মঙ্গলবার বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জের বিএসইজেড পরিদর্শন করেন, পরে তারা সেমিনারে অংশ নেন -সংবাদ
সরকার পরিবর্তনের পরই আগের অনুমোদিত নীতি পরিবর্তন করে ফেলে বাংলাদেশ। আর এই পরিবর্তনের ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের। এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শুল্ক-কর, গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো পরিষেবাসহ সব ধরনের সেবা পেতে বেগ পেতে হয়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করলো।
মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) পরিদর্শনের সময় দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে এমন মতামত তুলে ধরেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এসময় তারা এই উদ্বেগের কথা জানান। তারা বলেছেন, ‘এসব বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো যেন রক্ষা করা হয়। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেন সেগুলো পরিবর্তন হয়ে না যায়।’
চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে মঙ্গলবার চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৩৬ বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বিএসইজেড বা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান। প্রতিনিধিদলটি জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পৌঁছালে বিএসইজেড কর্তৃপক্ষ প্রথমেই তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও অন্য সুবিধা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এরপর সেখানে অবস্থিত সিঙ্গারের কারখানা ঘুরে দেখেন তারা।
এ সময় বিএসইজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাওয়াচি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কী ধরনের আধুনিক কারখানা স্থাপন করা সম্ভব, তার ভালো উদাহরণ হতে পারে বিএসইজেডে স্থাপিত সিঙ্গারের কারখানা। মাত্র ২০ মাস সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ করেছে সিঙ্গার। সে জন্য তারা বিনিয়োগ করেছে ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে এই কারখানায় প্রতি মাসে ৫০ হাজার পিস (ইউনিট) ফ্রিজ ও ১০ হাজার পিস (ইউনিট) টেলিভিশন তৈরি হচ্ছে।
তারো কাওয়াচি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক মানের উন্নত পরিষেবা আছে এখানে। পণ্য ও কাচামাল আমদানির সুবিধার্থে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরেই বন্ডেড ট্রান্সপোর্টের সুবিধা
দেয়া হচ্ছে। ফলে বন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন হয় না। এখানে যারা বিনিয়োগ করবেন, তাদের কোনো অসুবিধার মুখে পড়তে হবে না।’
মঙ্গলবার সাতটি দেশের ৩৬ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান। তাদের মধ্যে চীনের ১০ জন, জাপানের ৩, সৌদি আরবের ৩, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৩, যুক্তরাষ্ট্রের ৮ ও ভারতের ১ জন ছিলেন। এছাড়া বিদেশে বসবাস করেন (এনআরবি), এমন আট বাংলাদেশি ছিলেন।
চীনা মালিকানার তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জিনিউ বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিকোলাস কী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক। অনেক চ্যালেঞ্জও আছে, যেমন অন্যতম বড় বাধা হচ্ছে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করি, তারা পরবর্তী সময়েও নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।’
চীনের জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান গ্রিন অ্যান্ড স্মার্ট এনার্জি অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল উইও জিয়ানবো। তিনি মঙ্গলবার চীন থেকে বাংলাদেশে এসে বিএসইজেড পরিদর্শনে যান। জিয়ানবো বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ কেমন, সেটি দেখতেই আমি এসেছি। বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ দুটি বলে মনে হয়েছে। প্রথমত, অবকাঠামোগত দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিক বৈসাদৃশ্য। জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে এসে মনে হয়েছে, এখানকার অবকাঠামো পরিস্থিতি পুরোপুরি বিনিয়োগ উপযোগী।’
মঙ্গলবার সকালে নিলর্ন বাংলাদেশ নামে সুইডেনের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে বিএসইজেড কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে। নিলর্ন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে তাদের একটি কারখানা আছে। এখন তারা এসইজেডে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনের জন্য আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তারা ধাপে ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করবে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘গত সোমবার ও আজ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে যেসব বাধা বা চ্যালেঞ্জ ছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তা দূর করার জন্য কাজ করছে, বিশেষ করে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এখানে নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা ও সুশাসনের অভাব ছিল, যে কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতো। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।’
মঙ্গলবার বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জের বিএসইজেড পরিদর্শন করেন, পরে তারা সেমিনারে অংশ নেন -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫
সরকার পরিবর্তনের পরই আগের অনুমোদিত নীতি পরিবর্তন করে ফেলে বাংলাদেশ। আর এই পরিবর্তনের ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের। এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শুল্ক-কর, গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো পরিষেবাসহ সব ধরনের সেবা পেতে বেগ পেতে হয়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করলো।
মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) পরিদর্শনের সময় দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে এমন মতামত তুলে ধরেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এসময় তারা এই উদ্বেগের কথা জানান। তারা বলেছেন, ‘এসব বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো যেন রক্ষা করা হয়। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেন সেগুলো পরিবর্তন হয়ে না যায়।’
চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে মঙ্গলবার চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৩৬ বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বিএসইজেড বা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান। প্রতিনিধিদলটি জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পৌঁছালে বিএসইজেড কর্তৃপক্ষ প্রথমেই তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও অন্য সুবিধা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এরপর সেখানে অবস্থিত সিঙ্গারের কারখানা ঘুরে দেখেন তারা।
এ সময় বিএসইজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাওয়াচি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কী ধরনের আধুনিক কারখানা স্থাপন করা সম্ভব, তার ভালো উদাহরণ হতে পারে বিএসইজেডে স্থাপিত সিঙ্গারের কারখানা। মাত্র ২০ মাস সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ করেছে সিঙ্গার। সে জন্য তারা বিনিয়োগ করেছে ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে এই কারখানায় প্রতি মাসে ৫০ হাজার পিস (ইউনিট) ফ্রিজ ও ১০ হাজার পিস (ইউনিট) টেলিভিশন তৈরি হচ্ছে।
তারো কাওয়াচি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক মানের উন্নত পরিষেবা আছে এখানে। পণ্য ও কাচামাল আমদানির সুবিধার্থে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরেই বন্ডেড ট্রান্সপোর্টের সুবিধা
দেয়া হচ্ছে। ফলে বন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন হয় না। এখানে যারা বিনিয়োগ করবেন, তাদের কোনো অসুবিধার মুখে পড়তে হবে না।’
মঙ্গলবার সাতটি দেশের ৩৬ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান। তাদের মধ্যে চীনের ১০ জন, জাপানের ৩, সৌদি আরবের ৩, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৩, যুক্তরাষ্ট্রের ৮ ও ভারতের ১ জন ছিলেন। এছাড়া বিদেশে বসবাস করেন (এনআরবি), এমন আট বাংলাদেশি ছিলেন।
চীনা মালিকানার তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জিনিউ বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিকোলাস কী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক। অনেক চ্যালেঞ্জও আছে, যেমন অন্যতম বড় বাধা হচ্ছে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করি, তারা পরবর্তী সময়েও নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।’
চীনের জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান গ্রিন অ্যান্ড স্মার্ট এনার্জি অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল উইও জিয়ানবো। তিনি মঙ্গলবার চীন থেকে বাংলাদেশে এসে বিএসইজেড পরিদর্শনে যান। জিয়ানবো বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ কেমন, সেটি দেখতেই আমি এসেছি। বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ দুটি বলে মনে হয়েছে। প্রথমত, অবকাঠামোগত দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিক বৈসাদৃশ্য। জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে এসে মনে হয়েছে, এখানকার অবকাঠামো পরিস্থিতি পুরোপুরি বিনিয়োগ উপযোগী।’
মঙ্গলবার সকালে নিলর্ন বাংলাদেশ নামে সুইডেনের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে বিএসইজেড কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে। নিলর্ন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে তাদের একটি কারখানা আছে। এখন তারা এসইজেডে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনের জন্য আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তারা ধাপে ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করবে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘গত সোমবার ও আজ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে যেসব বাধা বা চ্যালেঞ্জ ছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তা দূর করার জন্য কাজ করছে, বিশেষ করে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এখানে নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা ও সুশাসনের অভাব ছিল, যে কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতো। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।’