রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই সনদ সই হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতারা এই সনদে সই করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবেও আছেন, তিনিও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেছেন। তবে বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল এনসিপি এবং সিপিবি, বাসদসহ মোট ৫টি দল অনুষ্ঠানে যায়নি।
সংসদ এলাকায় ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ লাঠিপেটা
অনুষ্ঠানে যায়নি সিপিবিসহ ৪ বাম দল
‘জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে’ একটি কাগজে
সই: নাহিদ ইসলাম
এই জাতীয় দলিলের বাস্তবায়ন দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে: আলী রীয়াজ
শুক্রবার,(১৭ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’।
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘নবজন্ম হল’ বলে মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। এটা শুধু জাতির জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
সনদে স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আজকে আমরা সফল করতে পারলাম। এ যে মহান দিবস এবং তার মধ্যে বিশেষ একটি ক্ষণ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন; সমস্ত জাতি, রাজনৈতিক নেতা একসঙ্গে হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছে।’
বিকেল ৪টায় সনদ সই অনুষ্ঠান শুরুর করা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা আধা ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত হয়। সাড়ে ৪টার দিকে ব্যান্ডদলের বাদ্যের তালে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে স্বাগত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
অনুষ্ঠান মঞ্চে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গী হন জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম।
এনসিপির বর্জন
যাদের নেতৃত্বে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে, সেই বৈষম্যবিরোধীরাই এ সনদ প্রণয়নের দাবি তুলেছিলেন। আন্দোলনে যুক্ত প্রথম সারির নেতাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্যের সংলাপে অংশ নিলেও শুক্রবার সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি ‘স্পষ্ট’ না হওয়ার যুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে দলটি।
এছাড়া ইতিহাস ‘সঠিকভাবে না আসা’ এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তির কারণে বাম ধারার যে চারটি দল সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছিল, তারাও অনুষ্ঠানে যায়নি। দলগুলো হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)। দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারন্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে এই সনদে।
সনদে স্বাক্ষর না করা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার অন্য এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্যের’ নামে কিছু রাজনৈতিক দল ‘জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে’ একটি কাগজে স্বাক্ষর করছে।
অবাক কাণ্ড
রাজনৈতিক মতানৈক্যের মধ্যে ঐকমত্য হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, ‘অবাক কাণ্ড। সারাদেশ দেখলো, সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু বসলো না, চসৎকার আলাপ করলো। গভীরভাবে জ্ঞানের সঙ্গে, সৌহার্দ্যরে সঙ্গে আলোচনা করলো, না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সরাসরি সম্প্রচারে সবাই দেখেছেন। সবাই শুনতে পেয়েছে, মনে মনে অংশ নিয়েছে সবাই। সারা জাতিকে এ আলোচনায় শরিক করেছেন।’
ক্রমে ক্রমে দলগুলোর ঐকমত্যে আসার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ‘অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য’ রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সদস্যদের ধন্যবাদ দেন। তার ভাষায়, ‘তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে, তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকে এ দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে উঠে। সেটা শুধু জাতির জন্য জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় পাঠ্যপুস্তকে থাকবে এটা।’ এই ‘উদাহরণ’ সৃষ্টি করায় রাজনীতিবিদদের ‘মোবারকবাদ’ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সুযোগ যারা দিলো, যার কারণে হলো, তাদের কথা স্মরণ করি, গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা স্মরণ করি। জাতি তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।’
*পরিবর্তন হবে*
এ সনদের মাধ্যমে দেশ পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা যে কাজটা করলাম, সবাই মিলে স্বাক্ষর করলাম। সেটা দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এ পরিবর্তন সম্ভব হল ওই গণভ্যুত্থানের কারণে। এটা হলো দ্বিতীয় অংশ। সেটা করেছিল বলেই আমরা এ সুযোগ পেলাম। পুরনো কথা পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে, সংবিধানের পরিবর্তনের মধ্যে, সরকার চালানোর বিষয়ে নিয়ে এলাম।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় এসেছে এ পরিবর্তনের ভেতরে। এ পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা সে পথে অগ্রসর হবে। আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো। এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। আমরা যেন সঠিকভাবে যেতে পারি, এটা থেকে যেন বিচ্যুত না হই।’
*তরুণরাই গড়বে*
একমত হয়ে সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করে সামনের দিকে এগোনোর আহ্বান জানানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এ পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে দেশের আনাচে কানাচে, তরুণরাই বাংলাদেশকে গড়বে, এ দেশের নেতৃত্ব দেবে, পথ দেখাবে। এ দেশ তরুণদের।’
বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষের বয়স যে ২৭ বছরের নিচে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটা দেশের সম্পদ। সারা দুনিয়ায় তরুণদের অভাব, তারা বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ তাদের এসেছে।’
এ সনদের মাধ্যমে ‘বড় কাজ’ হলো মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম, যেখানে আইন কানুন ছিল না। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম। এমন সভ্যতা গড়ে তুলব মানুষে বিস্ময়ের চোখে দেখবে।’ সমাজ গঠন করতে পারলে দেশের ভবিষ্যত ‘চমৎকার’ হবে বলে মনে করেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরের সম্পদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন আনতে পারে মন্তব্য করে ইউনূস বলেন, ‘মাতারবাড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালী সব কিছু মিলিয়ে একযোগে বন্দর উন্নয়ন করলে পুরো এলাকা নতুন সিঙ্গাপুরে পরিবর্তন হবে। সব দেশের মানুষ এখানে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘আজ যে সনদ সই করলো, সেটা বহু দেশ শিখতে আসবে। আমরা একটা মহান জাতি, সেটা অনুভব করতে হবে।’
*ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন*
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কথা তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজ যে সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়ে নির্বাচনের দিকে যাব, ঐক্যের সুর। ঐক্যের সুর নিয়ে নির্বাচনের দিকে যাব আমরা। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এ ঐক্য যেন বজায় থাকে। রাজনীতি, নির্বাচনের ব্যাপারে আপনারা বসে সনদ করেন।’
ভবিষ্যতে নিজেরা বসে ‘সুন্দর ইতিহাস’ রচনার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘সেটা যেন উদাহরণ হয়, সেটা জাতির জন্য উদহারণ, বিশ্বের জন্য উদাহরণ, আমরা সে নির্বাচনটা করতে চাই। আমরা পারবো। আজ সে পারার চিহ্ন আমরা এখানে রেখে গেলাম। এ চিহ্নটা ধরে আমরা পথে অগ্রসর হবো।’
*দুই পর্বে ৩৩ দল*
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই পর্বে আলোচনা করে জুলাই সনদ তৈরি করে। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে তারা। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে। ইসিও দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্র জাতীয় পার্টিকে রাখা হয়নি।
*প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মঞ্চে যারা*
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের. সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বিদ্যুৎ-জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব ছিলেন অনুষ্ঠানে।
কূটনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নিলেও কয়েকটি দলের প্রতিনিধিরা সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন।
দর্শক সারিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকেও।
স্বাগত বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকে এ দিন দেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব ও অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দেশের জন্য দীর্ঘপথ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।’
সরকারের সংস্কারের ধারাবাহিকতা ও ঐকমত্য কমিশনের কাযক্রম তুলে ধরে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সনদ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতার পর সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
*অবস্থান, লাঠিপেটা*
এদিকে এ অনুষ্ঠানের আগে দুপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয় জুলাই শহীদদের পরিবার ও আহত শতাধিক ব্যক্তি। তাদের বিক্ষোভের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন।
ওই প্রতিশ্রুতির পরও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সেখান থেকে না সরলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ও লাঠিপেটা করে সেখান থেকে তাদের সরায়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সংসদ ভবনের বাইরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সড়কে টায়ার ও কাঠ এবং অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে বানানো ছোট ছোট তাঁবু একসঙ্গে করে তারা আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশের লাঠিপেটায় আহত কয়েকজনকে এ সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়ায় বিক্ষোভকারীরা খামারবাড়ি মোড় ও আসাদ গেটের দিকে অবস্থান নেন।
ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাই সনদ সইয়ের আগ মুহূর্তে সনদের পঞ্চম দফাতে পরিবর্তন আনা হয়। জুলাই যোদ্ধাদের দাবির মুখে এ ‘জরুরি সংশোধন’ করা হয় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আন্দোলনরত ‘জুলাই বীর যোদ্ধাদের’ উদ্দেশে ওই সংশোধনী পাঠ করেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
*মতপার্থক্যের মাঝে ঐক্য*
সনদ সই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের যে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা তা, ৫৩ বছর ধরে বারবার হোঁচট খেয়েছে। এরপরও দেশের নাগরিকেরা গণতন্ত্র এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আজকে এই জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছে।’
‘এ জুলাই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়, এটা নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ও রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি’ বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে।’
‘রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সবার যে চেষ্টা, তা এক দিনে সাফল্য অর্জন করবে না এবং একটি দলিল কেবল সেই নিশ্চয়তা দেবে না’ বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এ দিক নির্দেশক বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।’
*সনদে সই করলেন যারা*
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, শুক্রবার অনুষ্ঠানে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা সই করেছেন। তারা হলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্র ফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা, আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়্যারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী এবং আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
*সরকারের পক্ষে যারা সই করলেন*
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূস সনদে সই করেছেন। এছাড়া, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজসহ ঐকমত্য কমিশনের (সব) সদস্য- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান সনদে সই করেন।
শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই সনদ সই হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতারা এই সনদে সই করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবেও আছেন, তিনিও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেছেন। তবে বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল এনসিপি এবং সিপিবি, বাসদসহ মোট ৫টি দল অনুষ্ঠানে যায়নি।
সংসদ এলাকায় ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ লাঠিপেটা
অনুষ্ঠানে যায়নি সিপিবিসহ ৪ বাম দল
‘জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে’ একটি কাগজে
সই: নাহিদ ইসলাম
এই জাতীয় দলিলের বাস্তবায়ন দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে: আলী রীয়াজ
শুক্রবার,(১৭ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’।
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘নবজন্ম হল’ বলে মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। এটা শুধু জাতির জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
সনদে স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আজকে আমরা সফল করতে পারলাম। এ যে মহান দিবস এবং তার মধ্যে বিশেষ একটি ক্ষণ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন; সমস্ত জাতি, রাজনৈতিক নেতা একসঙ্গে হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছে।’
বিকেল ৪টায় সনদ সই অনুষ্ঠান শুরুর করা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা আধা ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত হয়। সাড়ে ৪টার দিকে ব্যান্ডদলের বাদ্যের তালে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে স্বাগত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
অনুষ্ঠান মঞ্চে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গী হন জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম।
এনসিপির বর্জন
যাদের নেতৃত্বে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে, সেই বৈষম্যবিরোধীরাই এ সনদ প্রণয়নের দাবি তুলেছিলেন। আন্দোলনে যুক্ত প্রথম সারির নেতাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্যের সংলাপে অংশ নিলেও শুক্রবার সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি ‘স্পষ্ট’ না হওয়ার যুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে দলটি।
এছাড়া ইতিহাস ‘সঠিকভাবে না আসা’ এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তির কারণে বাম ধারার যে চারটি দল সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছিল, তারাও অনুষ্ঠানে যায়নি। দলগুলো হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)। দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারন্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে এই সনদে।
সনদে স্বাক্ষর না করা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার অন্য এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্যের’ নামে কিছু রাজনৈতিক দল ‘জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে’ একটি কাগজে স্বাক্ষর করছে।
অবাক কাণ্ড
রাজনৈতিক মতানৈক্যের মধ্যে ঐকমত্য হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, ‘অবাক কাণ্ড। সারাদেশ দেখলো, সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু বসলো না, চসৎকার আলাপ করলো। গভীরভাবে জ্ঞানের সঙ্গে, সৌহার্দ্যরে সঙ্গে আলোচনা করলো, না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সরাসরি সম্প্রচারে সবাই দেখেছেন। সবাই শুনতে পেয়েছে, মনে মনে অংশ নিয়েছে সবাই। সারা জাতিকে এ আলোচনায় শরিক করেছেন।’
ক্রমে ক্রমে দলগুলোর ঐকমত্যে আসার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ‘অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য’ রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সদস্যদের ধন্যবাদ দেন। তার ভাষায়, ‘তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে, তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকে এ দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে উঠে। সেটা শুধু জাতির জন্য জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় পাঠ্যপুস্তকে থাকবে এটা।’ এই ‘উদাহরণ’ সৃষ্টি করায় রাজনীতিবিদদের ‘মোবারকবাদ’ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সুযোগ যারা দিলো, যার কারণে হলো, তাদের কথা স্মরণ করি, গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা স্মরণ করি। জাতি তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।’
*পরিবর্তন হবে*
এ সনদের মাধ্যমে দেশ পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা যে কাজটা করলাম, সবাই মিলে স্বাক্ষর করলাম। সেটা দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এ পরিবর্তন সম্ভব হল ওই গণভ্যুত্থানের কারণে। এটা হলো দ্বিতীয় অংশ। সেটা করেছিল বলেই আমরা এ সুযোগ পেলাম। পুরনো কথা পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে, সংবিধানের পরিবর্তনের মধ্যে, সরকার চালানোর বিষয়ে নিয়ে এলাম।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় এসেছে এ পরিবর্তনের ভেতরে। এ পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা সে পথে অগ্রসর হবে। আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো। এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। আমরা যেন সঠিকভাবে যেতে পারি, এটা থেকে যেন বিচ্যুত না হই।’
*তরুণরাই গড়বে*
একমত হয়ে সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করে সামনের দিকে এগোনোর আহ্বান জানানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এ পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে দেশের আনাচে কানাচে, তরুণরাই বাংলাদেশকে গড়বে, এ দেশের নেতৃত্ব দেবে, পথ দেখাবে। এ দেশ তরুণদের।’
বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষের বয়স যে ২৭ বছরের নিচে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটা দেশের সম্পদ। সারা দুনিয়ায় তরুণদের অভাব, তারা বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ তাদের এসেছে।’
এ সনদের মাধ্যমে ‘বড় কাজ’ হলো মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম, যেখানে আইন কানুন ছিল না। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম। এমন সভ্যতা গড়ে তুলব মানুষে বিস্ময়ের চোখে দেখবে।’ সমাজ গঠন করতে পারলে দেশের ভবিষ্যত ‘চমৎকার’ হবে বলে মনে করেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরের সম্পদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন আনতে পারে মন্তব্য করে ইউনূস বলেন, ‘মাতারবাড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালী সব কিছু মিলিয়ে একযোগে বন্দর উন্নয়ন করলে পুরো এলাকা নতুন সিঙ্গাপুরে পরিবর্তন হবে। সব দেশের মানুষ এখানে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘আজ যে সনদ সই করলো, সেটা বহু দেশ শিখতে আসবে। আমরা একটা মহান জাতি, সেটা অনুভব করতে হবে।’
*ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন*
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কথা তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজ যে সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়ে নির্বাচনের দিকে যাব, ঐক্যের সুর। ঐক্যের সুর নিয়ে নির্বাচনের দিকে যাব আমরা। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এ ঐক্য যেন বজায় থাকে। রাজনীতি, নির্বাচনের ব্যাপারে আপনারা বসে সনদ করেন।’
ভবিষ্যতে নিজেরা বসে ‘সুন্দর ইতিহাস’ রচনার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘সেটা যেন উদাহরণ হয়, সেটা জাতির জন্য উদহারণ, বিশ্বের জন্য উদাহরণ, আমরা সে নির্বাচনটা করতে চাই। আমরা পারবো। আজ সে পারার চিহ্ন আমরা এখানে রেখে গেলাম। এ চিহ্নটা ধরে আমরা পথে অগ্রসর হবো।’
*দুই পর্বে ৩৩ দল*
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই পর্বে আলোচনা করে জুলাই সনদ তৈরি করে। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে তারা। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে। ইসিও দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্র জাতীয় পার্টিকে রাখা হয়নি।
*প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মঞ্চে যারা*
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের. সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বিদ্যুৎ-জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব ছিলেন অনুষ্ঠানে।
কূটনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নিলেও কয়েকটি দলের প্রতিনিধিরা সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন।
দর্শক সারিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকেও।
স্বাগত বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকে এ দিন দেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব ও অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দেশের জন্য দীর্ঘপথ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।’
সরকারের সংস্কারের ধারাবাহিকতা ও ঐকমত্য কমিশনের কাযক্রম তুলে ধরে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সনদ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতার পর সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
*অবস্থান, লাঠিপেটা*
এদিকে এ অনুষ্ঠানের আগে দুপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয় জুলাই শহীদদের পরিবার ও আহত শতাধিক ব্যক্তি। তাদের বিক্ষোভের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন।
ওই প্রতিশ্রুতির পরও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সেখান থেকে না সরলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ও লাঠিপেটা করে সেখান থেকে তাদের সরায়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সংসদ ভবনের বাইরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সড়কে টায়ার ও কাঠ এবং অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে বানানো ছোট ছোট তাঁবু একসঙ্গে করে তারা আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশের লাঠিপেটায় আহত কয়েকজনকে এ সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়ায় বিক্ষোভকারীরা খামারবাড়ি মোড় ও আসাদ গেটের দিকে অবস্থান নেন।
ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাই সনদ সইয়ের আগ মুহূর্তে সনদের পঞ্চম দফাতে পরিবর্তন আনা হয়। জুলাই যোদ্ধাদের দাবির মুখে এ ‘জরুরি সংশোধন’ করা হয় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আন্দোলনরত ‘জুলাই বীর যোদ্ধাদের’ উদ্দেশে ওই সংশোধনী পাঠ করেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
*মতপার্থক্যের মাঝে ঐক্য*
সনদ সই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের যে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা তা, ৫৩ বছর ধরে বারবার হোঁচট খেয়েছে। এরপরও দেশের নাগরিকেরা গণতন্ত্র এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আজকে এই জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছে।’
‘এ জুলাই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়, এটা নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ও রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি’ বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে।’
‘রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সবার যে চেষ্টা, তা এক দিনে সাফল্য অর্জন করবে না এবং একটি দলিল কেবল সেই নিশ্চয়তা দেবে না’ বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এ দিক নির্দেশক বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।’
*সনদে সই করলেন যারা*
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, শুক্রবার অনুষ্ঠানে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা সই করেছেন। তারা হলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্র ফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা, আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়্যারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী এবং আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
*সরকারের পক্ষে যারা সই করলেন*
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূস সনদে সই করেছেন। এছাড়া, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজসহ ঐকমত্য কমিশনের (সব) সদস্য- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান সনদে সই করেন।