

ছবি

শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন হবে, হাজিরা বোনাস বাড়ছে

ছবি

জুলাই-অগাস্টে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণায় রুল জারি

ছবি

১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ : পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

সংস্কারকাজের সময় দীর্ঘায়িত হবে: বদিউল আলম মজুমদার

tab

জাতীয়

বাংলাদেশের অভ্যুত্থান বিশ্বকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যোগাবে : প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ ডেস্ক

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।’

আজ শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের, অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথমদিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক-যোগাযোগ মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে।”

ইউনূস বলেন, আমাদের ছাত্রজনতা তাদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যত নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধা বঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব চেয়েছিল। আমাদের জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল।

তিনি বলেন, আমাদের এই তরুণরা যে প্রজ্ঞা, সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে তা আমাদের অভিভূত করেছে। সারা বিশ্ববাসীকে অভিভূত করেছে। বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করেও বুক পেতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমাদের এই তরুণরা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধ প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল আমাদের তরুণ-তরুণীরা। স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা। তারা নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তীদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে।

ইউনূস বলেন, তপ্ত রোদ, বৃষ্টি, মৃত্যুভয়কে তোয়াক্কা না করে তারা সত্য ও ন্যায়সঙ্গত আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দীর্ঘকালব্যাপী রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিচালনা করার অশুভ ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করেছিল। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের জানামতে ৮০০ জনেরও বেশি জীবন আমরা হারিয়েছি স্বৈরাচারী শক্তির হাতে।

ইউনূস তার ভাষণে বলেন, উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে আমাদের গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল, সেই মূল্যবোধকে বহু বছর পরে আমাদের ‘জেনারেশন জি’ নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে। এরকমটি আমরা দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময়েও।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন প্রাণের সঞ্চার করে যায় বর্ষ ঋতু; এবারের বর্ষায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, তা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষকে অধিকারের লড়াইয়ে উঠে দাঁড়ানোর সাহস যোগাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে দেখতে পেলাম, কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, কীভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, কীভাবে জনগণের অর্থসম্পদ নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল, কীভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সব ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এককথায়, প্রতিটি পর্যায়ে নীতি ও নৈতিকতার অবক্ষয় ছিল সীমাহীন।’ তিনি বলেন, ‘এ রকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।

বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সব রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত, তাদের সব কটির জবাবদিহি নিশ্চিত করাও তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবেন, ভয়ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবেন, তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন, এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেইনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত করা হয়েছিল, রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দি’ করে রাখা হয়েছিল, জনগণের অর্থ সম্পদকে ‘নিদারুণভাবে লুটপাট’ করা হয়েছিল, ‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী’ সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে ‘কুক্ষিগত’ করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এক কথায়, প্রত্যেক পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা ‘অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল’। এরকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।

ইউনূস বলেন, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত, তাদের প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তার সরকারের অগ্রাধিকার। মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবে, ভয়-ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে– এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পক্ষভুক্ত, সেগুলো প্রতিপালনে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক বিশ্বকাঠামোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান অব্যাহত থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের গণ-আন্দোলনকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান এবং এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গঠন এবং তার কাজ শুরু করার জন্য দ্রুত বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি তাঁকে বাংলাতেশের পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দায়িত্বভার গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা গুম প্রতিরোধে যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন রয়েছে, তাতে যোগদান করেছি। এর আশু বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দেশীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে বিগত দেড় দশকে যেসমস্ত গুমের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিশন কাজ করছে। মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নির্মম অতীত যেন আর ফিরে না আসে কোনোদিন, সে জন্য আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সেই লক্ষ্যে আমরা বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করেছি। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরও কয়েকটি বিশেষ বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো বিদেশি ব্যবসা বা বিনিয়োগ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতেও আমরা বদ্ধপরিকর।

ড. ইউনূস বলেন, এসব সংস্কার যেন টেকসই হয়, তা দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চিত করতে এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সমতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে আমি বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।

back to top