সংবাদ শনিবার ৭৫ বছরে পদাপর্ণ করলো। ঐতিহ্যবাহী দৈনিক পত্রিকা সংবাদ ১৯৫১ সালের ১৭ মে প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর দীর্ঘকাল পরিক্রমায় সংবাদ দেশ ও মানুষের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবনের তথ্য প্রকাশ-প্রচার করে এই ভুখণ্ডে অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবাদী সাংবাদিকতার মুখপত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্র জগতে ‘সংবাদ’-এর অবদান ঐতিহাসিক। দীর্ঘ ৭৪ বছর ধরে পাঠকদের বস্তুনিষ্ঠ খবর পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবাদ এগিয়ে চলেছে।
শনিবার ১৭ মে সংবাদ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদ কার্যালয়ে সংবাদ পরিবারের সদস্যদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই দিনে সংবাদ কর্তৃপক্ষ সংবাদের সব পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, শুভাকাক্সক্ষী এবং বিভিন্নভাবে যারা সংবাদকে সহযোগিতা করেছেন, সংবাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়েছে।
পুরানা ঢাকার ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মালিকানায় এবং খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে পত্রিকাটি কিনে নেয় মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ‘সংবাদ’ প্রকাশনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন সংবাদ কিনে নেন আহমদুল কবির। তারই উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় দি সংবাদ লিমিটেড। স্বাধীনতার পর তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ২০০৩ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ‘সংবাদ’-এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রগতিমনা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক বাংলাদেশে কমই আছেন যারা গত ৭৪ বছরে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে আসেননি।
‘সংবাদ’ মানবতার স্বরূপ সন্ধানে নিয়ত সক্রিয়। প্রগতি ধারার পত্রিকা হিসেবে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শানিত করেছে ‘সংবাদ’। ১৯৫৪ সাল থেকে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষের অদ্বিতীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একাত্ম ‘সংবাদ’ তার মাথা না নোয়ানোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগিয়ে চলেছে।
দীর্ঘ চলার পথে দৈনিক সংবাদ যেসব কৃতী সাংবাদিকের সৃজনশীলতায় আলোকিত হয়েছে এবং ‘সংবাদ’-এর মাধ্যমে এই জাতির মনন গঠনে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির, আহমদুল কবির, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ নুরুদ্দিন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদল্লাহ কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমান প্রমুখ।
সংবাদ সব সময়ই, সেই পাকিস্তানি আমলে যেমন, তেমনি বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার বিরুদ্ধে ‘সংবাদ’-এর দাঙ্গাবিরোধী ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আর এ ভূমিকার কারণে দাঙ্গাকারীরা সেদিন আহমদুল কবিরের ঘোড়াশালের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
‘সংবাদ’ পাকিস্তানি স্বৈরাচারী অপশাসনের সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবেদন প্রকাশে এবং সে মামলার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের যে ভূমিকা পালন করে তা ইতিহাসে লেখা রয়েছে। ‘সংবাদ’ তখন বাঙালি জাতীয়তার অনন্য মুখপত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পাকিস্তানি শাসনের শেষ কয়েক বছরে ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে ‘সংবাদ’- এর বিশিষ্ট ভূমিকা সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের খবর ‘সংবাদ’ যেভাবে তুলে ধরে, তেমনি গুরুত্বসহকারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের খবর ছাপতেও পিছপা হয়নি। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই ৭ মার্চ রেসকোর্স মাঠে শেখ মুজিবের ভাষণের পর ৮ মার্চ একমাত্র ‘সংবাদ’-এর শিরোনাম ছিল ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অন্য কোনো পত্রিকায় এ রকম শিরোনাম সেদিন দিতে পারেনি।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর কালো হাত ‘সংবাদ’কেও স্পর্শ করেছিল। একাত্তরের মার্চে পুড়িয়ে দেয়া হয় ‘সংবাদ’ কার্যালয়। ২৮ মার্চ সংবাদ-এর সঙ্গেই ভস্মীভূত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। নানা প্রলোভন ও হুমকির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘সংবাদ’ আর প্রকাশিত হয়নি। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ১০ সংবাদ আবার প্রকাশিত হয়।
সাংবাদিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো সংবাদকে দেয়া হয় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক।
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
সংবাদ শনিবার ৭৫ বছরে পদাপর্ণ করলো। ঐতিহ্যবাহী দৈনিক পত্রিকা সংবাদ ১৯৫১ সালের ১৭ মে প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর দীর্ঘকাল পরিক্রমায় সংবাদ দেশ ও মানুষের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবনের তথ্য প্রকাশ-প্রচার করে এই ভুখণ্ডে অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবাদী সাংবাদিকতার মুখপত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্র জগতে ‘সংবাদ’-এর অবদান ঐতিহাসিক। দীর্ঘ ৭৪ বছর ধরে পাঠকদের বস্তুনিষ্ঠ খবর পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবাদ এগিয়ে চলেছে।
শনিবার ১৭ মে সংবাদ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংবাদ কার্যালয়ে সংবাদ পরিবারের সদস্যদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই দিনে সংবাদ কর্তৃপক্ষ সংবাদের সব পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, শুভাকাক্সক্ষী এবং বিভিন্নভাবে যারা সংবাদকে সহযোগিতা করেছেন, সংবাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়েছে।
পুরানা ঢাকার ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মালিকানায় এবং খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে পত্রিকাটি কিনে নেয় মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ‘সংবাদ’ প্রকাশনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন সংবাদ কিনে নেন আহমদুল কবির। তারই উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় দি সংবাদ লিমিটেড। স্বাধীনতার পর তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ২০০৩ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ‘সংবাদ’-এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রগতিমনা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক বাংলাদেশে কমই আছেন যারা গত ৭৪ বছরে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে আসেননি।
‘সংবাদ’ মানবতার স্বরূপ সন্ধানে নিয়ত সক্রিয়। প্রগতি ধারার পত্রিকা হিসেবে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শানিত করেছে ‘সংবাদ’। ১৯৫৪ সাল থেকে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষের অদ্বিতীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একাত্ম ‘সংবাদ’ তার মাথা না নোয়ানোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগিয়ে চলেছে।
দীর্ঘ চলার পথে দৈনিক সংবাদ যেসব কৃতী সাংবাদিকের সৃজনশীলতায় আলোকিত হয়েছে এবং ‘সংবাদ’-এর মাধ্যমে এই জাতির মনন গঠনে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির, আহমদুল কবির, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ নুরুদ্দিন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদল্লাহ কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমান প্রমুখ।
সংবাদ সব সময়ই, সেই পাকিস্তানি আমলে যেমন, তেমনি বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার বিরুদ্ধে ‘সংবাদ’-এর দাঙ্গাবিরোধী ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আর এ ভূমিকার কারণে দাঙ্গাকারীরা সেদিন আহমদুল কবিরের ঘোড়াশালের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
‘সংবাদ’ পাকিস্তানি স্বৈরাচারী অপশাসনের সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবেদন প্রকাশে এবং সে মামলার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের যে ভূমিকা পালন করে তা ইতিহাসে লেখা রয়েছে। ‘সংবাদ’ তখন বাঙালি জাতীয়তার অনন্য মুখপত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পাকিস্তানি শাসনের শেষ কয়েক বছরে ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে ‘সংবাদ’- এর বিশিষ্ট ভূমিকা সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের খবর ‘সংবাদ’ যেভাবে তুলে ধরে, তেমনি গুরুত্বসহকারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের খবর ছাপতেও পিছপা হয়নি। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই ৭ মার্চ রেসকোর্স মাঠে শেখ মুজিবের ভাষণের পর ৮ মার্চ একমাত্র ‘সংবাদ’-এর শিরোনাম ছিল ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অন্য কোনো পত্রিকায় এ রকম শিরোনাম সেদিন দিতে পারেনি।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর কালো হাত ‘সংবাদ’কেও স্পর্শ করেছিল। একাত্তরের মার্চে পুড়িয়ে দেয়া হয় ‘সংবাদ’ কার্যালয়। ২৮ মার্চ সংবাদ-এর সঙ্গেই ভস্মীভূত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। নানা প্রলোভন ও হুমকির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘সংবাদ’ আর প্রকাশিত হয়নি। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ১০ সংবাদ আবার প্রকাশিত হয়।
সাংবাদিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো সংবাদকে দেয়া হয় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক।