বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনের পেছনে যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাদের ভূমিকা তদন্ত করে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
দশম ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী দল অংশ নেয়নি। এর ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকলেও ভোটের আগের রাতেই অধিকাংশ ভোট পড়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই নির্বাচনে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়।
২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির বর্জনের পর আওয়ামী লীগ শরিক দল এবং বিরোধীদল জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীরা লড়াই করে।
প্রতিটি নির্বাচনের ফলেই আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
গত বছর ডিসেম্বরে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেয়, যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়।
ওই রায়ে বলা হয়, এই তিনটি নির্বাচনে ‘জনগণের আস্থা ধ্বংস করা হয়েছে’।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যথাক্রমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বদিউল আলম মজুমদার এর আগে এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ওই তিনটি নির্বাচনে ‘অনেক অপরাধ’ হয়েছে এবং সেসব তদন্ত করে পুনর্নির্বাচনের সুযোগ ছিল।
জুলাই সনদ
বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা ‘জুলাই সনদ’ তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসেই আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”
বৈঠকে তিনি তার লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “লন্ডনে যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তারা সবাই সংস্কার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও খুব আগ্রহী, তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যেখানেই গেছি, প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানতে চেয়েছেন—আগামী নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারবেন কি না। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালটসহ সব সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনের পেছনে যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাদের ভূমিকা তদন্ত করে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
দশম ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী দল অংশ নেয়নি। এর ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকলেও ভোটের আগের রাতেই অধিকাংশ ভোট পড়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই নির্বাচনে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়।
২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির বর্জনের পর আওয়ামী লীগ শরিক দল এবং বিরোধীদল জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীরা লড়াই করে।
প্রতিটি নির্বাচনের ফলেই আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
গত বছর ডিসেম্বরে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেয়, যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়।
ওই রায়ে বলা হয়, এই তিনটি নির্বাচনে ‘জনগণের আস্থা ধ্বংস করা হয়েছে’।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যথাক্রমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বদিউল আলম মজুমদার এর আগে এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ওই তিনটি নির্বাচনে ‘অনেক অপরাধ’ হয়েছে এবং সেসব তদন্ত করে পুনর্নির্বাচনের সুযোগ ছিল।
জুলাই সনদ
বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা ‘জুলাই সনদ’ তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসেই আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”
বৈঠকে তিনি তার লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “লন্ডনে যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তারা সবাই সংস্কার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও খুব আগ্রহী, তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যেখানেই গেছি, প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানতে চেয়েছেন—আগামী নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারবেন কি না। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালটসহ সব সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।