alt

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে কাতারের জোরালো ভূমিকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাসস : বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করার জন্য ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা এক গোলটেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করতে মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে। আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে এই সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’

‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।

মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করতে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন আমরা নিশ্চিত করি, আজকের আলোচনা শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে একটি অর্থবহ অংশীদারিত্বের সূচনা করে যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের যৌথ মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর শীর্ষে রাখে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করে।’

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে এবং রোহিঙ্গাদের হতাশ করে তুলছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকা-ের বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা তাদের হতাশার স্পষ্ট চিহ্ন। এই সমস্যা যদি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

অধ্যাপক ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ভূত নানা সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের দাখিলকৃত ৮,২৯,০৩৬ জনের তালিকার মধ্যে মায়ানমার সরকার ২,৩৯,০৫৬ জনকে যাচাই করেছে এবং এর মধ্যে ১,৭৬,১৯৮ জনকে ‘মায়ানমারে বসবাসকারী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মায়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজন করবে।

এই সম্মেলনে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

তিনি কাতার ফাউন্ডেশনকে এই বৈঠকের আয়োজন এবং নীতিগত বিবৃতির বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান, জবাবদিহিতা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ কেবল মানবিক বিবেচনায় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মনে করে, টেকসই প্রত্যাবাসনই হলো বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান।’

ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং মায়ানমারের জন্য গঠিত স্বাধীন তদন্ত সংস্থার (আইআইএমএম) চলমান উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ এবং রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো অপরাধের কোনোভাবেই শাস্তি এড়ানো উচিত নয়।

রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরাতে এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করতে মায়ানমার ও এর কর্মকর্তাদের অপরাধের জন্য দায়ী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

বলে উল্লেখ করেন তিনি। আইসিজে-তে দায়ের করা মামলাটি চলতি বছরের প্রথমার্ধে মেরিট পর্বে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইনি ফার্ম ফোলি হোয়াগ জানিয়েছে, প্রাথমিক, আপত্তি ও মূলপর্ব শেষ হওয়ার পর তারা আইসিজে-তে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার শিকারদের ক্ষতিপূরণের আবেদন করবে।

গাম্বিয়া সরকার ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ওআইসি ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে, যেখানে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে, যার পরিমাণ সাত লাখ ডলার।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান হিসেবে টেকসই প্রত্যাবাসনকেই বিবেচনা করে।

ছবি

কাঁটাতারে ঝুলে মারা যাওয়া সেই ফেলানীর ছোট ভাই এখন বর্ডারগার্ড

ডেঙ্গু: আরও ৬ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৪৭ জন

৪ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে নতুন সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়: নাহিদ ইসলাম

ছবি

কুমিল্লায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪টি মাজারে হামলা, আগুন

ছবি

জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় রামপুরায় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ: পাঁচ আসামির বিচার শুরু

ছবি

সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিসের আবেদন

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

tab

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে কাতারের জোরালো ভূমিকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাসস

বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করার জন্য ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা এক গোলটেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করতে মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে। আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে এই সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’

‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।

মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করতে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন আমরা নিশ্চিত করি, আজকের আলোচনা শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে একটি অর্থবহ অংশীদারিত্বের সূচনা করে যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের যৌথ মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর শীর্ষে রাখে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করে।’

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে এবং রোহিঙ্গাদের হতাশ করে তুলছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকা-ের বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা তাদের হতাশার স্পষ্ট চিহ্ন। এই সমস্যা যদি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

অধ্যাপক ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ভূত নানা সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের দাখিলকৃত ৮,২৯,০৩৬ জনের তালিকার মধ্যে মায়ানমার সরকার ২,৩৯,০৫৬ জনকে যাচাই করেছে এবং এর মধ্যে ১,৭৬,১৯৮ জনকে ‘মায়ানমারে বসবাসকারী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মায়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজন করবে।

এই সম্মেলনে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

তিনি কাতার ফাউন্ডেশনকে এই বৈঠকের আয়োজন এবং নীতিগত বিবৃতির বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান, জবাবদিহিতা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ কেবল মানবিক বিবেচনায় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মনে করে, টেকসই প্রত্যাবাসনই হলো বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান।’

ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং মায়ানমারের জন্য গঠিত স্বাধীন তদন্ত সংস্থার (আইআইএমএম) চলমান উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ এবং রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো অপরাধের কোনোভাবেই শাস্তি এড়ানো উচিত নয়।

রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরাতে এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করতে মায়ানমার ও এর কর্মকর্তাদের অপরাধের জন্য দায়ী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

বলে উল্লেখ করেন তিনি। আইসিজে-তে দায়ের করা মামলাটি চলতি বছরের প্রথমার্ধে মেরিট পর্বে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইনি ফার্ম ফোলি হোয়াগ জানিয়েছে, প্রাথমিক, আপত্তি ও মূলপর্ব শেষ হওয়ার পর তারা আইসিজে-তে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার শিকারদের ক্ষতিপূরণের আবেদন করবে।

গাম্বিয়া সরকার ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ওআইসি ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে, যেখানে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে, যার পরিমাণ সাত লাখ ডলার।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান হিসেবে টেকসই প্রত্যাবাসনকেই বিবেচনা করে।

back to top