alt

জাতীয়

আদ্-দ্বীনের বিরুদ্ধে মুক্তেশ্বরী নদী ‘দখল ও হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ

যশোর অফিস : মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫

যশোরে আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে মুক্তেশ্বরী ‘নদী দখল ও হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ উঠেছে। নদীর জমি দখলের পাশাপাশি নদীর মাঝে কংক্রিটের ঢালাইয়ে ব্রিজ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ স্তিমিত করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। তবে আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলন, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন ও কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন। তারা অবিলম্বে ‘দখল উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছে। নয়তো আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের জিল্লুর রহমান ভিটু। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উক্ত সংগঠনসমূহের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।

নদী বাঁচাতে মুক্তেশ্বরী, ভৈরব, কপোতাক্ষসহ চার কমিটির যৌথ সংবাদ সম্মেলন

প্রভাবশালীদের কারণে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ

২০১২ সালে যশোর শহরতলী পুলেহাটে ‘আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ নির্মাণের শুরু থেকেই মুক্তেশ্বরী নদীর পাড় দখলের অভিযোগ ওঠে। ২০১৪ সালে নদীর তীর দখল করে কংক্রিটের ঢালাইয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। সে সময় পরিবেশবাদীরা এনিয়ে মুখ খুললে প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে হস্তক্ষেপ করে। ফলে সাময়িকভাবে ওই রাস্তা নির্মাণ বন্ধ হলেও নদী দখল প্রক্রিয়া থামেনি।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মুক্তেশ্বরী নদীর দশমিক ৬১ একর বা ৬১ শতক আদ্-দ্বীন হাসপাতালের দখলে রয়েছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে মুক্তেশ্বরী সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে স্থাপন করা হয়েছে ‘আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’। নদীর একপাশে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতাল। অন্যপাশে মেডিকেল কলেজ ভবন। হাসপাতালের পাশে নদীর তীরে প্রাচীর দেয়া হয়েছে। নদীর তীর দখল করে কংক্রিটের ঢালাই দেয়া হয়েছে।

এছাড়া নদীর আরেকপাশে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত সকিনা মেডিকেল কলেজ ভবনে যাতায়াতের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর দুই পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে সরু করা হয়েছে নদী। নদীতে কংক্রিটের খুঁটি নির্মাণ করার জন্য নদীর মাঝখানেও ঢালাই করা হয়েছে।

আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের ভাই। অভিযোগ ডা. শেখ মহিউদ্দিন বিগত দিনে শেখ আফিল উদ্দিনের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করেছেন। আর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জামায়াত ঘরানার রাজনীতির পৃষ্টপোষকতা করছেন। এছাড়া শেখ মহিউদ্দিনের আরেক ভাই শেখ বশির উদ্দিন এখন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা। নদী দখলের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন সেদিকে দৃষ্টি দেয় না।

তবে আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষের দাবি, নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি প্রবাহ থেমে থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর আশপাশে বসবাসরত মানুষ নদীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় জমে থাকা আবদ্ধ পানিতে দুর্গন্ধ হয়। স্বাস্থ্য ‘ঝুঁকি রোধে’ প্রতিষ্ঠানটি নিজ উদ্যোগে ‘নদী সংস্কার করছে’।

দখল প্রসঙ্গে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘আমরা নদীর কোনো জায়গা দখল করিনি। আমাদের স্থাপনাগুলো ম্যাপ অনুযায়ী নদীর জায়গা থেকে অনেক দূরে। আর নদীর ওপরে নির্মিত ব্রিজটি অস্থায়ী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিয়ম মেনে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানিয়েছেন, মুক্তেশ্বরী নদী দখলের তালিকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালও রয়েছে। আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজ অপসারণ এবং সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর জমি ছেড়ে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজ অপসারণ এবং নদীর জমি ছেড়ে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তারা কালক্ষেপন করলে অভিযান

চালিয়ে ব্রিজ অপসারণ এবং নদীর জমি উদ্ধার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জিল্লুর রহমান ভিটু জানান, মুক্তেশ্বরী নদী ভৈরব নদের শাখা। এর নিম্ন প্রবাহ হরি, শ্রী, তেলিগাতী, গাংরাইল নামে বারো আউলিয়া মোহনায় মিলিত হয়ে রূপসা-শিবসা ধারায় মিলিত হয়ে সাগরে পড়েছে। এই নদীর উজানে ভৈরবের পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় নদীর উৎস থেকে চৌগাছা-যশোর রোডে সলুয়া বাজার পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। আর যশোর সদরের পুলেরহাট পর্যন্ত অবৈধ দখলদারের দৌরাত্ম্য ও ব্রিজের নামে কালভার্ট নির্মাণে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নদীকে হত্যা করা হয়েছে। ‘বিগত সরকারের আমলে পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের নামে নদী তট আইন লঙ্ঘন শুধু নয়, নদীগর্ভ দখল ও ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছে। এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদকে তারা তোয়াক্কা করেনি। বর্তমানে নদীর ওপর দুই পাড় কংক্রিট ঢালাই করে সংকীর্ণ কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এক ভাই এমপি ছিল, বর্তমানে আর এক ভাই সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন। তাদের প্রভাব এক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল বলে প্রতীয়মান হয়। নদীর ওপর এই হস্তক্ষেপে যশোর সেনানিবাসও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হবে,’ অভিযোগ জিল্লুর রহমান।

এরফলে, তিনি বলছেন, ‘ভবদহ সংকটাপন্ন এলাকার সমস্যা সমাধানে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়ে নতুন সংকটের জন্ম দেবে। ফলে এই অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার করা জরুরি। যা ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের পথ করে দেবে।’

তিনি আরও জানান, ‘আমরা অবহিত হয়েছি সরকার সারাদেশে কয়েকটি নদীকে বিশেষভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে ভৈরব নদকে ওই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি প্রয়োজন মনে করি। এছাড়া ভবদহ সমস্যার সমাধানে এখনই যে কোনো একটি বিলে পলি ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে পর্যায়ক্রমে বিলসমূহে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

তিনি আশা করছেন সরকার তাদের দাবি মেনে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেবেন। নাহলে আগামী ১৯ এপ্রিল আন্দোলনকারী সংগঠনসমূহের যৌথ প্রতিনিধি সভায় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শুকুর আলী, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা হাসিনুর রহমান, তসলিম-উর-রহমান, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মুত্তালিব, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য পাল, সদস্য অনিল বিশ্বাস, শিবপদ বিশ্বাস, আজিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের সদস্য পলাশ বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম, নদী গবেষক মহিউদ্দিন, হরি গাংরাইল জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

ছবি

ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন, অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা

তরুণীকে লাঠিপেটা: ‘আপন কফির’ কর্মীর স্বীকারোক্তি

ছবি

হঠাৎ বৃষ্টিতে ঢাকার জনজীবনে স্বস্তি

আরাকান আর্মি ফেরত দিলো ৫৫ জেলেকে, রেখে দিয়েছে কোটি টাকার ট্রলার ও জাল

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ইউনূস

শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিডার উদ্বেগ

রায় শুনে ‘জ্ঞান হারালেন’ স্বাস্থ্যের মালেকের স্ত্রী

ছবি

যশোরে সাব-রেজিস্ট্রার এবং চট্টগ্রামে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুদকের অভিযান

ছবি

কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনড়

ছবি

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে জনদুর্ভোগ

ছবি

আইএফআইসি আমার বন্ড ‘প্রতারণা’: আসামি হচ্ছেন সালমান, শায়ান ও শিবলী

উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে গণতন্ত্রকে পিছিয়ে রাখার তত্ত্ব একটি ভ্রান্ত ধারণা

ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব, বৃহস্পতিবার বৈঠক

এখন আগামী রোজার আগেই নির্বাচন চায় জামায়াত

ছবি

ডিসেম্বর লক্ষ্যে জুলাইয়ে ভোটের কর্মপরিকল্পনা

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক, ‘একেবারেই সন্তুষ্ট নয়’ বিএনপি

ছবি

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

ইচ্ছাকৃত বিলম্ব নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন: আসিফ নজরুল

ছবি

দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঢাকা সফরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব, বুধবার এফওসি বৈঠক

ঢাকায় এলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব

ছবি

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন, ‘গুরুত্ব দিয়ে’ তদন্তে পুলিশ : প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের জবাবে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

ডাকসু নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা

তরুণীকে লাঠিপেটার ভিডিও ফেইসবুকে, ‘আপন কফির’ দুই কর্মী রিমান্ডে

ছবি

গান, নাচ আর মনোজ্ঞ শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ

ছবি

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ

১১৭ বারের মতো পেছালো প্রতিবেদন জমার তারিখ

‘প্লট দুর্নীতি’: এবার জয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

আচরণবিধি মানতে দলের প্রত্যয়নসহ আরপিওতে পরিবর্তন আনছে ইসি

ছবি

কুয়েটে হলের তালা ভাঙলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা, এক দফা, ভিসির পদত্যাগ দাবি

ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আবারও জেলেনিস্কিকে দায়ী করলেন ট্রাম্প

জুলাই আন্দোলন নির্মূলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে চার মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার: ‘প্রশ্ন শুনে মনে হয় সরকার বেআইনি কাজ করেছে,’: সাংবাদিকদের বিশেষ সহকারী

বাড়ানো হলো সয়াবিন তেলের দাম

১০৫টি সরকারি হাইস্কুল ও কলেজের জমি ‘বেদখল’

নির্বাচনী সামগ্রী কিনতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে: ইসি সচিব

tab

জাতীয়

আদ্-দ্বীনের বিরুদ্ধে মুক্তেশ্বরী নদী ‘দখল ও হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ

যশোর অফিস

মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫

যশোরে আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে মুক্তেশ্বরী ‘নদী দখল ও হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ উঠেছে। নদীর জমি দখলের পাশাপাশি নদীর মাঝে কংক্রিটের ঢালাইয়ে ব্রিজ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ স্তিমিত করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। তবে আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলন, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন ও কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন। তারা অবিলম্বে ‘দখল উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছে। নয়তো আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের জিল্লুর রহমান ভিটু। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উক্ত সংগঠনসমূহের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।

নদী বাঁচাতে মুক্তেশ্বরী, ভৈরব, কপোতাক্ষসহ চার কমিটির যৌথ সংবাদ সম্মেলন

প্রভাবশালীদের কারণে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ

২০১২ সালে যশোর শহরতলী পুলেহাটে ‘আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ নির্মাণের শুরু থেকেই মুক্তেশ্বরী নদীর পাড় দখলের অভিযোগ ওঠে। ২০১৪ সালে নদীর তীর দখল করে কংক্রিটের ঢালাইয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। সে সময় পরিবেশবাদীরা এনিয়ে মুখ খুললে প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে হস্তক্ষেপ করে। ফলে সাময়িকভাবে ওই রাস্তা নির্মাণ বন্ধ হলেও নদী দখল প্রক্রিয়া থামেনি।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মুক্তেশ্বরী নদীর দশমিক ৬১ একর বা ৬১ শতক আদ্-দ্বীন হাসপাতালের দখলে রয়েছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে মুক্তেশ্বরী সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে স্থাপন করা হয়েছে ‘আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’। নদীর একপাশে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতাল। অন্যপাশে মেডিকেল কলেজ ভবন। হাসপাতালের পাশে নদীর তীরে প্রাচীর দেয়া হয়েছে। নদীর তীর দখল করে কংক্রিটের ঢালাই দেয়া হয়েছে।

এছাড়া নদীর আরেকপাশে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত সকিনা মেডিকেল কলেজ ভবনে যাতায়াতের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর দুই পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে সরু করা হয়েছে নদী। নদীতে কংক্রিটের খুঁটি নির্মাণ করার জন্য নদীর মাঝখানেও ঢালাই করা হয়েছে।

আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের ভাই। অভিযোগ ডা. শেখ মহিউদ্দিন বিগত দিনে শেখ আফিল উদ্দিনের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করেছেন। আর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জামায়াত ঘরানার রাজনীতির পৃষ্টপোষকতা করছেন। এছাড়া শেখ মহিউদ্দিনের আরেক ভাই শেখ বশির উদ্দিন এখন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা। নদী দখলের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন সেদিকে দৃষ্টি দেয় না।

তবে আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষের দাবি, নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি প্রবাহ থেমে থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর আশপাশে বসবাসরত মানুষ নদীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় জমে থাকা আবদ্ধ পানিতে দুর্গন্ধ হয়। স্বাস্থ্য ‘ঝুঁকি রোধে’ প্রতিষ্ঠানটি নিজ উদ্যোগে ‘নদী সংস্কার করছে’।

দখল প্রসঙ্গে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘আমরা নদীর কোনো জায়গা দখল করিনি। আমাদের স্থাপনাগুলো ম্যাপ অনুযায়ী নদীর জায়গা থেকে অনেক দূরে। আর নদীর ওপরে নির্মিত ব্রিজটি অস্থায়ী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিয়ম মেনে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানিয়েছেন, মুক্তেশ্বরী নদী দখলের তালিকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালও রয়েছে। আদ্-দ্বীন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজ অপসারণ এবং সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর জমি ছেড়ে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজ অপসারণ এবং নদীর জমি ছেড়ে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তারা কালক্ষেপন করলে অভিযান

চালিয়ে ব্রিজ অপসারণ এবং নদীর জমি উদ্ধার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জিল্লুর রহমান ভিটু জানান, মুক্তেশ্বরী নদী ভৈরব নদের শাখা। এর নিম্ন প্রবাহ হরি, শ্রী, তেলিগাতী, গাংরাইল নামে বারো আউলিয়া মোহনায় মিলিত হয়ে রূপসা-শিবসা ধারায় মিলিত হয়ে সাগরে পড়েছে। এই নদীর উজানে ভৈরবের পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় নদীর উৎস থেকে চৌগাছা-যশোর রোডে সলুয়া বাজার পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। আর যশোর সদরের পুলেরহাট পর্যন্ত অবৈধ দখলদারের দৌরাত্ম্য ও ব্রিজের নামে কালভার্ট নির্মাণে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নদীকে হত্যা করা হয়েছে। ‘বিগত সরকারের আমলে পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের নামে নদী তট আইন লঙ্ঘন শুধু নয়, নদীগর্ভ দখল ও ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছে। এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদকে তারা তোয়াক্কা করেনি। বর্তমানে নদীর ওপর দুই পাড় কংক্রিট ঢালাই করে সংকীর্ণ কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এক ভাই এমপি ছিল, বর্তমানে আর এক ভাই সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন। তাদের প্রভাব এক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল বলে প্রতীয়মান হয়। নদীর ওপর এই হস্তক্ষেপে যশোর সেনানিবাসও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হবে,’ অভিযোগ জিল্লুর রহমান।

এরফলে, তিনি বলছেন, ‘ভবদহ সংকটাপন্ন এলাকার সমস্যা সমাধানে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়ে নতুন সংকটের জন্ম দেবে। ফলে এই অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার করা জরুরি। যা ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের পথ করে দেবে।’

তিনি আরও জানান, ‘আমরা অবহিত হয়েছি সরকার সারাদেশে কয়েকটি নদীকে বিশেষভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে ভৈরব নদকে ওই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি প্রয়োজন মনে করি। এছাড়া ভবদহ সমস্যার সমাধানে এখনই যে কোনো একটি বিলে পলি ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে পর্যায়ক্রমে বিলসমূহে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

তিনি আশা করছেন সরকার তাদের দাবি মেনে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেবেন। নাহলে আগামী ১৯ এপ্রিল আন্দোলনকারী সংগঠনসমূহের যৌথ প্রতিনিধি সভায় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শুকুর আলী, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা হাসিনুর রহমান, তসলিম-উর-রহমান, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মুত্তালিব, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য পাল, সদস্য অনিল বিশ্বাস, শিবপদ বিশ্বাস, আজিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের সদস্য পলাশ বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম, নদী গবেষক মহিউদ্দিন, হরি গাংরাইল জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

back to top