alt

জাতীয়

খুমেক : অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক রোগের ঝুঁকি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্রিল ভাঙা, বারান্দায় রোগীদের বিছানা -সংবাদ

দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি। এ অঞ্চলে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালের ১৭ জানুয়ারি নগরীর বয়রা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা হাসপাতাল। ১৯৯২ সালে যা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়।

রোগীর অত্যধিক চাপে ২০০৮ সালে হাসপাতালটিকে ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৬টি বিভাগের অধীনে ৩১ ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫০০ শয্যা থাকলেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় দেড় হাজার। বহির্বিভাগে ৭০০-৮০০ রোগী আসছে। এ অবস্থায় সক্ষমতার তিন গুণ রোগীর কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া যাচ্ছে না।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সংক্রামক রোগের ঝুঁকি তৈরি করেছে। রান্নাঘরের পরিবেশ ও খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে রোগীদের।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের অভিযোগ, শয্যা সংকটে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে তাদের। অনেকেরই ঠাঁই হচ্ছে বারান্দা অথবা মেঝেতে। শয্যার পাশাপাশি ওষুধ, জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার আর আবর্জনার দুর্গন্ধ। অধিকাংশ সময় ট্যাপে থাকছে না পানি।

হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওপর তলাগুলোর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খাবারের উচ্ছিষ্ট, ময়লা নিচে ফেলা হয়। ফেলে রাখা এসব ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। এসব আবর্জনা হাসপাতালের অভ্যন্তরের নালা ও আশপাশে জমে থাকছে। পাশাপাশি সীমানা প্রাচীরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে ময়লার স্তূপ। সেখান থেকেও বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। এগুলো কম-বেশি সংক্রামক, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের নোংরা পরিবেশে রোগীদের কী ধরনের ঝুঁকি থাকে সে বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর রোগীর সুস্থতা অনেকাংশ নির্ভর করে। কোনো কারণে হাসপাতালের পরিবেশ দূষিত হলে রোগীর শ্বাসতন্ত্র ও কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া যক্ষ্মা, কলেরা, ডায়রিয়াসহ অন্য রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

হাসপাতালের নিচতলায় গাইনি ইউনিট-১ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজনরা জানান, ওপর তলাগুলো থেকে খাবারের উচ্ছিষ্ট ও হাসপাতালের বর্জ্য সময় মতো পরিষ্কার করা হয় না। জমে থাকা বর্জ্যের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। এতে ওয়ার্ডের মধ্যে টিকে থাকা মুশকিল। একই অবস্থা মেডিসিন ইউনিট-২ ওয়ার্ডেও। পুরুষ ওয়ার্ডের তিনটি শৌচাগারের দুটিই অকেজো। শৌচাগারের ভেতরের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। তিন-চারটা লাইট নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে।

ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিপা মল্লিক বলেন, ‘তিন-চার মাস ধরে শৌচাগার পরিষ্কারের স্যানিটারি সামগ্রী সংকট রয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি একটি হারপিক ও একটি ভিক্সল সরবরাহ করা হয়েছে। এরপর থেকে আর পাইনি। সরবরাহ কম থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলো দিতে পারছে না বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে হাসপাতালের জেনারেল স্টোর ইনচার্জ অবনী বিশ্বাস বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় চাহিদার তুলনায় স্যানিটারী সামগ্রী দেয়া যাচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে এ সমস্যা আর থাকবে না।’

ডক্টরস শৌচাগারগুলোর অধিকাংশের পরিবেশও নোংরা। কোনোটির সিটকিনি নেই, লাইট নষ্ট। আবার কোনোটির দরজার নিচের অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান, উপযোগী না থাকায় তারা হাসপাতালের শৌচাগার ব্যবহার করেন না।

হাসপাতালের শৌচাগার ও বাইরে পাইপগুলো মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের গণপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেটুকু বাজেট আছে, তা দিয়েই কাজ করছি।’

পানির সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের দুটি পাম্পের মধ্যে একটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় ওই মোটর থেকে পানি ওঠে না। তার পরও একটা পাম্প দিয়েও পানি দেয়া সম্ভব। কিন্তু অপারেটর না থাকায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আগে আমাদের নিজস্ব পাম্প অপারেটর ছিল। এখন অপারেট করা হয় আউটসোর্সিং কর্মী দিয়ে। হাসপাতালে ওয়াসার পাইপলাইন থাকলে ভালো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ওয়াসার লাইনের জন্য বলা হয়েছে।’

হাসপাতালের রান্নাঘরের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। মেঝে, রান্নার পাত্র সবই অপরিষ্কার। অপরিশোধিত পানি দিয়ে চলে রান্নার কাজ। খোলা অবস্থায় রেখে দেয়া ভাতের পাশেই দেখা গেছে ঝাড়ু দিতে। আশপাশে ইঁদুর, বিড়ালেরও বিচরণ ছিল।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের সঙ্গে ভাগ-বাঁটোয়ারার কারণে তালিকায় থাকলেও অনেক খাবার সরবরাহ করে না। সরবরাহ করা খাবার পরিমাণে কম এবং মানহীন। আবার অতিরিক্ত রোগী দেখিয়ে খাবারের বিল লোপাট করা হয়। কয়েক মাস আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অভিযানে যা ধরা পড়ে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের স্টুয়ার্ড মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কিছু সমস্যা রয়েছে। ঘরটাও অনেক পুরনো।’ তবে অন্য আর কোনো বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহাসীন আলী ফরাজী বলেন, হাসপাতালে জনবল সংকটও রয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বেশ কিছু চিকিৎসাযন্ত্র অচল। সেগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। শৌচাগার, পানির লাইনসহ বিভিন্ন সংস্কারের কাজগুলো করার দায়িত্ব গণপূর্ত ও ওয়াসার। তাদের এ ব্যাপারে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। তারা বলছে, বাজেট কম, তাই কাজ করতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে রোগীদের খাবারের মান আগের চেয়ে ভালো।

ছবি

বিডিআর বিদ্রোহ: কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি ২৭ জনের

পশুর হাটে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর থাকবে: ডিএমপি

প্রতারণার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

দেশের গণমাধ্যম অবারিত স্বাধীনতা ভোগ করছে: প্রেস সচিব

ছবি

পলিসি ব্রেকফাস্ট: নির্মল বায়ু আইন তৈরি ও জ্বালানি নীতিমালা হালনাগাদের দাবি

কলেজ থেকে তুলে নিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ, তিন জনের যাবজ্জীবন

ছবি

সাম্য হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে: রিজভী

মোকতাদির ও আরিফসহ ৬ জনের দেশত্যাগ নিষেধ

জাপানের কাছে আরও বেশি ঋণ ও বাজেট সহায়তা চায় বাংলাদেশ

উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল ছুড়লো কে? ‘খুঁজছে’ পুলিশ

কিছু প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো খুব কঠিন : বাসদ

দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস, পিও ও এনসিপি নেতাকে ডেকেছে দুদক

নগদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অস্থিরতা শুরু

শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন, ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে সূচক

ছবি

দাবি আদায়ে জগন্নাথে ‘শাটডাউন’: তিন দফার সঙ্গে ‘পুলিশি হামলার’ বিচারের দাবি আন্দোলনকারীদের

ছবি

ছাত্রদল নেতাদের ‘তুই’ সম্বোধনে ক্ষোভ, উপাচার্যের সমালোচনায় রিজভী

ছবি

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পরিচয়পত্র পেশ অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে ভারত

ছবি

জবির যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে এত গড়িমসি কেন? প্রশ্ন সারজিসের

সাবেক সেনাসদস্যদের প্রতি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ: আইএসপিআর

ছবি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ করতে সাত দফা সিদ্ধান্ত

ছবি

আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা, উপদেষ্টার ওপর বোতল নিক্ষেপে উত্তপ্ত কাকরাইল

ছবি

‘চল চল যমুনা যাই’ এই রাজনীতি আর হতে দেব না : মাহফুজ আলম

তারিক সিদ্দিকীর সাড়ে ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাজশাহী নার্সিং কলেজ

‘লও ঠেলা’ গ্যাংয়ের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

লরি ঠেলে সন্তানকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা, সারারাত দাঁড়িয়ে ছিল মা হাতি

ছবি

নগদের বিরুদ্ধে ২৩শ’ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’ ও ‘অর্থ পাচার প্রমাণের’ কথা জানালো দুদক

ছবি

নার্সিং শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ, আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট

ছবি

তীব্র গরমে চরম স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন গর্ভবতীরা

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা সেরাদের হাতে দিতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা : উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল-সমাবেশ

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন টিউলিপ : দুদক চেয়ারম্যান

ছবি

সীমান্ত দিয়ে আরও ৬০ জনকে ঠেলে দিলো বিএসএফ

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারার সঙ্গে বৈঠক ট্রাম্পের

অধ্যাদেশ: গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদে এক চবি শিক্ষক ও দুই নারী বিশেষজ্ঞ বাধ্যতামূলক

আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠি

tab

জাতীয়

খুমেক : অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক রোগের ঝুঁকি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্রিল ভাঙা, বারান্দায় রোগীদের বিছানা -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি। এ অঞ্চলে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালের ১৭ জানুয়ারি নগরীর বয়রা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা হাসপাতাল। ১৯৯২ সালে যা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়।

রোগীর অত্যধিক চাপে ২০০৮ সালে হাসপাতালটিকে ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৬টি বিভাগের অধীনে ৩১ ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫০০ শয্যা থাকলেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় দেড় হাজার। বহির্বিভাগে ৭০০-৮০০ রোগী আসছে। এ অবস্থায় সক্ষমতার তিন গুণ রোগীর কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া যাচ্ছে না।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সংক্রামক রোগের ঝুঁকি তৈরি করেছে। রান্নাঘরের পরিবেশ ও খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে রোগীদের।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের অভিযোগ, শয্যা সংকটে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে তাদের। অনেকেরই ঠাঁই হচ্ছে বারান্দা অথবা মেঝেতে। শয্যার পাশাপাশি ওষুধ, জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার আর আবর্জনার দুর্গন্ধ। অধিকাংশ সময় ট্যাপে থাকছে না পানি।

হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওপর তলাগুলোর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খাবারের উচ্ছিষ্ট, ময়লা নিচে ফেলা হয়। ফেলে রাখা এসব ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। এসব আবর্জনা হাসপাতালের অভ্যন্তরের নালা ও আশপাশে জমে থাকছে। পাশাপাশি সীমানা প্রাচীরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে ময়লার স্তূপ। সেখান থেকেও বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। এগুলো কম-বেশি সংক্রামক, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের নোংরা পরিবেশে রোগীদের কী ধরনের ঝুঁকি থাকে সে বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর রোগীর সুস্থতা অনেকাংশ নির্ভর করে। কোনো কারণে হাসপাতালের পরিবেশ দূষিত হলে রোগীর শ্বাসতন্ত্র ও কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া যক্ষ্মা, কলেরা, ডায়রিয়াসহ অন্য রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

হাসপাতালের নিচতলায় গাইনি ইউনিট-১ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজনরা জানান, ওপর তলাগুলো থেকে খাবারের উচ্ছিষ্ট ও হাসপাতালের বর্জ্য সময় মতো পরিষ্কার করা হয় না। জমে থাকা বর্জ্যের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। এতে ওয়ার্ডের মধ্যে টিকে থাকা মুশকিল। একই অবস্থা মেডিসিন ইউনিট-২ ওয়ার্ডেও। পুরুষ ওয়ার্ডের তিনটি শৌচাগারের দুটিই অকেজো। শৌচাগারের ভেতরের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। তিন-চারটা লাইট নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে।

ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিপা মল্লিক বলেন, ‘তিন-চার মাস ধরে শৌচাগার পরিষ্কারের স্যানিটারি সামগ্রী সংকট রয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি একটি হারপিক ও একটি ভিক্সল সরবরাহ করা হয়েছে। এরপর থেকে আর পাইনি। সরবরাহ কম থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলো দিতে পারছে না বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে হাসপাতালের জেনারেল স্টোর ইনচার্জ অবনী বিশ্বাস বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় চাহিদার তুলনায় স্যানিটারী সামগ্রী দেয়া যাচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে এ সমস্যা আর থাকবে না।’

ডক্টরস শৌচাগারগুলোর অধিকাংশের পরিবেশও নোংরা। কোনোটির সিটকিনি নেই, লাইট নষ্ট। আবার কোনোটির দরজার নিচের অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান, উপযোগী না থাকায় তারা হাসপাতালের শৌচাগার ব্যবহার করেন না।

হাসপাতালের শৌচাগার ও বাইরে পাইপগুলো মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের গণপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেটুকু বাজেট আছে, তা দিয়েই কাজ করছি।’

পানির সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের দুটি পাম্পের মধ্যে একটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় ওই মোটর থেকে পানি ওঠে না। তার পরও একটা পাম্প দিয়েও পানি দেয়া সম্ভব। কিন্তু অপারেটর না থাকায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আগে আমাদের নিজস্ব পাম্প অপারেটর ছিল। এখন অপারেট করা হয় আউটসোর্সিং কর্মী দিয়ে। হাসপাতালে ওয়াসার পাইপলাইন থাকলে ভালো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ওয়াসার লাইনের জন্য বলা হয়েছে।’

হাসপাতালের রান্নাঘরের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। মেঝে, রান্নার পাত্র সবই অপরিষ্কার। অপরিশোধিত পানি দিয়ে চলে রান্নার কাজ। খোলা অবস্থায় রেখে দেয়া ভাতের পাশেই দেখা গেছে ঝাড়ু দিতে। আশপাশে ইঁদুর, বিড়ালেরও বিচরণ ছিল।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের সঙ্গে ভাগ-বাঁটোয়ারার কারণে তালিকায় থাকলেও অনেক খাবার সরবরাহ করে না। সরবরাহ করা খাবার পরিমাণে কম এবং মানহীন। আবার অতিরিক্ত রোগী দেখিয়ে খাবারের বিল লোপাট করা হয়। কয়েক মাস আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অভিযানে যা ধরা পড়ে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের স্টুয়ার্ড মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কিছু সমস্যা রয়েছে। ঘরটাও অনেক পুরনো।’ তবে অন্য আর কোনো বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহাসীন আলী ফরাজী বলেন, হাসপাতালে জনবল সংকটও রয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বেশ কিছু চিকিৎসাযন্ত্র অচল। সেগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। শৌচাগার, পানির লাইনসহ বিভিন্ন সংস্কারের কাজগুলো করার দায়িত্ব গণপূর্ত ও ওয়াসার। তাদের এ ব্যাপারে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। তারা বলছে, বাজেট কম, তাই কাজ করতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে রোগীদের খাবারের মান আগের চেয়ে ভালো।

back to top