নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
জাপা নিয়ে ‘কনফিউজড’
নাগরিক ঐক্যও শাপলা চেয়েছিল, দেয়া হয়নি
এজন্য তিনি সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, ‘সব খেলোয়াড় যদি ফাউল করার জন্য মাঠে নামে, ম্যাচ পণ্ড হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সবাই ফাউল করার জন্য মাঠে নামলে তো মুশকিল। কেউ যেন ফাউল না করে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর। নির্বাচনে কেউ ফাউল করতে নামবে না, ভালো নিয়তে নামবে আশা করি।’
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার, (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নির্র্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যমান সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ভোট করার অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি:
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্যেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এজন্য যা যা করা দরকার জোরেশোরে নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাও নিউইয়র্কে যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। আমরা এ ঐতিহাসিক নির্বাচনের জন্য কাজ করছি।’
নির্বাচন আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কথায় চলছি না। আইনকানুন সংবিধান অনুযায়ী, সরল সোজা পথে চলতে চাই। বাঁকা পথে বা কারও ফেভারের জন্য কাজ করছি না।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইসির ‘মূল স্টেকহোল্ডার’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘উনাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন সম্ভব নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। আমাকে কেউ বলেনি যে ইলেকশনে ফাউল করার জন্য নামবেন। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবেন। সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন তো সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন দলের চার-পাঁচজন নিউইয়র্কেও গেছেন, সেখানেও আলোচনা হবে আশা করি।’
১৯৯১ সালের নির্বাচনে ‘অনেক গোলমাল’ হয়েছিল উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পরে সব ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ৯৬-এর ইলেকশনের আগেও গোলমাল হয়ে সব ঠাণ্ডা। ২০০৮ সালেও এরকম গোলমাল হয়েছে। সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। নানান মত থাকবে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাই এক জায়গায় আসবে।’
আগামী নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে ইসির পক্ষ থেকে ‘সর্বশক্তি প্রয়োগ করার’ অঙ্গীকার করে তিনি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশাও করেছেন। তিনি ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী থাকবে। ইসিও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।
রাজনীতিবিদরা সুন্দর নির্বাচন চাচ্ছেন জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘উনারা চাচ্ছেন সুন্দরভাবে খেলবেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাচ্ছেন। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। এক লাখ আর্মি সদস্য নামবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমি খুব কনফিডেন্ট; কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’
‘পিআর নয়, ভোট আরপিও অনুযায়ী’:
পিআর পদ্ধতির ভোটের দাবিতে কয়েকটি দল আন্দোলনে নামলেও ইসি নির্বাচনী আইন ও সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে সিইসি জানিয়েছেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলে আইন পরিবর্তন করতে হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘পিআর নিয়ে কথা বললে আবার আমার বিরুদ্ধে কথা হবে, যদিও এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভোট আমাদের আরপিও অনুযায়ী হবে। পিআর তো আরপিওতে নাই। আরপিও বদলে অন্য একটা দিলে হয় তখন। আইন না বদলালে তো হয় না। আমাকেও আরপিও মেনে চলতে হয়।’
শাপলা প্রতীক নিয়ে বিতর্ক:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এখনও নিবন্ধন হয়নি। এ দলটির আগে নিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য শাপলা প্রতীক চেয়েছিল, কিন্তু তা নাকচ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এখন এনসিপির দাবি নাকচ হওয়ায় কেন এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না সিইসির।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এনসিপি শাপলা চেয়েছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ শপলা চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য, তারা প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনায় আনেনি। এখন কেন এত আলোচনা? নাগরিক ঐক্যকে শাপলা দেইনি আমরা। সচিব এ বিষয়ে বলেছেন, আর বলতে চাই না।’
২৪ সেপ্টেম্বর ইসি নির্বাচনী প্রতীকের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে জাতীয় সংসদের প্রতীকের বিধিমালা সংশোধন করে ১১৫টি প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নৌকা প্রতীক স্থগিত করা হয়েছে। শাপলা প্রতীক রাখা হয়নি। ইসি সচিব এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছে; তবে এনসিপি ফের শাপলা চেয়ে আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘যে কোনো দল চিঠি দিতে পারে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া দল এনসিপি। চিঠি দেয়ায় অসুবিধা নেই। দল তো দেবেই। রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে সব কিছু অ্যাকমোডেট করেন। চিঠি বিবেচনা করবো, কী করা যায় দেখা যাক।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিঠি নিয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নেব। বৃহস্পতিবার, এলো, একা সিদ্ধান্ত নেব না। আমাদের কমিশনের সভায় আলোচনার পর পরবর্তী কাযক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেব। কমিশন সভার আলোচনার পর কথা হবে।’
শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিলে তা কীভাবে আদায় করতে হয়- জানা আছে বলে হুমকি দিয়েছেন এনসিপির নেতারা।
এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলতে পারেন। আমরা তো জবাব দিতে পারবো না, শ্র্রোতা। আমাদের কাজ আইন মোতাবেক করবো। এটা হুমকি মনে করি না। উনারা তো দেশদ্রোহী না, উনারা দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য, আমাদের জন্য হুমকি মনে করি না।’
নতুন দল নিবন্ধনে বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন:
সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন শেষ করার কথা ছিল। ২২টি দলের মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি সরেজমিন তদন্ত শেষে নিবন্ধন যোগ্যদের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে।
তবে কিছু দলের বিষয়ে আরও যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে বলে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘কাজ দ্রুত চলছে। টার্গেট ছিল এ মাসে করে ফেলতে পারবো। বিভিন্ন দল নানা অভিযোগ নিয়ে আসছে। আমাদের কিছু অতিরিক্ত ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হচ্ছে। নিশ্চিত হতে হচ্ছে, তারা সঠিকভাবে তথ্য দিয়েছে (কিনা)। এজন্য সময় লাগছে।’
কোন কোন দল নিবন্ধন পাচ্ছে জানতে চাইলে সিইসি তা নিয়ে এখন কথা বলতে চাননি। নিবন্ধনের জন্য ইসি ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে’ কাজ করছে জানিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, তারা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে না।
জাপা নিয়ে ‘কনফিউজড’:
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যের কারণে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে কয়েকটি দল। দলটিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়ও রাখা হয়নি।
এবার ইসির সংলাপে জাপাকে ডাকা হবে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সময় আসুক, দেখবো। এখনও তো সংলাপ শুরু করিনি। ঐকমত্য কমিশন এখনও সংলাপ করছে। আমরা একটু পরে করবো। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে শেষের দিকে দলের সঙ্গে বসবো। এখন (জাপা নিয়ে) রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, দেখি কি অবস্থা হয়।’
জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা ইসিতে নিবন্ধিত। ইতোমধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের একাংশ নিজেদের ‘মূল জাপা’ দাবি করে ইসিতে চিঠি দিয়েছে। এরমধ্যে কোনটি আসল জাপা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন সিইসি।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ৫টি পেয়েছি, আপনারা কয়টি পেয়েছেন? লাঙলের দাবিদার তো একাধিক। জাপা বললে আমি কনফিউজড, হাফ ডজন আছে। এজন্য কনফিউজড। সময় এলে দেখবেন, ভাবতে দেন।’
প্রবাসীদের আস্থা বাড়ানোর চেষ্টা:
সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে কানাডা সফরে গিয়ে এনআইডি সেবা চালু করেছিলেন সিইসি। সে দেশে তিনি পোস্টাল ভোটিং নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছিলেন।
সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের সঙ্গে কথা হলো, তারা বলছে- ইসির ওপর কনফিডেন্স রিস্টোর করেন। আমাদের ওপর অনাস্থার ভাব রয়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। (ভোট) সুষ্ঠু, সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসির উদ্যোগ, আইন সংস্কার বিষয়ে জানিয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুবই সন্তুষ্ট।’
পোস্টাল ব্যালটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং ছোট শিশু হাঁটা শুরু করেছে, এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আপনারা শরীক হোন, অংশগ্রহণ করুন; এতে আমাদের চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।’
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
জাপা নিয়ে ‘কনফিউজড’
নাগরিক ঐক্যও শাপলা চেয়েছিল, দেয়া হয়নি
এজন্য তিনি সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, ‘সব খেলোয়াড় যদি ফাউল করার জন্য মাঠে নামে, ম্যাচ পণ্ড হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সবাই ফাউল করার জন্য মাঠে নামলে তো মুশকিল। কেউ যেন ফাউল না করে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর। নির্বাচনে কেউ ফাউল করতে নামবে না, ভালো নিয়তে নামবে আশা করি।’
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার, (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নির্র্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যমান সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ভোট করার অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি:
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্যেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এজন্য যা যা করা দরকার জোরেশোরে নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাও নিউইয়র্কে যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। আমরা এ ঐতিহাসিক নির্বাচনের জন্য কাজ করছি।’
নির্বাচন আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কথায় চলছি না। আইনকানুন সংবিধান অনুযায়ী, সরল সোজা পথে চলতে চাই। বাঁকা পথে বা কারও ফেভারের জন্য কাজ করছি না।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইসির ‘মূল স্টেকহোল্ডার’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘উনাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন সম্ভব নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। আমাকে কেউ বলেনি যে ইলেকশনে ফাউল করার জন্য নামবেন। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবেন। সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন তো সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন দলের চার-পাঁচজন নিউইয়র্কেও গেছেন, সেখানেও আলোচনা হবে আশা করি।’
১৯৯১ সালের নির্বাচনে ‘অনেক গোলমাল’ হয়েছিল উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পরে সব ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ৯৬-এর ইলেকশনের আগেও গোলমাল হয়ে সব ঠাণ্ডা। ২০০৮ সালেও এরকম গোলমাল হয়েছে। সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। নানান মত থাকবে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাই এক জায়গায় আসবে।’
আগামী নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে ইসির পক্ষ থেকে ‘সর্বশক্তি প্রয়োগ করার’ অঙ্গীকার করে তিনি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশাও করেছেন। তিনি ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী থাকবে। ইসিও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।
রাজনীতিবিদরা সুন্দর নির্বাচন চাচ্ছেন জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘উনারা চাচ্ছেন সুন্দরভাবে খেলবেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাচ্ছেন। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। এক লাখ আর্মি সদস্য নামবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমি খুব কনফিডেন্ট; কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’
‘পিআর নয়, ভোট আরপিও অনুযায়ী’:
পিআর পদ্ধতির ভোটের দাবিতে কয়েকটি দল আন্দোলনে নামলেও ইসি নির্বাচনী আইন ও সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে সিইসি জানিয়েছেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলে আইন পরিবর্তন করতে হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘পিআর নিয়ে কথা বললে আবার আমার বিরুদ্ধে কথা হবে, যদিও এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভোট আমাদের আরপিও অনুযায়ী হবে। পিআর তো আরপিওতে নাই। আরপিও বদলে অন্য একটা দিলে হয় তখন। আইন না বদলালে তো হয় না। আমাকেও আরপিও মেনে চলতে হয়।’
শাপলা প্রতীক নিয়ে বিতর্ক:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এখনও নিবন্ধন হয়নি। এ দলটির আগে নিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য শাপলা প্রতীক চেয়েছিল, কিন্তু তা নাকচ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এখন এনসিপির দাবি নাকচ হওয়ায় কেন এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না সিইসির।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এনসিপি শাপলা চেয়েছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ শপলা চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য, তারা প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনায় আনেনি। এখন কেন এত আলোচনা? নাগরিক ঐক্যকে শাপলা দেইনি আমরা। সচিব এ বিষয়ে বলেছেন, আর বলতে চাই না।’
২৪ সেপ্টেম্বর ইসি নির্বাচনী প্রতীকের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে জাতীয় সংসদের প্রতীকের বিধিমালা সংশোধন করে ১১৫টি প্রতীক তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নৌকা প্রতীক স্থগিত করা হয়েছে। শাপলা প্রতীক রাখা হয়নি। ইসি সচিব এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছে; তবে এনসিপি ফের শাপলা চেয়ে আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘যে কোনো দল চিঠি দিতে পারে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া দল এনসিপি। চিঠি দেয়ায় অসুবিধা নেই। দল তো দেবেই। রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে সব কিছু অ্যাকমোডেট করেন। চিঠি বিবেচনা করবো, কী করা যায় দেখা যাক।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিঠি নিয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নেব। বৃহস্পতিবার, এলো, একা সিদ্ধান্ত নেব না। আমাদের কমিশনের সভায় আলোচনার পর পরবর্তী কাযক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেব। কমিশন সভার আলোচনার পর কথা হবে।’
শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিলে তা কীভাবে আদায় করতে হয়- জানা আছে বলে হুমকি দিয়েছেন এনসিপির নেতারা।
এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলতে পারেন। আমরা তো জবাব দিতে পারবো না, শ্র্রোতা। আমাদের কাজ আইন মোতাবেক করবো। এটা হুমকি মনে করি না। উনারা তো দেশদ্রোহী না, উনারা দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য, আমাদের জন্য হুমকি মনে করি না।’
নতুন দল নিবন্ধনে বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন:
সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন শেষ করার কথা ছিল। ২২টি দলের মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি সরেজমিন তদন্ত শেষে নিবন্ধন যোগ্যদের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে।
তবে কিছু দলের বিষয়ে আরও যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে বলে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘কাজ দ্রুত চলছে। টার্গেট ছিল এ মাসে করে ফেলতে পারবো। বিভিন্ন দল নানা অভিযোগ নিয়ে আসছে। আমাদের কিছু অতিরিক্ত ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হচ্ছে। নিশ্চিত হতে হচ্ছে, তারা সঠিকভাবে তথ্য দিয়েছে (কিনা)। এজন্য সময় লাগছে।’
কোন কোন দল নিবন্ধন পাচ্ছে জানতে চাইলে সিইসি তা নিয়ে এখন কথা বলতে চাননি। নিবন্ধনের জন্য ইসি ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে’ কাজ করছে জানিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, তারা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে না।
জাপা নিয়ে ‘কনফিউজড’:
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যের কারণে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে কয়েকটি দল। দলটিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়ও রাখা হয়নি।
এবার ইসির সংলাপে জাপাকে ডাকা হবে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সময় আসুক, দেখবো। এখনও তো সংলাপ শুরু করিনি। ঐকমত্য কমিশন এখনও সংলাপ করছে। আমরা একটু পরে করবো। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে শেষের দিকে দলের সঙ্গে বসবো। এখন (জাপা নিয়ে) রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, দেখি কি অবস্থা হয়।’
জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা ইসিতে নিবন্ধিত। ইতোমধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের একাংশ নিজেদের ‘মূল জাপা’ দাবি করে ইসিতে চিঠি দিয়েছে। এরমধ্যে কোনটি আসল জাপা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন সিইসি।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ৫টি পেয়েছি, আপনারা কয়টি পেয়েছেন? লাঙলের দাবিদার তো একাধিক। জাপা বললে আমি কনফিউজড, হাফ ডজন আছে। এজন্য কনফিউজড। সময় এলে দেখবেন, ভাবতে দেন।’
প্রবাসীদের আস্থা বাড়ানোর চেষ্টা:
সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে কানাডা সফরে গিয়ে এনআইডি সেবা চালু করেছিলেন সিইসি। সে দেশে তিনি পোস্টাল ভোটিং নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছিলেন।
সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের সঙ্গে কথা হলো, তারা বলছে- ইসির ওপর কনফিডেন্স রিস্টোর করেন। আমাদের ওপর অনাস্থার ভাব রয়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। (ভোট) সুষ্ঠু, সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসির উদ্যোগ, আইন সংস্কার বিষয়ে জানিয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুবই সন্তুষ্ট।’
পোস্টাল ব্যালটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং ছোট শিশু হাঁটা শুরু করেছে, এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আপনারা শরীক হোন, অংশগ্রহণ করুন; এতে আমাদের চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।’