সংস্কার প্রক্রিয়া, নির্বাচনের রোডম্যাপ, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচন নিয়ে সরকারের ভাবনা, তাদের অবস্থান এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ সুস্পষ্টভাবে জানতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠক। আলোচনা ও ঐক্যের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় (প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন) এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সরকারের কাছে সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে চাইবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানান তারা।

মঙ্গলবার (১৫এপ্রিল) বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সাক্ষাৎ করবেন।’ তবে বিএনপির প্রতিনিধিদলে কে কে থাকবেন তা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আলোচনা ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ সব সমস্যার সমাধান হবে।’ ‘নিঃসন্দেহে ঐক্য সম্ভব’ হবে বলেও ‘দৃঢ় প্রত্যয়’ ব্যক্ত করেন তিনি। এক সপ্তাহ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে সোমবার দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বিএনপি সরকারের কাছে

সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে চাইবে। এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়েও আলাপ করবে।’

গত ডিসেম্বর থেকে বিএনপি নেতারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছেন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু তার এ বক্তব্যে বিএনপি আশ্বস্ত হতে পারেনি। তারা হতাশা প্রকাশ করে এবং নির্বাচন প্রলম্বিত করার শঙ্কা করছে। তাই নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’ ও ‘অস্পষ্টতা’ দূর করে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি।

এই বিষয়টি স্পষ্ট করতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত ৭ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে বেশ কয়েকটি এজেন্ডার মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ছাড়াও সংস্কার ইস্যু এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অন্যতম।

এরপর ৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সাক্ষাতের জন্য দলের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হলে প্রধান উপদেষ্টা ১৬ এপ্রিল তাদের সময় দিয়েছেন।

বিএনপি মনে করে, এটি কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নয়। কারণ, নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে একেক সময় একেক কথা বলা হচ্ছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী ভাবছে কিংবা তাদের অবস্থান কী, সেটা সুস্পষ্টভাবে জানতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবে।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার পক্ষের নানা বক্তব্যে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। এই অবস্থা নিরসনের তাগিদ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে সেটি পরিষ্কার করার জন্য আমরা ওনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) আহ্বান জানাব।’

বিএনপি মনে করে, সরকারের উচিত নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো সরকার একটা অধ্যাদেশের মাধ্যমেও করতে পারে বলে মনে করে দলটি। আর বাকি সংস্কারগুলো একটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ করবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গোষ্ঠী বলছে, তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চান মুহাম্মদ ইউনূসকে। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলমও সম্প্রতি ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সম্প্রতি বলেছেন, জনগণ চায় এ সরকার ৫ বছর থাকুক।

আরেক উপদেষ্টা (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আমরা অনির্বাচিত এই কথা কে বলল। জুলাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা এই সরকারকে নির্বাচিত করেছে।’

এই বক্তব্যগুলো অস্বস্তি ও হতাশা তৈরি করেছে বিএনপি শিবিরে। এমন অবস্থায় দলটির নেতারা বলছেন, ‘বৈঠকে আশ্বস্ত হলে ভোটের লড়াইয়ের কৌশল ঠিক করবে দলটি। আর ফলাফল অন্যরকম হলে রোডম্যাপ চেয়ে কর্মসূচিতেও যেতে পারে তারা।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পর খুলে গেছে সংস্কারের পথ। কিন্তু এই সংস্কারের কথা বলে ইউনূসকে ভুলপথে নেয়ার চেষ্টা করছে কোনো কোনো দল। যাদের জনসমর্থন দুর্বল। তাই খোলাখুলি কথা বলেই নিজেদের দলীয় কৌশলে যেতে চায় বিএনপি।’

এক্ষেত্রে বৈঠকের পরই দলটি নির্বাচন ইস্যুতে দলীয় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে দু-একটি কর্মসূচি নিয়ে মাঠেও দেখা যেতে পারে দলটিকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।