সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করতে আদালতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ জজ মো. আবদুর রহমানের আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন জানান, দুদকের একটি মামলায় তারা আসামি।
আত্মসাতের মামলা
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ
তার স্ত্রী ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান
ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী
বোন রোকসানা জামান চৌধুরী
ইউসিবিএল ব্যাংক ও আরামিট গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা
মামলাটি দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে দায়ের করেন।
এরই মধ্যে আরামিট পিএলসির এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং উৎপল পালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদনও করেছে দুদক।
প্রতারণার কৌশল
অভিযোগে বলা হয়, সাবেক মন্ত্রী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের এক কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ‘ভিশন ট্রেডিং’ নামে একটি নামসর্বস্ব কোম্পানির কাগজপত্র তৈরি করা হয়। গম, মটর, হলুদ, ছোলা আমদানির নামে ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করানো হয়।
পরে সেই টাকা আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে তৈরি করা চারটি কোম্পানির (আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং) হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন করা হয়।
মিথ্যা তথ্য ও অনুমোদন
মামলার এজাহারে বলা হয়, আরামিট গ্রুপের প্রটোকল অফিসার ফরমান উল্লাহ চৌধুরীকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর সেই নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটি ১৮০ দিনের জন্য টাইম লোনের আবেদন করে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকের ব্যবসা, মালিকানা, পণ্য, গুদাম ইত্যাদি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্যে ‘সন্তোষজনক’ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ঋণের সুপারিশ পাঠায়।
যদিও ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল, তবুও পরিচালনা পরিষদ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ অনুমোদন করে।
আসামিদের তালিকা
এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—
ব্যাংকের সাবেক পরিচালকরা: বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, মো. জোনাইদ শফিক, অপরূপ চৌধুরী, তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান, ইউনুছ আহমদ, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, এম এ সবুর (সাবেক চেয়ারম্যান), আরিফ কাদরী (সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক)।
ব্যাংক কর্মকর্তারা: মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন, বজল আহমেদ বাবুল।
আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা: মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী, কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম, মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইয়াছিনুর রহমান, ইউছুফ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম।
জাবেদের রাজনৈতিক পরিচয়
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরের মেয়াদে ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সম্পদ জব্দ ও বিদেশে অবস্থান
২০২৪ সালের অগাস্টে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। এরই মধ্যে আদালত জাবেদ ও রুকমীলার নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে।
এছাড়া গত ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেয় আদালত। এসব হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি জমা রয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে তারা দুজনেই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করতে আদালতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ জজ মো. আবদুর রহমানের আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন জানান, দুদকের একটি মামলায় তারা আসামি।
আত্মসাতের মামলা
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ
তার স্ত্রী ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান
ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী
বোন রোকসানা জামান চৌধুরী
ইউসিবিএল ব্যাংক ও আরামিট গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা
মামলাটি দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে দায়ের করেন।
এরই মধ্যে আরামিট পিএলসির এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং উৎপল পালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদনও করেছে দুদক।
প্রতারণার কৌশল
অভিযোগে বলা হয়, সাবেক মন্ত্রী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের এক কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ‘ভিশন ট্রেডিং’ নামে একটি নামসর্বস্ব কোম্পানির কাগজপত্র তৈরি করা হয়। গম, মটর, হলুদ, ছোলা আমদানির নামে ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করানো হয়।
পরে সেই টাকা আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে তৈরি করা চারটি কোম্পানির (আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং) হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন করা হয়।
মিথ্যা তথ্য ও অনুমোদন
মামলার এজাহারে বলা হয়, আরামিট গ্রুপের প্রটোকল অফিসার ফরমান উল্লাহ চৌধুরীকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর সেই নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটি ১৮০ দিনের জন্য টাইম লোনের আবেদন করে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকের ব্যবসা, মালিকানা, পণ্য, গুদাম ইত্যাদি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্যে ‘সন্তোষজনক’ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ঋণের সুপারিশ পাঠায়।
যদিও ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল, তবুও পরিচালনা পরিষদ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ অনুমোদন করে।
আসামিদের তালিকা
এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—
ব্যাংকের সাবেক পরিচালকরা: বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, মো. জোনাইদ শফিক, অপরূপ চৌধুরী, তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান, ইউনুছ আহমদ, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, এম এ সবুর (সাবেক চেয়ারম্যান), আরিফ কাদরী (সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক)।
ব্যাংক কর্মকর্তারা: মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন, বজল আহমেদ বাবুল।
আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা: মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী, কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম, মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইয়াছিনুর রহমান, ইউছুফ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম।
জাবেদের রাজনৈতিক পরিচয়
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরের মেয়াদে ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সম্পদ জব্দ ও বিদেশে অবস্থান
২০২৪ সালের অগাস্টে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। এরই মধ্যে আদালত জাবেদ ও রুকমীলার নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে।
এছাড়া গত ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেয় আদালত। এসব হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি জমা রয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে তারা দুজনেই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।