alt

জাতীয়

জাহাজ রপ্তানিতে ‘সুদিন ফিরছে’

শাফিউল আল ইমরান : শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

জাহাজটির নাম ‘ওয়েজ ওয়ার’। ৩৪১ ফুট দৈর্ঘ্য, ৫০ ফুট প্রস্থ ও ২৫ ফুট গভীরতার এ জাহাজটি আয়তনে মাঝারি আকৃতির। তবুও জাহাজটি ঘিরে নতুন স্বপ্নের জাল বুনছেন নির্মাতারা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ৫ হাজার ৫০০ টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টি-পারপাস কার্গোজাহাজটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট বন্ধরে নির্মাণ করছে আনন্দ শিপইয়ার্ড।

জুনে তুরস্কের প্রতিষ্ঠানের নিকট ‘ওয়েজ ওয়ার’ হস্তান্তর

সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে দেশে একশ’টি জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব। যা দেশের এক লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও দশ লাখ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে

বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড়’ জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড আগামী মাসে তুরস্কের ‘নোপাক শিপিং’ নামের প্রতিষ্ঠানের নিকট জাহাজটি রপ্তানি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে রপ্তানির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি।

আনন্দ শিপইয়ার্ডের কারিগরি পরিচালক ড. নাজমা নওরোজ জানান, ইতোমধ্যে জাহাজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সব মেশিনারি টেস্ট ট্রায়াল পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। জাহাজটি তুরস্কের কোম্পানিটির নিকট হস্তান্তরের পুর্বে সি ট্রায়ালের কার্যক্রম বাকি আছে। তিনি আরও বলেন, ‘সি ট্রায়াল শেষ করে এই জাহাজটিকে ক্রেতার নিকট বুঝিয়ে দিতে ও রপ্তানি সম্পন্ন করতে আগামী জুন মাস লেগে যেতে পারে।’ আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহেল বারী বলেন, ‘৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাটে আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ করে আসছি। এই ইয়ার্ডের বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার টন (জাহাজ নির্মাণে ব্যবহৃত লোহা)। এ দেশে আধুনিক জাহাজ নির্মাণের কলাকৌশল ও পদ্ধতি আনন্দ শিপইয়ার্ডই প্রচলন, পরিচিত ও প্রসারিত করেছে।’

দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা:

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা অপরিসীম। বিশ্ব বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগ বাণিজ্য সংঘটিত হয় সমুদ্র পথে। দেশের আয়তনের তুলনায় বৃহৎ সমুদ্রাঞ্চল, দীর্ঘ উপকূল, অনুকূল আবহাওয়া, পর্যাপ্ত কর্মক্ষম মানুষ শিল্প খাতকে শক্তিশালী রপ্তানির উৎস হিসেবে গড়ে তোলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা বয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নদীমাতৃক ও পরিশ্রমী মানুষের দেশ বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণ শিল্প এক অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। দেশের সঠিক শিল্প উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ ও কারিগর জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি তৈরির জন্য শিপইয়ার্ডের কোনো বিকল্প নাই। এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে দেশে সহজেই একশ’টি জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব। যা দেশের এক লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও দশ লাখ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাদরে দাবি, জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো অনায়াসে বছরে ২০০টি জাহাজ রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আয় করতে পারে।

সেই সঙ্গে, দেশে জাহাজ তৈরি শিল্প স্বয়ংসম্পন্ন হলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে তা রপ্তানি করে বছরে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের পথ তৈরি সম্ভব। এছাড়া, গভীর সমুদ্রে রাসায়নিক কারখানা স্থাপন করে জলজ উদ্ভিদ ও সামুদ্রিক শৈবাল থেকে ওষুধ কারখানার জন্য কাঁচামাল সরবরাহ সম্ভব। ফলে, দেশের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমবে ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাতকে ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দেয়ার দাবি জানান আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহেল বারী। তিনি বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাতকে বিভিন্ন সুবিধাদী দেয়া শুধু সময়ের দাবি নয় বরং একাধিক রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প ব্লু-ইকোনমির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং এর উন্নয়ন ছাড়া ব্লু-ইকোনমি সঠিকভাবে বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের জাহাজ নির্মাণ খরচ প্রায় ১৫ শতাংশ কম। কিন্তু জাহজ নির্মাণ শিল্প একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। একটি জাহাজ তৈরিতে সময় লাগে দুই থেকে তিন বছর। ফলে এলসি ফাইন্যান্সিং সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নের জন্য এ ধরনের সমস্যা আমাদের প্রথমেই নিরসন করা উচিত।’ বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আয় করে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের জাহাজ রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৬ সালে দাঁড়াবে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারে। যদি প্রতিবন্ধকতা দূর করে সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায় তাহলে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ২০৪০ সালে এই শিল্প থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ খাতকে সম্ভাবনাময় মনে করে ২০০৮ সালে ডেনমার্কে অত্যাধুনিক কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রপ্তানি করে আনন্দ শিপইয়ার্ড। তাদের এই রপ্তানির কারণে বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়। গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ৩৫৬টিরও বেশি জাহাজ তৈরি করেছে। এর মধ্যে আছে কার্গোজাহাজ, যাত্রীবাহী জাহাজ, মাল্টিপারপাস আইস-ক্লাস ভেসেল, ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট, অফশোর প্যাট্রল ভেসেল, টাগবোট, মাছ ধরার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার ও কনটেইনার ক্যারিয়ার। ইতোমধ্যে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডেনমার্ক, জার্মান, নরওয়ে, মোজাম্বিক ও ইউকেসহ বিভিন্ন দেশে ৫০টি জাহাজ রপ্তানি করেছে।

মবতন্ত্র বন্ধ করুন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: সাকি

খিলগাঁওয়ে অধ্যক্ষের যোগদান নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ

যুব সংগঠন গঠন করলো এনসিপি, নাম জাতীয় যুবশক্তি

ঠিকাদার যুবলীগ নেতার সঙ্গে কয়েক কোটি টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ

ছবি

‘যে চেনে সে কেনে, সাদেকের সৃষ্টি জামতলার মিষ্টি’

ছবি

ট্রাম্পের সফর : এবার আমিরাতের সঙ্গে হলো ২০ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি

ছবি

সোনাদিয়ায় পেট্রোল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে চিংড়িঘের নির্মাণ!

ছবি

রঙিন আমে ভরে উঠছে রাজশাহী, ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

তথ্য উপদেষ্টাকে বোতল নিক্ষেপ: শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পরিবারের জিম্মায়

চাল, মুরগি ও সবজির দাম কমেছে, বেড়েছে ডিমের

ছবি

নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা, গুজব ও ধর্মীয় উসকানির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থার দাবি

সাম্য হত্যা: জড়িতদের গ্রেপ্তারে সময় বেঁধে দিলো ছাত্রদল

ছবি

পড়ে গেল চাকা, ৭১ যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে বাংলাদেশ বিমান

চুয়াত্তর পেরিয়ে পঁচাত্তরে সংবাদ

ছবি

জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা অনশনে

ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দাবি মেনে নিয়েছে সরকার, লিখিত ঘোষনা চান শিক্ষার্থীরা

ছবি

সাম্য হত্যাকাণ্ড: ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের, শাহবাগ থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি

ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইনী পরামর্শ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি

ছবি

বিডিআর বিদ্রোহ: কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি ২৭ জনের

পশুর হাটে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর থাকবে: ডিএমপি

প্রতারণার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

দেশের গণমাধ্যম অবারিত স্বাধীনতা ভোগ করছে: প্রেস সচিব

ছবি

পলিসি ব্রেকফাস্ট: নির্মল বায়ু আইন তৈরি ও জ্বালানি নীতিমালা হালনাগাদের দাবি

কলেজ থেকে তুলে নিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ, তিন জনের যাবজ্জীবন

ছবি

সাম্য হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে: রিজভী

ছবি

খুমেক : অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক রোগের ঝুঁকি

মোকতাদির ও আরিফসহ ৬ জনের দেশত্যাগ নিষেধ

জাপানের কাছে আরও বেশি ঋণ ও বাজেট সহায়তা চায় বাংলাদেশ

উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল ছুড়লো কে? ‘খুঁজছে’ পুলিশ

কিছু প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো খুব কঠিন : বাসদ

দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস, পিও ও এনসিপি নেতাকে ডেকেছে দুদক

নগদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অস্থিরতা শুরু

শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন, ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে সূচক

ছবি

দাবি আদায়ে জগন্নাথে ‘শাটডাউন’: তিন দফার সঙ্গে ‘পুলিশি হামলার’ বিচারের দাবি আন্দোলনকারীদের

ছবি

ছাত্রদল নেতাদের ‘তুই’ সম্বোধনে ক্ষোভ, উপাচার্যের সমালোচনায় রিজভী

ছবি

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পরিচয়পত্র পেশ অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে ভারত

tab

জাতীয়

জাহাজ রপ্তানিতে ‘সুদিন ফিরছে’

শাফিউল আল ইমরান

শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

জাহাজটির নাম ‘ওয়েজ ওয়ার’। ৩৪১ ফুট দৈর্ঘ্য, ৫০ ফুট প্রস্থ ও ২৫ ফুট গভীরতার এ জাহাজটি আয়তনে মাঝারি আকৃতির। তবুও জাহাজটি ঘিরে নতুন স্বপ্নের জাল বুনছেন নির্মাতারা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ৫ হাজার ৫০০ টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টি-পারপাস কার্গোজাহাজটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট বন্ধরে নির্মাণ করছে আনন্দ শিপইয়ার্ড।

জুনে তুরস্কের প্রতিষ্ঠানের নিকট ‘ওয়েজ ওয়ার’ হস্তান্তর

সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে দেশে একশ’টি জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব। যা দেশের এক লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও দশ লাখ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে

বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড়’ জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড আগামী মাসে তুরস্কের ‘নোপাক শিপিং’ নামের প্রতিষ্ঠানের নিকট জাহাজটি রপ্তানি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে রপ্তানির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি।

আনন্দ শিপইয়ার্ডের কারিগরি পরিচালক ড. নাজমা নওরোজ জানান, ইতোমধ্যে জাহাজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সব মেশিনারি টেস্ট ট্রায়াল পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। জাহাজটি তুরস্কের কোম্পানিটির নিকট হস্তান্তরের পুর্বে সি ট্রায়ালের কার্যক্রম বাকি আছে। তিনি আরও বলেন, ‘সি ট্রায়াল শেষ করে এই জাহাজটিকে ক্রেতার নিকট বুঝিয়ে দিতে ও রপ্তানি সম্পন্ন করতে আগামী জুন মাস লেগে যেতে পারে।’ আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহেল বারী বলেন, ‘৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাটে আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ করে আসছি। এই ইয়ার্ডের বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার টন (জাহাজ নির্মাণে ব্যবহৃত লোহা)। এ দেশে আধুনিক জাহাজ নির্মাণের কলাকৌশল ও পদ্ধতি আনন্দ শিপইয়ার্ডই প্রচলন, পরিচিত ও প্রসারিত করেছে।’

দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা:

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা অপরিসীম। বিশ্ব বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগ বাণিজ্য সংঘটিত হয় সমুদ্র পথে। দেশের আয়তনের তুলনায় বৃহৎ সমুদ্রাঞ্চল, দীর্ঘ উপকূল, অনুকূল আবহাওয়া, পর্যাপ্ত কর্মক্ষম মানুষ শিল্প খাতকে শক্তিশালী রপ্তানির উৎস হিসেবে গড়ে তোলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা বয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নদীমাতৃক ও পরিশ্রমী মানুষের দেশ বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণ শিল্প এক অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। দেশের সঠিক শিল্প উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ ও কারিগর জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি তৈরির জন্য শিপইয়ার্ডের কোনো বিকল্প নাই। এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে দেশে সহজেই একশ’টি জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব। যা দেশের এক লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও দশ লাখ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাদরে দাবি, জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো অনায়াসে বছরে ২০০টি জাহাজ রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আয় করতে পারে।

সেই সঙ্গে, দেশে জাহাজ তৈরি শিল্প স্বয়ংসম্পন্ন হলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে তা রপ্তানি করে বছরে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের পথ তৈরি সম্ভব। এছাড়া, গভীর সমুদ্রে রাসায়নিক কারখানা স্থাপন করে জলজ উদ্ভিদ ও সামুদ্রিক শৈবাল থেকে ওষুধ কারখানার জন্য কাঁচামাল সরবরাহ সম্ভব। ফলে, দেশের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমবে ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাতকে ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দেয়ার দাবি জানান আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহেল বারী। তিনি বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাতকে বিভিন্ন সুবিধাদী দেয়া শুধু সময়ের দাবি নয় বরং একাধিক রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প ব্লু-ইকোনমির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং এর উন্নয়ন ছাড়া ব্লু-ইকোনমি সঠিকভাবে বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের জাহাজ নির্মাণ খরচ প্রায় ১৫ শতাংশ কম। কিন্তু জাহজ নির্মাণ শিল্প একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। একটি জাহাজ তৈরিতে সময় লাগে দুই থেকে তিন বছর। ফলে এলসি ফাইন্যান্সিং সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নের জন্য এ ধরনের সমস্যা আমাদের প্রথমেই নিরসন করা উচিত।’ বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আয় করে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের জাহাজ রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৬ সালে দাঁড়াবে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারে। যদি প্রতিবন্ধকতা দূর করে সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায় তাহলে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ২০৪০ সালে এই শিল্প থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ খাতকে সম্ভাবনাময় মনে করে ২০০৮ সালে ডেনমার্কে অত্যাধুনিক কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রপ্তানি করে আনন্দ শিপইয়ার্ড। তাদের এই রপ্তানির কারণে বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়। গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ৩৫৬টিরও বেশি জাহাজ তৈরি করেছে। এর মধ্যে আছে কার্গোজাহাজ, যাত্রীবাহী জাহাজ, মাল্টিপারপাস আইস-ক্লাস ভেসেল, ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট, অফশোর প্যাট্রল ভেসেল, টাগবোট, মাছ ধরার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার ও কনটেইনার ক্যারিয়ার। ইতোমধ্যে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডেনমার্ক, জার্মান, নরওয়ে, মোজাম্বিক ও ইউকেসহ বিভিন্ন দেশে ৫০টি জাহাজ রপ্তানি করেছে।

back to top