পরিবারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা চালের দাম বাড়া ‘দুঃখজনক’
ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ঠিক হয়েছে ১৮৯ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭৫ টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন মঙ্গলবার (১৫এপ্রিল) সয়াবিন তেলের নতুন দর ঘোষণা করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার ও ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলার ভিত্তিতে সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছি। এই মুহূর্তে ফর্মুলা অনুযায়ী তেলের দাম আছে প্রতি লিটার ১৯৭ টাকা। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা দাম নির্ধারণ করেছি।’
সুবিধা প্রত্যাহার
মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা তুলে ধরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার ভোজ্যতেলে কর অব্যাহতি দিয়েছিল। এতে মাসে ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছিল। সরকারের পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করার জন্য রাজস্ব অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রমজানকেন্দ্রিক চিন্তা করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার একটা কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। সয়াবিন তেলের কর অব্যাহতি সুবিধাটা
আপাতত প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
রমজানের আগে দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্যতেলের শুল্ক-করে যে রেয়াত দিয়েছিল, তার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হয়। তার আগেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন মিল মালিকেরা। বোতলের সয়াবিনের দাম তারা একলাফে ১৮ টাকা বাড়াতে চান। আর খোলা সয়াবিনের দাম বাড়াতে চান লিটারে ১৩ টাকা।
ভোজ্যতেলের কর অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরদিন ১ এপ্রিল থেকে এই দর কার্যকরের ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গত ২৭ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দেয় মিলারদের সংগঠন। ঈদের ছুটি শেষে গত সপ্তাহের শুরু থেকে দাম নিয়ে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আলোচনা হয়। এরপর মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের দাবির কাছাকাছি দরেই সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হলো।
*রাজস্ব বাড়বে ৫৫০ কোটি*
তেলের দাম এখন বাড়ালেও ‘অদূর ভবিষ্যতে তা আবার কমে আসার’ আশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে দেশে সরিষা থেকে আসে প্রায় সাত লাখ টন। এর বাইরে রাইস ব্র্যান থেকেও আসে ৬ লাখ টনের মতো। সেনা কল্যাণ সংস্থার তেল মিলকে টিসিবির মাধ্যমে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। তাদের তিন লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও মাত্র ২০ হাজার টন উৎপাদন করত। আমরা তাদের উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগানোর চিন্তা করছি।’
এছাড়া দেশীয় দুটি বড় কোম্পানিও এ ব্যবসায় আসবে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আজকে যে মূল্যটা নির্ধারণ হলো, সরকার এখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করবে। সামনে বাজারে তেলের দাম আরও কমবে। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণে এই মূল্যটা কমবে।’
সরকার ঘোষণা করার আগেই তেল মিল মালিকরা দাম ‘ঘোষণা করে দিয়েছেন’ বলে একজন সাংবাদিক উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘উনারা এটা করতে পারেন না। ভোক্তা অধিকার নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা নেবে।’
*‘প্রভাব খুব বেশি পড়বে না’*
গত ৩০ মার্চ কর অব্যাহতির শেষ দিন ছিল। তারপরও সেই সুযোগ আরও কিছুদিন বাড়ানো যায় কিনা সেই চিন্তা করেছিল সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত রাজস্ব বাড়ানোর চিন্তায় তেলের দাম বাড়ানোর পথেই সরকার হেঁটেছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা দাবি করেন, দাম বাড়লেও তার প্রভাব পরিবারে ‘খুব বেশি পড়বে না’। তিনি বলেন, ‘যেহেতু মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, তাই এই বাড়তি ১৪ টাকা সংসারে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে হয়। একটা পরিবারে যদি মাসে ৫ লিটার তেল খরচ করে, তাহলে বাড়তি ব্যয় হবে ৭০ টাকা। মাসের সব ব্যয়ের সঙ্গে এই ৭০ টাকা বাড়তি হলেও তা কিছুটা হলেও সহনীয় হবে।’
তবে চালের দাম বাড়ার বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলছেন শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে বোরো ধানের চিকন চাল বাজারে আসবে। তখন দাম আবার কমে যাবে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি খুব ভালো ছিল। আশা করছি ভালো ফলন হবে।’
পরিবারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা চালের দাম বাড়া ‘দুঃখজনক’
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ঠিক হয়েছে ১৮৯ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭৫ টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন মঙ্গলবার (১৫এপ্রিল) সয়াবিন তেলের নতুন দর ঘোষণা করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার ও ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলার ভিত্তিতে সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছি। এই মুহূর্তে ফর্মুলা অনুযায়ী তেলের দাম আছে প্রতি লিটার ১৯৭ টাকা। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা দাম নির্ধারণ করেছি।’
সুবিধা প্রত্যাহার
মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা তুলে ধরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার ভোজ্যতেলে কর অব্যাহতি দিয়েছিল। এতে মাসে ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছিল। সরকারের পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করার জন্য রাজস্ব অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রমজানকেন্দ্রিক চিন্তা করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার একটা কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। সয়াবিন তেলের কর অব্যাহতি সুবিধাটা
আপাতত প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
রমজানের আগে দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্যতেলের শুল্ক-করে যে রেয়াত দিয়েছিল, তার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হয়। তার আগেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন মিল মালিকেরা। বোতলের সয়াবিনের দাম তারা একলাফে ১৮ টাকা বাড়াতে চান। আর খোলা সয়াবিনের দাম বাড়াতে চান লিটারে ১৩ টাকা।
ভোজ্যতেলের কর অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরদিন ১ এপ্রিল থেকে এই দর কার্যকরের ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গত ২৭ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দেয় মিলারদের সংগঠন। ঈদের ছুটি শেষে গত সপ্তাহের শুরু থেকে দাম নিয়ে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আলোচনা হয়। এরপর মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের দাবির কাছাকাছি দরেই সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হলো।
*রাজস্ব বাড়বে ৫৫০ কোটি*
তেলের দাম এখন বাড়ালেও ‘অদূর ভবিষ্যতে তা আবার কমে আসার’ আশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে দেশে সরিষা থেকে আসে প্রায় সাত লাখ টন। এর বাইরে রাইস ব্র্যান থেকেও আসে ৬ লাখ টনের মতো। সেনা কল্যাণ সংস্থার তেল মিলকে টিসিবির মাধ্যমে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। তাদের তিন লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও মাত্র ২০ হাজার টন উৎপাদন করত। আমরা তাদের উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগানোর চিন্তা করছি।’
এছাড়া দেশীয় দুটি বড় কোম্পানিও এ ব্যবসায় আসবে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আজকে যে মূল্যটা নির্ধারণ হলো, সরকার এখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করবে। সামনে বাজারে তেলের দাম আরও কমবে। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণে এই মূল্যটা কমবে।’
সরকার ঘোষণা করার আগেই তেল মিল মালিকরা দাম ‘ঘোষণা করে দিয়েছেন’ বলে একজন সাংবাদিক উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘উনারা এটা করতে পারেন না। ভোক্তা অধিকার নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা নেবে।’
*‘প্রভাব খুব বেশি পড়বে না’*
গত ৩০ মার্চ কর অব্যাহতির শেষ দিন ছিল। তারপরও সেই সুযোগ আরও কিছুদিন বাড়ানো যায় কিনা সেই চিন্তা করেছিল সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত রাজস্ব বাড়ানোর চিন্তায় তেলের দাম বাড়ানোর পথেই সরকার হেঁটেছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা দাবি করেন, দাম বাড়লেও তার প্রভাব পরিবারে ‘খুব বেশি পড়বে না’। তিনি বলেন, ‘যেহেতু মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, তাই এই বাড়তি ১৪ টাকা সংসারে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে হয়। একটা পরিবারে যদি মাসে ৫ লিটার তেল খরচ করে, তাহলে বাড়তি ব্যয় হবে ৭০ টাকা। মাসের সব ব্যয়ের সঙ্গে এই ৭০ টাকা বাড়তি হলেও তা কিছুটা হলেও সহনীয় হবে।’
তবে চালের দাম বাড়ার বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলছেন শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে বোরো ধানের চিকন চাল বাজারে আসবে। তখন দাম আবার কমে যাবে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি খুব ভালো ছিল। আশা করছি ভালো ফলন হবে।’