মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ এ প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগদ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে প্রশাসক দল নগদে কাজ করছিল, তারা দায়িত্ব হারিয়েছে। ফলে নগদের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগ দুই প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
এ দিকে নগদের অর্থ তছরুপের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তাদের মধ্যে এক জনকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক মো. সাফায়েত আলম। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিয়ে তিনি নতুন মানবসম্পদ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন। গত দুই দিনে শীর্ষ পর্যায়ের ১৯ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার আরও দুই আসামিকে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে নগদ পরিচালনায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে আগামী ১৯ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে আসে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে।
এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহক বানানো ও সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সবার চোখের সামনে এসব অনিয়ম হয়। এ ঘটনায় সরকারের ডাক বিভাগের আট জন সাবেক ও বর্তমান মহা-পরিচালক (ডিজি), নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর মধ্যে ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা খারিজ করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা পরে স্থগিত হয়ে যায়। এই রায় গত সোমবার বের হয়। সে দিনই নগদের দায়িত্ব নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। নগদের কর্মকর্তারা নিজেরাই সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলার আসামি মো. সাফায়েত আলমকে নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ দেন। এখন তারাই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘জনগণের টাকার নিরাপত্তা দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। আগে প্রতিষ্ঠানটি যেনতেনভাবে চলেছে। এ জন্য সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছিল। এখন আদালতের আদেশের কারণে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমরা সেই আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি, জনগণের টাকার নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার দায়িত্ব ফিরে পাবে।’ ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট ডাক অধিদপ্তর
‘নগদ’ নামে মোবাইলে আর্থিক সেবা চালুর অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। শর্ত মেনে আবেদন না করার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন অনুমোদন দেয়নি। এরপর ডাক অধিদপ্তর নিজেদের আইনে পরিবর্তন এনে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ‘নগদ’ নামে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) চালু করে দেয়। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেবাটি উদ্বোধন করেন।
শর্ত পূরণ না করলেও ২০২০ সালের ১৫ মার্চ নগদকে অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন দিয়ে ডাক অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ব্যাংক হিসাব (ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট হিসাব) ডাক বিভাগের নামে খোলার শর্ত দেয়া হয়। কিন্তু তা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আর কোনো তদারক করেনি। এভাবেই চলছে নগদ। এটি এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এমএফএস প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ এ প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগদ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে প্রশাসক দল নগদে কাজ করছিল, তারা দায়িত্ব হারিয়েছে। ফলে নগদের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগ দুই প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
এ দিকে নগদের অর্থ তছরুপের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তাদের মধ্যে এক জনকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক মো. সাফায়েত আলম। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিয়ে তিনি নতুন মানবসম্পদ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন। গত দুই দিনে শীর্ষ পর্যায়ের ১৯ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার আরও দুই আসামিকে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে নগদ পরিচালনায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে আগামী ১৯ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে আসে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে।
এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গিয়ে গ্রাহক বানানো ও সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সবার চোখের সামনে এসব অনিয়ম হয়। এ ঘটনায় সরকারের ডাক বিভাগের আট জন সাবেক ও বর্তমান মহা-পরিচালক (ডিজি), নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর মধ্যে ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা খারিজ করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা পরে স্থগিত হয়ে যায়। এই রায় গত সোমবার বের হয়। সে দিনই নগদের দায়িত্ব নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। নগদের কর্মকর্তারা নিজেরাই সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলার আসামি মো. সাফায়েত আলমকে নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ দেন। এখন তারাই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘জনগণের টাকার নিরাপত্তা দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। আগে প্রতিষ্ঠানটি যেনতেনভাবে চলেছে। এ জন্য সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছিল। এখন আদালতের আদেশের কারণে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমরা সেই আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি, জনগণের টাকার নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার দায়িত্ব ফিরে পাবে।’ ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট ডাক অধিদপ্তর
‘নগদ’ নামে মোবাইলে আর্থিক সেবা চালুর অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। শর্ত মেনে আবেদন না করার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন অনুমোদন দেয়নি। এরপর ডাক অধিদপ্তর নিজেদের আইনে পরিবর্তন এনে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ‘নগদ’ নামে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) চালু করে দেয়। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেবাটি উদ্বোধন করেন।
শর্ত পূরণ না করলেও ২০২০ সালের ১৫ মার্চ নগদকে অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন দিয়ে ডাক অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ব্যাংক হিসাব (ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট হিসাব) ডাক বিভাগের নামে খোলার শর্ত দেয়া হয়। কিন্তু তা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আর কোনো তদারক করেনি। এভাবেই চলছে নগদ। এটি এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এমএফএস প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।