এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি খনন করে ফিশারি নির্মাণ করার দৃশ্য -সংবাদ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে হাইল হাওরের বিস্তীর্ণ জনভূমি ও তার পার্শ্ববর্তী ভূমি ক্ষমতা ও টাকা পয়সার দাপট দেখিয়ে এক শ্রেণীর ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতা, ধনাঢ্য প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকেই দখল করে ব্যক্তিগত ফিশারি তৈরি করায় জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি।
সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাকা ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একশ্রেণীর প্রভাব প্রতিপত্তিশালী রাজনীতিবিদ, ধনাঢ্য প্রভাবশালী লোকজন ও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান হাইল হাওরের বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও তার পার্শ্ববর্তী ভূমি দখল করে নিজেদের ব্যবসা ও খামার তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ধনাঢ্য প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাশালী লোকজন বড় বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকলেও দখলের সময়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ বলে জানা গেছে।
হাইল হাওরের বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও তার পার্শ্ববর্তী ভূমি দখলে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়সহ দেশের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ- আরএফএল কোম্পানির নামও বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
এক সময়ে হাইল হাওরের অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্রেরও কোনো ঘাটতি ছিল না। এই হাওরে প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির বিচরণ ছিল বলে জানা গেছে।
এই হাইল হাওরের আয়তন ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পড়েছে ১০ হাজার হেক্টর। এর ভেতরে বিল রয়েছে ৫৯টি। যার মধ্যে ২০ একরের নিচে ৩৯টি এবং ২০টি ২০ একরের ওপরে। অবশিষ্ট ৪ হাজার হেক্টর জলাভূমি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়। যার মধ্যে বিল রয়েছে ৫৫টি। এরই মধ্যে ১০ থেকে ১২ টির কোনো অস্তিত্ব নেই।
এই হাইল হাওর এক সময় এতদাঞ্চলের মাছের চাহিদা পূরণ করতো। হাইল হাওরের অধিকাংশ সরকারি বিলই এখন ব্যক্তিগত মৎস্য খামারে পরিণত হয়েছে।
কথিত আছে, এক সময় ৩৫২ ছড়ার অস্তিত্ব ছিল এই হাইল হাওরে। কিন্তু ভূমি দখল করে মাছের খামারও ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে সুপরিচিত এই হাইল হাওর এখন বিলীনের পথে। হাওরের ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩১টি বিলের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। ৩০টি বিলের কোনো হদিস নেই। এছাড়া ৩৫২ ছড়ার হাইল হাওরের দুই-তৃতীয়াংশ ছড়া (খালের মতো পানিপ্রবাহ) হারিয়ে গেছে।
জলাভূমির ধারে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠী মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। তাদের বেশিরভাগই জীবিকার জন্য মাছ ধরা ও চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত।
সম্প্রতি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড’ স্থানীয় কৃষক, মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে শিল্পায়নের নামে কৃষিজমির শ্রেণী পরিবর্তন করে হাইল হাওরের
১ হাজার একরেরও বেশি ভূমিতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে খনন করে ফিশারি নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের আইন লঙ্ঘন করে সরকারি খাস জমি, হাওরের বিল, গোপাট, ছড়া, খাল ও কৃষকের ব্যক্তিগত ভূমি নানা কৌশলে দখল করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন যাতে
বাধা দিতে না পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২ নম্বর গিয়াসনগর ও ১০ নম্বর নাজিরাবাদ ইউনিয়নে ‘হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড’ হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে খনন কাজ চালাচ্ছে বলে স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ।
কৃষক নেতা মো. খায়রুল ইসলাম মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক- এর
কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করে জানিয়েছেন যে ফিশারি প্রকল্পের জন্য রাস্তা, ছড়া ও খালগুলো বন্ধ করে দেয়ার ফলে ৩০/৪০ হাজার কৃষক ও খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
হাইল হাওর রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও সদস্যসচিব কাজী এমদাদুর রহমান মঞ্জু বরাত দিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া খবর লিখেছে যে এই পরিবেশবিনাশী প্রকল্পের কারণে হাওরের দেশি মাছ, পাখি ও জলজ উদ্ভিদের প্রজননস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কৃষক, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় এবং গবাদি পশুর চারণভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি ও মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রাণ কোম্পানি প্রথমে কিছু জমি কিনলেও বাকি জমিগুলো সরকারি খাস ও কৃষকদের ভূমি জবরদখল করে নিয়েছে। কিছু কৃষক ভূমি বিক্রি না করা সত্ত্বে¡ও কোম্পানির পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দালালরা জাল দলিল তৈরি করে ভূমি দখল করেছেন।
জমির রকম পরিবর্তন করে প্রকল্প গ্রহণের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক- মৌলভীবাজার বরাবরে স্থানীয়দের স্বাক্ষরসহ কৃষক নেতা মো. খায়রুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, হাওর এলাকার ছোট ছোট গোপাট, ছড়া, খাল, নদী-নালা, গো-মহিষাদি চলাচলের রাস্তা ইত্যাদি বন্ধ ও নিশ্চিহ্ন করে বাউন্ডারি, অবৈধ সীমানা দিয়ে হাওরের পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর ৩০ থেকে ৪০ হাজার সাধারণ কৃষকদের কৃষি কাজসহ গো-মহিষ চড়ানোতে বাধা প্রদান করা হচ্ছে।
হাইল হাওর রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও সদস্যসচিব কাজী এমদাদুর রহমান মঞ্জু গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ করে বলেন যে, হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড নামে প্রাণ আরএফএল কোম্পানি কর্তৃক হাওর পরিবেশ বিরোধী এ প্রকল্প জনসাধারণের ব্যাপক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাওর থেকে বোরো ধান নিয়ে আসতে বাধা তৈরি করছে। কোম্পানির স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় কোম্পানির ম্যানেজার ও অন্য কর্মকর্তারা গরিব কৃষকদের হুমকি এবং ইতোমধ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে নানা ধরনের হয়রানি করছেন।
কাউয়াদিঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক খছরু চৌধুরী বলেন, হাওর খনন করে ফিশারি করা সম্পূর্ণ বেআইনি জেনেও প্রাণ কোম্পানির হবিগঞ্জ এগ্রো কর্তৃপক্ষ শতাধিক এক্সক্যাভেটর মেশিনের মাধ্যমে হাইল হাওর, কাওয়া দিঘিসহ হাওর বনাঞ্চল ধ্বংসের পাঁয়তারার পরিকল্পনা করছেন। ফিশারি খননেন স্থানীয়রা বাধা দিলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। শিল্পায়নের নামে ফিশারি খনন প্রকল্প বন্ধ এবং এলাকাবাসির বিরুদ্ধে মামলা-হয়রানি বন্ধ না করলে আমরা রাজপথে আরও বড় পরিসরে আন্দোলন করবো।
পরিবেশবাদীরা হাইল হাওরের ঐতিহ্য রক্ষা এবং এই বেআইনি ফিশারি প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা সরকারের কাছে দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
এসব বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন স্মারকলিপি পেয়েছেন ও তদন্ত করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, জনস্বার্থে হাওর ও উন্মুক্ত জলাশয়কে রক্ষা করা উচিত। জলাভূমি দখল করে ফিশারি তৈরি করা সঙ্ঘবদ্ধ প্রভাবশালীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। একইসঙ্গে হাইল হাওরে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা শতভাগ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সামনে বড় রকমের বিপর্যয় ঘটবে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে এখনই হাইল হাওরের বিলগুলো খনন করা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি পাহাড়ি ছড়ার নিচের অংশ খনন করে গোফলা পর্যন্ত পানি চলাচলের পথ পরিষ্কার করে হাইল হাওরকে দেশ জাতি ও পরিবেশের জন্য রক্ষা করা উচিত।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হাইল হাওর দখলের বিষয়ে খবর বেরিয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হাইল হাওর পরিদর্শনক্রমে এসে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে হাওড়াঞ্চলের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে জীবন জীবিকা, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য হাইল হাওর এ পর্যন্ত দখল মুক্ত হয়নি।
এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি খনন করে ফিশারি নির্মাণ করার দৃশ্য -সংবাদ
রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে হাইল হাওরের বিস্তীর্ণ জনভূমি ও তার পার্শ্ববর্তী ভূমি ক্ষমতা ও টাকা পয়সার দাপট দেখিয়ে এক শ্রেণীর ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতা, ধনাঢ্য প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকেই দখল করে ব্যক্তিগত ফিশারি তৈরি করায় জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি।
সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাকা ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একশ্রেণীর প্রভাব প্রতিপত্তিশালী রাজনীতিবিদ, ধনাঢ্য প্রভাবশালী লোকজন ও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান হাইল হাওরের বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও তার পার্শ্ববর্তী ভূমি দখল করে নিজেদের ব্যবসা ও খামার তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ধনাঢ্য প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাশালী লোকজন বড় বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকলেও দখলের সময়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ বলে জানা গেছে।
হাইল হাওরের বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও তার পার্শ্ববর্তী ভূমি দখলে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়সহ দেশের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ- আরএফএল কোম্পানির নামও বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
এক সময়ে হাইল হাওরের অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্রেরও কোনো ঘাটতি ছিল না। এই হাওরে প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির বিচরণ ছিল বলে জানা গেছে।
এই হাইল হাওরের আয়তন ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পড়েছে ১০ হাজার হেক্টর। এর ভেতরে বিল রয়েছে ৫৯টি। যার মধ্যে ২০ একরের নিচে ৩৯টি এবং ২০টি ২০ একরের ওপরে। অবশিষ্ট ৪ হাজার হেক্টর জলাভূমি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়। যার মধ্যে বিল রয়েছে ৫৫টি। এরই মধ্যে ১০ থেকে ১২ টির কোনো অস্তিত্ব নেই।
এই হাইল হাওর এক সময় এতদাঞ্চলের মাছের চাহিদা পূরণ করতো। হাইল হাওরের অধিকাংশ সরকারি বিলই এখন ব্যক্তিগত মৎস্য খামারে পরিণত হয়েছে।
কথিত আছে, এক সময় ৩৫২ ছড়ার অস্তিত্ব ছিল এই হাইল হাওরে। কিন্তু ভূমি দখল করে মাছের খামারও ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে সুপরিচিত এই হাইল হাওর এখন বিলীনের পথে। হাওরের ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩১টি বিলের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। ৩০টি বিলের কোনো হদিস নেই। এছাড়া ৩৫২ ছড়ার হাইল হাওরের দুই-তৃতীয়াংশ ছড়া (খালের মতো পানিপ্রবাহ) হারিয়ে গেছে।
জলাভূমির ধারে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠী মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। তাদের বেশিরভাগই জীবিকার জন্য মাছ ধরা ও চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত।
সম্প্রতি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড’ স্থানীয় কৃষক, মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে শিল্পায়নের নামে কৃষিজমির শ্রেণী পরিবর্তন করে হাইল হাওরের
১ হাজার একরেরও বেশি ভূমিতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে খনন করে ফিশারি নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের আইন লঙ্ঘন করে সরকারি খাস জমি, হাওরের বিল, গোপাট, ছড়া, খাল ও কৃষকের ব্যক্তিগত ভূমি নানা কৌশলে দখল করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন যাতে
বাধা দিতে না পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২ নম্বর গিয়াসনগর ও ১০ নম্বর নাজিরাবাদ ইউনিয়নে ‘হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড’ হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে খনন কাজ চালাচ্ছে বলে স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ।
কৃষক নেতা মো. খায়রুল ইসলাম মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক- এর
কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করে জানিয়েছেন যে ফিশারি প্রকল্পের জন্য রাস্তা, ছড়া ও খালগুলো বন্ধ করে দেয়ার ফলে ৩০/৪০ হাজার কৃষক ও খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
হাইল হাওর রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও সদস্যসচিব কাজী এমদাদুর রহমান মঞ্জু বরাত দিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া খবর লিখেছে যে এই পরিবেশবিনাশী প্রকল্পের কারণে হাওরের দেশি মাছ, পাখি ও জলজ উদ্ভিদের প্রজননস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কৃষক, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় এবং গবাদি পশুর চারণভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি ও মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রাণ কোম্পানি প্রথমে কিছু জমি কিনলেও বাকি জমিগুলো সরকারি খাস ও কৃষকদের ভূমি জবরদখল করে নিয়েছে। কিছু কৃষক ভূমি বিক্রি না করা সত্ত্বে¡ও কোম্পানির পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দালালরা জাল দলিল তৈরি করে ভূমি দখল করেছেন।
জমির রকম পরিবর্তন করে প্রকল্প গ্রহণের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক- মৌলভীবাজার বরাবরে স্থানীয়দের স্বাক্ষরসহ কৃষক নেতা মো. খায়রুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, হাওর এলাকার ছোট ছোট গোপাট, ছড়া, খাল, নদী-নালা, গো-মহিষাদি চলাচলের রাস্তা ইত্যাদি বন্ধ ও নিশ্চিহ্ন করে বাউন্ডারি, অবৈধ সীমানা দিয়ে হাওরের পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর ৩০ থেকে ৪০ হাজার সাধারণ কৃষকদের কৃষি কাজসহ গো-মহিষ চড়ানোতে বাধা প্রদান করা হচ্ছে।
হাইল হাওর রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও সদস্যসচিব কাজী এমদাদুর রহমান মঞ্জু গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ করে বলেন যে, হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড নামে প্রাণ আরএফএল কোম্পানি কর্তৃক হাওর পরিবেশ বিরোধী এ প্রকল্প জনসাধারণের ব্যাপক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাওর থেকে বোরো ধান নিয়ে আসতে বাধা তৈরি করছে। কোম্পানির স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় কোম্পানির ম্যানেজার ও অন্য কর্মকর্তারা গরিব কৃষকদের হুমকি এবং ইতোমধ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে নানা ধরনের হয়রানি করছেন।
কাউয়াদিঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক খছরু চৌধুরী বলেন, হাওর খনন করে ফিশারি করা সম্পূর্ণ বেআইনি জেনেও প্রাণ কোম্পানির হবিগঞ্জ এগ্রো কর্তৃপক্ষ শতাধিক এক্সক্যাভেটর মেশিনের মাধ্যমে হাইল হাওর, কাওয়া দিঘিসহ হাওর বনাঞ্চল ধ্বংসের পাঁয়তারার পরিকল্পনা করছেন। ফিশারি খননেন স্থানীয়রা বাধা দিলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। শিল্পায়নের নামে ফিশারি খনন প্রকল্প বন্ধ এবং এলাকাবাসির বিরুদ্ধে মামলা-হয়রানি বন্ধ না করলে আমরা রাজপথে আরও বড় পরিসরে আন্দোলন করবো।
পরিবেশবাদীরা হাইল হাওরের ঐতিহ্য রক্ষা এবং এই বেআইনি ফিশারি প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা সরকারের কাছে দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
এসব বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন স্মারকলিপি পেয়েছেন ও তদন্ত করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, জনস্বার্থে হাওর ও উন্মুক্ত জলাশয়কে রক্ষা করা উচিত। জলাভূমি দখল করে ফিশারি তৈরি করা সঙ্ঘবদ্ধ প্রভাবশালীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। একইসঙ্গে হাইল হাওরে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা শতভাগ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সামনে বড় রকমের বিপর্যয় ঘটবে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে এখনই হাইল হাওরের বিলগুলো খনন করা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি পাহাড়ি ছড়ার নিচের অংশ খনন করে গোফলা পর্যন্ত পানি চলাচলের পথ পরিষ্কার করে হাইল হাওরকে দেশ জাতি ও পরিবেশের জন্য রক্ষা করা উচিত।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হাইল হাওর দখলের বিষয়ে খবর বেরিয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হাইল হাওর পরিদর্শনক্রমে এসে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে হাওড়াঞ্চলের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে জীবন জীবিকা, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য হাইল হাওর এ পর্যন্ত দখল মুক্ত হয়নি।