বেশ কিছুদিন ধরে সব ধরনের চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমনের ভরা মৌসুম থেকেই এই বৃদ্ধি শুরু হয় এখনও থামেনি। শনিবার (২৬/ ০৪/ ২০২৫) ভালো মানের মোটা চাল খুচরায় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকায়। সরু চাল বিক্রি হয়েছে ১শ’ টাকার কাছাকাছি। এর আগে কখনও চালের দাম এতটা বাড়েনি। তবে পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। বিবিএস এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর যে পরিমাণ চালের চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে বেশি চাল বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। তাই ভোক্তাদের প্রশ্ন, কেন-ই বা বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানি করতে হবে? আর কেন-ই বা ভরা মৌসুমে চালের দাম আকাশছোঁয়া?
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিত্যপণ্যের বাজার দর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার খুচরাবাজারে মোটা চাল ইরি, স্বর্ণার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৫২ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু চাল নাজিরশাইল, মিনিকেট ৭২ থেকে ৮৫ টাকা ও মাঝারিমানের চাল পাইজাম, লতা ৫৭ থেকে ৬৫ টকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাজারে গত একবছরে সরু চালের দর বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ৯ এবং মোটা চালের ৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
তবে সরকারি তথ্যের চেয়ে বাস্তবে বাজারের অবস্থার মিল পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি তথ্যে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম দেখানো হয়। যেমন, সরেজমিনে মোটা চালের দাম যেখানে ৬০-৬৫ টাকা, সেখানে সরকারি তথ্যে বলা হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৭ টাকা। সরেজমিনে সরু বা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, সেখানে সরকারি তথ্যে বলা হচ্ছে ৭২ থেকে ৮৫ টাকা। পরিসংখ্যানে পার্থক্য যা-ই থাকুক না কেন, চালের দাম যে আকাশছোঁয়া তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
উৎপাদন ও চাহিদার অবস্থা
বাংলাদেশে প্রতিবছর চাল উৎপাদনের পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের চাল উৎপাদন হয়েছিল ৪ দশমিক ৬ কোটি টন। আর এই বছর দেশে মোট চালের চাহিদা ছিল ৩ দশমিক ৮৫ কোটি টনের। অর্থাৎ দেশে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হয় তার চেয়ে কম চালের চাহিদা রয়েছে। একইভাবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ৩ দশমিক ৯৮ কোটি টন। আর চাহিদা ছিল ৩ দশমিক ৮০ কোটি টনের। অর্থাৎ এভাবে গত কয়েক বছর ধরে চালের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি ছিল। তারপরও প্রতিবছর সরকার চাল আমদানি করে। এবার আমদানি করেও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
এই প্রসঙ্গে শনিবার কথা হয় বিবিএস এর এগ্রিকালচার উইংয়ের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, দেশের চালের উৎপাদন ও চাহিদার পরিসংখ্যানের কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘পরিসংখ্যানে যে চাহিদার কথা বলা হয়েছে সেটা শুধু হিউম্যান কনজাম্পশন। এর বাইরেও আরও দুইটা চাহিদা আছে। সেগুলো হলো নন- হিউম্যান কনজাম্পশন ও মেশিন কনজাম্পশন। যেমন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, পোল্ট্রি ফিড এই জাতীয় গবাদিপশুর চাহিদা সেগুলো নন-হিউম্যান কনজাম্পশন। আবার ফ্যাক্টরিতে খাবার তৈরির জন্য র-ম্যাটারিয়াল হিসেবে চাল ও গম ব্যবহার হয়, সেগুলো মেশিন কনজাম্পশন। পরিসংখ্যানে নন-হিউম্যান কনজাম্পশন ও মেশিন কনজাম্পশন হিসেব করা নেই। এটা আমাদের একটা দুর্বলতা। আমরা আগামী বছর আরেকটা সার্ভে করে এই দুই কনজাম্পশনকে পরিসংখ্যানে নিয়ে আসবো। তাহলে চাহিদার প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।’
এই দুই কনমাজম্পশনে খাদ্যের বড় অংশ চলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয় একটা গ্রস হিসাব করেছে। সেখানে দেখা গেছে, আমাদের মোট খাবারের প্রায় ২৫ শতাংশ, কিছুটা কম বেশি হতে পারে, এই দুই কনজাম্পশনে চলে যায়।’
চাহিদা পুরণে আমদানি
মৌসুমের শুরুর দিকে চালের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার চাল আমদানি বাড়িয়ে বাজার ঠিক রাখার পরিকল্পনা করে। তাই খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের নভেম্বরে চার দফায় ২৭৭টি বরাদ্দপত্রে ১৪ লাখ ৮১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। অনুমতিপত্রে গত ১০ ও ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে বাজারজাতের শর্ত দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে মাত্র এক লাখ টন চাল আমদানি করে বেসরকারি খাতে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।
অর্থাৎ অনুমতির মাত্র ৭ শতাংশ চাল আমদানি হয়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও দুই দফায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই লাখ টন চাল আমদানির বরাদ্দ দেয়া হয়। আবার এক মাস করে চার দফায় চাল আমদানির সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে গত ১৫ এপ্রিল করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৩৩৪টি বরাদ্দপত্রে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বরে অনুমতি দেয়ার পর ১৫ এপ্রিলের সময়সীমা পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এসব চাল আমদানি করেছে ১৯০টি প্রতিষ্ঠান। চালে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর মিলে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। এনবিআর গত অক্টোবর তিন দফায় সব ধরনের শুল্ক-কর প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরও চাল আমদানি বাড়েনি। আমদানি না বাড়ার কারণ হলো, সামনে ধান উঠবে। তখন চালের দাম কমে যেতে পারে। তাই এখন যদি চাল আমদানি করে তাহলে তারা লোকশানের মুখে পড়তে পারে।চালের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। গত আগস্টে বন্যার কারণে চাল উৎপাদন কমতে পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার চালের মজুত বাড়াতে শুরু করে। বেসরকারি খাত ছাড়াও সরকারি খাতে সাড়ে ৯ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারিভাবে গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি করা ৬ লাখ ৩৮ হাজার টন চাল খালাস হয়েছে।
চালের নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ধরা হয় ১১ লাখ টন। সরকারি আমদানির পরও ১৬ এপ্রিল সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল ৯ লাখ ২৭ হাজার টন। পাইপলাইনে থাকা চাল গুদামে পৌঁছালে মজুত আরও বাড়বে।
খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘সরকারি মজুত কমবেশি ১০ লাখ টনের আশপাশে থাকবে। চালের মজুত বিপজ্জনক পর্যায়ে নামার শঙ্কা নেই। কারণ, আমদানির পাশাপাশি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ শুরু হবে।’
দাম বাড়ার কারণ কি?
শনিবার কথা হয় কামরান আহমেদ নামে কারওয়ান বাজারের একজন খুচরা চাল বিক্রেতার সঙ্গে। দাম বৃদ্ধির জন্য তিনি চালকলের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে চালের সংকট নাই। চালচল মালিকরা বস্তার বস্তা চাল মজুদ করে রেখেছে। তাই দাম বাড়ছে। সরকার চালকলে অভিযান চালাচ্ছে না। যদি চালকলে অভিযান চালায় তাহলে কালই দাম কমে যাবে।’
তবে সরকার অবশ্য বলছে অন্য কথা। সরকার বলছে, সিন্ডিকেট নেই, সরকার ধান-চাল বেশি টাকা দিয়ে কৃষকের কাছে থেকে কিনছে তাই দাম বাড়তি।
গত বহস্পতিবার খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘ধান-চাল ক্রয় নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট আর হবে না, হতে দেবে না সরকার। কৃষকের স্বার্থে বিগত বছরের চেয়ে কেজিতে চার টাকা বেশি দামে ধান-চাল ক্রয় করছে সরকার। সরকারের বেশি দামে কেনার কারণে বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়বে। কৃষক পরিশ্রম করে ধান উৎপাদন করে তাদের উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারলে কৃষক ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।’
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
বেশ কিছুদিন ধরে সব ধরনের চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমনের ভরা মৌসুম থেকেই এই বৃদ্ধি শুরু হয় এখনও থামেনি। শনিবার (২৬/ ০৪/ ২০২৫) ভালো মানের মোটা চাল খুচরায় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকায়। সরু চাল বিক্রি হয়েছে ১শ’ টাকার কাছাকাছি। এর আগে কখনও চালের দাম এতটা বাড়েনি। তবে পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। বিবিএস এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর যে পরিমাণ চালের চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে বেশি চাল বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। তাই ভোক্তাদের প্রশ্ন, কেন-ই বা বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানি করতে হবে? আর কেন-ই বা ভরা মৌসুমে চালের দাম আকাশছোঁয়া?
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিত্যপণ্যের বাজার দর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার খুচরাবাজারে মোটা চাল ইরি, স্বর্ণার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৫২ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু চাল নাজিরশাইল, মিনিকেট ৭২ থেকে ৮৫ টাকা ও মাঝারিমানের চাল পাইজাম, লতা ৫৭ থেকে ৬৫ টকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাজারে গত একবছরে সরু চালের দর বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ৯ এবং মোটা চালের ৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
তবে সরকারি তথ্যের চেয়ে বাস্তবে বাজারের অবস্থার মিল পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি তথ্যে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম দেখানো হয়। যেমন, সরেজমিনে মোটা চালের দাম যেখানে ৬০-৬৫ টাকা, সেখানে সরকারি তথ্যে বলা হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৭ টাকা। সরেজমিনে সরু বা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, সেখানে সরকারি তথ্যে বলা হচ্ছে ৭২ থেকে ৮৫ টাকা। পরিসংখ্যানে পার্থক্য যা-ই থাকুক না কেন, চালের দাম যে আকাশছোঁয়া তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
উৎপাদন ও চাহিদার অবস্থা
বাংলাদেশে প্রতিবছর চাল উৎপাদনের পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের চাল উৎপাদন হয়েছিল ৪ দশমিক ৬ কোটি টন। আর এই বছর দেশে মোট চালের চাহিদা ছিল ৩ দশমিক ৮৫ কোটি টনের। অর্থাৎ দেশে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হয় তার চেয়ে কম চালের চাহিদা রয়েছে। একইভাবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ৩ দশমিক ৯৮ কোটি টন। আর চাহিদা ছিল ৩ দশমিক ৮০ কোটি টনের। অর্থাৎ এভাবে গত কয়েক বছর ধরে চালের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি ছিল। তারপরও প্রতিবছর সরকার চাল আমদানি করে। এবার আমদানি করেও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
এই প্রসঙ্গে শনিবার কথা হয় বিবিএস এর এগ্রিকালচার উইংয়ের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, দেশের চালের উৎপাদন ও চাহিদার পরিসংখ্যানের কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘পরিসংখ্যানে যে চাহিদার কথা বলা হয়েছে সেটা শুধু হিউম্যান কনজাম্পশন। এর বাইরেও আরও দুইটা চাহিদা আছে। সেগুলো হলো নন- হিউম্যান কনজাম্পশন ও মেশিন কনজাম্পশন। যেমন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, পোল্ট্রি ফিড এই জাতীয় গবাদিপশুর চাহিদা সেগুলো নন-হিউম্যান কনজাম্পশন। আবার ফ্যাক্টরিতে খাবার তৈরির জন্য র-ম্যাটারিয়াল হিসেবে চাল ও গম ব্যবহার হয়, সেগুলো মেশিন কনজাম্পশন। পরিসংখ্যানে নন-হিউম্যান কনজাম্পশন ও মেশিন কনজাম্পশন হিসেব করা নেই। এটা আমাদের একটা দুর্বলতা। আমরা আগামী বছর আরেকটা সার্ভে করে এই দুই কনজাম্পশনকে পরিসংখ্যানে নিয়ে আসবো। তাহলে চাহিদার প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।’
এই দুই কনমাজম্পশনে খাদ্যের বড় অংশ চলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয় একটা গ্রস হিসাব করেছে। সেখানে দেখা গেছে, আমাদের মোট খাবারের প্রায় ২৫ শতাংশ, কিছুটা কম বেশি হতে পারে, এই দুই কনজাম্পশনে চলে যায়।’
চাহিদা পুরণে আমদানি
মৌসুমের শুরুর দিকে চালের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার চাল আমদানি বাড়িয়ে বাজার ঠিক রাখার পরিকল্পনা করে। তাই খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের নভেম্বরে চার দফায় ২৭৭টি বরাদ্দপত্রে ১৪ লাখ ৮১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। অনুমতিপত্রে গত ১০ ও ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে বাজারজাতের শর্ত দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে মাত্র এক লাখ টন চাল আমদানি করে বেসরকারি খাতে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।
অর্থাৎ অনুমতির মাত্র ৭ শতাংশ চাল আমদানি হয়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও দুই দফায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই লাখ টন চাল আমদানির বরাদ্দ দেয়া হয়। আবার এক মাস করে চার দফায় চাল আমদানির সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে গত ১৫ এপ্রিল করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৩৩৪টি বরাদ্দপত্রে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বরে অনুমতি দেয়ার পর ১৫ এপ্রিলের সময়সীমা পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এসব চাল আমদানি করেছে ১৯০টি প্রতিষ্ঠান। চালে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর মিলে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। এনবিআর গত অক্টোবর তিন দফায় সব ধরনের শুল্ক-কর প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরও চাল আমদানি বাড়েনি। আমদানি না বাড়ার কারণ হলো, সামনে ধান উঠবে। তখন চালের দাম কমে যেতে পারে। তাই এখন যদি চাল আমদানি করে তাহলে তারা লোকশানের মুখে পড়তে পারে।চালের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। গত আগস্টে বন্যার কারণে চাল উৎপাদন কমতে পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার চালের মজুত বাড়াতে শুরু করে। বেসরকারি খাত ছাড়াও সরকারি খাতে সাড়ে ৯ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারিভাবে গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি করা ৬ লাখ ৩৮ হাজার টন চাল খালাস হয়েছে।
চালের নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ধরা হয় ১১ লাখ টন। সরকারি আমদানির পরও ১৬ এপ্রিল সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল ৯ লাখ ২৭ হাজার টন। পাইপলাইনে থাকা চাল গুদামে পৌঁছালে মজুত আরও বাড়বে।
খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘সরকারি মজুত কমবেশি ১০ লাখ টনের আশপাশে থাকবে। চালের মজুত বিপজ্জনক পর্যায়ে নামার শঙ্কা নেই। কারণ, আমদানির পাশাপাশি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ শুরু হবে।’
দাম বাড়ার কারণ কি?
শনিবার কথা হয় কামরান আহমেদ নামে কারওয়ান বাজারের একজন খুচরা চাল বিক্রেতার সঙ্গে। দাম বৃদ্ধির জন্য তিনি চালকলের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে চালের সংকট নাই। চালচল মালিকরা বস্তার বস্তা চাল মজুদ করে রেখেছে। তাই দাম বাড়ছে। সরকার চালকলে অভিযান চালাচ্ছে না। যদি চালকলে অভিযান চালায় তাহলে কালই দাম কমে যাবে।’
তবে সরকার অবশ্য বলছে অন্য কথা। সরকার বলছে, সিন্ডিকেট নেই, সরকার ধান-চাল বেশি টাকা দিয়ে কৃষকের কাছে থেকে কিনছে তাই দাম বাড়তি।
গত বহস্পতিবার খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘ধান-চাল ক্রয় নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট আর হবে না, হতে দেবে না সরকার। কৃষকের স্বার্থে বিগত বছরের চেয়ে কেজিতে চার টাকা বেশি দামে ধান-চাল ক্রয় করছে সরকার। সরকারের বেশি দামে কেনার কারণে বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়বে। কৃষক পরিশ্রম করে ধান উৎপাদন করে তাদের উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারলে কৃষক ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।’