অনেক টাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশি নারীদের চীনে পাচারের ঘটনায় চীনা দূতাবাস ও ইমিগ্রেশনের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে বলে সন্দেহ করছে র্যাব। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেছেন, পাচারের শিকার নারীদের পাসপোর্টসহ কাগজপত্র তৈরি, চীনা দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ এমনকি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পেরিয়ে চীন যাত্রার পুরো প্রক্রিয়াটি ‘বেশ দ্রুত গতিতে’ সম্পন্ন হয়।
ভিসা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন পার হওয়া সব জায়গায় মানবপাচারকারী চক্রটির সদস্যরা ‘প্রভাব খাটাচ্ছে’ বলে এ র্যাব কর্মকর্তার ভাষ্য। বাংলাদেশি নারীদের চীনে পাচার করে ‘যৌনপেশায় বাধ্য করার’ অভিযোগে গত বুধবার একটি চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। পরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আব্বাস মোল্লা (৩৬), জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু (৩১), মিনার সরদার (৩০) ও রিপন শেখ (২৮)।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব বলেন, ‘পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে এখন অনেক চীনা নাগরিক কাজ করছেন, পাশাপাশি দেশের পোশাক শিল্পেও অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন। তাদের লিংকেই গত ৭-৮ বছর ধরে এই কাজটি চলছিল। ‘এই সময়ের মধ্যে তারা অর্ধশতাধিক মেয়েকে চীনে পাচার করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের চার-পাঁচটি চক্রের সন্ধান পেয়েছি। একটি চক্র ধরা পড়েছে, বাকিদের বিষয়েও কাজ করবে র্যাব।’
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা আমাদের এখানে গ্রেপ্তার, তাদের ভাষ্যমতে অ্যাম্বেসি, ইমিগ্রেশন, ভিসা, পুরোটাই সিস্টেমে প্রসেসড। ভিসা পাইতেও টাইম বেশি লাগে না, ২-৪ দিনের মধ্যে ভিসা পেয়ে যায়। ইমিগ্রেশনও ওদের ক্লিয়ার করা। ইমিগ্রেশনেও সহজে বের হয়ে যেতে পারে, যেহেতু স্পাউস ভিসা করা। ডকুমেন্টেশনগুলো ওরা এখানে পুরো একটা চ্যানেলাইজ সিস্টেমের মাধ্যমে করে নিয়েছে।’
ঢাকার একজন ট্র্যাভেল এজেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাধারণত চীনের ভিসা পেতে ৫-৭ কর্মদিবস সময় লাগে। তবে ক্যান্টন ফেয়ারের সময় এই সময়টা বেড়ে যায়। আর ‘এক্সপ্রেস’ হিসেবে দিলে ৪-৫ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া যায়।
র্যাব কর্মকর্তা মাহাবুব বলছেন, চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে চীনা দূতাবাস থেকে স্পাউস ভিসায় বাংলাদেশি নারীদের চীনে পাঠাতো চক্রটি। ‘আবার লক্ষাধিক টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অন্য কোনো সিস্টেমেও তাদের চায়নাতে পাঠানো হয়। সাধারণত ৩-৪ জন মেয়েকে একসঙ্গে পাঠানো হয়।
‘চীনের বিমানবন্দরে নামার পর তাদেরকে আলাদা আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। এরপর তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে বাধ্য করা হতো। তাদের পাসপোর্টও ছিনিয়ে নেয়া হতো।’ এরকম একজন ভিকটিম গত ৩১ সেপ্টেম্বর শাহ আলী থানায় একটি মামলা করেন চারজনের বিরুদ্ধে। ওই চারজনের মধ্যে তিনজনকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা মাহাবুব বলেন, ‘এ মামলার আরেক আসামি একজন নারী, যিনি ওই চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলে প্রতীয়মান। তবে তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। এই নারী চীনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।’ নথি প্রক্রিয়ার কাজ যে দ্রুতগতিতে হয়, সে কথা বলতে গিয়ে শাহ আলী থানায় হওয়া মামলার উদাহরণ দেন তিনি।
‘এই মামলার বাদীর আগে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না। চকলেট সদস্যরা তার একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে, তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট করায়। সেই পাসপোর্টের নম্বর দিয়ে ম্যারেজ সার্টিফিকেট তৈরি করে ৩দিনের মধ্যে চীনা দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করে। ‘এরপর ১৯ জুন ওই তরুণী চীনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে নির্যাতন সইতে না পেরে আগস্টে তিনি কৌশলে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।’
মাহাবুব বলেন, ‘মামলার বাদী চক্রটিকে এটা বোঝাতে সক্ষম হন যে, তিনি বাংলাদেশে এলে পরে আরও দুই তিনজন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে চীনে ফিরে যাবেন। এই শর্ত দিয়েই তিনি বাংলাদেশে আসতে পারেন। তার খালাতো বোনটি এখনও চীনে আটক রয়েছে।’ একজন মেয়েকে পাঠালে সাড়ে তিন লাখ টাকা পাওয়া যেত জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা মাহাবুব বলেন, ‘চক্রের হোতা চীনা নাগরিক বা বাংলাদেশি যেই থাকুক না কেন, তিনি ওই টাকাটি দিতেন। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকা যে মেয়েটি যাচ্ছে তাকে এবং দেড় লাখ টাকা সেই দালাল পেতেন, যে তাকে খুঁজে এনেছে।
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
অনেক টাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশি নারীদের চীনে পাচারের ঘটনায় চীনা দূতাবাস ও ইমিগ্রেশনের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে বলে সন্দেহ করছে র্যাব। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেছেন, পাচারের শিকার নারীদের পাসপোর্টসহ কাগজপত্র তৈরি, চীনা দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ এমনকি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পেরিয়ে চীন যাত্রার পুরো প্রক্রিয়াটি ‘বেশ দ্রুত গতিতে’ সম্পন্ন হয়।
ভিসা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন পার হওয়া সব জায়গায় মানবপাচারকারী চক্রটির সদস্যরা ‘প্রভাব খাটাচ্ছে’ বলে এ র্যাব কর্মকর্তার ভাষ্য। বাংলাদেশি নারীদের চীনে পাচার করে ‘যৌনপেশায় বাধ্য করার’ অভিযোগে গত বুধবার একটি চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। পরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আব্বাস মোল্লা (৩৬), জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু (৩১), মিনার সরদার (৩০) ও রিপন শেখ (২৮)।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব বলেন, ‘পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে এখন অনেক চীনা নাগরিক কাজ করছেন, পাশাপাশি দেশের পোশাক শিল্পেও অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন। তাদের লিংকেই গত ৭-৮ বছর ধরে এই কাজটি চলছিল। ‘এই সময়ের মধ্যে তারা অর্ধশতাধিক মেয়েকে চীনে পাচার করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের চার-পাঁচটি চক্রের সন্ধান পেয়েছি। একটি চক্র ধরা পড়েছে, বাকিদের বিষয়েও কাজ করবে র্যাব।’
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা আমাদের এখানে গ্রেপ্তার, তাদের ভাষ্যমতে অ্যাম্বেসি, ইমিগ্রেশন, ভিসা, পুরোটাই সিস্টেমে প্রসেসড। ভিসা পাইতেও টাইম বেশি লাগে না, ২-৪ দিনের মধ্যে ভিসা পেয়ে যায়। ইমিগ্রেশনও ওদের ক্লিয়ার করা। ইমিগ্রেশনেও সহজে বের হয়ে যেতে পারে, যেহেতু স্পাউস ভিসা করা। ডকুমেন্টেশনগুলো ওরা এখানে পুরো একটা চ্যানেলাইজ সিস্টেমের মাধ্যমে করে নিয়েছে।’
ঢাকার একজন ট্র্যাভেল এজেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাধারণত চীনের ভিসা পেতে ৫-৭ কর্মদিবস সময় লাগে। তবে ক্যান্টন ফেয়ারের সময় এই সময়টা বেড়ে যায়। আর ‘এক্সপ্রেস’ হিসেবে দিলে ৪-৫ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া যায়।
র্যাব কর্মকর্তা মাহাবুব বলছেন, চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে চীনা দূতাবাস থেকে স্পাউস ভিসায় বাংলাদেশি নারীদের চীনে পাঠাতো চক্রটি। ‘আবার লক্ষাধিক টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অন্য কোনো সিস্টেমেও তাদের চায়নাতে পাঠানো হয়। সাধারণত ৩-৪ জন মেয়েকে একসঙ্গে পাঠানো হয়।
‘চীনের বিমানবন্দরে নামার পর তাদেরকে আলাদা আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। এরপর তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে বাধ্য করা হতো। তাদের পাসপোর্টও ছিনিয়ে নেয়া হতো।’ এরকম একজন ভিকটিম গত ৩১ সেপ্টেম্বর শাহ আলী থানায় একটি মামলা করেন চারজনের বিরুদ্ধে। ওই চারজনের মধ্যে তিনজনকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা মাহাবুব বলেন, ‘এ মামলার আরেক আসামি একজন নারী, যিনি ওই চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলে প্রতীয়মান। তবে তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। এই নারী চীনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।’ নথি প্রক্রিয়ার কাজ যে দ্রুতগতিতে হয়, সে কথা বলতে গিয়ে শাহ আলী থানায় হওয়া মামলার উদাহরণ দেন তিনি।
‘এই মামলার বাদীর আগে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না। চকলেট সদস্যরা তার একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে, তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট করায়। সেই পাসপোর্টের নম্বর দিয়ে ম্যারেজ সার্টিফিকেট তৈরি করে ৩দিনের মধ্যে চীনা দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করে। ‘এরপর ১৯ জুন ওই তরুণী চীনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে নির্যাতন সইতে না পেরে আগস্টে তিনি কৌশলে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।’
মাহাবুব বলেন, ‘মামলার বাদী চক্রটিকে এটা বোঝাতে সক্ষম হন যে, তিনি বাংলাদেশে এলে পরে আরও দুই তিনজন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে চীনে ফিরে যাবেন। এই শর্ত দিয়েই তিনি বাংলাদেশে আসতে পারেন। তার খালাতো বোনটি এখনও চীনে আটক রয়েছে।’ একজন মেয়েকে পাঠালে সাড়ে তিন লাখ টাকা পাওয়া যেত জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা মাহাবুব বলেন, ‘চক্রের হোতা চীনা নাগরিক বা বাংলাদেশি যেই থাকুক না কেন, তিনি ওই টাকাটি দিতেন। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকা যে মেয়েটি যাচ্ছে তাকে এবং দেড় লাখ টাকা সেই দালাল পেতেন, যে তাকে খুঁজে এনেছে।