বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ‘প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ সাবেক ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর কথা বললেও কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন না করে এবং যোগাযোগের চেষ্টায় ‘সাড়া না দিয়ে’ দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থা ‘ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এই লেবার এমপির আইনজীবীরা।
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের মামলায় শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় তার আইনজীবীদের এক চিঠিতে এমন অভিযোগ তোলা হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ল ফার্ম স্টেফেনসন হারউড এলএলপি অভিযোগ করে জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চে একটি চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানোর পরও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ টিউলিপের বিষয়ে ‘একটি প্রামাণ্য দলিলও’ হাজির করতে পারেনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের খবর সামনে আসে। দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়।
এ ধারাবাহিকতায় পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় গত ১৩ এপ্রিল টিউলিপসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার একটি আদালত। সেই তালিকায় শেখ হাসিনা, টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামও রয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন লন্ডনে নিজের বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ বলেছিলেন, তিনি ভুল কিছু করেছেন, এমন কোনো ‘প্রমাণ কোথাও নেই’। তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের’ শিকার।
বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি দাবি করে সেদিন তিনি বলেন, তাকে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হতে হচ্ছে।
তবে দুদক দাবি করেছে, ঢাকার পূর্বাচলে প্লট ও রূপপুর প্রকল্পে ‘অনিয়মের’ অভিযোগের বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে টিউলিপ সিদ্দিককে তিন দফা নোটিস দিয়েছিল তারা; তবে তার সাড়া মেলেনি। টিউলিপের ঢাকার দুটি ঠিকানায় মাস দুয়েকের মধ্যে পাঠানো এসব নোটিসের ‘রেজিস্ট্রি’ চিঠি কেউ গ্রহণ না করায় প্রতিবারই ফেরত আসে বলে জানান দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
নোটিসের চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে দুদক টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আয়কর নথিতে দেওয়া ঢাকার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করেছে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, টিউলিপ নির্দোষ হলে কেন পদত্যাগ করলেন? কেন তিনি তার আইনজীবীদের দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন? দুদক তার আইনজীবীকে ইমেইলের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশে এই মামলার আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন।
১৫ এপ্রিল তারিখে ইমেইলে টিউলিপের আইনজীবীর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ১৮ মার্চ পাঠানো চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিকের “সুনাম ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ হিসেবে পরিচালিত মিডিয়ায় ব্রিফিং এর সূত্র ধরে” ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগগুলো খণ্ডন করে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
সেই চিঠিতে বলা হয়, “আপনারা যদি টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতি কোনো যৌক্তিক, সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন পেশ করতে চান, তাহলে তা আমাদের জানাতে পারেন যেন আমরা আমাদের মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে সে বিষয়ে যথাযথভাবে সাড়া দিতে পারি। কিন্তু আপনারা আমাদের কোনো প্রশ্ন পাঠাননি কিংবা চিঠির কোনো জবাব দেননি। বরং গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আবারও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন।”
চিঠিতে বলা হয়, “বিবিসি প্রকাশ করেছে যে, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, তদন্ত ‘দুর্নীতির প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ পরিচালিত হচ্ছে এবং ‘টিউলিপ সিদ্দিককে আদালত কার্যক্রম এড়িয়ে চলা উচিত নয়’। তবে অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন করা হয়নি।”
আইনজীবীর চিঠিতে বলা হয়, ১৩ এপ্রিল ঢাকায় এক শুনানিতে আদালত টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, যেখানে তাকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সাড়া দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান ব্রিটিশ মিডিয়াকে জানান, তিনি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হলে রেড নোটিস ইস্যু করতে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে, যদিও বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই।
আইনজীবী বলেন, অভিযোগ গঠন, পরোয়ানা জারি, রেড নোটিসের হুমকি ও গণমাধ্যমে বক্তব্য—সব মিলিয়ে টিউলিপ বা তার আইনজীবীদের সঙ্গে একবারও যোগাযোগ না করা ‘ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার পরিপন্থি’। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন টিউলিপের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
স্টেফেনসন হারউড এলএলপি বলেছে, দুদকের উচিত ‘মিডিয়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করে’ যথাযথ প্রক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিকের মুখোমুখি হওয়া এবং স্বচ্ছভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা।
তারা অনতিবিলম্বে অভিযোগপত্রের পূর্ণ বিবরণ ও প্রমাণাদি, যার মধ্যে কথিত ‘দুর্নীতির প্রামাণিক নথি’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে।
আইনজীবীরা জানান, টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে চলমান অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার সংরক্ষণ করেন। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগ এবং সৃষ্ট ক্ষতির বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকারও তিনি রাখেন।
নতুন চিঠির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আদালতে যখন কোনো মামলা থাকে, সেটার নিষ্পত্তি আদালতেই হতে হয়। চিঠি চালাচালি কোনো আইনি সমাধান দেয় না।”
এর আগে তিনি বলেন, “দুদক কেবল নথিপত্র ও বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ পরিচালনা করে। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ যুক্তরাজ্যসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব।”
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপেরও নাম আসে। এরপর তার ও তার বোনের পাওয়া ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড দামের একটি ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পর টিউলিপের প্রশংসা করে বলেন, তার জন্য দরজা খোলা থাকবে।
তবে বাংলাদেশের আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির একজন মুখপাত্র বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের অবিলম্বে এমপি পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।
প্লট দুর্নীতির মামলায় পরোয়ানা জারি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ১৫ এপ্রিল টিউলিপের বিরুদ্ধে নতুন আরেকটি মামলা করে দুদক। অভিযোগ, তিনি গুলশানের একটি প্লট অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করে ঘুষ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ‘প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ সাবেক ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর কথা বললেও কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন না করে এবং যোগাযোগের চেষ্টায় ‘সাড়া না দিয়ে’ দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থা ‘ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এই লেবার এমপির আইনজীবীরা।
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের মামলায় শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় তার আইনজীবীদের এক চিঠিতে এমন অভিযোগ তোলা হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ল ফার্ম স্টেফেনসন হারউড এলএলপি অভিযোগ করে জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চে একটি চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানোর পরও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ টিউলিপের বিষয়ে ‘একটি প্রামাণ্য দলিলও’ হাজির করতে পারেনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের খবর সামনে আসে। দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়।
এ ধারাবাহিকতায় পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় গত ১৩ এপ্রিল টিউলিপসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার একটি আদালত। সেই তালিকায় শেখ হাসিনা, টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামও রয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন লন্ডনে নিজের বাড়ির বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ বলেছিলেন, তিনি ভুল কিছু করেছেন, এমন কোনো ‘প্রমাণ কোথাও নেই’। তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের’ শিকার।
বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি দাবি করে সেদিন তিনি বলেন, তাকে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হতে হচ্ছে।
তবে দুদক দাবি করেছে, ঢাকার পূর্বাচলে প্লট ও রূপপুর প্রকল্পে ‘অনিয়মের’ অভিযোগের বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে টিউলিপ সিদ্দিককে তিন দফা নোটিস দিয়েছিল তারা; তবে তার সাড়া মেলেনি। টিউলিপের ঢাকার দুটি ঠিকানায় মাস দুয়েকের মধ্যে পাঠানো এসব নোটিসের ‘রেজিস্ট্রি’ চিঠি কেউ গ্রহণ না করায় প্রতিবারই ফেরত আসে বলে জানান দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
নোটিসের চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে দুদক টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আয়কর নথিতে দেওয়া ঢাকার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করেছে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, টিউলিপ নির্দোষ হলে কেন পদত্যাগ করলেন? কেন তিনি তার আইনজীবীদের দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন? দুদক তার আইনজীবীকে ইমেইলের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন বাংলাদেশে এই মামলার আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন।
১৫ এপ্রিল তারিখে ইমেইলে টিউলিপের আইনজীবীর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ১৮ মার্চ পাঠানো চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিকের “সুনাম ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ হিসেবে পরিচালিত মিডিয়ায় ব্রিফিং এর সূত্র ধরে” ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগগুলো খণ্ডন করে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
সেই চিঠিতে বলা হয়, “আপনারা যদি টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতি কোনো যৌক্তিক, সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন পেশ করতে চান, তাহলে তা আমাদের জানাতে পারেন যেন আমরা আমাদের মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে সে বিষয়ে যথাযথভাবে সাড়া দিতে পারি। কিন্তু আপনারা আমাদের কোনো প্রশ্ন পাঠাননি কিংবা চিঠির কোনো জবাব দেননি। বরং গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আবারও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন।”
চিঠিতে বলা হয়, “বিবিসি প্রকাশ করেছে যে, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, তদন্ত ‘দুর্নীতির প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ পরিচালিত হচ্ছে এবং ‘টিউলিপ সিদ্দিককে আদালত কার্যক্রম এড়িয়ে চলা উচিত নয়’। তবে অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন করা হয়নি।”
আইনজীবীর চিঠিতে বলা হয়, ১৩ এপ্রিল ঢাকায় এক শুনানিতে আদালত টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, যেখানে তাকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সাড়া দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান ব্রিটিশ মিডিয়াকে জানান, তিনি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হলে রেড নোটিস ইস্যু করতে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে, যদিও বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই।
আইনজীবী বলেন, অভিযোগ গঠন, পরোয়ানা জারি, রেড নোটিসের হুমকি ও গণমাধ্যমে বক্তব্য—সব মিলিয়ে টিউলিপ বা তার আইনজীবীদের সঙ্গে একবারও যোগাযোগ না করা ‘ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার পরিপন্থি’। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন টিউলিপের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
স্টেফেনসন হারউড এলএলপি বলেছে, দুদকের উচিত ‘মিডিয়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করে’ যথাযথ প্রক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিকের মুখোমুখি হওয়া এবং স্বচ্ছভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা।
তারা অনতিবিলম্বে অভিযোগপত্রের পূর্ণ বিবরণ ও প্রমাণাদি, যার মধ্যে কথিত ‘দুর্নীতির প্রামাণিক নথি’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে।
আইনজীবীরা জানান, টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে চলমান অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার সংরক্ষণ করেন। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগ এবং সৃষ্ট ক্ষতির বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকারও তিনি রাখেন।
নতুন চিঠির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আদালতে যখন কোনো মামলা থাকে, সেটার নিষ্পত্তি আদালতেই হতে হয়। চিঠি চালাচালি কোনো আইনি সমাধান দেয় না।”
এর আগে তিনি বলেন, “দুদক কেবল নথিপত্র ও বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ পরিচালনা করে। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ যুক্তরাজ্যসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব।”
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপেরও নাম আসে। এরপর তার ও তার বোনের পাওয়া ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড দামের একটি ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পর টিউলিপের প্রশংসা করে বলেন, তার জন্য দরজা খোলা থাকবে।
তবে বাংলাদেশের আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির একজন মুখপাত্র বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের অবিলম্বে এমপি পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।
প্লট দুর্নীতির মামলায় পরোয়ানা জারি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ১৫ এপ্রিল টিউলিপের বিরুদ্ধে নতুন আরেকটি মামলা করে দুদক। অভিযোগ, তিনি গুলশানের একটি প্লট অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করে ঘুষ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন।