সাড়া পাওয়ার আশা সীমিত হলেও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে জনপ্রতি প্রায় ৭০০ টাকা ব্যয়ে পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে অ্যাপটি উদ্বোধন করা হবে। বুধবার নির্বাচন ভবনে ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং’ বিষয়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনলাইন মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
সানাউল্লাহ বলেন, “এবার প্রবাসীদের ভোটপ্রতি সরকার ৭০০ টাকা ব্যয় করবে। কিন্তু পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার হার কম। ব্যয়বহুল হলেও যৌক্তিক বিবেচনায় পোস্টাল ভোটিং করা হচ্ছে; আর প্রত্যাশাকেও সীমিত রাখতে হবে।”
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন ও ভোটদানের হার খুবই কম। ভারতে সবশেষ চার কোটি প্রবাসীর মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার নিবন্ধন করেছেন; আর নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৯০০ জন।
অতীতের সীমাবদ্ধতা
নির্বাচনি আইনে প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ থাকলেও ২০০৮ সাল থেকে কোনো ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং’ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অতীতে সীমাবদ্ধতা ছিল মূলত সময় সংকটে। প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের বাকি থাকে ২০–২১ দিন। ব্যালট ছাপা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাতে ১০–১২ দিন লেগে যেত। তখন ভোটারদের কাছে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনা সম্ভব হতো না। ফলে একটিও প্রবাসী ভোট গ্রহণ করা যায়নি।
বর্তমান কমিশন এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে হাইব্রিড পদ্ধতি চালু করছে। সানাউল্লাহ জানান, “আমরা ব্যালটের চেহারা পরিবর্তন করেছি। যারা ভোট দেবেন, তারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করবেন, আগেভাগেই প্রতীকযুক্ত ব্যালট তাদের কাছে পাঠানো হবে। ভোটাররা বাংলাদেশে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের দেখতে পাবেন। এরপর তারা ভোট দিয়ে নির্ধারিত সময়ে ব্যালট ফেরত পাঠাবেন।”
সরকারই ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে। ভোটারদের কোনো খরচ দিতে হবে না। প্রতিটি ভোট কাস্ট করতে প্রায় ৭০০ টাকা লাগবে, এর মধ্যে ৫০০ টাকা যাবে প্রবাসে ডাকযোগে আনা–নেওয়ায়, বাকি ২০০ টাকা অন্যান্য খরচে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
সানাউল্লাহ জানান, প্রবাসীদের দুটি ধাপে নিবন্ধন করতে হবে — একবার ভোটার হিসেবে এবং আরেকবার ভোট দেওয়ার জন্য।
যাদের হাতে বাংলাদেশের স্মার্ট এনআইডি, ১০, ১৩ বা ১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে এবং দেশে ভোটার তালিকায় নাম আছে, তারা পোস্টাল ভোট দিতে পারবেন।
‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং রেজিস্ট্রেশন’ অ্যাপ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে চালু হবে। পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে প্রবাসীরা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। সাধারণভাবে প্রতি অঞ্চলে ৭ থেকে ১০ দিন সময় দেওয়া হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৭ দিন বাড়ানো হতে পারে।
ইসির আশা সীমিত
সানাউল্লাহ বলেন, ভারতে প্রবাসীদের ভোটদানের হার ৩০ শতাংশের নিচে। পাকিস্তান এখনো প্রবাসীদের ভোট বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কা অনলাইন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৮ লাখ প্রবাসী থাকলেও সর্বশেষ নির্বাচনে মাত্র ৫৪ হাজার জন নিবন্ধন করেন। সেখানে ভোটারদের ব্যালট খরচ দিতে হওয়ায় আগ্রহ কম।
বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে দেড় কোটির মতো। এত বড় জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন কল্পনা করা যায় না বলে মনে করে ইসি।
তিনি বলেন, “আমাদের এটা শুরু করতে হবে। যে স্কেলেই হোক না কেন। প্রত্যাশাটা সীমিত রাখতে হবে। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হব না। ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে সবাই এটার সাথে সম্পৃক্ত হবেন।”
বড় চ্যালেঞ্জ
সানাউল্লাহ জানান, পোস্টাল ব্যালটের বিশ্বব্যাপী ‘ওয়েস্টেজ রেট’ ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারটি ব্যালটের একটি দেশে ফেরত আসে না। অনেক সময় ভোটাররা ভুল ঠিকানা দেন বা সময়মতো ভোট ফেরত পাঠাতে পারেন না।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গোপনীয়তা নিশ্চিত করা এবং ভোটারদের সময়মতো ব্যালট ফেরত পাঠানো। ভোটারদের কাছ থেকে ঘোষণা নেওয়া হবে যে তারা কার পক্ষে ভোট দিয়েছেন তা প্রকাশ করবেন না।
অন্য চ্যালেঞ্জ হলো, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ভোট শুরু হলেও আদালতের রায়ে কোনো আসনের প্রার্থী তালিকা পরিবর্তিত হলে সেই আসনের সব বিদেশি ভোট বাতিল হয়ে যাবে।
আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সাড়া পাওয়ার আশা সীমিত হলেও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে জনপ্রতি প্রায় ৭০০ টাকা ব্যয়ে পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে অ্যাপটি উদ্বোধন করা হবে। বুধবার নির্বাচন ভবনে ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং’ বিষয়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনলাইন মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
সানাউল্লাহ বলেন, “এবার প্রবাসীদের ভোটপ্রতি সরকার ৭০০ টাকা ব্যয় করবে। কিন্তু পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন ও ভোট দেওয়ার হার কম। ব্যয়বহুল হলেও যৌক্তিক বিবেচনায় পোস্টাল ভোটিং করা হচ্ছে; আর প্রত্যাশাকেও সীমিত রাখতে হবে।”
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধন ও ভোটদানের হার খুবই কম। ভারতে সবশেষ চার কোটি প্রবাসীর মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার নিবন্ধন করেছেন; আর নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৯০০ জন।
অতীতের সীমাবদ্ধতা
নির্বাচনি আইনে প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ থাকলেও ২০০৮ সাল থেকে কোনো ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং’ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অতীতে সীমাবদ্ধতা ছিল মূলত সময় সংকটে। প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের বাকি থাকে ২০–২১ দিন। ব্যালট ছাপা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাতে ১০–১২ দিন লেগে যেত। তখন ভোটারদের কাছে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনা সম্ভব হতো না। ফলে একটিও প্রবাসী ভোট গ্রহণ করা যায়নি।
বর্তমান কমিশন এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে হাইব্রিড পদ্ধতি চালু করছে। সানাউল্লাহ জানান, “আমরা ব্যালটের চেহারা পরিবর্তন করেছি। যারা ভোট দেবেন, তারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করবেন, আগেভাগেই প্রতীকযুক্ত ব্যালট তাদের কাছে পাঠানো হবে। ভোটাররা বাংলাদেশে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের দেখতে পাবেন। এরপর তারা ভোট দিয়ে নির্ধারিত সময়ে ব্যালট ফেরত পাঠাবেন।”
সরকারই ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে। ভোটারদের কোনো খরচ দিতে হবে না। প্রতিটি ভোট কাস্ট করতে প্রায় ৭০০ টাকা লাগবে, এর মধ্যে ৫০০ টাকা যাবে প্রবাসে ডাকযোগে আনা–নেওয়ায়, বাকি ২০০ টাকা অন্যান্য খরচে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
সানাউল্লাহ জানান, প্রবাসীদের দুটি ধাপে নিবন্ধন করতে হবে — একবার ভোটার হিসেবে এবং আরেকবার ভোট দেওয়ার জন্য।
যাদের হাতে বাংলাদেশের স্মার্ট এনআইডি, ১০, ১৩ বা ১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে এবং দেশে ভোটার তালিকায় নাম আছে, তারা পোস্টাল ভোট দিতে পারবেন।
‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং রেজিস্ট্রেশন’ অ্যাপ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে চালু হবে। পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে প্রবাসীরা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। সাধারণভাবে প্রতি অঞ্চলে ৭ থেকে ১০ দিন সময় দেওয়া হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৭ দিন বাড়ানো হতে পারে।
ইসির আশা সীমিত
সানাউল্লাহ বলেন, ভারতে প্রবাসীদের ভোটদানের হার ৩০ শতাংশের নিচে। পাকিস্তান এখনো প্রবাসীদের ভোট বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কা অনলাইন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৮ লাখ প্রবাসী থাকলেও সর্বশেষ নির্বাচনে মাত্র ৫৪ হাজার জন নিবন্ধন করেন। সেখানে ভোটারদের ব্যালট খরচ দিতে হওয়ায় আগ্রহ কম।
বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে দেড় কোটির মতো। এত বড় জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন কল্পনা করা যায় না বলে মনে করে ইসি।
তিনি বলেন, “আমাদের এটা শুরু করতে হবে। যে স্কেলেই হোক না কেন। প্রত্যাশাটা সীমিত রাখতে হবে। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হব না। ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে সবাই এটার সাথে সম্পৃক্ত হবেন।”
বড় চ্যালেঞ্জ
সানাউল্লাহ জানান, পোস্টাল ব্যালটের বিশ্বব্যাপী ‘ওয়েস্টেজ রেট’ ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারটি ব্যালটের একটি দেশে ফেরত আসে না। অনেক সময় ভোটাররা ভুল ঠিকানা দেন বা সময়মতো ভোট ফেরত পাঠাতে পারেন না।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গোপনীয়তা নিশ্চিত করা এবং ভোটারদের সময়মতো ব্যালট ফেরত পাঠানো। ভোটারদের কাছ থেকে ঘোষণা নেওয়া হবে যে তারা কার পক্ষে ভোট দিয়েছেন তা প্রকাশ করবেন না।
অন্য চ্যালেঞ্জ হলো, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ভোট শুরু হলেও আদালতের রায়ে কোনো আসনের প্রার্থী তালিকা পরিবর্তিত হলে সেই আসনের সব বিদেশি ভোট বাতিল হয়ে যাবে।
আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।