লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্ত দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গত শুক্রবার লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে বলে যৌথ বিবৃতি দেয় সরকার ও বিএনপি। সেই বিবৃতির সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন।

কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার বিষয়ে লন্ডনের বৈঠকের কোনো অফিসিয়াল নির্দেশ নির্বাচন কমিশন পায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসির এই বক্তব্যের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত ইসিকে লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য এই আহ্বান জানালো বিএনপি।

সোমবার,(১৬ জুন ২০২৬) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলব, জনগণের পক্ষে গণতন্ত্রের পক্ষে অতিদ্রুত আমরা যাতে ডেমোক্র্যাটিক ট্রান্স ফরমেশনে যেতে পারি সেরকম কার্যক্রম আপনারা নেবেন। সেই হিসেবে লন্ডনের আলোচনায় যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে সেটা খুব শিগগিরই ইলেকশন কমিশনে যথাযথ প্রক্রিয়া কমিউনিকেট করবেন বলে আশা করি। যাতে ইলেকশন কমিশন জনগণের সামনে বলতে পারে যে, তারা সরকারের কাছ থেকে একটা পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক মেসেজ পেয়েছে।’

সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগেও ভোট হতে পারে বলে লন্ডনের বৈঠকে মত দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

ঈদের ছুটি শেষে গতকাল রোববার প্রথম কর্মদিবসে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনকে লন্ডনের বৈঠকের বিষয়টি সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘লন্ডনের ঘোষণাটা অন্যদের মতো সংবাদমাধ্যম থেকে জানা। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। কারণ ভেতরে কী আলাপ হয়েছে জানি না। শুধু যৌথ বিবৃতি যেটা দিয়েছে, সেটা তো আন-সাইনড। এটাই বা কতটুকু জেনুইন, তাও তো জানি না। কারও স্বাক্ষর থাকলে বুঝতাম এটা সরকারের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে বুঝতাম এটা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট।’

নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘অফিসিয়ালি কোনো কিছু না এলে কিছু করা যাবে না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে, আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে। ঘোষণা একটা হয়েছে, নিশ্চয়ই ভেতরে অনেক আলাপ হয়েছে। সেগুলোও আমাদের জানতে হবে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।’

অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের প্রশ্নের জের টেনে বলেন, ‘এখানে যেহেতু সাইফুল হক ভাই জিজ্ঞাসা করেছেন যে তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দায়মুক্তির বিষয়ে লন্ডনে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা। না কারও দায়মুক্তির বিষয়ে আমাদের কোনো আলোচনার প্রসঙ্গ ছিল না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে কনস্টিটিউশনাল লেজিটেমেসি আছে আর্টিক্যাল ১০৬ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভাইজরি রুল অনুসারে তারা গঠিত হয়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাম-লী। সংবিধান যেহেতু এখন চালু আছে সাংবিধানিকভাবে এই সরকার চলছে সংবিধান যেভাবে বলেছেন যে, উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন এবং মন্ত্রী হওয়ার জন্য আর্টিক্যাল ৬৬ অনুসারে সংসদ সদস্য হওয়ার যে সমস্ত যোগ্যতা থাকতে হয় সেটা উপদেষ্টাম-লীকে মাথায় রাখতে বলব। সেখানে বিদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি কিন্তু অনুমোদন করেনি এবং আরও অনেক বিষয় আছে।’

প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

গণতন্ত্র ফেরাতে দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি: আমির খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সেই পথেই দেশ অগ্রসর হবে।’ গণতন্ত্র ফেরাতে তাই দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন এবং জাতির মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি তারা (বিএনপি) বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

সোমবার দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমির খসরু এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ গত ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তরণ চান। এটিই ছিল আন্দোলনের মূল প্রত্যাশা।’

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সব নেতা আগেই বলেছেন।’ ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয় বলেও মন্তব্য তার।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমির খসরু বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরও প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।’ বিএনপির এই নীতিনির্ধারণী নেতা আরও বলেন, ‘আগামী সরকারের অনেককেও বিচারের আওতায় আনতে হতে পারে। তাই এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার করবে বিচার বিভাগ।’ এগুলোকে কোনো সমস্যা বলে মনে করেন না তিনি।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে তারা সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।’

জামায়াত ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে জানতে চাইলে খসরু বলেন, ‘আমি একটা জিনিস মনে করি আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তাহলে এখানে সবার মতামত নেয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং সবাই তার মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয় এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই তার নিজের মতামত দিবে। এর মধ্য আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।’

বিএনপি এতদিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময় এবং এতটুকু সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগেই ডিসেম্বরের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরও দীর্ঘ সময়। তবে যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।’

আমীর খসরু বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।’

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।’