ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
অর্থ পাচারের মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের জামিন বাতিল করে তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। রোববার, (২৬ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন বলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল গত বৃহস্পতিবার। সম্রাটের পক্ষে তার আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন (হীরা) হাজিরা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ হাজিরা বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়। বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সম্রাট কোথায় আছেন? জবাবে আইনজীবী বলেন, সম্রাট কোথায় আছেন, তা তার জানা নেই।
এরপর রোববার, মধ্যে সম্রাটকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয় আদালত। এদিন সম্রাট আদালতে হাজির হননি। তারপক্ষে আফরোজা শাহনাজ পারভীন সময় চেয়ে আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘আসামি জামিনের অপব্যবহার করেননি। শারীরিক জটিলতা হার্ট, কিডনি নষ্ট, ওপেন হার্ট সার্জারি করানোর কারণে ২০৫ ধারায় আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়।
‘শারীরিক অসুস্থতার জটিলতার কারণে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকায় হাজির হতে পারেননি। সুস্থ হয়ে আদালতে হাজির হবেন।’ অন্যদিকে সম্রাটের সহযোগী আরমানের পক্ষে আদালতে কোনো পদক্ষেপ ছিল না।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুকী বলেন ‘সম্রাট জামিনে থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত হয়েছেন। দেশবিরোধী কাজ করছেন। তিনি আদালতের অনুমতি না নিয়েই দেশের বাইরে চলে গেছেন। তার ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ করে, জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রার্থনা করছি।’ আরমান জামিনে থেকে একাধিকবার আদালতে উপস্থিত হননি। এজন্য তার জামিনও বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা বলেন তিনি। শুনানি নিয়ে আদালত আসামিদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ১৯৫ কোটি টাকা ‘পাচারের’ অভিযোগে ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’ বিভাগের এসআই রাশেদুর রহমান। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘সম্রাট রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল এলাকায় অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। তিনি আনুমানিক ১৯৫ কোটি টাকা এনামুল হক আরমানের সহায়তায় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন।
আসামিদের বিদেশে যাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে মামলায় বলা হয়, সম্রাট ২০১১-২০১৯ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় তিনবার, দুবাইয়ে দুইবার ও একবার হংকং ভ্রমণ করেছেন। একই সময়ে আরমান ২৩ বার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকেলে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে। ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
অর্থ পাচারের মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের জামিন বাতিল করে তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। রোববার, (২৬ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন বলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল গত বৃহস্পতিবার। সম্রাটের পক্ষে তার আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন (হীরা) হাজিরা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ হাজিরা বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়। বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সম্রাট কোথায় আছেন? জবাবে আইনজীবী বলেন, সম্রাট কোথায় আছেন, তা তার জানা নেই।
এরপর রোববার, মধ্যে সম্রাটকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয় আদালত। এদিন সম্রাট আদালতে হাজির হননি। তারপক্ষে আফরোজা শাহনাজ পারভীন সময় চেয়ে আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘আসামি জামিনের অপব্যবহার করেননি। শারীরিক জটিলতা হার্ট, কিডনি নষ্ট, ওপেন হার্ট সার্জারি করানোর কারণে ২০৫ ধারায় আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়।
‘শারীরিক অসুস্থতার জটিলতার কারণে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকায় হাজির হতে পারেননি। সুস্থ হয়ে আদালতে হাজির হবেন।’ অন্যদিকে সম্রাটের সহযোগী আরমানের পক্ষে আদালতে কোনো পদক্ষেপ ছিল না।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুকী বলেন ‘সম্রাট জামিনে থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত হয়েছেন। দেশবিরোধী কাজ করছেন। তিনি আদালতের অনুমতি না নিয়েই দেশের বাইরে চলে গেছেন। তার ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ করে, জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রার্থনা করছি।’ আরমান জামিনে থেকে একাধিকবার আদালতে উপস্থিত হননি। এজন্য তার জামিনও বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা বলেন তিনি। শুনানি নিয়ে আদালত আসামিদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ১৯৫ কোটি টাকা ‘পাচারের’ অভিযোগে ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’ বিভাগের এসআই রাশেদুর রহমান। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘সম্রাট রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল এলাকায় অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। তিনি আনুমানিক ১৯৫ কোটি টাকা এনামুল হক আরমানের সহায়তায় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন।
আসামিদের বিদেশে যাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে মামলায় বলা হয়, সম্রাট ২০১১-২০১৯ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় তিনবার, দুবাইয়ে দুইবার ও একবার হংকং ভ্রমণ করেছেন। একই সময়ে আরমান ২৩ বার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকেলে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে। ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব।