ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচারের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা। ইতোমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে এ অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে জোটভুক্ত দলগুলোর নাম এলে তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মঙ্গলবার,(০৭ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন দমাতে গিয়ে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে’ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার দলের নেতাকর্মী এবং সমমনাদের বিরুদ্ধে এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
প্রয়োজনে জোট শরিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা
ফের আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলেই তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন: চিফ প্রসিকিউটর
ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে এবং তারা তদন্ত কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করবেন। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘দল হিসেবে বিচারের ক্ষেত্রে সাজা কতটুকু? আইনে কী বলা আছে?’
জবাবে প্রধান তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দলকে তো আর সাজা দেয়া যাবে না। কিন্তু দলকে কী ধরনের সাজা দেয়া যাবে, সেটা কিন্তু আইনে বলা আছে...প্রপার্টি সিজ করা, তাদের নেতাকর্মীর ব্যাপারে তাদের একটা সার্টেইন কোনো ডাইরেক্টিভস ইস্যু করা- এগুলো আইনে আছে। সেগুলো যখন তদন্তের রিপোর্ট আসুক, বিচারের সেই পর্যায়ে প্রবেশ করুক; তখন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবো।’
জোট শরীকদের ব্যাপারে
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের প্রসঙ্গে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ মুহূর্তে গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক হয়। সেখানে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল ছিল। তারাও কি বিচারের আওতায় আসবে?’
জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এই মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই (তদন্ত) শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তদন্ত যখন আরও আগাবে, তখন যদি প্রয়োজন মনে হয় যে- আরও কোনো দল এর সঙ্গে ইনভলভড আছে এবং তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে আমাদের তদন্ত সংস্থা সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
‘এখন পর্যন্ত অনেকেই তাদের সাক্ষ্যে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা অভিযোগ এনেছে, সেসব কি এ মামলায় কাজে দেবে?’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেকটাই কাজে লাগবে। কারণ আদালতে যখন সাক্ষীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন, দলের ইনভলভমেন্টের ব্যাপারে বলেছেন, এগুলো জুডিসিয়াল ডকুমেন্ট হয়ে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে দলের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হবে, দলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ আসবে তার মধ্যে বিদ্যমান যে সমস্ত সাক্ষ্য ইতোমধ্যে হয়ে গেছে যেগুলো, সেই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো অন্যতম এভিডেন্স হিসেবে গণ্য হবে।’
কোন কোন মানদণ্ড ধরে তদন্ত এগোবে?,- এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইনের মধ্যে যেভাবে আছে, সেভাবেই আগাবে এবং এটা যখন তদন্ত প্রক্রিয়া আরও সামনে আগাবে, তখন হয়তো আরও বিস্তারিত আপনাদের জানানো হবে।’
আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইন এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করে গতকাল সোমবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইসিটি-তে কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি আর সংসদ সদস্য (এমপি) পদে থাকতে পারবেন না কিংবা নতুন করে নির্বাচিতও হতে পারবেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার সংস্থার সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবেও নির্বাচিত বা নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। আইসিটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরি বা সরকারি পদে নিয়োগের জন্যও অযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হবে।
তবে, যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনাল থেকে অব্যাহতি পান বা খালাসপ্রাপ্ত হন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এ অযোগ্যতার বিধান প্রযোজ্য হবে না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা?
আইসিটি আইন সংশোধন প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘বিচার চলাকালে আইন সংশোধন করার কারণে বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা?’
জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘কোনো সুযোগ নেই। কারণ আওয়ামী লীগের দল হিসেবে বিচার প্রক্রিয়া চলমান নাই। বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় যদি কোনো আইন সংশোধন হয়- যেটা বলতে চেয়েছেন, যেমন ধরেন একজন ব্যক্তির বিচার চলমান আছে, সেই ব্যক্তির বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে- এমন কোনো বিষয় সংশোধন হলে তখন আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু এইখানে যে আইনটা সংশোধন করা হয়েছে বা যা কিছু করা হয়েছে, সেই আইনটা এখনও প্রযোজ্য হয়নি। আপনি কি ওই নির্বাচন অংশগ্রহণের ব্যাপারে বলছেন? সেটা হতেই পারে। সেটা কোনো প্রভাব পড়বে না, ন্যায়বিচারের পরিপন্থিও হবে না। কারণ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এটা সংবিধান দ্বারা প্রটেক্টেড একটা আইন।’
একই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং এ আইনের রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট (ভূতাপেক্ষ বা পূর্ববর্তী প্রভাব) আছে এবং রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট দেয়াটাকে আবার সংবিধানসম্মত করা হয়েছে। সুতরাং এটার সবকিছুই বৈধ বলে গণ্য হবে। এটাকে আদালতে চ্যালেঞ্জও করা যাবে না।’
শির্ক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওইদিনই দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তার তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হতে থাকে।
আওয়ামী লীগের আমলে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল, সেই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে’ শেখ হাসিনা, তার দলের নেতাকর্মী এবং সমমনাদের বিরুদ্ধে এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। এরই একপর্যায়ে গত ১২ মে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচারের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা। ইতোমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে এ অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে জোটভুক্ত দলগুলোর নাম এলে তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মঙ্গলবার,(০৭ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন দমাতে গিয়ে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে’ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার দলের নেতাকর্মী এবং সমমনাদের বিরুদ্ধে এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
প্রয়োজনে জোট শরিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা
ফের আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলেই তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন: চিফ প্রসিকিউটর
ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে এবং তারা তদন্ত কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করবেন। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘দল হিসেবে বিচারের ক্ষেত্রে সাজা কতটুকু? আইনে কী বলা আছে?’
জবাবে প্রধান তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দলকে তো আর সাজা দেয়া যাবে না। কিন্তু দলকে কী ধরনের সাজা দেয়া যাবে, সেটা কিন্তু আইনে বলা আছে...প্রপার্টি সিজ করা, তাদের নেতাকর্মীর ব্যাপারে তাদের একটা সার্টেইন কোনো ডাইরেক্টিভস ইস্যু করা- এগুলো আইনে আছে। সেগুলো যখন তদন্তের রিপোর্ট আসুক, বিচারের সেই পর্যায়ে প্রবেশ করুক; তখন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবো।’
জোট শরীকদের ব্যাপারে
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের প্রসঙ্গে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ মুহূর্তে গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক হয়। সেখানে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল ছিল। তারাও কি বিচারের আওতায় আসবে?’
জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এই মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই (তদন্ত) শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তদন্ত যখন আরও আগাবে, তখন যদি প্রয়োজন মনে হয় যে- আরও কোনো দল এর সঙ্গে ইনভলভড আছে এবং তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে আমাদের তদন্ত সংস্থা সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
‘এখন পর্যন্ত অনেকেই তাদের সাক্ষ্যে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা অভিযোগ এনেছে, সেসব কি এ মামলায় কাজে দেবে?’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেকটাই কাজে লাগবে। কারণ আদালতে যখন সাক্ষীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন, দলের ইনভলভমেন্টের ব্যাপারে বলেছেন, এগুলো জুডিসিয়াল ডকুমেন্ট হয়ে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে দলের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হবে, দলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ আসবে তার মধ্যে বিদ্যমান যে সমস্ত সাক্ষ্য ইতোমধ্যে হয়ে গেছে যেগুলো, সেই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো অন্যতম এভিডেন্স হিসেবে গণ্য হবে।’
কোন কোন মানদণ্ড ধরে তদন্ত এগোবে?,- এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইনের মধ্যে যেভাবে আছে, সেভাবেই আগাবে এবং এটা যখন তদন্ত প্রক্রিয়া আরও সামনে আগাবে, তখন হয়তো আরও বিস্তারিত আপনাদের জানানো হবে।’
আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইন এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করে গতকাল সোমবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইসিটি-তে কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি আর সংসদ সদস্য (এমপি) পদে থাকতে পারবেন না কিংবা নতুন করে নির্বাচিতও হতে পারবেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার সংস্থার সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবেও নির্বাচিত বা নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। আইসিটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরি বা সরকারি পদে নিয়োগের জন্যও অযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হবে।
তবে, যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনাল থেকে অব্যাহতি পান বা খালাসপ্রাপ্ত হন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এ অযোগ্যতার বিধান প্রযোজ্য হবে না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা?
আইসিটি আইন সংশোধন প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘বিচার চলাকালে আইন সংশোধন করার কারণে বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা?’
জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘কোনো সুযোগ নেই। কারণ আওয়ামী লীগের দল হিসেবে বিচার প্রক্রিয়া চলমান নাই। বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় যদি কোনো আইন সংশোধন হয়- যেটা বলতে চেয়েছেন, যেমন ধরেন একজন ব্যক্তির বিচার চলমান আছে, সেই ব্যক্তির বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে- এমন কোনো বিষয় সংশোধন হলে তখন আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু এইখানে যে আইনটা সংশোধন করা হয়েছে বা যা কিছু করা হয়েছে, সেই আইনটা এখনও প্রযোজ্য হয়নি। আপনি কি ওই নির্বাচন অংশগ্রহণের ব্যাপারে বলছেন? সেটা হতেই পারে। সেটা কোনো প্রভাব পড়বে না, ন্যায়বিচারের পরিপন্থিও হবে না। কারণ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এটা সংবিধান দ্বারা প্রটেক্টেড একটা আইন।’
একই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং এ আইনের রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট (ভূতাপেক্ষ বা পূর্ববর্তী প্রভাব) আছে এবং রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট দেয়াটাকে আবার সংবিধানসম্মত করা হয়েছে। সুতরাং এটার সবকিছুই বৈধ বলে গণ্য হবে। এটাকে আদালতে চ্যালেঞ্জও করা যাবে না।’
শির্ক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওইদিনই দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তার তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হতে থাকে।
আওয়ামী লীগের আমলে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল, সেই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে’ শেখ হাসিনা, তার দলের নেতাকর্মী এবং সমমনাদের বিরুদ্ধে এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। এরই একপর্যায়ে গত ১২ মে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।