বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১১ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকিতে এবং ২৩ দশমিক ছয় শতাংশের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বয়সের তুলনায় যথেষ্ট কম। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ২০২৪ এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ‘জিরো হাঙ্গার: চ্যালেঞ্জস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়েলথাঙ্গারহিলফ যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ক্ষুধা হ্রাসে অগ্রগতি অর্জন করলেও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে মাঝারি মাত্রার ক্ষুধাপীড়িত দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে যার জিএইচআই সূচক ১৯ দশমিক চার। সূচক অনুযায়ী, কোনো দেশের মান শূন্য হওয়া মানে সেখানে ক্ষুধা নেই। স্কোর যত বাড়বে, ক্ষুধার মাত্রা সেখানে তত বেশি। স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের জিএইচআই সূচক গণনার সময় মূলত অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ও বৃদ্ধি হিসাব করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের দুই দশমিক নয় শতাংশ শিশু পাঁচ বছর বয়সের আগেই মারা যায়, ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে, পাঁচ বছরের ছোট শিশুদের ২৩ দশমিক ছয় শতাংশের বৃদ্ধি তুলনামূলক কম এবং ১১ শতাংশ শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে ক্ষুধা মেটাতে পারি না। তাই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। রাস্তাঘাট বানানোর মতো অপরিকল্পিত উন্নয়ন খাদ্য জোগানে সবচেয়ে বড় বাধা। অনিরাপদ কৃষিচর্চার ফলে আমরা নিরাপদ খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করতে পারছি না। এতে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হচ্ছে না। মাছসহ বাংলাদেশে যেমন প্রাকৃতিক খাদ্যবৈচিত্র্য আছে তা রক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। শস্য উৎপাদনে কীটনাশক ও হার্বিসাইড ব্যবহারের ফলে অসংক্রামক রোগ ক্যানসারসহ বিভিন্ন ব্যাধি বেড়েই চলছে।’
খাদ্য আমদানির বিরোধিতা করে উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ যদি নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করতে পারে কেবল তাহলেই বলা যাবে আমরা ক্ষুধা মেটাতে পারছি। সরকারের দিক থেকেও খাদ্য আমদানি করা উচিত নয়।’
বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এর তথ্য পর্যালোচনা করলে আরও দেখা যায়, ক্ষুধা নিরসনে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও এখনও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২-এর প্রকৃত ক্ষুধামুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে অনেক দূরে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহু মানুষ খাবারের তীব্র সংকটে থাকে।
এ বছরের বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। এটা মাঝারি মাত্রার ক্ষুধার নির্দেশক। ২০১৬ সালের তুলনায় ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঘটলেও এ স্কোর অপুষ্টিসহ সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা নির্দেশ করে। মূলত চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ক্ষুধা সূচকের স্কোর নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার। বাংলাদেশে জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ খর্বকায়। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ১১ শতাংশ শারীরিকভাবে দুর্বল। পাঁচ বছর বয়সের আগে ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু মারা যায়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কোদঅপারেশন ড. মিশেল ক্রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদুল হাসান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
ড. মিশেল ক্রেজা বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বহুখাতভিত্তিক উন্নয়নে কার্যক্রমে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে আসছে। দরিদ্র মানুষেরা অনেক সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে না। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দরিদ্রসহ অন্যান্য বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীকে আরো অগ্রাধিকার দিয়ে সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।’
স্বাগত বক্তব্যে ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্ষুধা হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু ২০২৪ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-এর দিকে তাকালে দেখা যায় এখনও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ক্ষুধার-চক্রকে ভাঙতে আমরা কমিউনিটি-ভিত্তিক সমাধান, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা এবং জলবায়ু সহনশীলতার শক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১১ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকিতে এবং ২৩ দশমিক ছয় শতাংশের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বয়সের তুলনায় যথেষ্ট কম। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ২০২৪ এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ‘জিরো হাঙ্গার: চ্যালেঞ্জস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়েলথাঙ্গারহিলফ যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ক্ষুধা হ্রাসে অগ্রগতি অর্জন করলেও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে মাঝারি মাত্রার ক্ষুধাপীড়িত দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে যার জিএইচআই সূচক ১৯ দশমিক চার। সূচক অনুযায়ী, কোনো দেশের মান শূন্য হওয়া মানে সেখানে ক্ষুধা নেই। স্কোর যত বাড়বে, ক্ষুধার মাত্রা সেখানে তত বেশি। স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের জিএইচআই সূচক গণনার সময় মূলত অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ও বৃদ্ধি হিসাব করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের দুই দশমিক নয় শতাংশ শিশু পাঁচ বছর বয়সের আগেই মারা যায়, ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে, পাঁচ বছরের ছোট শিশুদের ২৩ দশমিক ছয় শতাংশের বৃদ্ধি তুলনামূলক কম এবং ১১ শতাংশ শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে ক্ষুধা মেটাতে পারি না। তাই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। রাস্তাঘাট বানানোর মতো অপরিকল্পিত উন্নয়ন খাদ্য জোগানে সবচেয়ে বড় বাধা। অনিরাপদ কৃষিচর্চার ফলে আমরা নিরাপদ খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করতে পারছি না। এতে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হচ্ছে না। মাছসহ বাংলাদেশে যেমন প্রাকৃতিক খাদ্যবৈচিত্র্য আছে তা রক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। শস্য উৎপাদনে কীটনাশক ও হার্বিসাইড ব্যবহারের ফলে অসংক্রামক রোগ ক্যানসারসহ বিভিন্ন ব্যাধি বেড়েই চলছে।’
খাদ্য আমদানির বিরোধিতা করে উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ যদি নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করতে পারে কেবল তাহলেই বলা যাবে আমরা ক্ষুধা মেটাতে পারছি। সরকারের দিক থেকেও খাদ্য আমদানি করা উচিত নয়।’
বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এর তথ্য পর্যালোচনা করলে আরও দেখা যায়, ক্ষুধা নিরসনে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও এখনও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২-এর প্রকৃত ক্ষুধামুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে অনেক দূরে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহু মানুষ খাবারের তীব্র সংকটে থাকে।
এ বছরের বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। এটা মাঝারি মাত্রার ক্ষুধার নির্দেশক। ২০১৬ সালের তুলনায় ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঘটলেও এ স্কোর অপুষ্টিসহ সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা নির্দেশ করে। মূলত চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ক্ষুধা সূচকের স্কোর নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার। বাংলাদেশে জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ খর্বকায়। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ১১ শতাংশ শারীরিকভাবে দুর্বল। পাঁচ বছর বয়সের আগে ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু মারা যায়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কোদঅপারেশন ড. মিশেল ক্রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদুল হাসান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
ড. মিশেল ক্রেজা বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বহুখাতভিত্তিক উন্নয়নে কার্যক্রমে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে আসছে। দরিদ্র মানুষেরা অনেক সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে না। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দরিদ্রসহ অন্যান্য বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীকে আরো অগ্রাধিকার দিয়ে সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।’
স্বাগত বক্তব্যে ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্ষুধা হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু ২০২৪ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-এর দিকে তাকালে দেখা যায় এখনও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ক্ষুধার-চক্রকে ভাঙতে আমরা কমিউনিটি-ভিত্তিক সমাধান, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা এবং জলবায়ু সহনশীলতার শক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’