alt

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ

অর্থ পাচারকারীদের অপরাধের শরিক না হতে বিশ্ববাসীর প্রতি মুহাম্মদ ইউনূসের আহবান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘে ভাষন দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা : ছবি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে অন্তবর্তী সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরে তিনি এ আহ্বান জানান।

আজ শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে বিশ্ব নেতাদের সামনে দ্বিতীয়বারের মত ভাষণ দেন ইউনূস।

সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরার সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে আমাদের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ‘দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া’ পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার যে সম্ভব নয়, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধি বিধানগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়— এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। আমি উন্নয়নশীল দেশ হতে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধি বিধান প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের প্রস্তাব করছি।”

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের অগাস্টে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনাবসান হয়। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর চেষ্টায় অন্তবর্তী সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে বৈঠক করেছে দুদক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে গত ডিসেম্বরে দাখিল করা শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে গড়ে প্রতি বছর ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ‘পাচার’ হয়েছে।

জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা একে একে আবিষ্কার করি দুর্নীতি ও জনগণের সম্পদ চুরি কি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কি ভয়ানক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। আমরা এর অবসান ঘটাচ্ছি যেন আর কখনোই উন্নয়নকে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না যায়। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত করতে আমরা সংস্কারমূলক কিছু কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।”

এ বছর ৮০ বছর পূর্ণ করছে জাতিসংঘ। এবারের সাধারণ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য: ‘বেটার টুগেদার: এইট্টি ইয়ারস অ্যান্ড মোর ফর পিস, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস।’ এই অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।

এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছয় রাজনীতিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন। এছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন। প্রধান দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ অধিবেশনে যাওয়ার এমন উদ্যোগ বাংলাদেশে নজিরবিহীন।

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের ফাঁকে নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, বেলজিয়ামের রাণী ম্যাথিল্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্বনেতাদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।

এছাড়া গত কয়েক দিনে আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বাজরাম বেগাজ, কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানি, বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট ডুমা গিডিওন বোকো, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠক হয় মুহাম্মদ ইউনূসের।

সফর শেষে ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

ছবি

এবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে

ছবি

বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের হজ করতে হবে নিজ দেশ থেকে, সতর্কবার্তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন দিন, হাসপাতালে ভর্তি ২১৯ জন

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে টিআইবির দাবি ‘ভিত্তিহীন’: প্রেস সচিব

ছবি

আরসা-আরএসও হামলায় বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মদদের অভিযোগ তুলল আরাকান আর্মি

ছবি

জাতিসংঘে ইউনূসের ভাষণ: বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তাপ নিউইয়র্কে

ছবি

যুবকরা আমাকে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের’ দায়িত্ব দিয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত

ছবি

বাংলাদেশি কর্মী নিতে আগ্রহী আলবেনিয়া

ছবি

এক বছরে ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস চেয়ে পুলিশের কাছে দুদকের চিঠি

ছবি

অক্সিজেন ছাড়াই মানাসলু চূড়ায় বাবর, প্রথম অভিযানে সফল তানভীর

ছবি

আদর্শবাদী আহমদ রফিক কেন অবহেলিত!

চট্টগ্রাম আদালতে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ প্রথম অভিযোগপত্র গ্রহণ

ইনুর বিরুদ্ধে আট অভিযোগ, মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘প্রমাণ’ মেলার দাবি প্রসিকিউশনের

ডেঙ্গু: আরও ৬৩২ জন হাসপাতালে ভর্তি, এ বছর আক্রান্ত ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে

জাতিসংঘে এত বড় প্রতিনিধিদলের সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুললো টিআইবি

‘সবাই ফাউল করার জন্য মাঠে নামলে তো মুশকিল’: সিইসি

ছবি

ক্লাব ডি মাদ্রিদে যোগ দেয়ার প্রস্তাব পেলেন ইউনূস

ছবি

সংসদ নির্বাচন: ১১৫ প্রতীকের গেজেট প্রকাশ, নেই শাপলা

ছবি

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর এক লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং: জনপ্রতি ৭০০ টাকা ব্যয়ে অ্যাপ চালু করছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

ট্রাম্পের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ইউনূস, বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৬৮ রোগী

৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ১০ ডিসেম্বর

ছবি

‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’ ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক

ছবি

থেয়ারওয়ার্ল্ডের আনলক বিগ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড পেলেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

আহত ফায়ার ফাইটারদের চিকিৎসায় ঢাকায় সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

ছবি

এলডিসি উত্তরণে ডব্লিউটিওর সহযোগিতা প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

ইসির সংলাপ: প্রথম ধাপে থাকছেন শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

নিউ ইয়র্কে বিএনপি-এনসিপি নেতাদের ওপর হামলায় গভীর দুঃখ প্রকাশ অন্তর্বর্তী সরকারের

ছবি

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে গুলি করার নির্দেশের সাক্ষ্য

ছবি

‘শাপলা’ পাবে না এনসিপি: ইসি সচিব

ছবি

বিশ্বকে বদলাতে তরুণদের ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

বেলজিয়ামের রানির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

ছবি

আমিরাতের ভিসা নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ বাংলাদেশ দূতাবাসের

tab

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ

অর্থ পাচারকারীদের অপরাধের শরিক না হতে বিশ্ববাসীর প্রতি মুহাম্মদ ইউনূসের আহবান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

জাতিসংঘে ভাষন দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা : ছবি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে অন্তবর্তী সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরে তিনি এ আহ্বান জানান।

আজ শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে বিশ্ব নেতাদের সামনে দ্বিতীয়বারের মত ভাষণ দেন ইউনূস।

সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরার সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে আমাদের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ‘দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া’ পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার যে সম্ভব নয়, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধি বিধানগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়— এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। আমি উন্নয়নশীল দেশ হতে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধি বিধান প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের প্রস্তাব করছি।”

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের অগাস্টে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনাবসান হয়। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর চেষ্টায় অন্তবর্তী সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে বৈঠক করেছে দুদক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে গত ডিসেম্বরে দাখিল করা শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে গড়ে প্রতি বছর ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ‘পাচার’ হয়েছে।

জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা একে একে আবিষ্কার করি দুর্নীতি ও জনগণের সম্পদ চুরি কি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কি ভয়ানক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। আমরা এর অবসান ঘটাচ্ছি যেন আর কখনোই উন্নয়নকে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না যায়। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত করতে আমরা সংস্কারমূলক কিছু কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।”

এ বছর ৮০ বছর পূর্ণ করছে জাতিসংঘ। এবারের সাধারণ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য: ‘বেটার টুগেদার: এইট্টি ইয়ারস অ্যান্ড মোর ফর পিস, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস।’ এই অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।

এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছয় রাজনীতিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন। এছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন। প্রধান দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ অধিবেশনে যাওয়ার এমন উদ্যোগ বাংলাদেশে নজিরবিহীন।

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের ফাঁকে নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, বেলজিয়ামের রাণী ম্যাথিল্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্বনেতাদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।

এছাড়া গত কয়েক দিনে আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বাজরাম বেগাজ, কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানি, বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট ডুমা গিডিওন বোকো, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠক হয় মুহাম্মদ ইউনূসের।

সফর শেষে ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

back to top