রাজধানীর মুগদা হাসপাতলে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীরা -সংবাদ
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে পহেলা জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের সোমবার,(১৬ জুন ২০২৬) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬,২২২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর চলতি বছরের সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়৩০ জন মারা গেছেন।
বরগুনায় ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করছে
আশঙ্কাজনকভাবে সারা দেশে আরও বাড়তে পারে :কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ
অন্যদিকে বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়েই চলছে। হাসপাতালগুলোতে রোগী ধারণ ক্ষমতার বাইরে বাইরে ভর্তি হয়েছে। জেলায় ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সেখানে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। অনেকে হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমাজেন্সি ও কন্ট্রোলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ৮শ’ ৪২ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৪৫ জন, ঢাকা বিভাগে ৫৯৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫১৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮৯৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৮১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৯৮ জন, রংপুর বিভাগে ২২ জন, সিলেট বিভাগে ২১ জন ও কক্সবাজারে ১০ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এভাবে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকেই চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৫ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৬ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন ভর্তি আছে। মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে ১৮ জন ভর্তি আছে। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪৬ জন ভর্তি আছে। এভাবে সারা দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তরা ভর্তি হয়েছে।
সরেজমিন বরগুনা খোঁজ নিয়ে সংবাদের রিপোর্টার জানিয়েছেন, বরগুনায় মহামারী আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, হাসপাতাল আক্রান্ত নারী, শিশু বৃদ্ধ রোগীতে ঠাসা। ডেঙ্গুর হট স্পট হিসেবে সারা দেশের ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক-চতুর্থাংশই বরগুনায়
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাসহ মোট এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। ঘরে ঘরে রোগী ছড়িয়ে পড়েছে। বরগুনা ২৫০ বেডের হাসপাতাল ধারণ ক্ষমতার বাইরে ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়ে বিদ্যমান চিকিৎসাসেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলাম।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ২৪১ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৮শ’ ৮৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে বেসকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ও বাড়িতে আক্রান্তের হিসেব নেই। যদিও এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গু। বরগুনার বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। তার মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৫ জনের।
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের। এছাড়াও ভর্তি রোগী বেড়ে যাওয়ায় বেড সংকট তৈরি হয়েছে। এতে রোগীদের জায়গা হয়েছে হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোর এবং লিফটের দরজার সামনে। ভর্তি রোগীদের আরও অভিযোগ বাইরের ক্লিনিকে করতে হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এমনকি ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতালে ভর্তি শিল্পী নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, তিনি এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছেন তবে হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে।
মো. শহীদুল ইসলাম নামে ভর্তি রোগীর এক আত্মীয় বলেন, তার খালা ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকায় কোনো বেড সে পায়নি। বাধ্য হয়ে ফ্লোরেই বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
কুলসুম নামে এক আক্রান্ত রোগী বলেন, হাসপাতালে আসার পর চার ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো চিকিৎসক তাদের কাছে আসেনি। বরগুনায় যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে এখন নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাই সচেতন থাকলে এবং যার যার বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হতো না।
ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা পৌরসভার ১ ও ২নং ওয়ার্ড: বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সর্বশেষ ১ হাজার ৮শ’ ৩৮ জন আক্রান্ত রোগীর এলাকাভিত্তিক একটি পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, বরগুনা পৌরসভার ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে শহীদ স্মৃতি থানাপাড়ায় সাধুবাড়িতে আক্রান্ত হয়েছে ৮ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন সুস্থ হলেও বাকিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাধুবাড়ির রোগী উর্মিলা রানি (৪০) বলেন, তিনি প্রচণ্ড জ¦র পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা নিয়ে বাসায় কাতরাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসার আশা না করে প্রাইভেট চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার প্লাটিলেট নেমে ২২ হাজারে এসেছে। তার অবস্থা কাহিল। এই বাড়ির প্রত্যাশা, তার মা পপি ও বাবা খোকন দাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাড়িতে। সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী নামক একটি এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন। ওই এলাকার বাসিন্দা গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, তাদের এ এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি
হওয়ায় ঘনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাটি ইউনিয়নের আওতায় থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো কর্মী নেই। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা, নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে থাকে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞপ্রফেসর কবিরুল বাসার তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ডেঙ্গু দেশের জন্য একটি অন্যতমজনস্বাস্থ্যসমস্যাহিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসচেতনতার অভাবের ফলে এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের গ্রাম-শহরে প্রায় সব জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে, যা মশার বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। আর শহরে উঁচু ভবন ও ঘনবসতি এলাকায় আলো-বাতাস চলাচল কম হওয়ায় মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভাইরাস খুব দ্রুত অভিযোচিত হয়। ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তনের ফলে এটি আরও সংক্রমক হতে পারে। এতে ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা পদ্ধতিও কম কার্যকর হতে পারে।
রাজধানীর মুগদা হাসপাতলে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীরা -সংবাদ
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে পহেলা জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের সোমবার,(১৬ জুন ২০২৬) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬,২২২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর চলতি বছরের সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়৩০ জন মারা গেছেন।
বরগুনায় ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করছে
আশঙ্কাজনকভাবে সারা দেশে আরও বাড়তে পারে :কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ
অন্যদিকে বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়েই চলছে। হাসপাতালগুলোতে রোগী ধারণ ক্ষমতার বাইরে বাইরে ভর্তি হয়েছে। জেলায় ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সেখানে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। অনেকে হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমাজেন্সি ও কন্ট্রোলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ৮শ’ ৪২ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৪৫ জন, ঢাকা বিভাগে ৫৯৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫১৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮৯৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৮১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৯৮ জন, রংপুর বিভাগে ২২ জন, সিলেট বিভাগে ২১ জন ও কক্সবাজারে ১০ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এভাবে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকেই চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৫ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৬ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন ভর্তি আছে। মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে ১৮ জন ভর্তি আছে। এভাবে রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪৬ জন ভর্তি আছে। এভাবে সারা দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তরা ভর্তি হয়েছে।
সরেজমিন বরগুনা খোঁজ নিয়ে সংবাদের রিপোর্টার জানিয়েছেন, বরগুনায় মহামারী আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, হাসপাতাল আক্রান্ত নারী, শিশু বৃদ্ধ রোগীতে ঠাসা। ডেঙ্গুর হট স্পট হিসেবে সারা দেশের ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক-চতুর্থাংশই বরগুনায়
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাসহ মোট এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। ঘরে ঘরে রোগী ছড়িয়ে পড়েছে। বরগুনা ২৫০ বেডের হাসপাতাল ধারণ ক্ষমতার বাইরে ভর্তি হওয়া রোগীদের নিয়ে বিদ্যমান চিকিৎসাসেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলাম।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ২৪১ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৮শ’ ৮৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে বেসকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ও বাড়িতে আক্রান্তের হিসেব নেই। যদিও এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গু। বরগুনার বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। তার মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৫ জনের।
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের। এছাড়াও ভর্তি রোগী বেড়ে যাওয়ায় বেড সংকট তৈরি হয়েছে। এতে রোগীদের জায়গা হয়েছে হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোর এবং লিফটের দরজার সামনে। ভর্তি রোগীদের আরও অভিযোগ বাইরের ক্লিনিকে করতে হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এমনকি ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতালে ভর্তি শিল্পী নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, তিনি এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছেন তবে হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে।
মো. শহীদুল ইসলাম নামে ভর্তি রোগীর এক আত্মীয় বলেন, তার খালা ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকায় কোনো বেড সে পায়নি। বাধ্য হয়ে ফ্লোরেই বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
কুলসুম নামে এক আক্রান্ত রোগী বলেন, হাসপাতালে আসার পর চার ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো চিকিৎসক তাদের কাছে আসেনি। বরগুনায় যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে এখন নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাই সচেতন থাকলে এবং যার যার বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হতো না।
ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা পৌরসভার ১ ও ২নং ওয়ার্ড: বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সর্বশেষ ১ হাজার ৮শ’ ৩৮ জন আক্রান্ত রোগীর এলাকাভিত্তিক একটি পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, বরগুনা পৌরসভার ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে শহীদ স্মৃতি থানাপাড়ায় সাধুবাড়িতে আক্রান্ত হয়েছে ৮ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন সুস্থ হলেও বাকিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাধুবাড়ির রোগী উর্মিলা রানি (৪০) বলেন, তিনি প্রচণ্ড জ¦র পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা নিয়ে বাসায় কাতরাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসার আশা না করে প্রাইভেট চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার প্লাটিলেট নেমে ২২ হাজারে এসেছে। তার অবস্থা কাহিল। এই বাড়ির প্রত্যাশা, তার মা পপি ও বাবা খোকন দাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাড়িতে। সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী নামক একটি এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন। ওই এলাকার বাসিন্দা গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, তাদের এ এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি
হওয়ায় ঘনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাটি ইউনিয়নের আওতায় থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো কর্মী নেই। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা, নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে থাকে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞপ্রফেসর কবিরুল বাসার তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ডেঙ্গু দেশের জন্য একটি অন্যতমজনস্বাস্থ্যসমস্যাহিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জনসচেতনতার অভাবের ফলে এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের গ্রাম-শহরে প্রায় সব জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে, যা মশার বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। আর শহরে উঁচু ভবন ও ঘনবসতি এলাকায় আলো-বাতাস চলাচল কম হওয়ায় মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভাইরাস খুব দ্রুত অভিযোচিত হয়। ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তনের ফলে এটি আরও সংক্রমক হতে পারে। এতে ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা পদ্ধতিও কম কার্যকর হতে পারে।