ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে অ্যাটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্যের বিরোধিতা করে ‘তার আসামি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে যাননি, তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার দাবি, শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দিয়ে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা করেছেন: চিফ প্রসিকিউটর
ওই ব্যক্তি (তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে) দেশে আসেননি, আমার আসামিও সে কারণে দেশে আসছেন না: আমির হোসেন
ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত সাক্ষ্যে বিশ্বের যে কোনো আদালতে প্রমাণিত হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
বৃহস্পতিবার,(২৩ অক্টোবর ২০২৫) ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। বক্তব্যের একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কী এমন হলো যে তাকে পালিয়ে যেতে হলো? উনারা খুন করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। তারা জানতেন বিচার হবে। তাই পালিয়ে গেছেন।’
সন্দেহাতীতভাবে আমরা তাদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি দাবি করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ‘উনারা সব খবর রাখছেন। জানেন কি হচ্ছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উনারা এই ট্রাইব্যুনালের হাজির হবেন না।’ সলিড পিস অব এভিডেন্স (বস্তুগত সাক্ষ্য), সারকামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স সবকিছু সন্দেহাতীতভাবে এই বিচার প্রমাণ করবে বলে আদালাতে দাবি করেন তিনি। ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত সাক্ষ্যে বিশ্বের যে কোনো দেশে যে কোনো আদালতে প্রমাণিত হবে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেও দাবি করেন আসাদুজ্জামান।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মানবতাবিরোধী অপরাধে বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কয়েকজন সরকারপ্রধানের তথ্য ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। তাদের মধ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনের কথা উল্লেখ আছে। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বিচারের মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) আরেকজনকে বলেছিলেন সাহস থাকলে যেন দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হন। আমি সেটা বিশ্বাস করেছিলাম, তিনি এটা মন থেকে বলেছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি মন থেকে বলেননি।’
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, ‘কোন পক্ষ কী উপস্থাপন করলো, কে কী বলল তা বড় কথা নয়; ট্রাইব্যুনাল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষ হলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতের অনুমতি নিয়ে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর এর আগে যুক্তিতর্কে দেয়া বক্তব্যের জবাব দেন। ‘এই আইনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন) বিচার করা মানে আসামিকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে বলা, ‘সাঁতার কাটো বলে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দেয়া বক্তব্যের বিরোধীতা করে তাজুল বলেন, ‘এ আইনটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ১৯৭৩) রোম স্ট্যাটিউটের সঙ্গে ‘কমপেটিবল’ করা হয়েছে।’ তার দাবি সংবিধান এ আইনকে ‘প্রটেকশন’ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনটির ১৯ ধারার কথা উল্লেখ করেন তাজুল। এছাড়া ভিডিও, অডিও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এনটিএমসি, বিবিসি এবং আল জাজিরার সঠিকতা যাচাইয়ের কথা আদালতে উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রের মধ্যে শেখ হাসিনা একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন দাবি করে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সর্বশেষে তিনি (শেখ হাসিনা) রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না?।’
সর্বশষে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন অ্যাটর্নি জেনারেল এর আদালাতে দেয়া বক্ত্যবের বিরোধীতা করে বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে যাননি। তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।’ শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, ‘যে কারণে ওই ব্যক্তি (তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে) দেশে আসেননি, আমার আসামিও সে কারণে দেশে আসছেন না।’
এরপর ট্রাইব্যুালের চেয়ারম্যান এ মামলার রায়ের তারিখ আগামী ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে অ্যাটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্যের বিরোধিতা করে ‘তার আসামি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে যাননি, তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার দাবি, শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দিয়ে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা করেছেন: চিফ প্রসিকিউটর
ওই ব্যক্তি (তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে) দেশে আসেননি, আমার আসামিও সে কারণে দেশে আসছেন না: আমির হোসেন
ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত সাক্ষ্যে বিশ্বের যে কোনো আদালতে প্রমাণিত হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
বৃহস্পতিবার,(২৩ অক্টোবর ২০২৫) ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। বক্তব্যের একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কী এমন হলো যে তাকে পালিয়ে যেতে হলো? উনারা খুন করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। তারা জানতেন বিচার হবে। তাই পালিয়ে গেছেন।’
সন্দেহাতীতভাবে আমরা তাদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি দাবি করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ‘উনারা সব খবর রাখছেন। জানেন কি হচ্ছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উনারা এই ট্রাইব্যুনালের হাজির হবেন না।’ সলিড পিস অব এভিডেন্স (বস্তুগত সাক্ষ্য), সারকামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স সবকিছু সন্দেহাতীতভাবে এই বিচার প্রমাণ করবে বলে আদালাতে দাবি করেন তিনি। ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত সাক্ষ্যে বিশ্বের যে কোনো দেশে যে কোনো আদালতে প্রমাণিত হবে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেও দাবি করেন আসাদুজ্জামান।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মানবতাবিরোধী অপরাধে বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কয়েকজন সরকারপ্রধানের তথ্য ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। তাদের মধ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনের কথা উল্লেখ আছে। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বিচারের মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) আরেকজনকে বলেছিলেন সাহস থাকলে যেন দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হন। আমি সেটা বিশ্বাস করেছিলাম, তিনি এটা মন থেকে বলেছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি মন থেকে বলেননি।’
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, ‘কোন পক্ষ কী উপস্থাপন করলো, কে কী বলল তা বড় কথা নয়; ট্রাইব্যুনাল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষ হলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতের অনুমতি নিয়ে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর এর আগে যুক্তিতর্কে দেয়া বক্তব্যের জবাব দেন। ‘এই আইনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন) বিচার করা মানে আসামিকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে বলা, ‘সাঁতার কাটো বলে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দেয়া বক্তব্যের বিরোধীতা করে তাজুল বলেন, ‘এ আইনটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ১৯৭৩) রোম স্ট্যাটিউটের সঙ্গে ‘কমপেটিবল’ করা হয়েছে।’ তার দাবি সংবিধান এ আইনকে ‘প্রটেকশন’ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনটির ১৯ ধারার কথা উল্লেখ করেন তাজুল। এছাড়া ভিডিও, অডিও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এনটিএমসি, বিবিসি এবং আল জাজিরার সঠিকতা যাচাইয়ের কথা আদালতে উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রের মধ্যে শেখ হাসিনা একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন দাবি করে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সর্বশেষে তিনি (শেখ হাসিনা) রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না?।’
সর্বশষে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন অ্যাটর্নি জেনারেল এর আদালাতে দেয়া বক্ত্যবের বিরোধীতা করে বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে যাননি। তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।’ শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির হোসেন বলেন, ‘যে কারণে ওই ব্যক্তি (তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে) দেশে আসেননি, আমার আসামিও সে কারণে দেশে আসছেন না।’
এরপর ট্রাইব্যুালের চেয়ারম্যান এ মামলার রায়ের তারিখ আগামী ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।