ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) একগুচ্ছ পরিবর্তন অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এখন রাষ্ট্রপতি সই করলেই সংশোধনীগুলো (পরিবর্তন) চূড়ান্ত হবে, জারি হবে অধ্যাদেশ।
সংশোধীনগুলোর মধ্যে আলোচনায় আছে, আদলত যদি কোনো মামলায় কাউকে পলাতক (ফেরারি) ঘোষণা করে তাহলে ঐ ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। চব্বিশের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এবং স্থানীয় আদালতে বিভিন্ন মামলায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতাই আসামি হয়ে এখন পলাতক। এ সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি হলে এরা সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটাধিকারের দাবিও দীঘদিনের। এবার পোস্টাল ব্যালটে (ডাকযোগে) প্রবাসীদের ভোট দেয়ার বিষয়টি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আরপিও রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে আসছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা। আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য অবশ্য আগে থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।
একই পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন- কারা হাজতে থাকা ব্যক্তিরাও। এছাড়া, যারা জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী কাজে যুক্ত থাকবেন তারাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
জোটগত নির্বাচন করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে- এই সংশোধীনটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। অতীতে বড় দলগুলোর সঙ্গে একাধিক ছোট দল জোট করে, অনুমতি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়ে বড় দলের জনপ্রিয় প্রতীকে ভোট করেছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ না করেও জোটভুক্ত হয়ে ধানের শীষ, নৌকায় ভোট করে জিতে এসেছে। এবার আরপিও সংশোধন প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হলে জোটভুক্ত দলের প্রার্থীকেও নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটি ইসিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে, যেন এই পরিবর্তন করা না হয়।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
সংশোধনী এনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যোগ হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর নাম। আরপিওর ২ নম্বর ধারায় এ সংশোধন এনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ছিল ছিল সশস্ত্রবাহিনী।
‘না’ ভোট ফিরছে একক প্রার্থীর আসনে। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকে, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য (এমপি) বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ বন্ধ হচ্ছে। একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে যদি না ভোট বেশি পড়ে তবে তিনি জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না। তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট থাকবে না।
কোনো সংসদীয় আসনে প্রার্থীরা যদি সমান ভোট পায়, তাহলে সেখানে পুনরায় ভোট হবে। আগে সমভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে লটারি করে একজনকে নির্বাচিত করার বিধান ছিল।
নির্বাচনে ইভিএমের (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইভিএমে ভোট দেয়ার বিধান বিলুপ্ত’ করা হয়েছে।
জামানত বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার করলে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে (ভোটে অযোগ্য এমন) নির্বাচিত হওয়ার পরও ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
অনিয়মের জন্য কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজন হলে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ইসিকে।
ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে রাখা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা ইসিকে অবহিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের তালিকায় গণমাধ্যমকর্মীদের থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিত থাকার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হার ঠিক করা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করে পরিমার্জন করা হয়েছে। অনুদান হিসেবে পাওয়া অর্থের তালিকা বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট করে ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দ-ের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) একগুচ্ছ পরিবর্তন অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এখন রাষ্ট্রপতি সই করলেই সংশোধনীগুলো (পরিবর্তন) চূড়ান্ত হবে, জারি হবে অধ্যাদেশ।
সংশোধীনগুলোর মধ্যে আলোচনায় আছে, আদলত যদি কোনো মামলায় কাউকে পলাতক (ফেরারি) ঘোষণা করে তাহলে ঐ ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। চব্বিশের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এবং স্থানীয় আদালতে বিভিন্ন মামলায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতাই আসামি হয়ে এখন পলাতক। এ সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি হলে এরা সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটাধিকারের দাবিও দীঘদিনের। এবার পোস্টাল ব্যালটে (ডাকযোগে) প্রবাসীদের ভোট দেয়ার বিষয়টি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আরপিও রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে আসছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা। আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য অবশ্য আগে থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।
একই পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন- কারা হাজতে থাকা ব্যক্তিরাও। এছাড়া, যারা জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী কাজে যুক্ত থাকবেন তারাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
জোটগত নির্বাচন করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে- এই সংশোধীনটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। অতীতে বড় দলগুলোর সঙ্গে একাধিক ছোট দল জোট করে, অনুমতি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়ে বড় দলের জনপ্রিয় প্রতীকে ভোট করেছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ না করেও জোটভুক্ত হয়ে ধানের শীষ, নৌকায় ভোট করে জিতে এসেছে। এবার আরপিও সংশোধন প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হলে জোটভুক্ত দলের প্রার্থীকেও নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটি ইসিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে, যেন এই পরিবর্তন করা না হয়।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
সংশোধনী এনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যোগ হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর নাম। আরপিওর ২ নম্বর ধারায় এ সংশোধন এনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ছিল ছিল সশস্ত্রবাহিনী।
‘না’ ভোট ফিরছে একক প্রার্থীর আসনে। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকে, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য (এমপি) বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ বন্ধ হচ্ছে। একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে যদি না ভোট বেশি পড়ে তবে তিনি জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না। তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট থাকবে না।
কোনো সংসদীয় আসনে প্রার্থীরা যদি সমান ভোট পায়, তাহলে সেখানে পুনরায় ভোট হবে। আগে সমভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে লটারি করে একজনকে নির্বাচিত করার বিধান ছিল।
নির্বাচনে ইভিএমের (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইভিএমে ভোট দেয়ার বিধান বিলুপ্ত’ করা হয়েছে।
জামানত বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার করলে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে (ভোটে অযোগ্য এমন) নির্বাচিত হওয়ার পরও ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
অনিয়মের জন্য কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজন হলে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ইসিকে।
ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে রাখা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা ইসিকে অবহিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের তালিকায় গণমাধ্যমকর্মীদের থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিত থাকার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হার ঠিক করা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করে পরিমার্জন করা হয়েছে। অনুদান হিসেবে পাওয়া অর্থের তালিকা বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট করে ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দ-ের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।