হয় অনশনে মৃত্যু হবে: না হয় ২০ বছরের অবহেলার চূড়ান্ত বিজয় আসবে
চার দাবিতে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অনশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা -সংবাদ
আবাসন বৃত্তি চালু, পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনসহ চার দাবিতে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অনশনে বসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার,(১৬ মে ২০২৫) বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচির শুরুতেই যোগ দেন অর্ধ শতাধিক আন্দোলনকারী। অনশনে বসা শিক্ষার্থী কামরুন নাহার বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন থেকে উঠব না। আমরা যখন লংমার্চ নিয়ে আসি, তখন আমাদের ওপর পুলিশ হামলা করে আহত করে, আমাদের শিক্ষকদের আহত করে। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে ফিরে যাব।’
এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে দেশের সব রাজনৈতিক দলসহ সর্বোপরি সাধারণ জনতা একমত পোষণ করে সংহতি জানাচ্ছে। অথচ সরকারের কোনো ইতিবাচক সাড়া আমরা এখনও পাইনি।
‘তাই আমরা আমাদের দাবি আদায়ে চূড়ান্ত অবস্থানের দিকে এগোচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা উঠছি না। প্রয়োজনে এখানে আমাদের গণকবর হবে। এখন আর পেছনে তাকানো যাবে না, হয় অনশনে মৃত্যু হবে না হয় ২০ বছরের অবহেলার চূড়ান্ত বিজয় আসবে।’
অনশনরত অবস্থাতেও আন্দোলনকারীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তারা কণ্ঠে তুলেছেন- ‘আপোস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘তুমি কে আমি কে, জবিয়ান জবিয়ান’, ‘ভুজুংভাজুং বুঝি না, লংমার্চ টু যমুনা’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত দে, তবু আমাদের আবাসন দে’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে আসল খেলা’, ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জবিয়ান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘শিক্ষকদের অপমান, সইবে নারে জবিয়ান’, ‘আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’সহ নানা স্লোগান।
আন্দোলনের তৃতীয় দিন সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে বাসে করে কাকরাইলে আসেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সমাবেশ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে গণঅনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদদীন।
শিক্ষার্থীদের চার দাবির মধ্যে রয়েছে ১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে। ২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে। ৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তিন দিনে যা ঘটেছে
নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে গত বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে ‘লংমার্চ’ শুরু করেন। মিছিলটি গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাইকোর্ট ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও তা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসে।
একপর্যায়ে সেই মিছিল প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরে ওইদিন বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যমুনায় যান।
সেখানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা কথা বলতে আন্দোলনস্থলে এলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া
ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ছুড়ে মারা একটি বোতল উপদেষ্টার মাথায় লাগে।
মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, ‘আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিলেন।’ আন্দোলনকারীদের দাবি সরকার বিবেচনা করছে জানিয়ে তিনি আন্দোলনস্থল ত্যাগ করেন। সরকারের তরফে দাবি পূরণের কোনো প্রতিশ্রুতি না আসায় আন্দোলনকারীরা রাতভর কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ফেইসবুক লাইভে এসে আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে দিনভর অন্তত ৪০টি একতলা ও দোতলা বাসে করে শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে আসেন। আর শিক্ষকদের অন্তত আটটি মিনিবাস ঘটনাস্থলে আসে। দিনভর অবস্থান করে কোনো ফল না আসায় রাতে বৈঠক করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈঠক শেষে রাত ১২টার দিকে গণঅনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন অধ্যাপক রইছ উদদীন। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন। এরপর আন্দোলনকারী সেখানেই অবস্থান নিয়ে রয়েছেন।
হয় অনশনে মৃত্যু হবে: না হয় ২০ বছরের অবহেলার চূড়ান্ত বিজয় আসবে
চার দাবিতে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অনশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা -সংবাদ
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
আবাসন বৃত্তি চালু, পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনসহ চার দাবিতে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অনশনে বসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার,(১৬ মে ২০২৫) বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচির শুরুতেই যোগ দেন অর্ধ শতাধিক আন্দোলনকারী। অনশনে বসা শিক্ষার্থী কামরুন নাহার বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন থেকে উঠব না। আমরা যখন লংমার্চ নিয়ে আসি, তখন আমাদের ওপর পুলিশ হামলা করে আহত করে, আমাদের শিক্ষকদের আহত করে। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে ফিরে যাব।’
এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে দেশের সব রাজনৈতিক দলসহ সর্বোপরি সাধারণ জনতা একমত পোষণ করে সংহতি জানাচ্ছে। অথচ সরকারের কোনো ইতিবাচক সাড়া আমরা এখনও পাইনি।
‘তাই আমরা আমাদের দাবি আদায়ে চূড়ান্ত অবস্থানের দিকে এগোচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা উঠছি না। প্রয়োজনে এখানে আমাদের গণকবর হবে। এখন আর পেছনে তাকানো যাবে না, হয় অনশনে মৃত্যু হবে না হয় ২০ বছরের অবহেলার চূড়ান্ত বিজয় আসবে।’
অনশনরত অবস্থাতেও আন্দোলনকারীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তারা কণ্ঠে তুলেছেন- ‘আপোস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘তুমি কে আমি কে, জবিয়ান জবিয়ান’, ‘ভুজুংভাজুং বুঝি না, লংমার্চ টু যমুনা’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত দে, তবু আমাদের আবাসন দে’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে আসল খেলা’, ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জবিয়ান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘শিক্ষকদের অপমান, সইবে নারে জবিয়ান’, ‘আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’সহ নানা স্লোগান।
আন্দোলনের তৃতীয় দিন সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে বাসে করে কাকরাইলে আসেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সমাবেশ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে গণঅনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদদীন।
শিক্ষার্থীদের চার দাবির মধ্যে রয়েছে ১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে। ২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে। ৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তিন দিনে যা ঘটেছে
নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে গত বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে ‘লংমার্চ’ শুরু করেন। মিছিলটি গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাইকোর্ট ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও তা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসে।
একপর্যায়ে সেই মিছিল প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরে ওইদিন বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যমুনায় যান।
সেখানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা কথা বলতে আন্দোলনস্থলে এলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া
ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ছুড়ে মারা একটি বোতল উপদেষ্টার মাথায় লাগে।
মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, ‘আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিলেন।’ আন্দোলনকারীদের দাবি সরকার বিবেচনা করছে জানিয়ে তিনি আন্দোলনস্থল ত্যাগ করেন। সরকারের তরফে দাবি পূরণের কোনো প্রতিশ্রুতি না আসায় আন্দোলনকারীরা রাতভর কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ফেইসবুক লাইভে এসে আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে দিনভর অন্তত ৪০টি একতলা ও দোতলা বাসে করে শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে আসেন। আর শিক্ষকদের অন্তত আটটি মিনিবাস ঘটনাস্থলে আসে। দিনভর অবস্থান করে কোনো ফল না আসায় রাতে বৈঠক করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈঠক শেষে রাত ১২টার দিকে গণঅনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন অধ্যাপক রইছ উদদীন। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন। এরপর আন্দোলনকারী সেখানেই অবস্থান নিয়ে রয়েছেন।