মানবাধিকার সুরক্ষা, জবাবদিহি নিশ্চিত ও জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিতের আহ্বান
পুলিশের ফৌজদারি মামলার তদন্ত এবং পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন একটি বিশেষায়িত দল গঠনের সুপারিশ করেছে। দলটিকে তদন্ত-সম্পর্কিত ইউনিট ও থানার বাইরে বদলি না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে থানাগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বচ্ছ কাচে ঘেরা আলাদা কক্ষ তৈরির পরামর্শও দিয়েছে কমিশন।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশপত্র জমা দেওয়া হয়। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন ও অন্যান্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সুপারিশ অনুসারে, তদন্তের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতিটি থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোন অবস্থাতেই জিডি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। একই সঙ্গে মামলা গ্রহণে বিলম্ব বা অনীহা পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে কমিশন। এছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে থানার প্রতিটি সদস্যকে ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ বিশেষ পোশাক ব্যবহার করতে হবে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে মানবাধিকার সেল গঠন এবং জরুরি হেল্পলাইন চালু করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, আটকের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষায় একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশের জবাবদিহি বাড়ানোর জন্য র্যাবের কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়নের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন সুপারিশ করেছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও জেলা পুলিশ সুপারদের (এসপি) জন্য ফিটলিস্ট প্রণয়ন করতে হবে। সততা ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পদায়ন, বদলি এবং পদোন্নতির জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এছাড়া কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এসআই পর্যায়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরীক্ষার নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একবার উত্তীর্ণ হলে তিন বছরের জন্য প্রার্থীদের পদোন্নতির যোগ্য বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
অনিবাসী, মৃত বা নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা করার প্রচলিত অপচর্চা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিডিয়ায় অপরাধী হিসেবে কাউকে উপস্থাপন করার আগে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ কমাতে বছরে একবার বাধ্যতামূলক ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিরিক্ত কাজের জন্য বিশেষ প্রণোদনা চালুর পাশাপাশি তাদের নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও মানসিক পরীক্ষার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন, ক্রাইমসিন ইউনিট এবং অটোমেটেড ডিএনএ ল্যাব গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাল নোট ও জাল দলিল শনাক্তকরণের জন্য পৃথক ইউনিট গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একটি নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। এই কমিশন আইনসিদ্ধ এবং স্বাধীন সংস্থা হবে। নিয়োগ, পদায়ন এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রধারী চাকরিপ্রার্থীদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ করতে রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাইয়ের প্রথা বিলোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট থাকলে তা রিপোর্টে উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে জনগণের সুরক্ষা, মানবাধিকার রক্ষা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে পুলিশের পেশাদারিত্ব উন্নয়নের দিকগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনবান্ধব এবং সুশৃঙ্খল পুলিশি ব্যবস্থার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মানবাধিকার সুরক্ষা, জবাবদিহি নিশ্চিত ও জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিতের আহ্বান
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
পুলিশের ফৌজদারি মামলার তদন্ত এবং পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন একটি বিশেষায়িত দল গঠনের সুপারিশ করেছে। দলটিকে তদন্ত-সম্পর্কিত ইউনিট ও থানার বাইরে বদলি না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে থানাগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বচ্ছ কাচে ঘেরা আলাদা কক্ষ তৈরির পরামর্শও দিয়েছে কমিশন।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশপত্র জমা দেওয়া হয়। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন ও অন্যান্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সুপারিশ অনুসারে, তদন্তের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতিটি থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোন অবস্থাতেই জিডি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। একই সঙ্গে মামলা গ্রহণে বিলম্ব বা অনীহা পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে কমিশন। এছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে থানার প্রতিটি সদস্যকে ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ বিশেষ পোশাক ব্যবহার করতে হবে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে মানবাধিকার সেল গঠন এবং জরুরি হেল্পলাইন চালু করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, আটকের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষায় একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশের জবাবদিহি বাড়ানোর জন্য র্যাবের কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়নের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন সুপারিশ করেছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও জেলা পুলিশ সুপারদের (এসপি) জন্য ফিটলিস্ট প্রণয়ন করতে হবে। সততা ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পদায়ন, বদলি এবং পদোন্নতির জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এছাড়া কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এসআই পর্যায়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরীক্ষার নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একবার উত্তীর্ণ হলে তিন বছরের জন্য প্রার্থীদের পদোন্নতির যোগ্য বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
অনিবাসী, মৃত বা নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা করার প্রচলিত অপচর্চা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিডিয়ায় অপরাধী হিসেবে কাউকে উপস্থাপন করার আগে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ কমাতে বছরে একবার বাধ্যতামূলক ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিরিক্ত কাজের জন্য বিশেষ প্রণোদনা চালুর পাশাপাশি তাদের নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও মানসিক পরীক্ষার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন, ক্রাইমসিন ইউনিট এবং অটোমেটেড ডিএনএ ল্যাব গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাল নোট ও জাল দলিল শনাক্তকরণের জন্য পৃথক ইউনিট গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একটি নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। এই কমিশন আইনসিদ্ধ এবং স্বাধীন সংস্থা হবে। নিয়োগ, পদায়ন এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রধারী চাকরিপ্রার্থীদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ করতে রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাইয়ের প্রথা বিলোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট থাকলে তা রিপোর্টে উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে জনগণের সুরক্ষা, মানবাধিকার রক্ষা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে পুলিশের পেশাদারিত্ব উন্নয়নের দিকগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনবান্ধব এবং সুশৃঙ্খল পুলিশি ব্যবস্থার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।