বাজারে সিন্ডিকেটের কবলে পণ্য, কৃষকের উৎপাদন খরচই উঠছে না

বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা। বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য বাড়লেও উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় কৃষক সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বুধবার (২৩ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষকের বঞ্চনার তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি)।

ফড়িয়া, মধ্যস্বত্বভোগী ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বাড়লেও কৃষক পায় সর্বনিম্ন দাম

প্রান্তিক কৃষকের অস্তিত্ব রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ চায় খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘ক্ষুদ্র কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বঞ্চনা চিত্র’ এবং সম্প্রতি মেহেরপুরের পেঁয়াজ চাষি সাইফুল শেখের মর্মান্তিক আত্মহত্যার ঘটনায় সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার সময় এসব তথ্য জানানো হয়।

সংগঠনটি বলছে, কৃষক চায় ন্যায্য মূল্য, ভোক্তা চায় সাশ্রয়ী দাম আর ব্যবসায়ীর লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ মুনাফা। এই বৈপরীত্যের শিকার হয়ে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না দেশের কৃষকেরা।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ, মূল্য কমিশন গঠন, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ও চালের মতো অন্যান্য ফসল সরাসরি ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ, কৃষি জোনভিত্তিক সংরক্ষণাগার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

সংগঠনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে সবচেয়ে অবহেলিত ও শোষিত পেশাজীবী হলো কৃষক। আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যেও তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত। ফড়িয়া, মধ্যস্বত্বভোগী ও বাজার সিন্ডিকেটের হাতে পড়ে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বাড়লেও কৃষকের ভাগ্যে জোটে সর্বনিম্ন দাম।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এবারের মৌসুমে দেশে পেঁয়াজ ও আলুর বাম্পার ফলন হলেও কৃষকেরা এর সুফল পায়নি। এক কেজি আলুর উৎপাদন ব্যয় ২২-২৫ টাকা হলেও বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ১৪ টাকায়। অনেকে উৎপাদিত ফসল গরুকে খাইয়েছেন বা খেতেই ফেলে এসেছেন এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৬ মার্চ পেঁয়াজ চাষে লোকসান এবং ঋণ পরিশোধ করতে না পারার চাপে মেহেরপুর মুজিবনগরের পেঁয়াজ চাষি সাইফুল শেখ নিজ জমিতে বিষপান করেন এবং গত ২৮ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৬ এপ্রিল খানি বাংলাদেশ সদস্য সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, কৃষি গবেষক ও সাংবাদিক সমন্বিত একটি তথ্যানুসন্ধান দল ভুক্তভোগী পরিবার, স্থানীয় কৃষক এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করেন।

খানির সভাপতি কৃষি বিজ্ঞানী ড. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের দরকার এমন সংস্কার যেখানে

উৎপাদক এবং ভোক্তা উভয়ই লাভবান হয়। এই সংস্কারের জন্য আমাদের দরকার একটি সামগ্রিক প্রচেষ্টা। তবে নেতৃত্বটা সরকারকেই দিতে হবে। আমরা হয়তো একটা কেস নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু আরও কত ঘটনা আছে যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক সাইফুল শেখের মেয়ে রোজেফা খাতুন ও মা রমেসা বেগম। এছাড়াও, খানির তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিনিধিসহ অন্যদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন খানির সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও স্ট্যাটিসটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশাহিদা সুলতানা, ইনসিডিন বাংলাদেশের মুশফিক সাব্বির, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজার অমিত রঞ্জন দে, আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল মাসুম ও পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রাণের নির্বাহী প্রধান নুরুল আলম মাসুদ প্রমুখ।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের

সম্প্রতি