গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাদের বুধবার সকাল ৭টার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। বুধবার,(২২ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ৭টার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যান। এ সময় ওই সেনা কর্মকর্তাদের সাধারণ পোশাকে দেখা যায়।
সেনা কর্মকর্তারা ‘নির্দোষ’, যা হয়েছে ‘হাসিনা-কামালের নির্দেশে’ হয়েছে: আসামিপক্ষের আইনজীবী
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনতে সেনাবাহিনী পূর্ণ সহযোগিতা করেছে: চিফ প্রসিকিউটর
শেখ হাসিনা, কামালসহ ১৭ আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ
এরপর শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনাল কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে এই সেনা কর্মকর্তাদের ঢাকা সেনানিবাসের সাব জেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষের আইনজীবী। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচুত্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও সাবেক-বর্তমান ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার সকালে এ আদেশ দেন। এ ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
কারাগারে প্রেরণ করা অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন এবং একজন এখন অবসরকালীন ছুটিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে দশজন র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলার আসামি। তারা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে), কর্নেল কে এম আজাদ, ইন্টেলিজেন্স উইং-এর সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল, ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম। বাকি তিনজন সেনাবাহিনীর জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) আটকে রেখে নির্যাতনের মামলার আসামি। তারা হলেন- ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিক ও মেজর জেনারেল শেখ মো.সারওয়ার হোসেন। বাকি দুজন এক সময় বিজিবিতে দায়িত্বরত ছিলেন। বিজিবির সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও সাবেক কর্মকর্তা মেজর রাফাত বিন আলম মুন জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রীতে ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি।
আদালতে আত্মসমর্পণ করা এ ১৫ সেনা কর্মকর্তা নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তাদের আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, এই মামলার মূল অপরাধীরা ভারতে পালিয়ে গেছেন। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি হিসেবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করার পর শুনানি শেষে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ১৫ কর্মকর্তা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আজকে স্বেচ্ছায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সারেন্ডার করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। তারা এ আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রসিকিউশন এ সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা জানি তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু সেটা পুলিশের মাধ্যমে কোর্টে সারেন্ডার করেছেন, সেটাকে তারা (প্রসিকিউশন) বলেছেন যে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা কখনোই গ্রেপ্তার ছিলেন না। আগে সেনা সদর ব্রিফিং করেছিল, সেখানে তারা বলেছে, তারা আর্মি হেফাজতে আছেন।’
অভিযুক্ত অফিসারদের নির্দোষ দাবি করে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা কোর্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে আশাবাদী। যারা সত্যিকারের অপরাধ সংঘটন করেছেন, তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। জেনারেল কবির, জেনারেল আকবর, জেনারেল তারিক সিদ্দিকী, জেনারেল মুজিব পালিয়ে গেছেন।’ রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহের সাক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে, তা শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের নির্দেশে হয়েছে। এখানে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাদের এই ঘটনার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনতে সেনাবাহিনী পূর্ণ সহযোগিতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন। সেনাবাহিনীসহ এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘স্মুথলি (সুচারুভাবে)’ পরিচালনার বিষয়ে যারা সহায়তা করেছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি। এই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার ব্যাপারে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে বলে জানান তাজুল।
এ তিন মামলার ২৮ আসামির মধ্যে শেখ হাসিনাসহ বাকি ১৭ জনকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য বুধবার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার আবেদন আমলে নিয়ে বুধবার থেকে আগামী সাত দিনের মধ্যে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আরও আছেন শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, র?্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি হন), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ এবং পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকেও হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এ তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন। গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ১২ অক্টোবর ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেনা সদরে ‘এমইএস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’ ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়।
গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাদের বুধবার সকাল ৭টার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়
বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। বুধবার,(২২ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ৭টার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যান। এ সময় ওই সেনা কর্মকর্তাদের সাধারণ পোশাকে দেখা যায়।
সেনা কর্মকর্তারা ‘নির্দোষ’, যা হয়েছে ‘হাসিনা-কামালের নির্দেশে’ হয়েছে: আসামিপক্ষের আইনজীবী
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনতে সেনাবাহিনী পূর্ণ সহযোগিতা করেছে: চিফ প্রসিকিউটর
শেখ হাসিনা, কামালসহ ১৭ আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ
এরপর শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনাল কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে এই সেনা কর্মকর্তাদের ঢাকা সেনানিবাসের সাব জেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষের আইনজীবী। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচুত্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও সাবেক-বর্তমান ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার সকালে এ আদেশ দেন। এ ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
কারাগারে প্রেরণ করা অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন এবং একজন এখন অবসরকালীন ছুটিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে দশজন র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলার আসামি। তারা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে), কর্নেল কে এম আজাদ, ইন্টেলিজেন্স উইং-এর সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল, ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম। বাকি তিনজন সেনাবাহিনীর জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) আটকে রেখে নির্যাতনের মামলার আসামি। তারা হলেন- ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিক ও মেজর জেনারেল শেখ মো.সারওয়ার হোসেন। বাকি দুজন এক সময় বিজিবিতে দায়িত্বরত ছিলেন। বিজিবির সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও সাবেক কর্মকর্তা মেজর রাফাত বিন আলম মুন জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রীতে ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি।
আদালতে আত্মসমর্পণ করা এ ১৫ সেনা কর্মকর্তা নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তাদের আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, এই মামলার মূল অপরাধীরা ভারতে পালিয়ে গেছেন। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি হিসেবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করার পর শুনানি শেষে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ১৫ কর্মকর্তা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আজকে স্বেচ্ছায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সারেন্ডার করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। তারা এ আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রসিকিউশন এ সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা জানি তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু সেটা পুলিশের মাধ্যমে কোর্টে সারেন্ডার করেছেন, সেটাকে তারা (প্রসিকিউশন) বলেছেন যে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা কখনোই গ্রেপ্তার ছিলেন না। আগে সেনা সদর ব্রিফিং করেছিল, সেখানে তারা বলেছে, তারা আর্মি হেফাজতে আছেন।’
অভিযুক্ত অফিসারদের নির্দোষ দাবি করে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা কোর্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে আশাবাদী। যারা সত্যিকারের অপরাধ সংঘটন করেছেন, তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। জেনারেল কবির, জেনারেল আকবর, জেনারেল তারিক সিদ্দিকী, জেনারেল মুজিব পালিয়ে গেছেন।’ রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহের সাক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে, তা শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের নির্দেশে হয়েছে। এখানে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাদের এই ঘটনার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনতে সেনাবাহিনী পূর্ণ সহযোগিতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন। সেনাবাহিনীসহ এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘স্মুথলি (সুচারুভাবে)’ পরিচালনার বিষয়ে যারা সহায়তা করেছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি। এই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার ব্যাপারে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে বলে জানান তাজুল।
এ তিন মামলার ২৮ আসামির মধ্যে শেখ হাসিনাসহ বাকি ১৭ জনকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য বুধবার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার আবেদন আমলে নিয়ে বুধবার থেকে আগামী সাত দিনের মধ্যে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আরও আছেন শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, র?্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি হন), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ এবং পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকেও হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এ তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন। গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ১২ অক্টোবর ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেনা সদরে ‘এমইএস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’ ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়।