আহমদ রফিক, বলা যায়- আমাদের বর্ষীয়ান ও জীবিত সর্বশেষ ভাষা সংগ্রামী, যিনি তার লেখালেখি, বক্তৃতা ও মননে ভাষা সংগ্রামকে উজ্জীবিত রেখেছেন। তার সঙ্গে আলাপ ও তার লেখার মাধ্যমে জেনেছি, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অনেক অজানা ইতিহাস। আন্দোলনে তার জড়িয়ে পড়া ও চূড়ান্ত সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে এ দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি বা আদর্শবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন প্রথম জীবনেই। সেখান থেকে এই ৯৬ বছর বয়সেও তিনি আর বেরুতে পারেননি।
তিনি একজন চিকিৎসক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক। তার রাজনৈতিক ও আদর্শবাদী কমিটমেন্ট এখনও পর্যন্ত অটল রেখেছেন। আজ পর্যন্ত কোথাও আপোস করেননি। কোনো শাসকের তল্পি বাহকের ভূমিকায় পথ হাঁটেননি। স্পষ্টভাষী এই ভাষা ও সাহিত্যযোদ্ধাকে কখনো কোনো সরকারের সমালোচনা করতে পিছপা হতে দেখা যায়নি। যে কারণে তিনি কোনো শাসক বা সরকারেরই প্রিয় পাত্র নন। কোনো সরকারই তাকে নিজের লোক ভাবতে পারেনি। এবং এতো বড় একজন মানুষের কোনো দুর্যোগ-দুর্দশায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
মাস চারেক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আমাকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন- “না, আজ পর্যন্ত কোনো সরকার আমাকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেনি।” কী বিস্ময়কর ব্যাপার!
প্রায় শতবছরে পৌঁছানো একজন যোদ্ধা, লেখক, বুদ্ধিজীবী, যার কোনো স্থায়ী রোজগার নেই, এসব জানা সত্ত্বেও একটি স্বাধীন দেশের কোনো সরকার তার কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
মাসখানেক ধরে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন হাসপাতালে। এ অবস্থায়ও সরকারের আগ্রহ হয়নি তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার। কিছুদিন আগে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এবারও তাকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
এখন ক্রমশ তার জীবনীশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে। কণ্ঠস্বর মৃদু হয়ে আসছে। আর স্মৃতিশক্তি তো লোপ পেয়েছে কয়েক মাস আগে থেকেই। বর্তমানে তার শরীরের অবস্থা এতটাই নাজুক যে, তিনি এ যাত্রায় আর ফিরে আসতে পারবেন কিনা, বোঝা দায়।
আজীবন মার্কসিস্ট এই মানুষটি জীবনে নিজের জন্য ভাবেননি। চাকরি ও ব্যবসায়ী জীবনে উপার্জিত অর্থবিত্ত তিনি মানুষের কল্যাণে, আর্ত-মানবতার সেবায় ব্যয় করেছেন। দান-দক্ষিণা দিয়েছেন অসহায় মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ ও ব্যধিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ঢাকার ইস্কাটন রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে জীবনযাপন করছেন। তার কোনো আয়ের উৎস নেই। এ বছর দুটি পুরস্কার/সম্মাননা বাবদ দশ লক্ষ টাকা পেয়েছেন, তাই দিয়ে তার বর্তমান সময়টা অতিবাহিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে তার প্রয়োজন সুচিকিৎসার। এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার মতো একজন বিরল মানুষ, বড় মানুষ, আপোসহীন লেখক, স্পষ্টভাষী বুদ্ধিজীবীকে প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা। তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজ তার এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও বেসরকারি উদ্যোগেই যতটুকু, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
এখন তার প্রধান অসুখ বার্ধক্য। শরীরের বিভিন্ন অর্গান দুর্বল হতে শুরু করেছে। অথচ এই গুণী মানুষটার নিয়মিত খোঁজখবর নিলে, সুচিকিৎসা দিলে হয়তো তিনি আরও কিছুকাল আমাদেরকে তার লেখনি দিয়ে আলোকিত করতে পারতেন। তিনি আবার আমাদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আহমদ রফিক, বলা যায়- আমাদের বর্ষীয়ান ও জীবিত সর্বশেষ ভাষা সংগ্রামী, যিনি তার লেখালেখি, বক্তৃতা ও মননে ভাষা সংগ্রামকে উজ্জীবিত রেখেছেন। তার সঙ্গে আলাপ ও তার লেখার মাধ্যমে জেনেছি, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অনেক অজানা ইতিহাস। আন্দোলনে তার জড়িয়ে পড়া ও চূড়ান্ত সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে এ দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি বা আদর্শবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন প্রথম জীবনেই। সেখান থেকে এই ৯৬ বছর বয়সেও তিনি আর বেরুতে পারেননি।
তিনি একজন চিকিৎসক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক। তার রাজনৈতিক ও আদর্শবাদী কমিটমেন্ট এখনও পর্যন্ত অটল রেখেছেন। আজ পর্যন্ত কোথাও আপোস করেননি। কোনো শাসকের তল্পি বাহকের ভূমিকায় পথ হাঁটেননি। স্পষ্টভাষী এই ভাষা ও সাহিত্যযোদ্ধাকে কখনো কোনো সরকারের সমালোচনা করতে পিছপা হতে দেখা যায়নি। যে কারণে তিনি কোনো শাসক বা সরকারেরই প্রিয় পাত্র নন। কোনো সরকারই তাকে নিজের লোক ভাবতে পারেনি। এবং এতো বড় একজন মানুষের কোনো দুর্যোগ-দুর্দশায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
মাস চারেক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আমাকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন- “না, আজ পর্যন্ত কোনো সরকার আমাকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেনি।” কী বিস্ময়কর ব্যাপার!
প্রায় শতবছরে পৌঁছানো একজন যোদ্ধা, লেখক, বুদ্ধিজীবী, যার কোনো স্থায়ী রোজগার নেই, এসব জানা সত্ত্বেও একটি স্বাধীন দেশের কোনো সরকার তার কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
মাসখানেক ধরে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন হাসপাতালে। এ অবস্থায়ও সরকারের আগ্রহ হয়নি তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার। কিছুদিন আগে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এবারও তাকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
এখন ক্রমশ তার জীবনীশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে। কণ্ঠস্বর মৃদু হয়ে আসছে। আর স্মৃতিশক্তি তো লোপ পেয়েছে কয়েক মাস আগে থেকেই। বর্তমানে তার শরীরের অবস্থা এতটাই নাজুক যে, তিনি এ যাত্রায় আর ফিরে আসতে পারবেন কিনা, বোঝা দায়।
আজীবন মার্কসিস্ট এই মানুষটি জীবনে নিজের জন্য ভাবেননি। চাকরি ও ব্যবসায়ী জীবনে উপার্জিত অর্থবিত্ত তিনি মানুষের কল্যাণে, আর্ত-মানবতার সেবায় ব্যয় করেছেন। দান-দক্ষিণা দিয়েছেন অসহায় মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ ও ব্যধিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ঢাকার ইস্কাটন রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে জীবনযাপন করছেন। তার কোনো আয়ের উৎস নেই। এ বছর দুটি পুরস্কার/সম্মাননা বাবদ দশ লক্ষ টাকা পেয়েছেন, তাই দিয়ে তার বর্তমান সময়টা অতিবাহিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে তার প্রয়োজন সুচিকিৎসার। এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার মতো একজন বিরল মানুষ, বড় মানুষ, আপোসহীন লেখক, স্পষ্টভাষী বুদ্ধিজীবীকে প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা। তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আজ তার এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও বেসরকারি উদ্যোগেই যতটুকু, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
এখন তার প্রধান অসুখ বার্ধক্য। শরীরের বিভিন্ন অর্গান দুর্বল হতে শুরু করেছে। অথচ এই গুণী মানুষটার নিয়মিত খোঁজখবর নিলে, সুচিকিৎসা দিলে হয়তো তিনি আরও কিছুকাল আমাদেরকে তার লেখনি দিয়ে আলোকিত করতে পারতেন। তিনি আবার আমাদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।