সোমবার, ভোরে প্রবল বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। এ সময় সকালে মানুষ কর্মের জন্য ঘরের বাইরে বেরিয়ে চরম বিপাকে পড়েন। ছবিটি নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোলা -সংবাদ
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ কারণে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকায় সোমবার, (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে ভারী বুষ্টিপাতে চরম জলাবদ্ধতা দেখা দেয় নগরজুড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন স্থানে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
সোমবার, এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার, সকালের নিয়মিত বুলেটিনে বলেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বাংলাদেশের উপর মৌসুমি বায়ু মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামীকালকের দিকে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রাজধানীতে ১২ ঘণ্টায় ১০৭ মি.মি. বৃষ্টি, জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি
গতকাল রোববার রাতের অবিরাম বৃষ্টি এবং সোমবার, সকালে ভারী বৃষ্টিপাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকায় গতকাল রোববার রাত এবং সোমবার, সকালে মিলে গত ১২ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া সোমবার, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আগের রাতের বৃষ্টি এবং সোমবার, সকাল থেকে টানা ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
নগর ঘুরে দেখা যায়, ‘গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া, কাকরাইল, বংশাল, শান্তিনগর, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, কারওয়ান বাজার, গ্রিনরোড, মনিপুরী পাড়া, নিউমার্কেট, আসাদগেইট ও জিগাতলা ও মৌচাকসহ বেশিরভাগ এলাকার রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে গিয়েছিল। রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু করে সে এলাকায় প্রতি সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরসমান পানিও দেখা যায়।
বংশালের নাজিরাবাজার এলাকায় রাস্তার বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে আমিন (৩০) নামের এক বাইসাইকেল আরোহী যুবক মারা গেছেন। আমিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পথচারী জিসান জানান, পুরান ঢাকায় অল্প বৃষ্টি হলেই নাজিরা বাজার এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গতকাল রোববার সারারাত ও সোমবার, সকালে ভারী বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমিন নামের ওই ব্যক্তি সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে একটি বাঁশ দিয়ে তাকে টেনে দূর থেকে কাছে এনে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকার কয়েকজন। তবে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক জানান, ওই যুবকের বেঁচে নেই।
সোমবার, সকালে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার মতিঝিল, রাজারবাগ, গ্রিনরোড, পান্থপথ, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, কালসী রোড, মিরপুর-১ থেকে টেকনিকেল মোড়ে যাওয়ার সড়ক, বিমানবন্দর সড়কের বলাকার সামনের সড়ক, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেইট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও, দক্ষিণ বনশ্রীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে। এছাড়া টেকনিকেল মোড়ে সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
জলাবদ্ধতার কারনে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বনানী থেকে মহাখালী হয়ে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়ক, রামপুরা থেকে বাড্ডামুখী সড়ক, পান্থপথ, কারওয়ানবাজার, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, আউটার সার্কুলার রোড, প্রেসক্লাব, এলিফ্যান্ট রোডে যানজট ছিল।
সে পথে যাওয়ার সময় একজন ব্যংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে থাকায় ধানমন্ডি এলাকা দিয়ে সাইন্সল্যাবরেটরির হয়ে নিউমার্কেটের দিকে যেতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। একে তো জলাব্ধতার জন্য যানবাহন চলতে চরম অসুবিধায় পড়ে, অন্যদিকে জলাব্ধতার জন্য সড়কে যানবাহনও অত্যন্ত চলাচল করেছে। ফলে সে পথে যাতায়াতকারী সবাইকেই চম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘পুরা রাস্তায় পানি আর পানি। রাস্তায় গাড়ি চলেই না। ধানমন্ডির যাত্রী নিয়া গেছিলাম। ওই এলাকায় ঢুকতে না পাইরা পান্থপথ থাইকা গাড়ি ঘুরাইয়া চইলা আসছি। আইজকা সারা শহরেই মোটামুটি জ্যাম দেখলাম। তবে দুপুরের দিকে জ্যাম কিছুটা কমেছে।’
ডিএমপি ট্রাফিকের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ফজলুল করিম দুপুরে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে শান্তিনগর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের এক ও দুই নম্বর গেইট, শাহজাহানপুর চৌরাস্তা, মতিঝিল এলাকায় পানি জমেছে। ফলে ওই সব এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। প্রচুর বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন কন্ট্রোল করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের এক ও দুই নম্বর গেইটের সামনের সড়কে এখনও পানি জমে আছে, পানি ধীরে ধীরে যাচ্ছে। ফলে ওই সড়কে এখনও যানজট।’
বৃষ্টির কারণে গতকাল বেলা ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত মিরপুরগামী যানবাহন দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে ছিল। এ সময় বেশিরভাগ বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পানির মধ্যে হাঁটা ধরেন। একই অবস্থা দেখা যায় মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁওমুখী সড়কের কাজীপাড়া পর্যন্ত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, গতকালকের বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার গ্রিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম কাজ করায় এসব এলাকার সড়কের পানি নেমে গেছে। তবে কিছু এলাকায় পানি সরতে সময় লাগবে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এসব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
সোমবার, ভোরে প্রবল বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। এ সময় সকালে মানুষ কর্মের জন্য ঘরের বাইরে বেরিয়ে চরম বিপাকে পড়েন। ছবিটি নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোলা -সংবাদ
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ কারণে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকায় সোমবার, (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে ভারী বুষ্টিপাতে চরম জলাবদ্ধতা দেখা দেয় নগরজুড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন স্থানে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
সোমবার, এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার, সকালের নিয়মিত বুলেটিনে বলেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বাংলাদেশের উপর মৌসুমি বায়ু মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামীকালকের দিকে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রাজধানীতে ১২ ঘণ্টায় ১০৭ মি.মি. বৃষ্টি, জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি
গতকাল রোববার রাতের অবিরাম বৃষ্টি এবং সোমবার, সকালে ভারী বৃষ্টিপাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকায় গতকাল রোববার রাত এবং সোমবার, সকালে মিলে গত ১২ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া সোমবার, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আগের রাতের বৃষ্টি এবং সোমবার, সকাল থেকে টানা ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
নগর ঘুরে দেখা যায়, ‘গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া, কাকরাইল, বংশাল, শান্তিনগর, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, কারওয়ান বাজার, গ্রিনরোড, মনিপুরী পাড়া, নিউমার্কেট, আসাদগেইট ও জিগাতলা ও মৌচাকসহ বেশিরভাগ এলাকার রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে গিয়েছিল। রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু করে সে এলাকায় প্রতি সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরসমান পানিও দেখা যায়।
বংশালের নাজিরাবাজার এলাকায় রাস্তার বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে আমিন (৩০) নামের এক বাইসাইকেল আরোহী যুবক মারা গেছেন। আমিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পথচারী জিসান জানান, পুরান ঢাকায় অল্প বৃষ্টি হলেই নাজিরা বাজার এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গতকাল রোববার সারারাত ও সোমবার, সকালে ভারী বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমিন নামের ওই ব্যক্তি সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে একটি বাঁশ দিয়ে তাকে টেনে দূর থেকে কাছে এনে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকার কয়েকজন। তবে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক জানান, ওই যুবকের বেঁচে নেই।
সোমবার, সকালে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার মতিঝিল, রাজারবাগ, গ্রিনরোড, পান্থপথ, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, কালসী রোড, মিরপুর-১ থেকে টেকনিকেল মোড়ে যাওয়ার সড়ক, বিমানবন্দর সড়কের বলাকার সামনের সড়ক, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেইট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও, দক্ষিণ বনশ্রীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে। এছাড়া টেকনিকেল মোড়ে সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
জলাবদ্ধতার কারনে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বনানী থেকে মহাখালী হয়ে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়ক, রামপুরা থেকে বাড্ডামুখী সড়ক, পান্থপথ, কারওয়ানবাজার, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, আউটার সার্কুলার রোড, প্রেসক্লাব, এলিফ্যান্ট রোডে যানজট ছিল।
সে পথে যাওয়ার সময় একজন ব্যংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে থাকায় ধানমন্ডি এলাকা দিয়ে সাইন্সল্যাবরেটরির হয়ে নিউমার্কেটের দিকে যেতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। একে তো জলাব্ধতার জন্য যানবাহন চলতে চরম অসুবিধায় পড়ে, অন্যদিকে জলাব্ধতার জন্য সড়কে যানবাহনও অত্যন্ত চলাচল করেছে। ফলে সে পথে যাতায়াতকারী সবাইকেই চম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘পুরা রাস্তায় পানি আর পানি। রাস্তায় গাড়ি চলেই না। ধানমন্ডির যাত্রী নিয়া গেছিলাম। ওই এলাকায় ঢুকতে না পাইরা পান্থপথ থাইকা গাড়ি ঘুরাইয়া চইলা আসছি। আইজকা সারা শহরেই মোটামুটি জ্যাম দেখলাম। তবে দুপুরের দিকে জ্যাম কিছুটা কমেছে।’
ডিএমপি ট্রাফিকের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ফজলুল করিম দুপুরে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে শান্তিনগর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের এক ও দুই নম্বর গেইট, শাহজাহানপুর চৌরাস্তা, মতিঝিল এলাকায় পানি জমেছে। ফলে ওই সব এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। প্রচুর বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন কন্ট্রোল করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের এক ও দুই নম্বর গেইটের সামনের সড়কে এখনও পানি জমে আছে, পানি ধীরে ধীরে যাচ্ছে। ফলে ওই সড়কে এখনও যানজট।’
বৃষ্টির কারণে গতকাল বেলা ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত মিরপুরগামী যানবাহন দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে ছিল। এ সময় বেশিরভাগ বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পানির মধ্যে হাঁটা ধরেন। একই অবস্থা দেখা যায় মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁওমুখী সড়কের কাজীপাড়া পর্যন্ত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, গতকালকের বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার গ্রিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম কাজ করায় এসব এলাকার সড়কের পানি নেমে গেছে। তবে কিছু এলাকায় পানি সরতে সময় লাগবে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা রাসেল রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এসব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’