নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির সংলাপ
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মব সহিংসতা’ পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে বলে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
যে ‘ভয়াবহ পরিস্থিতিতে’ বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে, তাতে গতানুগতিক নির্বাচন করলে কী হবে তা ‘অনুমেয়’-এমন আশঙ্কা করে তারা বলেন, আগামীতে যে কোনো সময় মব সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তারা সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন।
‘মেরুদণ্ড শক্ত ও স্বাধীন হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব’
‘সফলভাবে নির্বাচন করাই বড় চ্যালেঞ্জ’
এয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল প্রথমবারের মত অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপ শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের পরামর্শ রেখেছেন।
নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। এতে চার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অনেকেই কোনো চাপের মুখে কোনো দলকে শাপলা প্রতীক না দিতে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মত না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এছাড়া নাগরিক সমাজের কেউ কেউ পোস্টাল ভোটিংকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে তারা অপতথ্য ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং এআইয়ের প্রভাব ঠেকাতেও সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
সংলাপে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ১২ জন আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার রাশেদা কে চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ, বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি, পুলিশ রিফর্ম কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, কবি মোহন রায়হান, টিআইবি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
সংলাপের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এ সংলাপ ভূমিকা রাখবে আশা করি। বিশ্বাসযোগ্য সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, ‘অনেক কাজ শেষ করেছি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি আইনি সংস্কার করেছি। সুষ্ঠুভাবে ভোট করার জন্য অনেক এগিয়ে গেছি। এ সংলাপ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। দেরিতে সংলাপ শুরু করলেও ঐমত্য কমিশন আলোচনা করে ইসির কাজ হালকা হয়ে গেছে। যেটুকু গ্যাপ আছে সেটুকু আপনারা ফিলআপ করে দেবেন।’
প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের ভেতরে ভোটে নিয়োজিত ১০ লাখের বেশি লোকবলের জন্য ভোটের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি কর্মকর্তা, আইনে হেফাজতে থাকা লোক ভোট দিতে পারবের। যা এবার মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
সফলভাবে নির্বাচন করাই বড় চ্যালেঞ্জ
সংলাপে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘বড় চালেঞ্জ ও অর্জনের বিষয় হচ্ছে সফলভাবে নির্বাচন করা। দেশের জন্য এটা ট্রানজিশন, এর সফলতার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে। ৭০ এর নির্বাচন যেমন টার্নিং পয়েন্ট ছিল, এবারের নির্বাচনটিও টার্নিং পয়েন্ট হবে।’
একটি প্রজন্মেন প্রত্যাশা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন হচ্ছে মন্তব্য করেছেন হুমায়ুন কবির বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের ভাবনার সাথে সামঞ্জস্য কীভাবে রাখব ভাবতে হবে। এ প্রজন্মের প্রত্যাশা একেবারেই ভিন্ন, তরুণরা আধুনিক, বিশ্বের সাথে যুক্ত; দায়বদ্ধ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার সাথে রয়েছে। ১৯৬৮-৬৯ সালে একবার দেখেছি, সেরকম পরিবর্তন হচ্ছে।’
সাধারণ মানুষ ইসিকে ‘উঁচু নৈতিক মানদন্ডে’ দেখতে চাইবে মন্তব্য করে সাবেক রাষ্ট্রদূত।
গত ১৫ বছরে ‘ভায়োলেন্স নরমালাইজেশন’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এটা যেন হ্যান্ডেল করতে পারে সেজন্য কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।
মব সহিংসতা পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে
আলোচনায় অংশ নিয়ে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ‘এ সরকারের ভিন্ন ক্যারেক্টার রয়েছে।’
মব ভায়োলেন্স পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যে কোনো সময়ে মব জাস্টিস ভায়োলেন্সে চলে যেতে পারে; পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে।’
মাঠ প্রশাসনে ডিসি ও ইউএনও নিয়ন্ত্রণ থাকার বিষয়টি তুলে ধরে আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আলোচনা হচ্ছে -ইসি তারিখ ঘোষণা করলে অনেক কিছু বন্ধ হয়ে যাবে। তখন পুরো প্রশাসনের ইসির অধীনে থাকবে, আপনি কাজ করবেন। ইসি কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসন কমান্ড ও কন্ট্রোল করা খুবই ইম্পর্টেন্ট নির্বাচন পরিচালনার জন্য।’
অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আব্দুল ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘ইতিহাস ভুলে যাই- ১৫ ফেব্রুয়ারির কথা ভুলে যাই। মাগুরা উপ নির্বাচনের সময় সিইসি চলে এসেছেন ঢাকায়। তিনি কেন বন্ধ করেনি? আমি নির্দেশ দিচ্ছি বন্ধ, অথচ তিনি ঢাকায়। এ সিচুয়েশনটা অবশ্যই প্রার্থনা করি আপনার জন্য হবে না। মব তৈরি হয়ে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলেছেন অনেকে এখনও স্বাভাবিক অবস্থা না। ট্যাগিং করাটা বন্ধ নয়। ইসির বিরুদ্ধেও অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়া হচ্ছিল, হতে পারে আগামীতে।’
‘মেরুদন্ড শক্ত ও স্বাধীন হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘৫৪ বছরেও ক্ষমতার ট্রানজিশন কেমন হবে তা আমরা ঠিক করতে পারিনি। তিনজন সাবেক প্রধান বিচারপতির পরিণতি আপনারা দেখেছেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিণতি আপনারা দেখেছেন।’
আইন শৃঙ্খলায় পুলিশের আস্থা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন- সিইসির ভাষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চ্যালেঞ্জে আছেন।’
কমিশনকে স্বাধীনভাবে মেরুদন্ড সোজা করে নির্বাচন উপহার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘যদি সাহসী হতে পারেন, সত্যি মেরুদন্ড থাকে তাহলে স্বাধীন হতে পারবেন। স্বাধীন হলে জাতিকে সুন্দর. ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন। চ্যালেঞ্জ কিন্তু ভয়ঙ্কর অবস্থা। গতবারও এসেছি। তারা সেই সাহস মেরুদন্ড দেখাতে পারেনি, তারা ফেইল করেছেন।’
দলগুলোর ‘মনোনয়নবাণিজ্য বন্ধ’ করতে হবে মন্তব্য করে ঢাবি শিক্ষক আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রবাহ দিতে হবে। জাতীয় ও দেশি পর্যবেক্ষক বাড়াতে হবে। সাহসের বিকল্প নেই, সাহসী হন।’
পিআর এখন নয় আর শাপলা নিয়ে বিতর্ক নয়:
সংলাপে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার ঢাকার বাইরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
পিআর ভোট পদ্ধতি সচেতনতা সৃষ্টি না করে কোনোভাবে পদ্ধতিটির পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো নতুন সিস্টেম চালু করতে হলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়, তারপর চালু করতে হয়। পিআর সিস্টেম এখন দাবি উঠেছে, এ অনেক পরে করার জন্য পরামর্শ দেবো।..সচেতনতা, জ্ঞান দরকার। ইভিএম ১০-১৫ বছর চেষ্টা করেও পারেনি। পিআর সিস্টেম চালুর আগে হাজারোও চিন্তা করবেন।’
শাপলা প্রতীক নিয়ে এনসিপির দাবির বিষয়টি ইঙ্গিত করে চবি অধ্যাপক বলেন, ‘বিশেষ মার্কা না দিলে ভোটে রাজি না এমন দাবি- এটা ঠিক না। স্বাধীন ইসির নিজস্ব এখতিয়ার এটা। ইসিকে চাপ দেবেন না। মার্কা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কোনো অধিকার নেই।’
চবি উপাচার্য বলেন, ‘একটা সময়ে গতানুতিক স্টাইলে নির্বাচন করলে কি হবে আপনারা জানেন। নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে আছেন।’
পোস্টাল ভোটিংকে নতুন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘বিতর্কিত হওয়ার অনেক সুযোগ। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আচরণবিধি প্রতিপালনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে নির্বাচন কিছুটা শান্তিপূর্ণ হতে পারে।’
‘না’ ভোট সব আসনে:
আরপিও সংস্কারের বেশ কিছু প্রস্তাবনার বিষয়ে টিআইবি পরিচালক বদিউজ্জামান বলেছেন, হলফনামার তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কার্যকর ব্যবস্থা ও আচরণবিধি প্রয়োগের ‘দুর্বলতা রয়েছে’।
নির্বাচনি ব্যয় তদারকি ও প্রকাশের বিষয়ে ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঋণখেলাপিদের বিষয়ে (পরিশোধ/তফসিল করা) মনোনয়নপত্র জমার আগের দিন পর্যন্ত সময় দেওয়ায় তারা উৎসাহিত হবে। নতুন প্রস্তাবে আমরা পেছনে ফিরে যাচ্ছি, প্রকারান্তরে ঋণখেলাপিদের উৎসাহিত করা হবে। ‘না’ ভোটের বিধান শুধু একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনে ব্যবস্থা রাখা জরুরি।’
ভোটের আগে ও পরে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা:
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, ভোটের আগে-ভোটের সময় ও পরে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে যারা জিততে পারেনি, নারী ও শিশুর প্রতি তাদের নির্যতনের কথা ভুলে গেলে চলবে না।
তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশার সাথে নবীন প্রবীন ধনী দরিদ্র সবার কথা মনে রাখতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়ে গেছে। নারীর বিষয়ে প্রচন্ড রকম ক্ষোভ রয়ে গেছে। ৫১% নারী, অথচ আসন ৫-৭% নারীর প্রতিনিধিত্ব। আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি।’
মহিলা বুথে মহিল পুলিশ:
সংলাপে হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম নিলে, কোন জিনিস করা যাবে, কি করা যাবে না, সাহসের সাথে কি করতে হবে, আমরা ভোট নির্ভয়ে ভোট দেব- কিছু স্লোগান নিয়ে এগোলে উজ্জীবিত হবে।’
মহিলা ভোটকেন্দ্রের জন্য মহিলা পুলিশ রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের এ সদস্য আরও বলেন, ‘এখনও শঙ্কা মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু ভোট হবে নাকি আগের মত হবে, প্রচারণা নিলে মানুষের মধ্যে শঙ্কা কেটে আসবে, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসছে। এটা মনে রাখতে হবে ইসির। হটকারী সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।’
আরও নানা পরামর্শ:
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান বলেছেন, ‘আস্থা অর্জনই প্রধান সমস্যা। এটা তৈরি করা ইসির প্রধান দায়িত্ব। আইনানুগভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিকে প্রমাণ করতে হবে, নিরপেক্ষ ভোট আয়োজন করতে হবে।’ তিনি ভুয়া তথ্য রোধে ইসিকে বড় ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ভোটের আগে বাহিনীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হবে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি করতে ইসিকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে অন্যরা অনুসরণ করতে পারে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান শাপলা প্রতীক কোনো দলকে না দেওয়ায় ইসির কঠোর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘জাতীয় প্রতীক শাপলা বিশেষ দলের চাওয়া, চাপ এবং নানা ধরনের অপচেষ্টার সামনে এ নির্বাচন কমিশন দৃঢ় সংকল্প থেকেছে। মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে। আমার মাথা নত হয় না-ইসিকে বলতে হবে।’
বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন, মেরুদন্ড শক্ত-মেরুদন্ডহীনের কথা বলেছে অনেকে, সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো গেলে ভালো নির্বাচন দিয়ে ইসি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকতে পারবেন।
সাংবাদিক সোহরার হোসেন বলেন, এ সরকারের আগামী পাঁচ মাসে কি কি করণীয় তা জনসমক্ষে জানাতে হবে। এটি করতে পারলে ইসির প্রতি আস্থা আসবে জনগণেরর। নির্বাচন করে জনগণ। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সব পক্ষের। সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি ইসির উদ্দেশ্যে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হলে সরে আসা বা পদত্যাগ করা উচিত।
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জায়িফ রহমান বলেন, নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ইসি দৃশ্যমান উদ্যোগ নিলে জনগণের মধ্যে ভরসা বাড়বে ইসির প্রতি। মিস ইনফরমেশন, এআই জেনারেটেড তথ্যের অপব্যবহার রোধে তৎপর থাকার অনুরোধ করেন শিক্ষার্থী।
নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাই ইসি:
সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাই। সবাই যাতে দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই। আমাদের সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।’
সবাইকে লিখিতভাবে হলেও পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানান সিইসি। এ সময় ফোলালাপ ফাঁসের ভয়ে ‘ফোন ধরেন না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিইসি বলেন, ‘অনেকের ফোন কল ধরি না। কল ফাঁসের ভয়ে ফোনে কথা বলি না। কিন্তু আমাদের দরজা খোলা। যেকোনো সময়ে আপনাদের সুপারিশ আমরা গ্রহণ করব।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির সংলাপ
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মব সহিংসতা’ পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে বলে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
যে ‘ভয়াবহ পরিস্থিতিতে’ বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে, তাতে গতানুগতিক নির্বাচন করলে কী হবে তা ‘অনুমেয়’-এমন আশঙ্কা করে তারা বলেন, আগামীতে যে কোনো সময় মব সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তারা সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন।
‘মেরুদণ্ড শক্ত ও স্বাধীন হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব’
‘সফলভাবে নির্বাচন করাই বড় চ্যালেঞ্জ’
এয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল প্রথমবারের মত অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপ শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের পরামর্শ রেখেছেন।
নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। এতে চার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অনেকেই কোনো চাপের মুখে কোনো দলকে শাপলা প্রতীক না দিতে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মত না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এছাড়া নাগরিক সমাজের কেউ কেউ পোস্টাল ভোটিংকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে তারা অপতথ্য ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং এআইয়ের প্রভাব ঠেকাতেও সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
সংলাপে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ১২ জন আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার রাশেদা কে চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ, বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি, পুলিশ রিফর্ম কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, কবি মোহন রায়হান, টিআইবি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
সংলাপের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এ সংলাপ ভূমিকা রাখবে আশা করি। বিশ্বাসযোগ্য সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, ‘অনেক কাজ শেষ করেছি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি আইনি সংস্কার করেছি। সুষ্ঠুভাবে ভোট করার জন্য অনেক এগিয়ে গেছি। এ সংলাপ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। দেরিতে সংলাপ শুরু করলেও ঐমত্য কমিশন আলোচনা করে ইসির কাজ হালকা হয়ে গেছে। যেটুকু গ্যাপ আছে সেটুকু আপনারা ফিলআপ করে দেবেন।’
প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের ভেতরে ভোটে নিয়োজিত ১০ লাখের বেশি লোকবলের জন্য ভোটের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি কর্মকর্তা, আইনে হেফাজতে থাকা লোক ভোট দিতে পারবের। যা এবার মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
সফলভাবে নির্বাচন করাই বড় চ্যালেঞ্জ
সংলাপে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘বড় চালেঞ্জ ও অর্জনের বিষয় হচ্ছে সফলভাবে নির্বাচন করা। দেশের জন্য এটা ট্রানজিশন, এর সফলতার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে। ৭০ এর নির্বাচন যেমন টার্নিং পয়েন্ট ছিল, এবারের নির্বাচনটিও টার্নিং পয়েন্ট হবে।’
একটি প্রজন্মেন প্রত্যাশা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন হচ্ছে মন্তব্য করেছেন হুমায়ুন কবির বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের ভাবনার সাথে সামঞ্জস্য কীভাবে রাখব ভাবতে হবে। এ প্রজন্মের প্রত্যাশা একেবারেই ভিন্ন, তরুণরা আধুনিক, বিশ্বের সাথে যুক্ত; দায়বদ্ধ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার সাথে রয়েছে। ১৯৬৮-৬৯ সালে একবার দেখেছি, সেরকম পরিবর্তন হচ্ছে।’
সাধারণ মানুষ ইসিকে ‘উঁচু নৈতিক মানদন্ডে’ দেখতে চাইবে মন্তব্য করে সাবেক রাষ্ট্রদূত।
গত ১৫ বছরে ‘ভায়োলেন্স নরমালাইজেশন’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এটা যেন হ্যান্ডেল করতে পারে সেজন্য কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।
মব সহিংসতা পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে
আলোচনায় অংশ নিয়ে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ‘এ সরকারের ভিন্ন ক্যারেক্টার রয়েছে।’
মব ভায়োলেন্স পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যে কোনো সময়ে মব জাস্টিস ভায়োলেন্সে চলে যেতে পারে; পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে।’
মাঠ প্রশাসনে ডিসি ও ইউএনও নিয়ন্ত্রণ থাকার বিষয়টি তুলে ধরে আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আলোচনা হচ্ছে -ইসি তারিখ ঘোষণা করলে অনেক কিছু বন্ধ হয়ে যাবে। তখন পুরো প্রশাসনের ইসির অধীনে থাকবে, আপনি কাজ করবেন। ইসি কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসন কমান্ড ও কন্ট্রোল করা খুবই ইম্পর্টেন্ট নির্বাচন পরিচালনার জন্য।’
অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আব্দুল ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘ইতিহাস ভুলে যাই- ১৫ ফেব্রুয়ারির কথা ভুলে যাই। মাগুরা উপ নির্বাচনের সময় সিইসি চলে এসেছেন ঢাকায়। তিনি কেন বন্ধ করেনি? আমি নির্দেশ দিচ্ছি বন্ধ, অথচ তিনি ঢাকায়। এ সিচুয়েশনটা অবশ্যই প্রার্থনা করি আপনার জন্য হবে না। মব তৈরি হয়ে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলেছেন অনেকে এখনও স্বাভাবিক অবস্থা না। ট্যাগিং করাটা বন্ধ নয়। ইসির বিরুদ্ধেও অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়া হচ্ছিল, হতে পারে আগামীতে।’
‘মেরুদন্ড শক্ত ও স্বাধীন হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘৫৪ বছরেও ক্ষমতার ট্রানজিশন কেমন হবে তা আমরা ঠিক করতে পারিনি। তিনজন সাবেক প্রধান বিচারপতির পরিণতি আপনারা দেখেছেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিণতি আপনারা দেখেছেন।’
আইন শৃঙ্খলায় পুলিশের আস্থা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন- সিইসির ভাষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চ্যালেঞ্জে আছেন।’
কমিশনকে স্বাধীনভাবে মেরুদন্ড সোজা করে নির্বাচন উপহার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘যদি সাহসী হতে পারেন, সত্যি মেরুদন্ড থাকে তাহলে স্বাধীন হতে পারবেন। স্বাধীন হলে জাতিকে সুন্দর. ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন। চ্যালেঞ্জ কিন্তু ভয়ঙ্কর অবস্থা। গতবারও এসেছি। তারা সেই সাহস মেরুদন্ড দেখাতে পারেনি, তারা ফেইল করেছেন।’
দলগুলোর ‘মনোনয়নবাণিজ্য বন্ধ’ করতে হবে মন্তব্য করে ঢাবি শিক্ষক আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে অবাধ তথ্য প্রবাহ দিতে হবে। জাতীয় ও দেশি পর্যবেক্ষক বাড়াতে হবে। সাহসের বিকল্প নেই, সাহসী হন।’
পিআর এখন নয় আর শাপলা নিয়ে বিতর্ক নয়:
সংলাপে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার ঢাকার বাইরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
পিআর ভোট পদ্ধতি সচেতনতা সৃষ্টি না করে কোনোভাবে পদ্ধতিটির পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো নতুন সিস্টেম চালু করতে হলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়, তারপর চালু করতে হয়। পিআর সিস্টেম এখন দাবি উঠেছে, এ অনেক পরে করার জন্য পরামর্শ দেবো।..সচেতনতা, জ্ঞান দরকার। ইভিএম ১০-১৫ বছর চেষ্টা করেও পারেনি। পিআর সিস্টেম চালুর আগে হাজারোও চিন্তা করবেন।’
শাপলা প্রতীক নিয়ে এনসিপির দাবির বিষয়টি ইঙ্গিত করে চবি অধ্যাপক বলেন, ‘বিশেষ মার্কা না দিলে ভোটে রাজি না এমন দাবি- এটা ঠিক না। স্বাধীন ইসির নিজস্ব এখতিয়ার এটা। ইসিকে চাপ দেবেন না। মার্কা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কোনো অধিকার নেই।’
চবি উপাচার্য বলেন, ‘একটা সময়ে গতানুতিক স্টাইলে নির্বাচন করলে কি হবে আপনারা জানেন। নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে আছেন।’
পোস্টাল ভোটিংকে নতুন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘বিতর্কিত হওয়ার অনেক সুযোগ। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আচরণবিধি প্রতিপালনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে নির্বাচন কিছুটা শান্তিপূর্ণ হতে পারে।’
‘না’ ভোট সব আসনে:
আরপিও সংস্কারের বেশ কিছু প্রস্তাবনার বিষয়ে টিআইবি পরিচালক বদিউজ্জামান বলেছেন, হলফনামার তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কার্যকর ব্যবস্থা ও আচরণবিধি প্রয়োগের ‘দুর্বলতা রয়েছে’।
নির্বাচনি ব্যয় তদারকি ও প্রকাশের বিষয়ে ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঋণখেলাপিদের বিষয়ে (পরিশোধ/তফসিল করা) মনোনয়নপত্র জমার আগের দিন পর্যন্ত সময় দেওয়ায় তারা উৎসাহিত হবে। নতুন প্রস্তাবে আমরা পেছনে ফিরে যাচ্ছি, প্রকারান্তরে ঋণখেলাপিদের উৎসাহিত করা হবে। ‘না’ ভোটের বিধান শুধু একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনে ব্যবস্থা রাখা জরুরি।’
ভোটের আগে ও পরে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা:
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, ভোটের আগে-ভোটের সময় ও পরে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে যারা জিততে পারেনি, নারী ও শিশুর প্রতি তাদের নির্যতনের কথা ভুলে গেলে চলবে না।
তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশার সাথে নবীন প্রবীন ধনী দরিদ্র সবার কথা মনে রাখতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়ে গেছে। নারীর বিষয়ে প্রচন্ড রকম ক্ষোভ রয়ে গেছে। ৫১% নারী, অথচ আসন ৫-৭% নারীর প্রতিনিধিত্ব। আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি।’
মহিলা বুথে মহিল পুলিশ:
সংলাপে হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম নিলে, কোন জিনিস করা যাবে, কি করা যাবে না, সাহসের সাথে কি করতে হবে, আমরা ভোট নির্ভয়ে ভোট দেব- কিছু স্লোগান নিয়ে এগোলে উজ্জীবিত হবে।’
মহিলা ভোটকেন্দ্রের জন্য মহিলা পুলিশ রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের এ সদস্য আরও বলেন, ‘এখনও শঙ্কা মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু ভোট হবে নাকি আগের মত হবে, প্রচারণা নিলে মানুষের মধ্যে শঙ্কা কেটে আসবে, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসছে। এটা মনে রাখতে হবে ইসির। হটকারী সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।’
আরও নানা পরামর্শ:
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান বলেছেন, ‘আস্থা অর্জনই প্রধান সমস্যা। এটা তৈরি করা ইসির প্রধান দায়িত্ব। আইনানুগভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিকে প্রমাণ করতে হবে, নিরপেক্ষ ভোট আয়োজন করতে হবে।’ তিনি ভুয়া তথ্য রোধে ইসিকে বড় ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ভোটের আগে বাহিনীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হবে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি করতে ইসিকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে অন্যরা অনুসরণ করতে পারে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান শাপলা প্রতীক কোনো দলকে না দেওয়ায় ইসির কঠোর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘জাতীয় প্রতীক শাপলা বিশেষ দলের চাওয়া, চাপ এবং নানা ধরনের অপচেষ্টার সামনে এ নির্বাচন কমিশন দৃঢ় সংকল্প থেকেছে। মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে। আমার মাথা নত হয় না-ইসিকে বলতে হবে।’
বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন, মেরুদন্ড শক্ত-মেরুদন্ডহীনের কথা বলেছে অনেকে, সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো গেলে ভালো নির্বাচন দিয়ে ইসি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকতে পারবেন।
সাংবাদিক সোহরার হোসেন বলেন, এ সরকারের আগামী পাঁচ মাসে কি কি করণীয় তা জনসমক্ষে জানাতে হবে। এটি করতে পারলে ইসির প্রতি আস্থা আসবে জনগণেরর। নির্বাচন করে জনগণ। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সব পক্ষের। সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি ইসির উদ্দেশ্যে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হলে সরে আসা বা পদত্যাগ করা উচিত।
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জায়িফ রহমান বলেন, নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ইসি দৃশ্যমান উদ্যোগ নিলে জনগণের মধ্যে ভরসা বাড়বে ইসির প্রতি। মিস ইনফরমেশন, এআই জেনারেটেড তথ্যের অপব্যবহার রোধে তৎপর থাকার অনুরোধ করেন শিক্ষার্থী।
নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাই ইসি:
সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাই। সবাই যাতে দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই। আমাদের সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।’
সবাইকে লিখিতভাবে হলেও পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানান সিইসি। এ সময় ফোলালাপ ফাঁসের ভয়ে ‘ফোন ধরেন না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিইসি বলেন, ‘অনেকের ফোন কল ধরি না। কল ফাঁসের ভয়ে ফোনে কথা বলি না। কিন্তু আমাদের দরজা খোলা। যেকোনো সময়ে আপনাদের সুপারিশ আমরা গ্রহণ করব।’