alt

জাতীয়

গান, নাচ আর মনোজ্ঞ শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

মঙ্গলবার রাজধানীতে বৈশাখীমেলার খণ্ড চিত্র -সংবাদ

গান, নাচ আর মনোজ্ঞ শোভাযাত্রায় বাংলা নববর্ষ বরণ করেছে পুরো জাতি। দেশের ২৮টিরও বেশি সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে এক অনন্য আনন্দ উদ্দীপনায় এবারের বাংলা নববর্ষ, ১৪৩২ বরণ করা হয়েছে। রাজধানীতে এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল ছায়ানটের প্রভাতী সঙ্গীতানুষ্ঠান ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা এবং বিভিন্ন পার্কে গ্রামীন সামগ্রী নিয়ে আয়োজিত মেলা। এসব আয়োজনে ভীড় করেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষ। সবাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছেন এসব আনন্দ আয়োজন।

রমনা বটমূলে ছায়ানট

রমনা বটমূলে ছায়ানটের ৫৮তম এ আয়োজন শুরু হয় নতুন বছরের প্রথম দিন ভোর সোয়া ৬টায়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা সবাই হৃদয়ে ধারণ করলে, মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতে পৌঁছানো যে সহজ হবে, সেই বার্তাই দেয়া হয় ছায়ানটের বর্ষবরণে আয়োজনে। প্যালেস্টইনে ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতাও পালন করে ছায়ানট। বাঙালি সমাজকে নিয়ে মুক্তির পথযাত্রী হতে এবার ছায়ানটের বর্ষবরণের বার্তা ছিল - ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। প্রভাতি এই আয়োজনে সম্মেলক কণ্ঠে ‘নূতন প্রাণ দাও, প্রাণসখা’ এবং একক কণ্ঠে দীপ্র নিশান্ত শোনান ‘তিমির দুয়ার খোলো’। ৯টি সম্মেলক, ১২টি একক গান ও ৩টি পাঠ পরিবেশন করা হয়। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে দেড়শতাধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করেন।

এবার ছায়ানটের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে নববর্ষ কথন পাঠ করে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘মুক্তির অন্বেষায়, দীর্ঘ বন্ধুর পথপরিক্রমায় অর্ধশতকবর্ষ পূর্বে, বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওই যাত্রাপথের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে, ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীতসহ সব মাধ্যম এবং বিভিন্ন স্থাপনায়। সারওয়ার আলীর নববর্ষ কথনের পর সবাই মিলে ‘জাতীয় সংগীত’ গেয়ে আয়োজনের সমাপ্তি হয়।

আনন্দ শোভাযাত্রায় ফ্যাসিবাদ অবসানের বার্তা

চারুকলা ইনস্টিটিউটের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ এবার নতুন নাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নানা বৈচিত্রের কারণে। সকাল ৯টায় চারুকলা ইনস্টিইটিউট প্রাঙ্গন থেকে বের হয় এ ‘আনন্দ শোভাযাত্র।’ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া কারো হাতে ছিল প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ড, কেউবা আবার সেজেছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী রূপে। দেশের অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকজনও যোগ দিয়েছেন তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানসহ অনেকে অংশ নেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন, ‘এই ভূখ-ে নতুন বছর আসে কেবল বাঙালীর জন্য, এই উৎসব তাই কেবল বাঙালীর প্রাণের উৎসব’- এই বছর হতে এই ক্ষুদ্রতা থেকে আমাদের মুক্তি ঘটবে এই প্রত্যয়ে অগণিত প্রাণের এই শোভাযাত্রা। চাকমা, মারমা, গারো, বাঙালীসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর উৎসবের উচ্ছ্বাসে আজ মেতেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশ। বাংলাদেশের প্রাণের উৎসবে সবাইকে শুভেচ্ছা।’

‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যে বের হওয়া এবারের শোভাযাত্রায় প্যালেস্টাইনে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও উঠে আসে। দেয়া হয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বার্তা। এবার শোভাযাত্রায় ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ অংশ নেয়। এছাড়া ছোট, বড়, মাঝারি অসংখ্য শিল্পকর্ম দেখা যায় শোভাযাত্রায়।

শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বাংলাদেশ

মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা)। এছাড়া কৃষককে গুরুত্বপূর্ণ থিম হিসেবে শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হয়। নবপ্রাণ আন্দোলনের তত্ত্বাবধানে সাধু ও বাউলদের অংশগ্রহণ, নারী ফুটবলারদের অংশগ্রহণও ছিল শোভাযাত্রায়। অন্য মোটিফের মধ্যে ছিল- তরমুজের ফালি, বাঘ, ইলিশ, শান্তির পায়রা ও পালকি। এছাড়া ৩৬ জুলাই টাইপোগ্রাফি আর পানির বোতলের মোটিফ মনে করিয়ে দেয় জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের কথা।

শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় এবছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেন।

রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান

পহেলা বৈশাখে সকাল ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারার আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশপাশে ছিল বাহারি বাঙালি খাবারের পসরা এবং গ্রামীন সামগ্রী নিয়ে আকর্ষণীয় বৈশাখী মেলা।

জাতীয় সংসদ এলাকায় ড্রোন শো

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ‘ড্রোন-শো’ ও ‘ব্যান্ড-শো’ অনুষ্ঠিত হয়। এ শো-কে আলোর বন্যায় বিভিন্ন বিষয়ের প্রতীকী উপস্থাপনা হয়। মুগ্ধ হয়ে মানুষ ঢাকায় প্রথমবারের মতো এমন আকর্ষণীয় শোভ উপভোগ করেন।

শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্ক

রাজধানীর গুলশান-২-এর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও নগর উৎসব আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৭টায় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়ে। আজ সকাল ৯টায় বর্ষবরণ নগর উৎসবের ওয়েবসাইট উন্মোচন করা হয়। এরপর বারামখানা ও পল্লীবাংলার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বাউল গানের আসর। বিকেল ৪টায় ঘাসফড়িং কয়ার, শিরোনাম হীন এবং প্লাজমিক নকের অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।

শাহবাগ এলাকায় দিনব্যাপী বর্ষবরণ

‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’ এই শিরোনামে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট। এই আয়োজনে চিরায়ত বাংলা গান, দেশাত্মবোধক গান, জারিসারি, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা ও নাটিকা পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করেছিল।

অন্যান্য আয়োজন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণ থেকে বৈশাখী আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। এরপর নগর ভবনে ছিল পান্তা ইলিশের আয়োজন। দুপুরে কর্পোরেশনের আয়োজনে হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ৮টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ‘জনমানুষের বৈশাখ, শেকড়ের সংস্কৃতি’ শিরোনামে ১০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান।

এর বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড এবং পূর্বাচলের ৩শ’ ফুট উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায় সারাবছরই কম-বেশি ভিড় থাকে। উৎসবের দিনে ভিড় ছিল আরও বেশি।

ঢাকায় এলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব

ছবি

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন, ‘গুরুত্ব দিয়ে’ তদন্তে পুলিশ : প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের জবাবে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

ডাকসু নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা

তরুণীকে লাঠিপেটার ভিডিও ফেইসবুকে, ‘আপন কফির’ দুই কর্মী রিমান্ডে

ছবি

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ

১১৭ বারের মতো পেছালো প্রতিবেদন জমার তারিখ

‘প্লট দুর্নীতি’: এবার জয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

আচরণবিধি মানতে দলের প্রত্যয়নসহ আরপিওতে পরিবর্তন আনছে ইসি

ছবি

কুয়েটে হলের তালা ভাঙলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা, এক দফা, ভিসির পদত্যাগ দাবি

ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আবারও জেলেনিস্কিকে দায়ী করলেন ট্রাম্প

জুলাই আন্দোলন নির্মূলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে চার মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার: ‘প্রশ্ন শুনে মনে হয় সরকার বেআইনি কাজ করেছে,’: সাংবাদিকদের বিশেষ সহকারী

বাড়ানো হলো সয়াবিন তেলের দাম

১০৫টি সরকারি হাইস্কুল ও কলেজের জমি ‘বেদখল’

নির্বাচনী সামগ্রী কিনতে ৩-৪ মাস সময় লাগবে: ইসি সচিব

যমুনায় স্পষ্ট বার্তা চাইবে বিএনপি বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

শিল্পে গ্যাসের দাম: ‘সরকার নিজের ব্যর্থতার দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দিলো’

ছবি

প্রায় ১৫ বছর পর ঢাকায় বাংলাদেশ–পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ তদারকিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের ঘোষণা

ছবি

বিমান ও পর্যটনের দায়িত্বও পেলেন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন

ছবি

তিনটি অভিযোগে বিসিবির বিরুদ্ধে তথ্য চাইল দুদক

ছবি

সয়াবিন তেলের দাম সাময়িকভাবে বাড়ানো হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঘুষের ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে দুদকের মামলা

ছবি

লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ

ছবি

রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

পাঁচ বছর ক্ষমতায় : ‘আমিতো কিছুই বলি নাই’, বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার: ‘প্রশ্ন শুনে মনে হয় সরকার বেআইনি কাজ করেছে,’ সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

ছবি

সারাদেশে একযোগে দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের

ছবি

হয়রানির জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: টিউলিপ

ছবি

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আর সংস্কৃতির উৎসব

ছবি

বাঙালির মুক্তিসন্ধিক্ষণে ‘রাষ্ট্র-সমাজের দায়’ স্মরণ করাল ছায়ানট

ছবি

গাজীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত: ১৩ ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

ছবি

মায়ানমার থেকে পাচার হওয়া ২০ কিশোরকে নিয়ে ফিরছে ‘সমুদ্র অভিযান’

ছবি

চারুকলা থেকে বের হলো ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’

ছবি

দুদকের অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’: পরোয়ানা জারির খবরে টিউলিপের আইনজীবী

tab

জাতীয়

গান, নাচ আর মনোজ্ঞ শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার রাজধানীতে বৈশাখীমেলার খণ্ড চিত্র -সংবাদ

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

গান, নাচ আর মনোজ্ঞ শোভাযাত্রায় বাংলা নববর্ষ বরণ করেছে পুরো জাতি। দেশের ২৮টিরও বেশি সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে এক অনন্য আনন্দ উদ্দীপনায় এবারের বাংলা নববর্ষ, ১৪৩২ বরণ করা হয়েছে। রাজধানীতে এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল ছায়ানটের প্রভাতী সঙ্গীতানুষ্ঠান ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা এবং বিভিন্ন পার্কে গ্রামীন সামগ্রী নিয়ে আয়োজিত মেলা। এসব আয়োজনে ভীড় করেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষ। সবাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছেন এসব আনন্দ আয়োজন।

রমনা বটমূলে ছায়ানট

রমনা বটমূলে ছায়ানটের ৫৮তম এ আয়োজন শুরু হয় নতুন বছরের প্রথম দিন ভোর সোয়া ৬টায়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা সবাই হৃদয়ে ধারণ করলে, মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতে পৌঁছানো যে সহজ হবে, সেই বার্তাই দেয়া হয় ছায়ানটের বর্ষবরণে আয়োজনে। প্যালেস্টইনে ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতাও পালন করে ছায়ানট। বাঙালি সমাজকে নিয়ে মুক্তির পথযাত্রী হতে এবার ছায়ানটের বর্ষবরণের বার্তা ছিল - ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। প্রভাতি এই আয়োজনে সম্মেলক কণ্ঠে ‘নূতন প্রাণ দাও, প্রাণসখা’ এবং একক কণ্ঠে দীপ্র নিশান্ত শোনান ‘তিমির দুয়ার খোলো’। ৯টি সম্মেলক, ১২টি একক গান ও ৩টি পাঠ পরিবেশন করা হয়। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে দেড়শতাধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করেন।

এবার ছায়ানটের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে নববর্ষ কথন পাঠ করে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘মুক্তির অন্বেষায়, দীর্ঘ বন্ধুর পথপরিক্রমায় অর্ধশতকবর্ষ পূর্বে, বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওই যাত্রাপথের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে, ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীতসহ সব মাধ্যম এবং বিভিন্ন স্থাপনায়। সারওয়ার আলীর নববর্ষ কথনের পর সবাই মিলে ‘জাতীয় সংগীত’ গেয়ে আয়োজনের সমাপ্তি হয়।

আনন্দ শোভাযাত্রায় ফ্যাসিবাদ অবসানের বার্তা

চারুকলা ইনস্টিটিউটের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ এবার নতুন নাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নানা বৈচিত্রের কারণে। সকাল ৯টায় চারুকলা ইনস্টিইটিউট প্রাঙ্গন থেকে বের হয় এ ‘আনন্দ শোভাযাত্র।’ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া কারো হাতে ছিল প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ড, কেউবা আবার সেজেছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী রূপে। দেশের অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকজনও যোগ দিয়েছেন তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানসহ অনেকে অংশ নেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন, ‘এই ভূখ-ে নতুন বছর আসে কেবল বাঙালীর জন্য, এই উৎসব তাই কেবল বাঙালীর প্রাণের উৎসব’- এই বছর হতে এই ক্ষুদ্রতা থেকে আমাদের মুক্তি ঘটবে এই প্রত্যয়ে অগণিত প্রাণের এই শোভাযাত্রা। চাকমা, মারমা, গারো, বাঙালীসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর উৎসবের উচ্ছ্বাসে আজ মেতেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশ। বাংলাদেশের প্রাণের উৎসবে সবাইকে শুভেচ্ছা।’

‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যে বের হওয়া এবারের শোভাযাত্রায় প্যালেস্টাইনে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও উঠে আসে। দেয়া হয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বার্তা। এবার শোভাযাত্রায় ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ অংশ নেয়। এছাড়া ছোট, বড়, মাঝারি অসংখ্য শিল্পকর্ম দেখা যায় শোভাযাত্রায়।

শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বাংলাদেশ

মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা)। এছাড়া কৃষককে গুরুত্বপূর্ণ থিম হিসেবে শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হয়। নবপ্রাণ আন্দোলনের তত্ত্বাবধানে সাধু ও বাউলদের অংশগ্রহণ, নারী ফুটবলারদের অংশগ্রহণও ছিল শোভাযাত্রায়। অন্য মোটিফের মধ্যে ছিল- তরমুজের ফালি, বাঘ, ইলিশ, শান্তির পায়রা ও পালকি। এছাড়া ৩৬ জুলাই টাইপোগ্রাফি আর পানির বোতলের মোটিফ মনে করিয়ে দেয় জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের কথা।

শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় এবছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেন।

রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান

পহেলা বৈশাখে সকাল ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারার আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশপাশে ছিল বাহারি বাঙালি খাবারের পসরা এবং গ্রামীন সামগ্রী নিয়ে আকর্ষণীয় বৈশাখী মেলা।

জাতীয় সংসদ এলাকায় ড্রোন শো

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ‘ড্রোন-শো’ ও ‘ব্যান্ড-শো’ অনুষ্ঠিত হয়। এ শো-কে আলোর বন্যায় বিভিন্ন বিষয়ের প্রতীকী উপস্থাপনা হয়। মুগ্ধ হয়ে মানুষ ঢাকায় প্রথমবারের মতো এমন আকর্ষণীয় শোভ উপভোগ করেন।

শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্ক

রাজধানীর গুলশান-২-এর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও নগর উৎসব আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৭টায় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়ে। আজ সকাল ৯টায় বর্ষবরণ নগর উৎসবের ওয়েবসাইট উন্মোচন করা হয়। এরপর বারামখানা ও পল্লীবাংলার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বাউল গানের আসর। বিকেল ৪টায় ঘাসফড়িং কয়ার, শিরোনাম হীন এবং প্লাজমিক নকের অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।

শাহবাগ এলাকায় দিনব্যাপী বর্ষবরণ

‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’ এই শিরোনামে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট। এই আয়োজনে চিরায়ত বাংলা গান, দেশাত্মবোধক গান, জারিসারি, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা ও নাটিকা পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করেছিল।

অন্যান্য আয়োজন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণ থেকে বৈশাখী আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। এরপর নগর ভবনে ছিল পান্তা ইলিশের আয়োজন। দুপুরে কর্পোরেশনের আয়োজনে হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ৮টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ‘জনমানুষের বৈশাখ, শেকড়ের সংস্কৃতি’ শিরোনামে ১০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান।

এর বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড এবং পূর্বাচলের ৩শ’ ফুট উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায় সারাবছরই কম-বেশি ভিড় থাকে। উৎসবের দিনে ভিড় ছিল আরও বেশি।

back to top